ফ্রানৎস্ ফানোঁ-র একটা বই আছে ‘রেচেড অফ দি আর্থ’ নামে। বেশ কিছুদিন আগে একটা দরকারে এই বইটা খুঁজতেসিলাম। The Wretched of the Earth বঙ্গানুবাদে বাংলাদেশের বইবিতানগুলায় পাওয়া যায়। এই বইটার অনুবাদ বাজারে ‘জগতের লাঞ্ছিত’ ডাকনামে অ্যাভেইল করা যাবে। এই অনুবাদটা আমিনুল ইসলাম ভুইয়া কৃত, যিনি পাওলো ফ্রেইরি-র Pedagogy of the Oppressed-এর বঙ্গানুবাদ ‘অত্যাচারিতের শিক্ষা’ ছাড়াও কার্ল পপার প্রমুখের বইপত্র বাংলা করেছেন। পপারের বইগুলা, যদ্দুর ইয়াদ হয় তিন খণ্ডে, বাংলা অ্যাকাডেমি থেকে বেরোনো। পাঠক সমাবেশ শীর্ষক প্রকাশনাগার থেকে এই একই অনুবাদকের সিরিজ অফ দর্শনের অনুবাদবই বেরিয়েছে এবং বেরোতেসে বেশ কয়েক বছর ধরে। প্লেটোর রিপাব্লিক এবং অন্যান্য পুরানা গ্রিক দার্শনিকদের বাকবিতণ্ডা, দ্বান্দ্বিক সংলাপ ইত্যাদি।
ফ্রানৎস্ ফানোঁ-র Wretched of the Earth-এর আরেককটা অনুবাদ শুরু হয়েছিল সলিমুল্লাহ খানের হাতে, বেশিদিন আগের কথা নয়, বেশ কয়েক কিস্তি ছাপাও হয়েছিল ‘নতুনধারা’ কাগজে, ফের মাঝপথে এইটা বন্ধও হয়ে যায়। খানের বিশেষ একটা বাগভঙ্গি দিয়া বাংলায় এইটা স্টার্ট হয়েছিল ভালোই, শেষ করতে পারলে একটা কাজের কাজ হতো, সাধুরীতির বাক্যসংগঠন আর সংস্কৃত শব্দভাণ্ডার এড়িয়ে ব্যাপক আরবি-ফার্সি আর আঁকাড়া ভোক্যাবুলারির মাধ্যমে সলিম তার লেখাটা আগায়া নেন। ফলে সলিমুল্লাহ খানের ইন্টার্প্রিটেশনধর্মী অনুবাদ অত্যন্ত উপভোগ্যই হয়।
কিন্তু অনুবাদের বেলায়, মানে যে-কোনো অনূদিত বই পড়বার সময়, আমরা তো আর মূলের লগে মেলায়ে দেখে দেখে কেউ পড়ি না। তা আদৌ স্বাভাবিকও নয়। কাজেই কীভাবে একটা বই হাতে নিয়া পাঠক বিশ্বাস করবে যে এইটা ভরসার যোগ্য? বইয়ের বিশ্বস্ততা পাঠকের বোধে একেকভাবে চারিত হয়েই যায়। আড়ষ্ট নয় এমন অনুবাদ পাঠকের কাছে আদর কুড়ায়। বাকি বিচ্যুতি ধরার জন্য পরিমাণমতো সময়, নিবেশ ও অধ্যবসায় লাগে।
অ্যানিওয়ে। ‘জগতের লাঞ্ছিত’, ভুইয়া-অনুবাদিত, মন্দ নয় এবং পড়তে যেয়ে অন্তত খটোমটো মনে হয় নাই আমার কাছে। সেই সময় অবশ্য মন্দ-ভালো বুঝে তেমনকিছুই পড়ি নাই, যখন বইটা পড়েছি পয়লা। চাকরির সুবাদে এনজিওতে কাজ করেছে যারা তাদেরে একটা সময়ে ফ্রেইরি, ফানোঁ, কাব্রাল ইত্যাদি কিছু কিছু কপ্চাতে হতো। ফলে কপ্চাইতে যেয়ে পড়া। জাস্ট হবে না বলা যদি বলি নিবিষ্ট পড়েছি।
কিংবা আজও তো অনেকটা তা-ই, যতক্ষণ পড়ে যাওয়া যায় পড়ে যাই। অ্যানিওয়ে। এইটাই যদি হয় সাধারণ পাঠকের একটা ক্যারেক্টারিস্টিক্স তাইলে বলতে হবে ভুইয়ার বইটা পাঠকবান্ধব। অনেকটা দূর অব্দি পড়ে যাওয়া যায় একটানে।
এইটা ঢাকায় পাওয়া যাবার কথা, শাহবাগের বা কাঁটাবনের বইদোকানগুলায়, সিলেটে অ্যাট-লিস্ট বইপত্র দোকানটায় আমি লাস্ট দুই/তিন বছর আগেও তাকিয়ায় দেখেছি বলে মনে পড়ে। এখন তো সিলেটে বাতিঘর ইত্যাদি ছাড়া আরও গণ্ডা কয়েক প্যশ বইশপ হয়েছে।
ভালো কথা, গ্রন্থডটকম সাইটে এই বই নিশ্চিত দেখেছি আমি। পিডিএফ। যদি না পান, এবং যদি দরকার খুব বেশি হয়, তাইলে আপনার নিকটস্থ কোনো বইকালেক্টর বন্ধুর দ্বারকড়া নাড়ুন। বা, আমি নিজের পোষা মাকড়শার ঝুল ঝেড়ে বই বের করে প্রকাশনীর নাম জানাইব না-হয় পরে।
লেখা : আতোয়ার কারিম
… …
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS