আর্কের হাসান ও নব্বইয়ের বাংলা গান

আর্কের হাসান ও নব্বইয়ের বাংলা গান

 

একের নয়, তিনের অবদানে এই নিবন্ধ/রচনা। আজ থেকে একযুগ আগে, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে, এক ধরনের সমবায় বেইসিসে, কোলাবোরেটিভ অ্যাপ্রোচে, এই নিবন্ধের অংশগুলা পার্ট বাই পার্ট তৈরি হইসিলো। কোথায়? আর কোথায়, ফেইসবুকে ছাড়া? আজকের সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ফ্যাসিলিটিগুলা আর নাই। লিখে একটাকিছু ক্রমে ফুটায়া তোলার চেয়ে এখন সবাই সিনেমা বানাইতে চায়। কাজেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় হামাগুড়ি দিতে যেয়ে দেখবেন শুধু হোঁচট খাবেন শয়ে শয়ে এর-ওর স্পন্সর্ড ভিডিয়োর গায়ের লগে। দেখবেন খালি লাইভ আর লাইভ। দেখবেন সবাই মিলে কেবল প্রমাণে ব্যস্ত, প্রমাণ আর প্রমাণ আর প্রমাণ! কী প্রমাণ করতেসে সবাই মিলে? কে লাল, কে কালা, কারা দোআঁশলা। এইগুলা। খালি এইগুলা। আর কোনো চর্চা নাই, বর্ণবাদ ব্যতিরেকে। দেশসুদ্ধা শ্যামবর্ণ, গৌরবর্ণ, কচুবর্ণ, ঘেঁচুবর্ণ লোকেদের লেলিহান লকলকা বান্দ্রামো বজ্জাতির রবরবা অবস্থা। আসলে এই সময়ে সবচেয়ে ভালো চলতেসে বর্ণচোরাদের বেওসা।

কাট ইট শর্ট, একেকটা টাইম আসে একেকটা টাইডের মতো, চলেও যায়, মধ্যিখানে ফেনার মতো রয়া যায় বেফিকির বেপরোয়া ব্যাখ্যাবিশ্লেষণগুলা। বাদামের বিচি খেয়ে ফেলে-যাওয়া খোসারও দরকার নিশ্চয় থাকে দুনিয়ার ফসলজমিন উর্বরাকরণে, সেইটা মাটিবিজ্ঞানী আর উদ্ভিদতত্ত্ববিদ মিলে বুঝায়া বলবেন সময় এলে। কিন্তু সময় তো অপেক্ষা করে না কারোর, তোয়াক্কা করে না কোনোকিছুর, ফলে বেসামাল উজান গাঙের নাইয়া নাও বাইতে যেয়ে বেখেয়াল চোরাবালিতে যায় পড়ে; অকালে সলিল সমাধি ঘটে, না-হয় চিরপক্ষাঘাত।

তা, যা-হোক, যে-তিনের অবদানে এই নিবন্ধ রচনা, তাদের নাম ইমরুল হাসান, ইলিয়াস কমল ও জাহেদ আহমদ। ঘটনাকাল দুইহাজারতেরো বলছি যদিও, চোদ্দও হতে পারে, বড়জোর চোদ্দশুরু। তখন ব্লগযুগ, বাংলাদেশজ লেখালেখিতে, অবসিত হবার পথে। ফেইসবুকে সেসময় স্ট্যাটাস-আপডেটের পাশাপাশি পৃথক নোট লেখার সুপরিসর বন্দোবস্ত, সচিত্র ও অন্য অনেককিছু সংযুক্ত/এমবেড করে দেবার সুবিধাদি ছিল। ফলে ট্র্যাডিশন্যাল ব্লগিঙের বাইরে একটা নিজের-মতো-লেখা-করার সুযোগ এসেছিল। অর্থাৎ, তাৎক্ষণিকতার স্ট্যাটাস-আপডেটেশনের বাইরে ক্ষণেক ভেবেচিন্তে লেখার জন্য নোটস্ অপশনটি বিশেষত কবি-লিখুয়ারা ব্যবহারও করতেন দেদারসে। একটু ছড়িয়েছিটিয়ে, এত বৈষয়িক আঁটোসাঁটো দশায় নিজেরে না নিয়ে, একটু নোক্তা আকারে নিজের ভাব-বক্তব্য টুকে রাখা যেত, পরে কখনো সবিস্তার লিখবার কথাটা মাথায় রেখে। ফেইসবুক পরে একসময় এই অপশনটা তামাদি করে দেয়। অ্যানিওয়ে। এই নিবন্ধ ওই-সময়টায় তৈরি।

ঠিক উপরের অনুচ্ছেদে যে-ব্যক্তিত্রয় স্বনামে উপস্থিত, তাদের মধ্যে প্রথমোক্ত ব্যক্তির নোটে শেষোক্ত ব্যক্তিটিকে ট্যাগলাইনে অ্যাটাচড রেখে ফার্স্ট নোটটা ‘পাব্লিক’ করা হয়েছিল। তদুত্তরে, রেস্পোন্স করতে যেয়ে, শেষোক্ত ব্যক্তির কমেন্ট নিম্নোক্ত নিবন্ধে যেমন-ছিল-তেমন রাখা হয়েছে। এরপরে, এর কিছুদিনের মধ্যে, এই দুই চাপান-উতর নির্ভর করে শেষোক্ত ব্যক্তি নিজের নোটসম্ভারে একটা হাফডান আলাপন আর্কাইভড রেখে দিলে দ্বিতীয়োক্ত ব্যক্তি এসে এই দ্বিতীয় নোটে কমেন্ট করেন, তথা কন্ট্রিবিউট করেন, নোট/নোটক/নোটকার/নোক্তাকার তার সঙ্গে একটু-একটু আরও যুক্ত করেন বার-দুই/তিনেকে যোজন-পুনর্যোজন প্রক্রিয়ায়। এইভাবেই নিবন্ধটা ডেভেলপ করে। এইবার, দুইহাজারপঁচিশ জানুয়ারির সেকেন্ড-হাফের হাড়-নাম্ব-করা হিমে, এই নিবন্ধ যখন একটা সাইটের ফর্ম্যাল ওয়েবম্যাগের এন্ট্রি হিশেবে অফিশিয়্যালি আর্কাইভড হচ্ছে, শেষ নোটটায় দ্বিতীয়োক্ত ব্যক্তির কাইন্ড কন্ট্রিবিউশন তথা তার কমেন্টগুলা অ্যাডেড পার্ট হিশেবে, এসেনশিয়্যালি এডেড পার্ট হিশেবে সংকলিত হচ্ছে। এর বাইরে একেবারেই নতুন যা যুক্ত হচ্ছে তা, নাম্বার ওয়ান এই প্রিফেইস, আননেসেসারি প্রিফেইস, নাম্বার টু, কনক্লুডিং কথাগুলা, মানে, কনক্লুড করার খাতিরে কনক্লুড করা। আর কিছু না।

আরেকটা কথা। টাইমফ্রেইম উক্ত যেহেতু, সকলেই বুঝবেন, সময়টা ছিল এমন যখন কিনা আমাদের জাতীয় জীবনে ‘গান’ নয় বরং ‘জ্ঞান’ (!) চর্চিত হচ্ছিল ধুমিয়ে। সে এক বিতিকিচ্ছিরি। ইউটিউব এসে গেছে। বাংলাদেশের গোল্ডেন টাইমের ব্যান্ডগানগুলা অ্যামেচার/সেমি-অ্যামেচার গলায় আপ্লোড হচ্ছিল তরুণ ইন্ডিভিজুয়ালদের উদযোগে। এক ও অদ্বিতীয় অরিজিন্যালের পাশে একই মিউজিকের/গানের ভার্শন লোকে অ্যাভেইল করতেসিলো অনেক জোরালো ও প্রচুর পরিমাণে। এবং, দুইচাইরজন রেগ্যুলার-পার্ফোর্মিং সাক্সেসফ্যুল ব্যান্ডআর্টিস্ট ছাড়া, বাংলাদেশি ক্ল্যাসিক টাইমের কাল্ট গানগুলার অধিকাংশ অরিজিন্যাল আর্টিস্টই ছিলেন স্টেইজে-অ্যালবামে বা অনলাইনে অনুপস্থিত, তখন পর্যন্ত, এক্ষেত্রে যেমন আর্কের হাসান অনেকদিন অব্দি ছিলেন গরহাজির বা লাপাত্তা। আরও-আরও পরে, একটা লং-টাইম গ্যাপের পরে, একে একে অনেকে ব্যাক করেছেন এক-সময়, হাসানও। পটভূমিকা বা ব্যাকগ্রাউন্ড বলতে, এই নিবন্ধের, এইটুকুই।

ও হ্যাঁ, যার যার বানান, ব্যাকরণ ও ভঙ্গি তার তার মতো যথাসাধ্য অবিকল রক্ষিত হলো; শুধু কিছু টাইপো শুধরে নেয়া গেল। মূলের লেখায় ব্যবহৃত ইমোটিকনগুলা এইখানে হাসি/অট্টহাসি/অট্টহাস্য ও সমবেত অট্টহাস্য প্রভৃতি শব্দ/শব্দজোড়যোগে প্রতিস্থাপিত। সংকলিত করার সময় সংকলনকারের বক্তব্যের অনেক জায়গায় বেশকিছু ব্যক্তিনাম ও অন্যান্য তথ্য দশ বা তারও অধিক বারো বছরের ব্যবধানে এসে একটু গ্যুগল করে কারেকশনের সুযোগ থাকলেও তা গ্রহণ করি নাই। ঠিক কাজ করা হতো হয়তো, অত দরকারটা ভাবি নাই, বা, এমনকি, সমীচীনও।
ইন্ট্রো, কম্পাইলেশন অ্যান্ড কনক্লুশন  : জাহেদ আহমদ

ইমরুল হাসান :


হাসানের গানের কয়েকটা কাভার শুনলাম, পরে পুরানটা শুইনা মনে হইলো, উনারটাই বেটার।

হাসানের তো ইজ্জত এখনো কমই, বাংলা-গানে (জেমস, মাইলস, এবি-র তুলনায়ও)। আমার ধারণা, কপি করার কারণেই। উনার প্রথম গানের ক্যাসেটের নামই তো ছিল ‘কপিয়ার’। কপি করা, নকল করা — এইগুলা ঠিক ক্রিয়েটিভ কোনো কাজ না। কিন্তু উনি যখন গান গাওয়া শুরু করলেন সেই টাইমে আমরা যারা কোচিং সেন্টারে ইংরেজি শিখতাম, ওরাও ইংরেজি গান পুরাটা বুঝতে পারতাম না। এই কারণেও হাসানের গান শুইনা ভাল্লাগতে পারে। এখন তো ইংরেজি গানই শুনতে পারি আমরা, সুতরাং ইংরেজি গানের কপি কি আর ভাল্লাগবে? হইতেই পারে যে, গানটার সাথে এমবেডেড পারসোনাল মেমোরির কারণেই আমার ভাল্লাগতেছে। কিন্তু মনে হইলো, এই যে কপি করা এইখানে তো নিজেরে ইন্সার্ট কইরা ফেলা যায়। এই ইন্সার্শনটাও ভালো লাগত মেবি। কিন্তু পরে হইলো কি, হাসান ‘নিজ’ হইতে চাইলেন, হইতে গিয়া নিজেরে হারায়া ফেললেন। কারণ ‘নিজ’ বইলা তো কিছু নাই।

বেহুদা নিজ হইতে গিয়া কলকাতা যে কিছু হইতে পারে নাই, তার থিকা নাইনটিসের ঢাকার ব্যান্ডগুলির অনেক কিছু হইতে পারছিল, আজম খানের হাত ধইরা। পরে অরিজিনালিটির লেজ আইসা তারে খাইয়া ফেলছে। তখন যদি কপিরে কাভার বলতে পারতাম আমরা, সিচুয়েশন মেবি এতটা বাজে হইতে পারতো না। এখন যে বলা যাইতেছে এইজন্য আবার গাওয়া যাইতেছে, মনেও করা যাইতেছে, হাসানরে; কোনোরকম ইনফিরিয়রিটি ফিলিংস ছাড়াই।
.

জাহেদ আহমদ :


বিশ/পঁচিশ বছর আগের কথা যদিও, মনে পড়ল অনেককিছু। ‘কপিয়ার’ কিন্তু সিকুয়্যাল হয়েছিল, মনে আছে? এক, দুই এবং তিন পর্যন্তও হয়েছিল সম্ভবত। ‘ককটেইল’ নামেও হয়েছিল হোমোলোগাস সিরিজ়, হয়েছিল প্রতিচ্ছবি/প্রতিধ্বনি ইত্যাদি নামেও, সম্ভবত। তবে একটা ব্যাপার তখন খেয়াল করেছিলাম যে, এই টিউনগুলো/কম্পোজিশনগুলো হুবহু ইংরেজি লিরিক্স ফলো করে নাই। এবং এই কারণেই জিনিশগুলা ভালো লাগত অধিক, হয়তো, বড়বেলার ধারণা দিয়া রায় দিচ্ছি অবশ্য। তখন হিন্দি সিনেমাগানের বাংলাটা বাজারজাত করা হতো অলমোস্ট বলিউডি রিলিজের সঙ্গে সঙ্গেই। কুমারশানু-অলকা-বাবুল প্রমুখ মূল প্লেব্যাকের শিল্পীদের দিয়াই বাংলাটা গাওয়ানো হতো। সেইগুলাও তথাকথিত মূলানুগ থাকত না আদৌ, ফলে এত অবলীলায় হিন্দি-বাংলা পাশাপাশি লোকপ্রিয় হতো। ও হ্যাঁ, সেইসময় ইংরেজি গানের কপি-মিউজিকের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন ছিলেন এবং যথেষ্ট পরিচিতিও পেয়েছিলেন আমাদের মাঝে। যেমন বাপ্পি খান নামের একজন, ফেরদৌস খান বাপ্পি সম্ভবত, উনারে এখন কোথাও দেখি না গানবাজনায় বহুকাল। প্রিন্স মাহমুদও মনে পড়ে এই-রকম অ্যালবামে গেয়েছেন, পরে ইনি অবশ্য সুরকার/অ্যারেঞ্জার হিশেবে মিক্সডঅ্যালবাম অর্গ্যানাইজ় করে ব্যাপক খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন। ওয়ারফেজের সাঞ্জয় বা পরবর্তীকালের মিজান, এরাও কি শুরুর কিছুদিন এই-রকম অ্যালবামে গাইতেন না? ক্যাসেটখাপগুলার স্মৃতিও ঝাপসা হয়ে এসেছে এই প্রৌঢ়বেলায়। কিন্তু ‘কপিয়ার’ প্রোজেক্টে হাসান একলাই শিল্পী ছিলেন নাকি আরও দুইতিনজনও ছিলেন সঙ্গে, বেমালুম ভুলে গেছি। ঠিক সোলো অ্যালবাম বলতে যা বোঝায়, হাসানের ‘কপিয়ার’ ঠিক তা-ই ছিল না বলে মনে হয়। অ্যানিওয়ে, এ-ব্যাপারে নিশ্চিতও নই। নিশ্চিত হতে খোঁজপাত্তা লাগানো দরকারি।

‘নিজ’/‘পর’/‘অপর’, ‘আত্ম’/‘অনাত্ম’ প্রভৃতি নিয়া দার্শনিক প্রতর্ক মডারেশনের মুরদ আমার নাই। কিন্তু অন্ধের ন্যায় হাতিগাত্র হাতড়ে যেইটা বুঝতে চেয়েছি সংক্ষেপে সেইটা এ-ই যে, ব্যাপারটা মানুষের ডেইলি-লাইফে যেমনটা আছে তেমন, মানুষের হাঁটাচলা মানুষ কপি করে বলেই মানুষ হাঁটে; এরপরও প্রত্যেকের হাঁটাই ডিটেক্ট করা যায়, অ্যাট-লিস্ট পারা যায় চাইলেই, কাজেই অনুকরণ/অনুসৃতি ছাড়া তো হচ্ছে না হাঁটাচলা বা নাচাগানাবাজানা; আমাদের সার্বত্রিক হাঁটাচলা অবচেতনায় অনুসৃতির ভিতর দিয়াই সাধিত হয়; এর বাইরে একটা আলাদা অংশের মধ্যে কপিয়িং/নকলানুকরণের দক্ষতাও গড়ে ওঠে যারা কিনা সচেতনভাবে ব্যাপারটা কাজে লাগায়া অ্যাচিভ করতে পারে নিজের অভীষ্ট। গোল কিংবা ঘাপলা যা-ই বলি বাঁধে তখনই যখন অনুকরণকারী নিজের অভিপ্রায় সম্পর্কে চেতনাহারা হয়ে রেলগাড়ি ঝমাঝম চালায়া যান সৃষ্টিসুখের উল্লাসে। ব্যান্ডগানে ব্যাপারটা আদ্যোপান্ত না-হলেও বহাল ছিল একটা টাইম পর্যন্ত, অন্তত কয়েকটি চিহ্নিত ব্যান্ড তো ছিলই যারা কপিগাড়ি হাঁকিয়েছেন চিলমারি বন্দরের পানে সেয়ানা না-হয়েই। সেয়ানাদের সমীহ করে দুনিয়া, সন্দেহ নাই, ট্যাগোর থেকে শুরু করে জীবনানন্দ হয়ে এ-পর্যন্ত গল্পকবিতাবাদ্যিবাজনাভুবন তো পজ়িটিভলি সেই সেয়ানাগিরিরই ইতিহাস ইন ওয়ান সেন্স। অবশ্য কপি গাওয়ার সঙ্গে ভার্শন গাওয়ার ব্যাপারটা আলগ করে দেখতে হবে সম্ভবত।

অবশ্য ‘কপিয়ার’ ইত্যাদি ইনিশিয়েটিভ/অ্যালবাম আমরা পজ়িটিভলিই নিয়েছি শিরোনামেই সৃজনপ্রক্রিয়া অ্যাক্নোলেজ করার কারণে। একটা ইন্ট্রেস্টিং ব্যাপার এ-ই যে, এক্ষণে লিখতে যেয়ে মনে পড়ল, ওই সময়েই মার্কেটে একটা মিউজ়িক-অ্যাসোসিয়েটেড ডিভাইস বেরিয়েছিল প্রথম, — ‘কপিয়ার’ নামেই ছিল যার পপুলার পরিচয়, — যেইটা দিয়া প্র্যাক্টিস করতেন উঠতি মিউজ়িশিয়্যানরা, বিশেষত গিটারলার্নার যারা তাদের মধ্যে এর ব্যবহার জনপ্রিয় হয়, যেখানে একটা রেকর্ডেড বিটের সঙ্গে টেম্পো ধরে প্লে করা যায় গিটারটা। সাধারণত জনপ্রিয় ইংরেজি গানের ড্রামবিট বা কিবোর্ডপিস পুরে রাখা থাকত ওই ডিভাইসটায়। অ্যানিওয়ে।

‘এমবেডেড পারসোনাল মেমোরির কারণেই’ মিউজ়িক বলি কিংবা সাহিত্য উপভোগ্য হয় ন্যাচারালি, এইটা ভালো পর্যবেক্ষণ সন্দেহাতীতভাবে, অ্যাট-লিস্ট আমার কাছে তেমনই মনে হয়। এবং, ডেফিনিটলি, ‘ইন্সার্শন’ আরেকটা জরুরি জিনিশ; ‘নিজেরে ইন্সার্ট’ করে ফেলতে পারার বোধ যদি লিস্নার/রিডার/ভিয়্যুয়ারের মধ্যে জন্মায় সেইটা ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিটি হিশেবে একটা সাহিত্যখণ্ডে/গানগাত্রে লেগে থাকে, এর চেয়ে বেশি কি চাইতে পারে একজন ভোক্তা? ‘আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে’ … আমার তো দুঃখটুঃখ নাই, ‘ইনফিরিয়রিটি ফিলিংস ছাড়াই’ জীবনটা কাটিয়া যাইছে দিব্যি হাসানের গান শুনে। ডুয়েট স্মাইল।
.

ইলিয়াস কমল :


হাসানের কথা গতকালও একজনের লগে আলাপ করলাম। হাসানের ইজ্জত কম; কারণ, হাসান সবসময়ই নিজের মতো হইতে পারে নাই। তার আইডলের মতো হইতে চেষ্টা করছে। কপিয়ার  থেইক্যা শুরু করলেও যখন সে তার নিজের ধারাটা এস্টাব্লিশ করতে পারতো, তখনো তার দুইন্যা সে তৈয়ার করতে পারে নাই। বাংলা ব্যান্ডে মাকসুদের পরে হাসানের মতো ভরাট গলা কম শিল্পীর ছিলো। কিন্তু কপিয়ার-১, ২, ৩-এ নকল করতে করতে একসময় তার গলাটা নকল একটা গলায় রূপান্তরিত হইছে। ফলে আমরা যখন আর্ক, স্বাধীনতা  ব্যন্ডে হাসানের গান শুনতাম তখন দেখতাম একটা ভারি গলার চিকন গান। এই গায়কি স্বতঃস্ফূর্ত ছিলো না।

আর কপিয়ারের সবগুলোতেই হাসান একা ছিলো না। আমার যতদূর মনে পড়ে, কপিয়ার  ওয়ানে আরও তিনজন সাথে ছিলো, টুতে আরও দুইজন। তিন নম্বর কপিয়ার  আমি শুনি নাই।
.

জাহেদ আহমদ :


চমৎকার। হ্যাঁ, সেইটাই, আমি বিলকুল স্মৃতিবৈকল্যে ভুগছিলাম ব্যাপারটি নিয়ে এবং ভাবছিলাম পুরাটাই আমার মনগড়া কি না; যা-হোক, একটা সাপোর্ট পাওয়া গেল টুটাফাটা আমার স্মৃতির পক্ষে; অ্যাট-লিস্ট দুইটা ব্যাপার নিশ্চিত যে এককভাবে হাসানের প্রোজেক্ট ছিল না ‘কপিয়ার’ এবং একাধিক কপিয়ারের অস্তিত্বও স্মৃতিবিভ্রাট নয়। তৃতীয় কপিয়ারের প্রেজেন্স না-ও থাকতে পারে, প্রতিধ্বনি/প্রতিচ্ছবি/ককটেইল ইত্যাদির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছি হয়তো; তবু অচিরে এর একটা সুরাহা পারব করে ফেলতে এবং রেজ়াল্ট জানাব হোয়াটেভার। (অট্টহাসি)।

হাসানের ভোয়েস কোয়ালিটি ঈর্ষণীয়ই ছিল গোড়ার দিকে; এত দম, চূড়ায় এবং খাদে দুইখানেই উদাত্ত রইতে পারার মতো গলা বাংলা রকে বেশি ছিল না এবং নাই মনে হয়। আশিকুজ্জামান টুলুর মেন্টোরিং যদ্দিন ছিল, হাসানের বেস্ট ইউজ় হয়েছে বোধহয়। হাসান নিজে ব্যান্ড করতে যেয়ে লেজেগোবরে করে ফেলেছেন নিজেকে। একসময় বিরক্ত হতে হতে বেআক্কেল হয়ে ভরসা হারায়েছি উনার উপর থেকে। অ্যানিওয়ে। একসময় আফসোস করতাম যে এই ভোক্যাল যদি ওয়ারফেজ  পেত তবে সান্ডে-মান্ডে ক্লোজ় করে ফেলত রকদুনিয়ার। (হাসি)। স্যরি। মিজান, বালাম, বাবনা বা সাঞ্জয়ের গলা বা গায়কী সম্পর্কে একটুও অনাস্থা/অশ্রদ্ধা দেখাতে কথাটা বলি নাই। হাসানের যে-কয়টা নাম্বার আজও শুনি, সেগুলো টুলুর অ্যারেঞ্জমেন্টে আর্ক-ডিউরিং কাজ। পরের পর্যায়ে একবারই শুধু আশাবাদী হয়েছিলাম অন্য একটা কারণে, সেইটা হাসানের একটা গানের ধরনধারন দেখে, মিক্সড অ্যালবামের রমরমা কালে ‘আমার আল্লা-নবিজির নাম’ কথাকলি দিয়া হাসান একটা গান গেয়েছিলেন নিশ্চয় ইয়াদ হবে আপনাদের। ওই গানটা শুনে আশা জেগেছিল হাসান আরেকটা ফেইজ় শুরু করতে চলেছেন কীর্তনের বাইরে বাংলাদেশের গেঁয়ো/সেমি-শহুরে ভিক্ষাজীবীদের গলায় লতানো অজস্র সুর/গায়কি রিইনভেন্ট/রিপ্রেজেন্ট করতে চলেছেন এইবার। কিন্তু না, আশার গুঁড়ে হাসান বালি ছিটাইতে পেরেছেন বারবার বিরক্তিকরভাবে। এই কিসিমটাকে পরে এত অহেতু অপব্যবহার করেছেন তিনি যে বুঝতে বাকি থাকে নাই হাসানের কেরামতি; ব্যাপারটা ছিল অচেতনের, কখনোই চিন্তাভাবনাপ্ল্যান ছিল না হাসানের ক্যারিয়ারে, ঝড়ে বক মরে মাঝেমাঝে, চিরদিন বক দেখতে চাইলে বকপাখি বিষয়ে একটু বুঝসমুজ় থাকা চাই যেইটা হাসানের ছিল বলে মনে হয় নাই। (অট্টহাসি)।

ও হ্যাঁ, ইজ্জত-বেইজ্জতের ব্যাপারটা আসলে আক্ষরিক অর্থে নেই নাই, যেমন ‘কপিয়িং’ ব্যাপারটার সঙ্গে ‘কাভার স্যং’ মেলানোর ব্যাপারটাও গোলমেলে বিধায় অ্যাভোয়েড করেছি। ইংরেজি গানে যেইটা ‘কাভার স্যং’, হাসানের কপিয়ার বা আর-আর সমস্ত অনুসৃত/নিম-অনুসৃত সংগীত ওই-অর্থে কাভার স্যং বললে একটু অসুবিধা বৈকি। ‘নিজ’-‘পর’ দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হওয়া থেকে বাঁচতে চেয়েছি, সারেন্ডার করেছি ডাইরেক্ট, ইচ্ছে করে যতটা-না তারচে সামর্থ্যের অভাবে। (অট্টহাস্য) এরপরও মনে মনে ভাবি ব্যাপারটা, মাঝে মাঝে, অ্যানিওয়ে। বেশ পুরানা আমল ফেরানো হলো সবাই মিলে, টেইক আওয়ার সিন্সিয়ার থ্যাঙ্কস ফর ইয়োর সদয় পার্টিসিপেইশন। (সমবেত অট্টহাস্য)।


ইলিয়াস কমল :


আপনার এই অবজার্ভেশন ঠিক। তবে ‘প্রতিধ্বনি’, ‘প্রতিচ্ছবি’ অ্যালবামগুলো কি মাইলসের একক অ্যালবাম না? আমার যতদূর মনে পড়ে শেষ দিকে মানে ২০০৪/’০৫ বা তারও পরে মাইলস  তাদের অ্যালবামে নামের শুরুতে ‘প্র’ বাদ দেয়। ততদিনে অবশ্য মাইলসের গানেও আর আগের সৌন্দর্য নাই।

টুলুর কথা মনে করাইয়া দিলেন। এই লোকটাই আসলে হাসানকে আবিষ্কার করছিলো। তার মেন্টরিং-এ হাসানের সাথে একজন ভালো মিউজিক-অ্যারেঞ্জার হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো মাহমুদুন্নবীর পোলা পঞ্চমের। কিন্তু টুলু পার্মানেন্টলি চলে যাওয়ার পর এই দুইজনের ইতি ঘটে।

হ্যাঁ, হাসানের ঐ ফকিরি টাইপের গানটাও কিন্তু তার নিজের ইচ্ছা বা আগ্রহের জায়গা ছিলো না। ঐটাও কোনও একজন (প্রিন্স মাহমুদ কি না, নিশ্চিত না) মিউজিক-ডিরেক্টরের আইডিয়া বেইজড। গানটা প্রভাবও ফেলছিলো দারুণ। কিন্তু কই? তারপর আর নাই।
.

সংকলনকালিক কনক্লুশন :
এই আক্ষেপগুলা আমাদের থেকে যাবেই। দিনশেষে এই আক্ষেপে, এই আফসোসে, যে-জিনিশ মিশে থাকে সেই জিনিশটাই খাঁটি জিনিশ। রিয়্যাল শ্যুগার। বাংলাদেশের রকসিন নিয়া, বাংলার আর্বান পপ কালচার নিয়া, যত বেশি স্মৃতি বা/ও স্মৃতিভ্রম কলমে-কিবোর্ডে ক্যাপচার করতে পারব, তত বেশি ফর্শা হবে আমাদের পপুলার কালচারের ফোরগ্রাউন্ড। কথা আপাতত অতটুকু। ক্যুল উইন্টার। গ্রাসিয়্যাস।


ইমরুল হাসান রচনারাশি
ইলিয়াস কমল রচনারাশি
জাহেদ আহমদ রচনারাশি

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you