হেমন্তিকা হাজারতেইশ

হেমন্তিকা হাজারতেইশ

মেডিটেইশনঘণ্টা
বাতাস বিষাক্ত বলে বসতে পারবা না, তা নয়, ঘাস
বিষাক্তই, টিগার্ডেনে থাকে বারোমাস
কচুঘেঁচু, ছড়ার পানি, ঝিনুক ও জলপতঙ্গ, সব-কয়টা বাঘডাঁশ

মরে যায় টিপ্ল্যান্টারের বিষাক্ত পরিকল্পনায়

নীরবে উড়ুক তারা, আরও গভীর অতলান্তি নীরবে
যেখানে আকাশ নীল, অরণ্য অবলীল
জোড়া পাকদণ্ডির বাঁকে একটা আশ্বাসবাক্যের মতো অস্পষ্ট হরিণঝিল
শরৎকাল, উৎসব হবে

এগারো নম্বর ওজনঘরের অদূরে একটা বানরছানা আলস্য পোহায়।

.
বৃষ্টিভিজা ম্যাগপাই
দিগন্ত বসে থাকা অবস্থায়
বৃষ্টিতে ভেসে যায়

টিগার্ডেন, ওজনঘর, ঘুটঘুটা আন্ধাইর

খাড়ায়া থাকায় তেমন-একটা ফায়দা নাই
ভিজবা খামাখাই

দিগন্ত বসে থাকে, একটানা আশ্বিনসন্ধ্যায়, স্থির।
.

আশ্বিনী বৃষ্টিধারা
আশ্বিনে এসে এই নিরাধারা বাদলির দিন

প্রত্যেকটা পাড়ায় ছিল চুরটচায়ের দোকান
দুইচাইর পদের বিস্কুট আর খয়েরদোক্তা পান
আর ছিলেন কাঁচাপাকনা মুরব্বিদের গ্রুপ
উনাদের কথার সময় বেঞ্চে-বসা বাকি সবাই নিভন্ত, চুপ

শুনতাম, বলতেন তারা — আশ্বিনে এই বৃষ্টি
বিলকুল অনাসৃষ্টি

কিয়ামতেরই চিন।
.

মহালয়া
তর্পণ সেরে এসে ব্যথাহৃষ্ট মনে
একটা কালভার্টের ঢালাই পাটাতনে

বসেছে অলক

ততক্ষণে দুপুর গড়ায়া ভাতঘুমজমানো অপরাহ্ন
দূর্বা দিলাম জলের ছিটায় সঙ্গে দিলাম ধান্য

অলকের আদ্যোপান্ত উত্তরপূর্ব সমস্তকিসু শুভ হোক।
.

পাফিং বুদ্ধা
টানতে টানতেই হয়
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, গাঢ় প্রণয়

টানতে টানতেই হয় সিগ্রেটস্টিক
ঐহিক
যাবজ্জীবন
উত্থান, পতন
টানতে টানতে বেদনাবাদিকার অকাল বোধন

শরতেরই স্মৃতি ফিরায়া আনি শীতের সময়।
.

তর্পণ
চাল কালিজিরা ফুল হর্তকি
আর লাগে খাগ

তুমি হয়তো বলবা আন্দু বুজরুকি

আমি বলব, অনুরাগ
যদি না থাকে একান্ত, অপরের প্রতি —
তিনি কত সৎ ও সতী
বিবেচনা না-করেই বলা যায়, পাতক ও পাতকী
নিশ্চয় জানিয়া রাখিবায়

পানির উপর খাড়ায়া চালে কালিজিরায় ফুলে হর্তকি আর খাগে
এই পিতৃতর্পণ
বহুক্ষণ
ভাবায় আমায়

একটা চায়ের বাগানে ব্যথাদ্রাবী বিবশ সন্ধ্যার অনুরাগে।
.

টকিং টং
মহাকালের ঘড়ির গম্ভীর ঢং ঢং

সন্ধ্যা আটটা বেজে এক
খবর পড়তেসি, সিজন্স্ গ্রিটিংস্, টিগার্ডেনে হেমন্তের ভেক
অলরেডি শিয়ালেরও বদলে গেসে গলা

পায়ে-চলা পাব্লিকের কাছে একটা চায়ের টং
জলে-ডোবা কাহিনির মাছটির মতো, কথাবলা।
.

এই হেমন্তে
যেহেতু অকাল বোধন

তোমায় বলি, তিলবর্ণা ধানের দোহাই
মিথ্যা গানবন্দনায় হৃদয়ের রোদনগুচ্ছ রইদে শুকাই
নিশাকালে চায়ের বাগানে করি বিবিধ ধুনফুন

আমি ও অলক

সত্যি বলতে এই কথাটাই মিথ্যা
প্রায় শীতে এসে দেবীর পৌরোহিত্যা

আসন্ন সমস্ত দুর্গাপূজায় আবহমান সকলের মঙ্গল হোক।
.

উত্থানপর্ব
অলকের সঙ্গে একটা আশ্চর্য সন্ধ্যায়

কেন ও কতটা আশ্চর্য, বলব রচনায়
স্থির করে ফেলসি এমন সময়
নিজেই নিজের রচনায় এসে প্রেজেন্ট হয়
অলক স্বয়ং

বলে, আটটা বাজে, এখন উঠি বরং!
.

পরমহংসতোরণ
কাশফুলে ছেয়ে আছে রৌডস্ অ্যান্ড হাইওয়ের বালুর স্তূপায়
কার্তিকের মাঝভাগ প্রায়

শীত এসে যায়

এবারকার শারদীয় দুর্গাপূজায়
কেউ লক্ষ না-করায়
রামকৃষ্ণ মিশনের তোরণকোনায়
শিউলিতরু মুহূর্মুহূ পুষ্প ঝরায়
হেমন্তশুভেচ্ছায়

এই বিচ্ছিন্ন বোধনের শুভ শারদীয়ায়।
.

হেমন্তের বিলাপ
মলমাস নয়, হেমন্ত

দুর্গা দুয়ারে, যে ঘুমন্ত
উঠিয়া খাড়া

তাই বলে এতটাই বেহুঁশ
ভ্রুক্ষেপ নাই কারো, উশখুশ
হারাম একফোঁটা নাই, বাঁড়া!

আধারাস্তায় হেমন্তে এই অকাল বোধন
মুখস্থ শুভ শারদীয়… শুভ শারদীয়া… না বলে
হেমন্তে এই নির্দ্বন্দ্ব উৎসবাঞ্চলে

হ্যাপি হেমন্তিকা জানাতে এতটা আটকায় কেন, মহাত্মন!

.
চকখড়িনীল চরাচর
ঘুমনিদ্রা হারাম
হয়ে যেত যখন আমরা বাজাতাম

ডপকি ও দোতারা বাবা আবঙ্গিশার রওজায়

রাত বারোটায়
লাস্ট জয়েন্টের সময়টায় আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বিদায় জানাই
দিগন্ত, অলক ও অন্যান্য সবাই মিলে
এই শিরীষগাছের মাথার উপর খণ্ড খণ্ড চকখড়িনীলে

ব্যথাভিভূত, বনস্পতিস্মিত, সমবেত প্রণয় বাজাই।

.
বিদায়বাণী
বিদায় নেয়া সহজ কাজ নয়

বিদায় নিবার সময়
প্যারালাইসিসের প্যাশেন্টের মতো উমাফাটা লাগে
ছেড়ে দেবার বাজনা বাজে, একলা বাগানে, বেহাগে

বিদায় নিবো, গলাটা আলতো ধরে যায়
হৃদয় থানকাপড়ের মতো অস্পষ্ট কোঁচকায়
তারপর আল্লা সহায়
যার যার রাস্তা মাপি, নিই বিদায়।

.
হৈমন্তী ইভনিং

ধরো, হৈমন্তী টিগার্ডেনের হিমলাগা হাওয়ায়
শীত প্রায় খাড়া, দোরগোড়ায়

শিশিরে ভেজা ন্যারা আর খড়ের বিস্তার

ধরো, তোমার কিচ্ছু যায় আসে না, আমিও করতেসি স্বীকার
ওজনঘরে এই জিনিপোকায় ঝলোমলো হৈমন্তী সন্ধ্যায়
শারদীয় শুভেচ্ছা না-জানালে কার কী আসে যায়!
.

শারদীয়া লাইটিং
বাগবাড়ি আখড়া গল্লির বারোয়ারি মণ্ডপে এবার
দুর্গার ভরভরন্ত সংসার

আলোকসজ্জিত

বরাদ্দ তুলনামূলক আগের চেয়ে এইবার প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত
হইসে, সেহেতু, হেমন্তে হেন শরতের উৎসার।
.

ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ উৎসবরজনী
ঈদে, দুর্গাপূজায়
দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত স্থাপনায়
আলোকসজ্জা হয়
কেবল শহরাঞ্চলে নয়
এমনকি রিমোট উপজেলায়
অ্যাডমিনের খর্চায়

বাইরে থেকে ভেতরের পরিস্থিতি বোঝা দায়

এমনিতে তো সম্প্রীতির জয়গাথা গাই
কিন্তু তলে তলে প্রেমপিরিতির খ্যাতা পোড়াই
ইলেকশনের আগে আগে চক্ষুকর্ণ খোলা রাখা চাই

নিজের দলের পক্ষে এবং সকলের অলক্ষে
একবার আমি হাসিল করব প্রকাশ্য জনসমক্ষে
নেতার সম্মান

গাইব যখন নেতার শানে একটা বাউলা গান।
.

পৌরপরিক্রমা
বাজি পুড়তেসে, দূরে কোথাও
কোনো-একটা বাগানিয়া গাউ
দশমীর শেষ দৃশ্য রচনা করতেসে একাগ্র, প্রণয়বিলীন

কোত্থেকে এত ঘনঘোর বিদায়ের সাজ
আজ
সর্বজন সর্বসমাজ
জানে একটি ডিপ ডিপ্রেশন
চলতেসে এখন

বিসর্জনের দিন

বর্ষণ হতে পারে যে-কোনো সময়
মেঘলা আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া পানির পুণ্যসঞ্চয়
আবহাওয়াবিদের সংবাদ উপস্থাপনে এসেছে জোর

প্রসেশনে ভেসে যায় হেমন্তসন্ধ্যায়
শুভ বিজয়া জানাবার সমুজ্জ্বল সপ্রতিভতায়

শ্রীহট্ট শহর।
.

বিসর্জন
ভাসান সম্পন্ন। শুভ বিজয়া জানাও

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও কথা দাও
তুমি ভালা থাকবা। মাথা ঠাণ্ডা রাখবা। খাবাদাবা
মাঝেমধ্যে এখানে-ওখানে যাবা

সাধুসঙ্গ। ভবরঙ্গ। ধনুর্ভঙ্গ পণ করো কখনোই মিজাজ না-হারাবা

জানিয়া-বুঝিয়া যাপন করিলে এই জীবনের জাল, জুয়া, জোচ্চুরি
ভুরি ভুরি
নিজের চোখে দেখতে পাবা

ভাসান সম্পন্ন। শুভ বিজয়া জানাও। অহিংস পরমহংস সুখে নিদ্রা যাও।
.

ফেস্ট ফিস্ট 
এ কেমন দুর্গাপূজা

আমায় একটু সব্জি লুচি গুটিসয়া আর পায়েস খাইবার ইচ্ছায়
সিলেটের ঘনকালো ঘুমে-ধরা রাস্তায় রাস্তায়
রেস্টোরান্ট লাগে খোঁজা?

সার্বজনীন, সর্বজনীন
আরও আরও কঠিন কঠিন
শব্দ দিয়া জব্দ করিবায়
আর কতদিন?

সংস্কৃতি বলো সম্প্রীতি বলো, খাওয়াদাওয়াটা লাগে
পেটের ভিতর দিয়া পৌঁছানো যায়, গন্তব্যে, অনেক আগে।
.

ফুলকো লুচির মরশুম
নরম করে যারা লুচি বানাতে পারে
এই ইষ্টক-কঠিন সংসারে
এরা সাক্ষাৎ স্বর্গদূত

অদ্ভুত!

কত নরম করে-যে একটা খাবার বানানো যায়
বিড়ালের কানের কাছটার মতো রক্তস্বচ্ছ রৌদ্রশোভায়
খাইতে যেতাম লুচি-নিরামিষা পার্বতী বিদায়ের পরে
এই নিরাত্মীয় শহরে
একদিন রূপকের মায়ের হাতে পায়েসান্ন, দুর্গাপূজায়

এখন উভয়ের, রূপকের এবং মাসিমার, স্মৃতিটুকু ধরে রাখি ক্ষীণ কবিতায়।
.

নবীন লোহার
হেমন্তে মৃতদের মুখগুলি
স্মৃতির শিশিরমাখা গায়
কালো শোকের নেকাব সরায়

নাকে তার মুখে তার বাংলার শহরের তৈলাক্ত ধূলি

সিটি কর্পোরেশনের হার্মাদ চেহারা
তাদেরে দেখে যেতে হয় নাই, তারা
শারদীয় সুরমায় হাওয়া খাইতে যেত সন্ধ্যায়

তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়
রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কেটে ফ্ল্যাগ উড়াইতেসে নৌকায়
আমাদের বাগানবন্ধু নবীন লোহারের কণ্ঠ কনফুসিয়াসের মতো শোনায় —

কিতা আর কইতাম কউক্কা দাদা
বাঁচিয়া থাকতে কেউ বোঝে না কাউরোর মর্যাদা।

.
রাগ দুর্গা
টুং টাং করতেসে দ্যাখো মহান মানুষেরা, বাজনায়

একটু পরে-যে কেমন হবে এখনই তা বলে দেয়া যায়
ঝড়ো হাওয়া আর পোড়ো বাড়িটায়
মিলে যাবে একাকার চায়না রাশিয়ায়
ইউক্রেনে জেলেনিক যুদ্ধ ছেড়ে পড়ে রবে বাংলা কবিতায়

ইউটিউবে, এই গ্রিন প্ল্যানেটে, প্যাটেন্ট ইন্ডিয়ায়

বাজাইতেসেন রবিশঙ্কর, আলি আকবর খান
রাগ দুর্গায় দুর্গেশ্বরী — মিউজিকে এহেন মহান
ঘটনাটা বাস্তবিক ঘটসিলো বলে দেখতে পাই

ইউটিউবে, একাকী, নিরাই

কিসুদিন আমি
চিন্তা করতেসি স্ক্রিনে সেট করে শুনব দুর্গেশ্বরী দিবাযামী

জিনিশগুলা অ্যাভ্যাইল্যাবল হওয়ায়
কী-যে অ্যাম্যাইজিং লাগে
রাগে-অনুরাগে
কোমলে-গান্ধারে
এ বেদরদ সংসারে

একক্লিকে আলি আকবর, রবিশঙ্কর, বিলায়েৎ শোনায়!

জাহেদ আহমদ
অক্টোবর ২০২৩


গানপারে দুর্গাপূজা

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you