কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ একযুগেরও আগে সুনামগঞ্জে একক সংগীতসন্ধ্যা করেছিলেন। পৌর-অডিটরিয়ামে সংগীতবোদ্ধাদের ঢল নেমেছিল। তিনি প্রায় দুই ঘণ্টারও অধিক সময় রবীন্দ্রসংগীতে বুঁদ রেখেছিলেন আমাদের। দুই ঘণ্টা মোহাচ্ছন্ন ছিলাম আমরা। সংগীতের যাদুর বাকশো খুলে গিয়েছিল সেদিন।
তবে কমন গান নয়, আনকমন, কেউ সাধারণত গায় না এমন গানই করেছিলেন বেশি। অপরিচিত গানগুলো শুনতে ভালো লাগছিল আমার।
সেদিন রাত এগারোটার দিকে এই মহান সংগীতমহাজনের সঙ্গে কথা বলতে রাজুদা (Moloy Chakraborty Raju)-র বাসায় চলে যাই। প্রায় ঘণ্টাখানেক কথা বলি। কী বিনয়, দরদ, মায়াজড়ানো কথা!
আমি বলেছিলাম, খ্যাতিমানরাও রবীন্দ্রনাথের পরিচিত গানগুলো গায়, কিন্তু আপনি অপরিচিতগুলো করেন বেশি, কেন?
বলেছিলেন, এগুলো গেয়ে আনন্দ পাই।
বলছিলাম, অনেকের কণ্ঠেও রবীন্দ্রনাথ শুনি, কিন্তু আপনার কণ্ঠে শুনলে মনে হয় গান নয় এ যেন প্রার্থনা!
তিনি বলছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তো প্রার্থনার মতোই।
নানা বিষয় নিয়ে আরো এক উঠতি তরুণের বুঝে, না-বুঝে অনেক কথাবার্তা হয়। কদমবুসি করে বিদায় নিয়েছিলাম। দু-দিন পরে কালের কণ্ঠে ‘শহরে অতিথি’ নামে আমার করা একটি বক্সরিপোর্ট ছাপা হয়।
ওই দিন আসার আগে উনার একটেল নম্বর নিয়ে আসি। রিপোর্টটি ছাপা হওয়ার পর উনাকে ফোন করি। তিনি আমার নিউজ পড়েছেন বলে জানান। এরপর প্রায়ই ফোন করতাম। আমাকে সুনামগঞ্জের দুষ্টু বলে ডাকতেন। দু-বার উনার গানের ডেরায় দেখাও হয়েছিল।
আমার সৌভাগ্য, এই রবীন্দ্রমহাজনের লগে আমার দেখা ও কথা হয়েছিল। স্নেহ কুড়িয়েছিলাম তাঁর।
আজ রবীন্দ্রসংগীতভুবনের এই নিবিষ্ট শিল্পী চলে গেলেন। পিছনে রেখে গেলেন একটা মনমজানো সংগীতভুবন, যেখানে আমাদের ডুব দিয়ে থাকতে হবে সতত।
মহান এই শিল্পীর জন্য অতল শ্রদ্ধা।
- লোককবি তাজউদ্দিন ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 25, 2025
- শাহজালাল শাহপরান গ্রামবাঙলায় গাজির গান || তুহিন কান্তি দাস - November 22, 2025
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025

COMMENTS