ইন প্রেইজ অফ সিনেমাটোগ্রাফি || ইলিয়াস কমল

ইন প্রেইজ অফ সিনেমাটোগ্রাফি || ইলিয়াস কমল

সিনেমার পরিচালক অভিনাষ অরুণ যখন ট্রেলার শেয়ার দেয়, তখনই কেমন যেন আরাম আরাম একটা ফিল পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো সিনেমাটা চোখে ও মনে আরাম দিবে। অপেক্ষা করছিলাম, কবে মুক্তি পাবে!

তার আগে একটু অভিনাষকে নিয়ে বলা যাক। সে মূলত বলিউডের সেই ধারার সিনেমানির্মাতা যার অগ্রজ পুরুষ হিসেবে সন্তোষ শিভানের নাম আনা যায় অনায়াসেই। সন্তোষ শিভানকে যারা চেনেন ও জানেন, তারা জেনে থাকবেন ভারত থেকে প্রথম আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার সমিতির সদস্য সন্তোষ শিভান। শাহরুখের আশোকার মতো সিনেমার সাথে ‘বিফোর দ্য রেইন’-র মতো সিনেমার পরিচালক। সন্তোষের পরিচালিত সিনেমা দেখলে যে অভিজ্ঞতা হতো, তা সবার আগে বোধ করতো চোখ। কোনও যন্ত্রণা বা চাপ বোধ করতো না। যেমন, রাহুল বোস ও নন্দিতা দাশ অভিনিত ‘বিফোর দ্য রেইন’-র কথাই ধরি। আপনি শুধু সিনেমাটোগ্রাফি দেখার জন্যই সিনেমাটা দেখতে পারেন। অভিনাষও অনেকটা সেই ধারারই নির্মাতা বলা যায়।

সিনেমায় তার — অভিনাষের — যাত্রা শুরু অনুরাগ কাশ্যপের ‘ডে আফটার টুমরো’ নামের শর্টফিল্মটা দিয়ে। রাধিকা আপ্তের অভিনয় করা ইউটিউবে-থাকা সিনেমাটা আপনারা অনেকেই দেখে থাকবেন। তারপর নির্মাতা হিসেবে যখন সে প্রথম মারাঠি সিনেমা ‘কিল্লা’ বানায়, তখন তা বার্লিন ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে ক্রিস্টাল বিয়ার ও ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জেতে। সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে ‘মাসান’ ও ‘কারওয়া’-র মতো সিনেমাও করেছেন। আরও সহজে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বলা যায়, ওয়েবসিরিজ ‘পাতাল লোক’-র পরিচালক অভিনাষ! ফলে তার কাছ থেকে প্রত্যাশাটা মোটেও কম ছিলো না।

সেই জায়গায় সিনেমা দেখে প্রত্যাশা মেটেনি এই কথা বলার সুযোগই নেই। বরং বারবার মনে হয়েছে, বলিউডের সিনেমায় যে আরামদায়ক গল্প বলার ধরনটা বরাবরই অবহেলিত রয়ে গেছে তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই সিনেমা ‘থ্রি অব আস’। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র শেফালি শাহ্! আহা, যেন নিজের সাথে নিজেই পাল্লা দিয়ে অভিনয় করলেন তিনি। আর শেফালি থেকে শুরু করে ছোট ছোট চরিত্রগুলোর সংলাপও এত আরামদায়ক! এত সুন্দর! যেন প্রত্যেকেই রিয়েল লাইফ ফিলোসফার!

সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-বিষয়টা আমার কাছে মনে হয়েছে, তা ওই সিনেমাটোগ্রাফি। পরিচালক নিজে সিনেমাটোগ্রাফার থাকায় এই সুবিধাটা তো সে পায়ই। অযাচিত ক্লোজশট নেই। অতিরিক্ত জাম্পকাটের ধুন্দুমার ব্যবহার নেই। যেন অ-বর্ণটার সাথে আকার-দিলেই যে আ হয়ে যায় এই পরিমিতিবোধ পরিচালক-চিত্রগ্রাহকের রয়েছে। তাই মাঝরাত্রে ঘুমের ভাগ কমিয়ে দিয়ে এই সিনেমা দেখাই যায় অনায়াসে।

সব মিলিয়ে আমার রেটিং ৪/৫


ইলিয়াস কমল রচনারাশি
গানপারে ম্যুভিরিভিয়্যু

আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: