ষড়ঋতুর দেশ। তবে দেখে লোকে মাত্র দুইটারেই। শীতেরে আর গ্রীষ্মেরে। এখন বোধহয় আরও স্কুইজড অবস্থা। জামানা খারাব হ্যায়, ঠান্ডি হাওয়ায় কে হায় লিখতে বসে শীতবন্দনা? অ্যানশিয়েন্ট টাইমের দুই-চাইরটা গাধা ঘোড়া গবেট তো থাকেই চিপাচাপায় যারা গাঙের মাত্র-অতিক্রান্ত স্রোতের জন্যও মনখারাপের ঘাটে বসে থাকে। ভ্যানগাড়ির মুড়িমাখা চাবায়। ঝাল সর্ষে লেপা চিতৈ পিঠা খায়। বেশি শীতের খুশিতে একাধটু উদ্ভিদের প্রসাধন ও পরিচর্যা।
অ্যানিওয়ে। এখন তো মৌসম বিগড় গয়ি। শীত যায় বারিষা যায় কেউ ভ্রুক্ষেপও করে না। ঠাঠা ভাদ্রের তালপাকা গরমেও নাটকে-টেলিফিল্মে অ্যাক্টর-ডিরেক্টররা মাইঞ্জা মেরে কমপ্লিট স্যুট পরে অ্যাক্টো করে। এদেরে দেখেই ফিদা হয় নায়িকারা। নায়িকাদের মধ্যে একটু ঋতুচেতনার অধিকারী যারা, তারা ভারতে যায় বোধহয় এই শীতগ্রীষ্মসেন্স-না-থাকা আউটফিটওয়ালাদের হাত হইতে রেহাই পেতে। এখন তো দেখতেসি এই ঋতুপ্রতিবন্ধীদের দেশ নায়িকাহারা হবার পথে।
এইখানে একটা হাল্কাপাৎলা চেষ্টা চালানো যায় বিবাহসূত্রে বা বিবাহবহির্ভূতসূত্রে যেসব পদ্মাপাড়নিবাসিনীরা টালিউডের গেটে যেয়ে ভিড় বাড়াতেসেন তাদেরে ফেরায়া আনার। রিজয়েসিং শীতের একটা সেলিব্রেশনও হলো। উনিশশতকী গ্রেইটদের উফাতের পর থেকে দেশের সাহিত্য থেকে ঋতুবন্দনা প্রায় উজাড় হতে বসেছে। ডেইলি নিউজপেপারের ফ্রাইডে সাপ্লিগুলায় একটা কাব্যিঋতুবন্দনা হয় অবশ্য, কোনো গর্ভজাত মনুষ্য সন্তানের মুখে সেসব পড়ে দেখার সংবাদ আজও পাওয়া যায় নাই। কিন্তু শীত তো আসে এবং চলেও যায়। চেষ্টাটা থাকে শুধু, কোশেশটুকু রয়া যায়। এইখানে শীতের একটি ব্রিফ অ্যানকাউন্টার আমরা পাবো।
ওগো সুরভী শীতকাল
নব্বইয়ের দশক জুড়ে টেলকম পাউডার আর ভেস্লিন্-লিপ্জেল্ ইত্যাদি প্রসাধনপণ্যের প্রামাণ্য/মডেল প্রমীলারা বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসে গ্রীষ্মে এবং শীতে এহেন জবরদস্ত সমস্ত পোজ্ দিতেন আর আমাদের ঘুম হারাম করে দিয়ে লেখাপড়ার বারোটা বাজিয়ে জীবন অবহনীয় মধুর ও রঙিন বানিয়ে এখন উনারা আমাদের জিন্দেগি থেকে বেপাত্তা। আজ তারা কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন, হায়! সেই বিচিত্র কোল্ড ক্রিম্ আর ভ্যানিশিং ক্রিমের শেহজাদিশীতোষ্ণ দূরদর্শনসন্ধ্যে! সেই গ্রীষ্মগুলো ভ্যানিশিং আর শীতগুলো মথিত রইত কোল্ড ক্রিমের মনোরঞ্জিত গন্ধে! এইসব, ওষ্ঠে-রেভল্যন্-রঙানো কৈশোরের হে বেদনামাধবী, প্রিয়ংবদা লাল ছেলেবেলা হে, লেলিহান হে আলজিভতৃষ্ণা, হারানো ঘুমের পরী সিন্ডারেলা হে, এইসব মনে পড়ে এই চিবুক-চুল-আইল্যাশদীপ্তা আগুনোজ্জীবক শরীরী শীতের রিয়্যার্ভিয়্যুমিরর দেখতে দেখতে। এইটা আসলে কি অসুখ, ক্রনিক্ ডিজিজ্, শীতজনিত? শোনো সুধীজন, শোনো প্রিয়জন, শোনো পৌষের জ্যোৎস্নায় জেব্রামানবীর উত্তাল দৈহিকতা, কার্তিকপ্রান্তরে হে চন্দ্রগ্রস্ত মহীনের ঘোড়াগুলির গান্ধর্ব ঘোটকী, নির্বন্ধ সহ সওয়াল এই দীনের, মাঝেমধ্যে এমনটা আদৌ হয় না তোমাদেরও? “তোমরা কি আমলকিগাছের ছায়ায় / মোষের বিষণ্ণ ডাক শুনে আনমনা হও / আগেকার মতো?” হয়, দ্যাখো, এমন তো হয়ই; কিন্তু বসতে দিও না এদেরে বেশিক্ষণ মনে, স্বীকার কোরো না নিজের কাছেও তুমি শীতমর্ম সম্যক অবগত বলে।
সেইসব মডেলেরা আজ কই, শীতের যারা স্বাগতিক ছিল ধূসর ধূসরতর কবেকার সেই শীতে? কেউ কেউ অবশ্য অন্য রূপে, অন্যান্য ভূমিকায়, টেলিভিশনে বিরাজিছেন দেখতে পাই। কিন্তু কবিদের মতো অনেকেই ডিউরিং ডেব্যু প্রচুর প্রোস্পেক্ট প্রমাণ করলেও পরে সেভাবে কন্টিনিউ করেন নাই কিংবা পারেন নাই। শীত এলে বেশি মনে পড়ে সেই লিপ্জেল্ আর ভেস্লিন্ মহীয়সী মডেলদিগেরে, রেইনি সিজনে যেমন প্রিক্লি হিট পাউডার আর গাঢ় ওষ্ঠাধর ও অঙ্গরঞ্জনী বিউটিদিগেরে দেখি হৃদিকিনারে, এই নিধুয়া পাথার নৈমিষারণ্যে সেই স্মৃতিঝিরিঝিরি বিজ্ঞাপনদুহিতাদেরে মনে পড়ে। ‘কেউ কেউ’-গোত্রীয় প্রসন্নভাগ্য কবিদের অনেক পেছনে, একেবারে কর্নারের দিকে এক-দুইটি ডিউড্রপের ন্যায়, একবারও মনে কি পড়ে না সেই ছিটকে-যাওয়া/লেফট-বাহাইন্ড স্বপ্নাহত কবিদেরও মুখ? পড়তাম একদা তাদেরও কবিতা কবেকার সেই জীবনপ্রত্যুষে, দেখতাম যেমন ষড়ঋতুমডেলদের মুখ আর তাদিগের শিল্পমুখরতা ব্র্যান্ড-বদলানো গরমে এবং শীতে, সেই শীতশৃগালেরা রাতভর অপরূপায়িত ভরিয়ে রাখত যারা হাহাকারস্বরাঢ্য সঙ্গীশিহরানো ঝোপজংলাচ্ছন্ন ও শস্যশূন্য জমিনের পরিপ্লাবিত কুয়াশায় একাকিদীর্ণা আমাদেরে — এরা হারায়েই গিয়াছে কি চিরতরে? ট্যাগোর জানেন, ট্যাগোর জানেন ভালো, দিনের আলোর গভীর খোড়লে কি আছে না-আছে।
সেই ঝিলিমিলি বিজ্ঞাপনবিরতির প্রভাতবেলায় রেডিয়ো-বাংলাদেশী শীতকাল, সেই ইশকুলে যাবার তাড়ায় জ্যামিতিবাকশো ভুলে যেয়ে মিঠে রোদ পিঠে নিয়ে অ্যাসেম্বলিফিল্ডে একপায়ে দাঁড়ানো তালগাছতুল্য গোপন হর্ষ, সেই ইশকুলব্যাগের ফ্রন্টকম্পার্টমেন্টে জেড+জিরো লেখা ব্যক্তিগত রহস্যোপন্যাসের ফুটানি-মারা দারিদ্র্যস্পর্শা অ্যারিস্টোক্র্যাট উইন্টার, সেই ডিস্কোড্যান্সার মিঠুনকাট চুলের ক্লাসমেটডেইজ্, সেই মৃত্যুমধুর কাকাতুয়া-কালার কার্ডিগ্যানের সহপাঠিনী শীত, তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদোনাকো সুরমাগাঙের নৌকোরিক্ত পৌষের এই নিশুতিতে। সেই বিজ্ঞাপনী জিঙ্গেলগুলোর মতো শুধু বুকের বাঁশিছিদ্রে অথবা মাথার নারকেলঠুলির একতারায় থেকে যেও যতদিন থাকা যায় স্মৃতিবিনাশের আগে।
সেকেলে শীতকালগুলো ছিল সহপাঠিনীর স্কুলব্যাগ থেকে ভেস্লিনের আর লিপ্জেলের অরণ্যাচ্ছন্ন সুরভিবিধুর। একালের শীতকালগুলো তবে কেমন? আমার ছেলের সহপাঠিনীরা কি শীত এলে ভেস্লিন্-লিপ্জেল্ রাখে তাদের ব্যাগের বিবরে? এগিয়ে দ্যায় কি কেউ কর্তব্যক্যাবলা ভ্যাবাচ্যাকা বালকটির আড়ষ্ট-আনাড়ি হাতে ভেস্লিনকৌটোটি? কিংবা আমার মেয়ের কার্ডিগ্যানের হাল্কা-হাওয়ার-মতো ফুরফুরে রোদ্দুরের রঙে কেউ বসন্তবজ্রাহত হয় না আজকাল অকালে? এমনও রঙিন ঘনতরঙ্গ পৌষের শীতে? কে জানে, জেনেটিক্স যেখানে সত্য এই শীতেশ্বরী সেইখানে বহে যাবার কথা তো! তবে জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়া আজকাল রামগরুড়ের ছানাকেও রনবির কপুর বানাইয়া সারা। ভ্যাবলাকান্ত তো দুনিয়ায় দেখি না আজ আর, সব্বাই ঝাঁ-চকচকা গ্লাসপেপারের ন্যায় স্মার্ট, ফ্যাশন্যাবল্ নয় এখন কার্ডিগ্যান্ বা উ্যলেন্ স্যুয়েটার। কে আর ব্যাগে ভেস্লিন্-লিপ্জেল্ রাখবে তোমার লাগিয়া বাবাজীবন? তোমার নম্রভদ্র কার্ডিগ্যানহাওয়ায় কে আর উতলা হবে আম্মু? প্রসাধনশাস্ত্র উন্নত হয়েছে ঢের, এখন হপ্তায় একবার গ্রুমিংদোকানে গেলেই হয়, প্যাডিকিয়্যর-ম্যানিকিয়্যর থেকে এন্তার মেইকোভার ফ্যাসিলিটিজ্। জলবায়ুও বদলেছে; সেই জাঁকালো জমানা নাই আর বনেদি শীতের। খুব-একটা পাত্তা দ্যায় না আজকাল বেচারি শীতেরে কেউ, বসন্তকে দ্যায় অবশ্য কর্পোরেট-প্রোপ্যাগ্যান্ডায় ইতস্তত হয়ে।
অ্যানিওয়ে। সেই শীত জ্যান্ত, মম অন্তর্গত, সুকুমার রায়ের প্রবংশ হে, লেট’স্ গ্য, গোটা-দুই আন্ তো!
শীতকুমারীর শরীরবল্লরী (ভিডিও সহ)
অনলাইন পত্রিকাগুলোতে এই এক তামাশা আজকাল চোখে লাগে খুবই। ইতলবিতল নিউজের হেডলাইনের পাশে ব্র্যাকেট মেরে লিখে দেয়া হয় ‘ভিডিও সহ’ কথাটা। পাঠক/দর্শক ধরার ফাঁদ নিশ্চয়। কিন্তু সত্যি সত্যি রিডার/ভিয়্যুয়ার তাতে বেড়ে যায় কি না, ঘাঁটাইয়া দেখি নাই। বিরক্তিকর বাহুল্য বটে গোটা ব্যাপারটা। বাহুল্য, বিকজ্ প্রযুক্তি যেহেতু অ্যালাও করছে নিউজের সঙ্গে একটা কেন প্রয়োজনে একশটা ভিডিও জুড়ে দেবার শখ মেটানো, অতএব এইটা ব্র্যাকেটবন্দি বলবার দরকার নাই। ভিডিও সহাইতে যেয়ে একটু সংবাদের দিকেও নজর দেয়া এসেনশিয়্যাল্ বোধহয়। কিন্তু কে কারে বোঝাবে, কে বোঝাবুঝির ভিতর দিয়া তার মহামূল্য সময় কিল্ করবে। কাজেই ক্লিক্ চলুক ভিডিও সহিয়া।
আমাদের ছেলেবেলায় কিছু বইয়ের প্রতি বিশেষ লোভলালসা বোধ করতাম মনে পড়ে। সেই বইগুলোর মলাটে ‘সচিত্র’ শব্দটা দাগানো থাকত মোটা হরফে। যেমন অন্যতম ‘সচিত্র সহস্র-এক আরব্য রজনীর কাহিনি’, ‘সচিত্র মহাভারত’, ‘সচিত্র রামায়ণ’, ‘সচিত্র পারস্য গল্প’, ‘সচিত্র ঠাকুরমার ঝুলি’ ইত্যাদি। এই সবগুলো বইয়ের আবার অচিত্র সংস্করণও বাজারে অ্যাভেইলেব্যল্ ছিল। সচিত্র সংস্করণের প্রাইস্ সংগত কারণেই ছিল চড়া। কাজেই বাপচাচারা বাসায় কিনে আনতেন অচিত্র বইগুলো। অর্থকড়ির অপ্রতুলতা না, ব্যাপারটা ছিল বরঞ্চ নৈতিকতাশাসিত, ইলাস্ট্রেইটেড বইগুলো খরিদ করতেন না তারা বাচ্চাকাচ্চা বখিয়া যাবার ভয়ে। বেচারাদের জানাই ছিল না যে এই ইলাস্ট্রেইটেড বইগুলো খরিদ করতে না-পারার শোকে তাদের সন্তানাদির কল্পনা আরও গভীর সমুদ্রবন্দরের দিকে বেঁকে যেতেছিল হররোজ। বরং সচিত্র বটিকা বাচ্চাকাচ্চাগুলোরে সময়মতো সেবন করাইতে পারলে একটা আশা ছিল এই নিবন্ধে ফালতু সময় নষ্ট না-করে এই বাচ্চাটার বেশ দেশহিতৈষী কিছু প্রোজেক্টে সময় ইনভেস্ট করার। কিন্তু মুকুলেশের মা, তা তো হইল না আর এ-জনমে।
সেইসময় চিত্রসম্বলিত বই প্রিন্ট করার খাইখর্চা আর ডিফিকাল্টিস্ অনুমেয় সহজেই। আমরা লেটারপ্রেসের জমানার একদম লেজের দিকটা দেখেছি ফর্চুনেইটলি। কী ভীষণ হুজ্জোতি ছিল ব্লক্ বানিয়ে লেখা সাজানো! সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জোখমাপ ঠিক রেখে পেস্টিং করা যাদুকর লোকটাকে বিপন্ন বিস্ময়ে দেখতাম চুপচাপ তাকিয়ে এই নিরানব্বই/দুইহাজারদুই পর্যন্তও! অল্প ভুলের খেসারত দিতে হতো অনেক। মনখারাপ, খুঁতখুঁত, রচয়িতার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে মুদ্রাক্ষরিকের একটু বেখেয়াল থোড়া গাফিলতির কারণে। ফের ছাপানো তো অনেক ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষও। অবশ্য বইয়ের শেষে নির্ঘণ্ট সংযূতি দিয়া খানিকটা মামলা সামলানো হতো। তদুপরি সচিত্র বই হলে তো অনেক হ্যাপা। আরেকদিন, অন্য কোনোদিন, লেটারপ্রেসের যুগে ছাপাছাপির যজ্ঞ দেখার অভিজ্ঞতা নিয়া কাহিনিচিত্র মুসাবিদা করা যাবে। এখন অফসেটযুগের প্রায় বিলোপ ঘটিয়ে চলছে অনলাইন প্রকাশনার পরাক্রম। চলছে ‘ভিডিও সহ’ পয়মালি-পালোয়ানি। ভিডিও সহ্য করিতেই হবে।
সেইসমস্ত সচিত্র বইপত্রের মধ্যে অ্যারাবিয়্যান্ নাইটস্ আর পারস্য গল্পগাছার বইগুলোর ছবি ছিল অশেষ রহস্য আর আকর্ষণের আকর আমাদের জন্য। মহাভারত আর রামায়ণ সচিত্র ও সংক্ষিপ্ত সংস্করণের কিছু বইপত্রও অনুরূপ আকর্ষণীয় ছিল। কল্পনার বিকাশকল্পে কে আর বই পড়ত ওই বয়সে! সেসব ছিল শরীরী আকর্ষণের উৎস প্রত্যেকটিই। ফিজিক্যাল্ অ্যাট্র্যাকশনের বোধ জন্মাবার আগে থেকেই ফিজিক্যালি নিশ্চয় আমাদের অস্তিত্ব বিরাজ করে, এইটা ফ্রয়েড না-জন্মালেও বুঝতে এবং বলতে একটুও শক্ত হতো না আজকে। অ্যানিওয়ে। সেই কিতাবগুলোতে একেকটি চিকন রেখায় এঁকে-দেখানো শেহজাদি/পুরাণমানবীদের শরীরী বিভঙ্গ, সখিদের সফেন বসন আর বাগানবিহার, অভিসারিকার স্বেদ ও মেদ মর্মরিত মন্দ্র দৈহিক দৃশ্যায়নের তুলনা আজ কোথা পাই! ‘ভিডিও সহ’ সহস্রবার বলেও বর্তমান জমানায় সেই সীতা-দ্রৌপদীর দেহবল্লরী স্মৃতির স্টোরেজ্ থেকে কেউ মুছে ফেলতে পারল না।
আরেক ধরনের সচিত্র প্রকাশনা বাজারে ছিল। পত্রিকাগুলোর মধ্যে, বিশেষত সাময়িক পত্রিকাদির মধ্যে, বেশকিছু পত্রিকার মাস্টহেড ঘিরে ‘সচিত্র’ শব্দটা শোভা পেত। ইংরেজি ইলাস্ট্রেটেড উইক্লি ইত্যাদির পরম্পরায়, অনুমান করি, সেইসব বাংলা সাময়িকপত্রের উদ্ভব ও প্রচলন। অবশ্য আমরা বড় হতে হতে বাজারে পত্রিকার নামপরিচয়ের পাশে ‘সচিত্র’ ঘোষণা হাঁকাবার জরুরৎ উবে যায়। আমরা সেসব দেখতে পেয়েছি বাড়িতে-রাখা পুরনো পত্রিকার বান্ডিল ঝাঁট দিতে যেয়ে। এমন কয়েকটি পত্রিকার নাম মনে পড়ানো যাক। যেমন ‘সচিত্র ভারত’, ‘সচিত্র উল্টোরথ’, ‘সচিত্র সন্ধানী’ ইত্যাদি। কিন্তু সচিত্র বললেই যে একেবারে চিত্রে চ্যাপ্টা পরিস্থিতি ছিল আজিকার ন্যায়, এমন নয়। একেবারে মেপেজুখে যেখানে না-হইলেই নয় এমন স্থলেই চিত্র সংযুক্ত হতো। খরচের ব্যাপার ছাড়াও সময় এবং শিল্পবোধ প্রভৃতি বিষয়াদি বিবেচনায় থাকত বলেই বিশ্বাস করি।
কিন্তু শীতকুমারীর শরীরবল্লরী কই? তর সইছে না ভাই, স্মৃতি বহুৎ রোমন্থন হয়েছে, এলায় আসল কাম করে ফ্যালো ফটাফট। শরীর দেখাও। কার? কেন, শীতের, আবার কার! ন্যাকা! না, আসলে হয়েছে কী, শীতের শরীরবল্লরী দেখাইতেই চাই। কিন্তু উইন্টার ব্যালেরিনার এখন শো-টাইম চলছে তো, ফলে প্রেক্ষাকামরা ছাড়া আর-কোনো মিডিয়ায় শীতনৃত্যের প্লে/রিপ্লে দেখানো দণ্ডনীয়। উন্মুক্ত শো সবার জন্য, অতএব, চোখ রাখুন আজই! নেত্র প্রসারিয়া নাচ দেখা যায় এই শীতের সময়টাতেই, ঠিক মাস-দেড় পরেই কিন্তু সুযোগটা আর থাকছে না। চৈত্র এল বলে! তখন তাকালেই চোখে এসে প্রবেশিবে বেমক্কা আঙ্খি-আন্ধাইর-করা ধুলো।
লেখা / জাহেদ আহমদ
… …
- বাগেশ্বরী শিল্পপঙক্তিমালা - February 4, 2025
- শীতসকালের স্মারক বক্তৃতা : ব্যান্ডেজ ও বৈদ্য - January 31, 2025
- মাধবী, বিপ্লব ও অন্যান্য মদন প্রসঙ্গ - January 24, 2025
COMMENTS