হাওয়া ছায়াছবি : ইনস্ট্যান্ট রিয়্যাকশন || সজীব তানভীর

হাওয়া ছায়াছবি : ইনস্ট্যান্ট রিয়্যাকশন || সজীব তানভীর

সম্ভবত হাওয়ার (Hawa – হাওয়া) দেশের প্রথম পাবলিক শো ছিল সকাল ১০-৫০ মিনিটে, সিনেপ্লেক্স, সীমান্ত সম্ভারে। বাসায় ফিরেছি কিছুক্ষণ আগে। এখনো ঘোরের মাঝেই আছি। এতটুকু বলতে পারি এমন অভিজ্ঞতা বাংলা সিনেমার দর্শক পাননি কখনও, এবং সেটা দুই বাংলা মিলিয়েই। আরো বেশ ক’বার দেখতে চাই এই মুভি, নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমার হাওয়া বদলে দিতে চলেছে এই সিনেমা।

চঞ্চল চৌধুরী (Chanchal Chowdhury) এ-দেশের আনসাং হিরো, এই শতাব্দীর যত বাজিমাত করা এ-দেশের চলচ্চিত্র, সবগুলোর কেন্দ্রে তিনিই। হাওয়াতে তিনি অন্য এক স্তরে পৌঁছে গেছেন নির্দ্বিধায় বলা চলে। তবে আমার কাছে পোস্টারে যে-নয়জনের চরিত্র দেওয়া, তার মাঝে রীতিমতো অস্থির করে দিয়েছে আসলে ‘পারকেস’ রূপে রিজভি রিজু চৌধুরী (Rizvi Rizu Chowdhury), উফ কী দুর্দান্ত অভিনয়, আমি বিগত অনেকবছর এমন ক্যারেক্টার অ্যাক্টিং দেখিনি। সুমনভাইয়ের (মেজবাউর রহমান সুমন, হাওয়ানির্মাতা) এই এক অভ্যাস, পাক্কা জহুরির মতো অভিনয়ের বাইরের মানুষদের নিয়ে কী সব জাদু করে ফেলেন, আহা! পারকেস একরাশ মুগ্ধতা!

শরিফুল রাজ আরেকটু স্ক্রিনটাইম পেলে ভালো লাগত, তাকে ঠিক বুঝে উঠার আগেই যেন সিনেমা শেষ, আক্ষেপ থাকল। তার সমান বা হয়তো বেশি সময় পাওয়া নাগু চরিত্রে নাসির উদ্দিন খান তার সাম্প্রতিক ওয়েবসিরিজের কারণে যে দারুণ পরিচিত সেটা তার উপস্থিতিতে দর্শকের অনুভূতিতে টের পাওয়া যায়, মুভির কমিক রিলিফটা ভালোই ডেলিভারি করেছেন তিনি।

সুমন আনোয়ার (Sumon Anowar) এজা চরিত্রে ঠিকঠাক, আরেকটু বেশি আশা ছিল আমার। উরকেস চরিত্রে সোহেল মন্ডল এই কাজটা করেছেন আমাদের ওটিটির পরিচিত মুখ সোহেল মন্ডল হয়ে ওঠার আগে, এবং এই ব্যাপারটাই ভালো হয়েছে আমার জন্য, অন্য রকম সোহেলকে পাওয়া গেছে হাওয়ায়, গতানুগতিকতার বাইরে।

মরা চরিত্রে মাহমুদ আলম এবং ফনি চরিত্রে বাবলু বোস (Bablu Bosh) ঠিকঠাক, যতটুকু সময় পেয়েছেন, সুবিচার করেছেন চরিত্রের প্রতি। বাকি রইল একমাত্র নারী চরিত্র, গুলতি চরিত্রে নাজিফা তুষি, তার অভিনয়টা অনেকটাই অ্যাভারেজ মনে হয়েছে আমার, তার বডি জেশ্চার, চাহনী এত দারুণভাবে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন খসরুভাই, তবুও কেন যেন আরও বেশি চাইছিলাম। আবার দেখলে হয়তো আরেকটু বুঝতে পারব। কামরুল খসরুভাইকে (Kamrul H Khosru) নতমস্তকে কুর্নিশ জানাই, এমন অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যধারণ এই দেশে আপনি আছেন বলেই আমরা দেখতে পাই, এত বাধা, এত বিপত্তি, প্রযুক্তিস্বল্পতা, এর মাঝে এই যে একটা যুদ্ধ জয় করছেন আপনি আর হাওয়া দল, আপনারে সালাম ভাই। আমি জানি আমার মতো আপনারও একটা বিশেষ প্রাণীর ব্যাপারে ভয়াবহ ভীতি আছে। বিশ্বাস করেন আমি আমার জীবনে এই প্রাণীর এমন দৃশ্য দেখি নাই, চোখের সামনে হাত দিয়ে আঙুলের ফাঁক দিয়ে দৃশ্য দেখতে হয়েছে। তানভীর শোভনকেও (Tanveer Ahmed Shovon) সালাম, এই দৃশ্যটা আসলেই দুর্দান্ত ছিল। অদ্ভুত!

সাদা সাদা কালা কালা-য় দেশ ভাসছে, প্রত্যাশা চূড়ান্ত ছিল আবহ সংগীতের থেকে। এই জায়গাটায় আমি বেশ হতাশ! শুরুটা যেন ঠিকই ছিল, কিন্তু ক্লাইমেক্সের পথে যখন সিনেমা এগোচ্ছে, আবহ সংগীত যেন চলছে উলটো পথে। এমনকি ক্লাইমেক্সের আগে penultimate moment এতটা ফ্ল্যাট ছিল, প্রচণ্ড হতাশ। অভিনেতারা যা অভিনয় করেছেন, সেটার সাথে আবহ কেন যেন সেই দৃশ্যকে আরো আবেগতাড়িত করতে পারেনি, sorry to say. এমনকি অনেক সংলাপ পর্যন্ত মনে হয়েছে ‘ধুর খুবই গতানুগতিক’ … এই আক্ষেপটা হবে প্রথমবার দেখেই, সেটা ধারণা করিনি।

স্ক্রিপ্ট এবং সংলাপে বেশ কিছু সমস্যা আছে। বিরতির পরে গল্প কিছুটা বিক্ষিপ্ত আর এলোমেলো ঠেকেছে, আরেকটু চরিত্র নির্মাণের সময় প্রয়োজন ছিল মনে হয়েছে। সজল অলক (Sazal Alok)-এর আমি গুণমুগ্ধ ভক্ত। তার কাজ এখানেও যথারীতি দারুণ। আমাদের শো চলাকালীন আজ রক্ত ও আঘাতের একটা বিশেষ দৃশ্য দেখে একজন দর্শক খিঁচুনি দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। মেকআপ, চিত্রগ্রহণ, আর সম্পাদনার এমন মিশেল হলে এমন ঘটনা আরো ঘটবেই সামনে, বলে রাখলাম।

মেজবাউর রহমান সুমনভাইয়ের (Mejbaur Rahman Sumon) নির্দেশনায় আমি সবসময় জাদু খুঁজে পাই, হাওয়া  কীভাবে তার ব্যতিক্রম হবে! এদেশের দর্শক এমন কিছু দেখার জন্য প্রস্তুত না এমনটা অনেকেই বলতে পারেন, তবে আমি বলব দর্শক কখনোই প্রস্তুত থাকে না, দর্শক তৈরি করে নিতে হয়, সুমনভাই হাওয়া দিয়ে সেটাই করছেন, এবং আমি জানি হাওয়া  বইতে শুরু করেছে!

সুমনভাই আমার mentor, গুরু! আজকের আমি যা-কিছু তার পিছনে উনার প্রায় পুরোটাই অবদান। উনি নিজেই সেদিন বলছিলেন উনার কাজ নিয়ে উনি কাটাছেঁড়া চান, এমন সাহসী নির্মাতা ক-জন আছেন! প্রশংসার বন্যায় না ভাসিয়ে তাই আমার প্রথম হাওয়া  দর্শনের প্রতিক্রিয়া দিলাম। রেটিং : ভালোবাসা।

২৯ জুলাই ২০২২

COMMENTS

error: