সাক্ষাৎকার :: লেড যেপেলিন || শফিউল জয়

সাক্ষাৎকার :: লেড যেপেলিন || শফিউল জয়

“রক্যানরোলের সাথে জিনিয়াসের কোনো সম্পর্ক নাই” — সাক্ষাৎকারে লেড যেপেলিন।

১৯৬৮ সালের লন্ডনে ‘লেড যেপেলিন’ ব্যান্ডটা গিটারিস্ট জিমি পেইজের উদ্যোগে একত্র হয়, নামটা ‘দ্য হু’-এর ড্রামার কেইথ মুনের দেয়া। ভোক্যাল রবার্ট প্ল্যান্টকে জিমি আবিষ্কার করে ‘ব্যান্ড অফ জয়’ নামের এক ব্যান্ডে। জিমির মতে, “এ-রকম ভোক্যাল আগে কেউ দেখে নাই এটা অবিশ্বাস্য।” পেইজ তখন বেশ নামকরা গিটারিস্ট ইতিমধ্যেই; প্রস্তাব দেয়া হয় ব্যান্ড গঠনের। ড্রামার জন বোনহ্যাম আর বেইজিস্ট জন প্যল জোন্সও ‘ব্যান্ড অফ জয়’-এ বাজাইত, প্ল্যান্ট জিমিকে ওদের কথা বলে এবং প্রথম রিহার্সেলেই নিজেদেরে জাদুর মতো করে খুঁইজা পায় একেকজন। পুরা সত্তরের দশক কাঁপানো এই ব্যান্ড নিয়ে যত মিথ আর দুর্নাম আছে, খুব কম রকব্যান্ডের ক্ষেত্রেই তা লক্ষ করা যায়।

অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ১৯৮০ সালে ড্রামার জন বোনহ্যামের মৃত্যুর ভেতর দিয়া আসল ‘লেড যেপেলিন’ -এর ইতি ঘটে।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকাল ১৯৭৫ সাল, শিকাগোর অ্যাম্বাসেডর হোটেলের রবার্ট প্ল্যান্টের স্যুটে, ‘রোলিং স্টোন্স’ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে। তিনদিন ধরে সাক্ষাৎকারটা নেয়া হয়।

সাক্ষাৎকারে লেড যেপেলিন || অনুবাদ : শফিউল জয়

প্রশ্ন : তেহাত্তর সালের অ্যামেরিকান ট্যুরের আগ পর্যন্ত তো মিডিয়া লেড যেপেলিনের জনপ্রিয়তা তেমনভাবে স্বীকার করে নাই।

প্ল্যান্ট : বাহাত্তর সালে এইখানে ট্যুরের পর প্রথম পাব্লিসিটি ফার্ম ভাড়া করি। একই গ্রীষ্মে ‘রোলিং স্টোন্স’ আইসা ট্যুর কইরা যায় এবং ভালোভাবেই জানতাম ওদের থেকে আমরা ভালো করতেছি। প্রেসে যাদেরকে ক্রমাগত প্রশংসা করা হইতেছিল তাদের অনেকের থেকে অবস্থান ভালো ছিল আমাদের। তাই ভাবলাম ইগো না চুদায়া মানুষকে জানাই, আমরা শুধু মেয়েমানুষদের খায়া খায়া জানলা দিয়ে ছুইড়া ফেইলা দেই না। সবাই ভাবত এইসবই কইরা বেড়ায় লেড যেপেলিন, সবার মুখে মুখে ছিল । সবকিছু মানলাম, কিন্তু দানব কখনোই ছিলাম না। কথা সিম্পল — একদল ভালো ছেলে, ভক্তরা আমাদের পছন্দ করে এবং সমালোচকরা সহ্য করতে পারে না।

প্রশ্ন : রোলিং স্টোন্সের সাথে কোনো প্রতিযোগিতা অনুভব করতা?

পেইজ : আরে নাহ। এইভাবে ভাবি না। প্রতিযোগিতা ভুয়া কথা। রোলিং স্টোন্স সবসময়ই হেব্বি ব্যান্ড ছিল। মিক জ্যাগারের লিরিক তো পাঙ্খা। কীভাবে দুনিয়ার সবচেয়ে চখাম গ্রুপ হওয়া যায় এই চিন্তা ছিল মাথার ভেতরে, তবে ভাবতাম না খুব-একটা। প্রতিযোগিতা এর মধ্যে ঢোকে নাই। জিনিশটা হইতেছে কে ভালো মিউজিক করে, কে করে না। এবং কে শেষমেশ টিকা থাকবে।

প্রশ্ন : এখন তাড়নাটা কীসের?

পেইজ : বাজাইতে ভাল্লাগে। এইটা বইলা শেষ করাটা ইউটোপিয়া মার্কা কথা যদিও। এয়ারপ্লেন, হোটেলের রুম, লিমোজিন, রুমের বাইরে বন্দুকওয়ালা গার্ড — সবকিছু নিয়াই ভাবতে হয়। ভাল্লাগে না এইসব। কিন্তু এগুলার বিনিময়েই বাইরে বাজাইতে পারতেছি। গত আঠারো মাস ধইরা ধীরেসুস্থে অ্যালবামের কাজ করাটা কঠিন হয়া যাইতেছে।

প্ল্যান্ট : সবসময়ই ভিতরে-ভিতরে একটা দোটানা কাজ করে। সবকিছু নর্মাল থাকলে উপভোগ করি খুব। নিজের ফুটবলটিমে খেলি, আরও দশ-পনেরো জনের সাথে ঘুরিফিরি, একেবারে সাধারণ মানুষের চালচলন। এসব আমাকে মগ্ন কইরা রাখে, মনে হয় এর থেকে বের হওয়ার দরকার নাই। আবার ব্যান্ড খুব মিস করি যখন কিছু না করি। জিমিকে কল দিয়া কথা বলি শান্তি পাওয়ার জন্যে। অন্যদিন রাত্রে যখন প্রথম বাজাইলাম বিশাল হাসি ফুইটা উঠছিল আমার মুখে।

Led-Zeppelin2

প্রশ্ন : সলো অ্যালবামের গুজব শোনা যাইতেছে পেইজের!

পেইজ : ওইটা কেইথ রিচার্ডসের মশকরা। যেটা করছি সেটা রোলিং স্টোন্সের অ্যালবামের বি-সাইড হবে। রিক গ্রেচ, কেইথ আর আমি ‘স্কারলেট’ নামের একটা ট্র্যাকে কাজ করছি। ড্রামারের নাম মনে নাই। স্টাইল আর মুডের দিক থেকে ‘ব্লন্ডি অন ব্লন্ডি’ টাইপের। বেশ ভালো ছিল। রাতে একসাথে ছিলাম, তারপর আইল্যান্ড স্টুডিওতে গিয়া কেইথ কিছু র‍্যাগে গিটার বসাইলো একটা জায়গায়। সলো দিলাম পরদিন সকাল আটটা বাজার আগেই। ও সুইজারল্যান্ডে টেইপটা নিয়া গেছিল এবং কেউ সেটা পাইছে। কেইথ পরে বইলা বেড়াইছে আমার অ্যালবামের ট্র্যাক এইটা।

ব্যান্ডের কিংবা আমার কারোরই কোনো সলো অ্যালাবমের দরকার নাই। আমাদের বোঝাপড়া এত্ত ভালো যে কেউ হতাশ হয়া পেছন থেকে নিজের রেকর্ড বের করার প্রশ্নও ওঠে না। কী বাজাবো টাউনশেন্ডের মতো বইলা বেড়ানোও ভাল্লাগে না। দল থাকবে দলের মতো, তাই না?

প্রশ্ন : এত সমালোচনার মধ্যেও তোমরা নিজেদের কাজটা কইরা গেছ জেদটা ধইরা রাইখা, বিশেষ করে লেড যেপেলিনের প্রথম দিনগুলাতে। নিজেদের প্রতি কতখানি আস্থা তোমাদের?

পেইজ : নিজেরে হয়তো বিশ্বাস করি না, কিন্তু যা করি সেটার উপর বিশ্বাস আছে। মিউজিক্যালি আমি কই যাইতেছি তা জানতাম। নিজের প্যাটার্নটা দেখতে পারি। ভাবছিলাম আরেকটু দ্রুত আগাবো। তোমাকে বলতে পারব আমার কতদূর যাওয়া উচিত, কীভাবে সেখানে পৌঁছাবো, শুধু বাজায়া যাইতে হবে — তাইলেই হবে। অদ্ভুত শোনাইতে পারে একটু, কারণ জন ম্যাকলগ্লিন্সের সাউন্ডটা অন্য জগতের কিছু বলে মনে হয়। যা-ই-হোক, খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটার মতো অনেকটা।

টেকনিশিয়ানের মতো গিটারিস্ট না আমি। গিটারটা উঠাই, বাজাই… — ব্ব্যাস! টেকনিক-ফেকনিক কিছু আসে না এর মধ্যে, লেনাদেনা সব অনুভূতির সাথে। হার্মোনিক সাইডটা গুরুত্বপূর্ণ, আরও আগাইতে চাইছিলাম হার্মোনিকে। ততখানি পারি নাই, আরও লাইগা থাকতে হবে।

এত্ত নাম আছে আর্ট আর স্টাইলের — ফ্ল্যামেঙ্কো, জ্যায, রক, ব্লুজ … নাম নিলেই হয়া যায়। প্রথমদিকে স্বপ্ন দেখতাম এগুলা একাকার করে ফেলব। কম্পোজিশনটা ইম্পরট্যান্ট এখন। সেইসাথে মনে হয় সারা পৃথিবীর রাস্তায় রাস্তায় ঘুইরা বেড়ানো মিউজিশিয়ানদের সাথে একটা অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। এই বছরেই ঘোরাঘুরিটা করব। জানি না সবাই জিনিশটা কীভাবে নিবে, কিন্তু এই রাস্তায়ই আগাইতেছি আমি। আজকে আমি জিপসি, কালকে হয়তো সেটা গ্লিটার রক হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : ঘোরাঘুরি তোমাকে কী উপকার করবে?

পেইজ : ফাইজলামি করো? আল্লা! তোমার কোনো ধারণা আছে মরোক্কানদের সাথে থাইকা মানুষ অথবা মিউজিশিয়ান হিশাবে কী লাভ হবে! বইসা বইসা রুমসার্ভিসে অর্ডার দিয়া বাইচা থাকার চেয়ে অনেককিছু শিখবা। পুরাপুরি উল্টা, ব্যালান্স ঘুইরা যাবে। একটা ইন্সট্রুমেন্ট ছাড়া সাথে আর কিছু থাকবে না, অনেক আগে ঘুইরা বেড়াইতাম এইভাবে। এখন না করার কোনো কারণ নাই, সবসময়ই করা যায়। সময় কিনতে পারবা না তুমি, এটা হইলো মিউজিক দিয়া সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়। যা করতে চাই সেটার জন্যে খুব বেশি সময় হাতে নাই। একটা ওয়াগন নিয়ে সারা ইংল্যান্ড ঘুইরা ঘুইরা গান করব। পাগলামি মনে হইতে পারে, কিন্তু খুবই সম্ভব গ্রামের দিকে। যখন দরকার হবে দরজা খুইলা একটা বড় ব্যাটারি অ্যাম্প আর মিক্সার নিয়ে বাজানো শুরু কইরা দিব, যতক্ষণ খুশি ততক্ষণ। আমি পরিবর্তন এবং বৈপরীত্য ভালোবাসি। প্রতিদিন একইভাবে থাকতে ভাল্লাগে না। সাংসারিক কাজকারবারও আমার জন্যে না। আবার এক সপ্তাহ ধরে হোটেলে থাকায় পিক্নিকের মতো কিছু নাই। ওইখান থেকেই রোডফিভার হয়, ভাঙাভাঙির শুরু হয়, যদিও সেই পর্যায়ে পৌঁছাই নাই এখনো। এখনো নরমই আছি। মনে রাইখো, ট্যুরে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ।

প্রশ্ন : প্রথম অ্যামেরিকান ট্যুরের কথা মনে আছে?

প্ল্যান্ট : আমার বয়স উনিশ, তখনো কাউকে চুমা দেই নাই। খুব ভালোভাবেই মনে আছে। আমরা তো এখন হোটেলের রুমে বইসা বইসা নিটশে পড়ি। তখন আরও অনেক বেশি পাঙ্খা ছিল সবকিছু — লোকজন, শো করা। অ্যামেরিকায় আরও ভালো। এল.এ. এল.এ-র মতোই ছিল, এখনকার মতো না। বারো বছরের মাগীভর্তি এই এল.এ. সেই এল.এ. না যেটা চিনতাম।

প্রথম এখানেই আসছিলাম। এখানেই প্রথম বন্দুকওয়ালা পুলিশ দেখি, বিশফুট লম্বা গাড়ি দেখি। অনেক মাস্তিবাজ লোক ছিল তখন। লোকজন আন্তরিকভাবে আমাদের গ্রহণ করছিল, আমরাও উপভোগ করছিলাম। ফ্লোরে ফ্লোরে ডিম ছুইড়া মারা, পানি দিয়া লৌড়ালৌড়ি, মানে একটা উনিশ বছরের পোলাপান যা করবে সেগুলা করছি। ওই মানুষগুলোর অনেককেই এখনো চিনি, অনেকে হারায়াও গেছে। কিছু বাতিল হয়া গেছে। কেউ কেউ আবার বড় হয়া গেছে। বড় হয়া যাওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি দেখি না আমি।

প্রশ্ন : মনে হইতেছে ব্যাপারটা নিয়ে খুব হতাশ তুমি।

প্ল্যান্ট : হ্যাঁ, আসলেই। নিজের ওই সারল্যটা হারাই নাই, ওই ভাবটা ধরতে তৈরি থাকি যে হারাই নাই। হ্যাঁ, লজ্জার কথা। ছোট ছোট মেয়েগুলা যেভাবে নিজেদের নষ্ট কর‍তেছে সেটা খারাপ লাগে। আগে তো জিটিও কিংবা এই ধরনের মানুষের সাথে আমাদের অনেক চমৎকার সম্পর্ক ছিল, কিন্তু এখন হয়ে গেছে প্রতিযোগিতার। আমরা যত-না হাহাকার দিতে পারি তাদের, তারা তার থেকে অনেক বেশি আমাদেরকে দেয়। এত লজ্জার! ফিজিক্যাল গ্রাফিত্তির ‘সিক এগেইন’ শুনলে বুঝবা কতটা খারাপ লাগে আমাদের। কখনো সে বারো, কখনো তেরো। পুরানো দিনগুলাতে এমন ছিল না, আটষট্টি সালের দিকে।

শেষবার যখন এলএ-তে আসি, খুব বোরড ছিলাম। বোরডমটা খুব ভয়ঙ্কর জিনিশ। বোরডমই সকল ধ্বংস, সব নেগেটিভ কাজের মূলে। প্রত্যেকটা জায়গা নির্ধারিত হয় কারা সেইখানে থাকে সেটার উপর ভিত্তি করে। সব শূন্য হয়ে গেছে এলএ-তে, সবাইকে দেখলেই বোঝা যায়।

একটা চাপা হাসির ভিতর দিয়া সব দেখতে ভাল্লাগে এইখানে এখন। হইহুল্লা, মাস্তি — সবকিছুই মিস করি। সবচেয়ে ফালতু হোটেল থেকে সবচেয়ে দামি হোটেল — সবকিছুই মজার। সাত বছর আগে যেই মোটেলের দেয়াল ভাইঙ্গা পড়ছিল সেখান থেকে শুরু কইরা অ্যাটর্নি জেনেরেল যেই হোটেলে আছে — সবগুলাই। গতকাল সে কমপ্লেইন করছে আমি রাত্রে লিটল ফিটের রেকর্ড জোরে জোরে বাজাইছি দেইখা।

প্রশ্ন : প্রত্যেকটা অ্যালবামই এক নাম্বারে থাকতে হবে — এ-রকম চিন্তা করো?

পেইজ : না। তা না হইলে আমাদের শেষ অ্যালবামের রিভিয়্যুগুলা দেইখা ধ্বংস হয়া যাইতাম, তাই না? এটাই আসল কথা। সমালোচক আর মানুষজন কী বলে সেটারে পাত্তাই দেই না।

আমি অনেক ভাগ্যবান এই কারণে, যে-মিউজিক বাজাই সেটা মানুষ শুনতে পছন্দ করে। একজন মিউজিশিয়ান এর থেকে ভালো কী আশা করে? কিন্তু পরিবর্তনের একটা ধারা মাইনা চলি, আমাদের তুমি তিন বছর আগেকার মতো করে আশা করতে পারো না। তবে অনেকেই এটা মাইনা নিতে পারে না, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনের এই ব্যাপারটা। এক-দুই বছরের এই গ্যাপটা দরকারি, এই সময়টা দ্বারা লিরিক প্রভাবিত হয়, জিনিশপত্র এমনকি মিউজিকও প্রভাবিত হয়। একনাম্বারে থাকতে হবে এই চিন্তা করি না। সাম্প্রতিক অ্যালবামটা একটু দেরিতে বের হওয়ার কারণ বেজিস্ট জন প্যল জোন্স অসুস্থ ছিল। সবকিছু গড়বড় হয়ে গেছিল তিন মাসের জন্যে।

প্রশ্ন : নিজের রেকর্ড কোম্পানির এক্সিকিউটিভ হইতে ক্যামন লাগতেছে?

পেইজ : আমি মনে করি আমরা আমাদের এক্সিকিউটিভ, ঠিক না? শোনো, চরম পারফরমেন্সের জন্যে সময় দিতে হবে। এইবার খুব ভালো লাইনাপে আছি। ‘প্রিটি থিংস’-এর এলপি অসাধারণ। আমরা এক্সিকিউটিভ হইতে পারি, কিন্তু লেবেলটা কখনোই লেড যেপেলিনের রেকর্ড ছিল না। আরও গ্রুপকে প্রমোট করা এবং আসল মাল বের কইরা নিয়া আসার চেষ্টা আছে। এটা তাদের জন্যে, আমাদের পকেটে দুই পয়সা ভরার জন্যে না। এইভাবেই রেকর্ড কোম্পানিটা দেখতেছি।

মানুষজন আমারে জিজ্ঞেস করতেছে আমি কী লেবেলের প্রযোজক হব কি না। জানি না। যেপেলিনের সাথে অনেক ব্যস্ত। ফ্রেডি কিঙের প্রযোজক হওয়ার প্রস্তাব আসছিল, সেটা করতে পারলে ভালোও লাগত। কিন্তু এইগুলা কাজ করতে গেলে সময় লাগবে।

প্রশ্ন : মিউজিক ব্যবসা ভাইঙ্গা পড়তেছে বইলা মনে করো?

পেইজ : মানুষজন এইসব বলে পরবর্তী ধামাকাদার জিনিশ খোঁজার সময়। বিটলস আর রোলিং স্টোন্স আসার পর শীৎকার ছিল প্রচুর। তারপরেও সবসময় বলা হইছে, ‘ব্যবসা মারা খাইতেছে। ব্যবসা মারা খাইতেছে’। আমার তা মনে হয় না। এত্ত ভালো ভালো মিউজিশিয়ান আছে যে মইরা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনশো ষাইট ডিগ্রির ভেতরে নানা স্টাইল আর চেহারার মিউজিক আছে। উপজাতীয় থেকে শুরু করে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক — সবই আছে। যদি অবস্থা খারাপ হয়া থাকে, তাহলে সাহায্য করো।

যদি আর-কোনো রেকর্ড না বের হয়ে, তাহলে আজ পর্যন্ত যেসব বের হইছে সেটা যথেষ্ট। চিরন্তনী হয়া থাকবে সবজায়গায়। তারপরেও আমি নানারকম মিউজিক দেখি, শুধু পরবর্তী ধামাকার জন্যে ওয়েইট করি না; বামনরা ইলেক্ট্রিক হার্প বাজাইতেছে এমন মশলাদার কিছু হইলেও না। ব্যাড কোম্পানি আর অন্য শাদা চামড়ার ব্যান্ডগুলা দ্যাখো। ঘুইরাফিরা সব একই জিনিশ করতেছে সবাই। ব্রিটেইনে নতুন ব্যান্ড যেগুলা আসতেছে সেগুলার ভেতর মালমশলা তেমন কিছু নাই। সুযি ক্যুয়াট্রো আর মাডের সাথে চুক্তি করতে হবে। অ্যাবসার্ড। টপ টেনের গানগুলা তো ফালতু হওয়ার কথা না, কিন্তু ফালতুই তো হইতেছে।

প্রশ্ন : লেড যেপেলিনের প্রথম অ্যালবাম করাটা ক্যামন কষ্টকর ছিল?

পেইজ : বেশ তাড়াতাড়িই, ব্যান্ড শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই। নিউ ইয়ার্ডবার্ডস হিশাবে আমরা যে স্ক্যান্ডিনিভিয়াতে দুই সপ্তাহের ট্যুরে গেছিলাম সেটাই ছিল রিহার্সেল। জিনিশপত্র বেশিরভাগ ব্লুজ দিয়া প্রভাবিত ছিল, এখনো ইয়ার্ডবার্ডের অনেক রিফ পইড়া আছে। জেফ বেক চইলা যাওয়ার পর নতুন অনেককিছু করতে হইছে আমার। ক্ল্যাপটন চইলা যাওয়ার পর জেফ বেকের উপর অনেক চাপ ছিল প্রত্যাশার, পারফরমেন্সের। আর বেক চইলা যাওয়ার পর সেটা আমার ঘাড়ে আইসা পড়ে, কারণ সেকেন্ড গিটারিস্ট হুট কইরা মেইন গিটারিস্ট হয়া গেছে। প্রথম এলপিতে আগের দিনগুলা দ্বারা প্রচুর প্রভাবিত ছিলাম, মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে অ্যালবামটা বের করা হইছিল। কাউকে না কাউকে লিড দিতে হইছে, কারণ তা না হইলে দ্যাখা যাইত ছয়মাস জ্যামিং করার পরেও আন্ডাটা হইছে। কিন্ত দ্বিতীয় এলপিতে স্পষ্ট বোঝা যায় দলের একটা নিজস্ব চরিত্র দাঁড়াইতেছে।

প্ল্যান্ট : প্রথম অ্যালবামটার মাধ্যমে হেডফোনের মানে দাঁড়াইছিল আমার কাছে। নিজের গান শোনার পর মনে হইল এই দেশে আমার মতো ভালো কেউ গায় না। অনেক গভীর ছিল, খুব শক্তিশালী। ধ্বংসের মুখামুখি পুরাই। নিজের গাওয়া নিয়ে অনেক দূর যাওয়ার ছিল তখন, কিন্তু একইসাথে জিমির গিটারের সাথে প্রাণশক্তি নিয়া জ্বইলা উঠছিলাম, উথালপাথাল দিনকাল। যা করছি তার সবকিছুতেই নিজেদের ট্রেইডমার্ক খুইজা পাইছি। আমাদের কী বাদ দেয়া উচিত আর লোকজন কী বাদ দেয় এইসব শিখতেছিলাম। যা জানতাম সেগুলো গিগের পর আরও মানুষ হোটেলে টাইনা আনছিল।

প্রথম ট্যুরে আমরা কোনো টাকা পাই নাই, একেবারেই না। জিমি ইয়ার্ডবার্ড থেকে যা পাইছিল তার প্রত্যেকটা পাই ব্যান্ডের পিছনে ঢালছে, টাকাটা যথেষ্ট ছিল না। পিটার গ্র্যান্ট আসার আগ পর্যন্ত ওরা ভাগের টাকাও ঠিকমতো পায় নাই। ফলে অ্যালবামটা কইরাই একটা রোডক্রু নিয়া ট্যুরের নামে বের হয়া গেছিলাম।

প্রশ্ন : জিমি, আমারে একবার বলছিলা জীবনকে তুমি জুয়ার মতো কইরা দ্যাখো। এইটার মানে কী?

পেইজ : বেশিরভাগ মানুষই জীবনে রিস্ক নিতে ভয় পায়, আর অনেক রিস্ক আছে নেয়ার মতো। যেটা ভালো লাগে না সেটা করার কোনো মানে নাই। তুমি যদি ফ্যাক্টরিতে কাজ কইরা প্রত্যেকদিন সকালে উইঠা নিজের জীবনরে অভিশাপ দেও, ফলাফল শূন্য তাইলে। অসুস্থ হয়ে পড়বা। এর জন্যেই বলি অনেক ভালো আছি, কারণ যা ভাল্লাগতেছে সেটাই করতেছি। মানুষের মুখ দেখতে পাওয়া, তাদের পাগলামি — এসব ভাল্লাগে। আসলেই।

প্রশ্ন : কী বাজি ধরছ তুমি?

পেইজ : দাঁড়াও বলতেছি। নাম বলব না, প্রথমে এমন একটা ব্যান্ডে ছিলাম যেখানে সবসময় বাসে ঘুরতে হইত। স্কুল ছাড়ার দুই বছর পরের কথা, ব্যান্ডে টাকাপয়সাও পাইতেছিলাম ভালো। কিন্তু অসহ্য লাগতেছিল। ফলে আর্ট কলেজে ফিরা গেলাম, পথ পুরা চেইঞ্জ হয়ে গেল। তারজন্যেই বলি সব সম্ভব। গিটার বাজানোতেই সব ধ্যানজ্ঞান ছিল, এইভাবেই সবসময় ধ্যানী হয়া থাকতে হবে জানতাম। দুই মাস পরপর গ্ল্যান্ডুলার জ্বর হইত। ফলে পরবর্তী আঠারো মাস সপ্তাহে আমি পাইতাম দশ ডলার করে। তারপরেও গিটারটা বাজায়া গেছি।

প্ল্যান্ট : আমাদের নতুন অ্যালবামের ‘টেন ইয়ার্স গন’ এর গল্পটা বলি। লেড যেপেলিনে ঢোকার আগে কুত্তার মতো খাটছি। এক নারী আমাকে বলছিল, ‘ঠিক। হয় আমি, না-হয় তোমার ভক্তরা’। এমন না ফ্যান ছিল, উত্তর দিছিলাম, ‘থামা সম্ভব না। আগায়া যাইতে হবে আমারে।’ সে এখন একটা ওয়াশিং মেশিন আর স্পোর্টস কার নিয়া ভালোই আছে আশা করি। আর কিছু বলার নাই। আমি তাকে বুঝতে পারতাম, তবে সে আমাকে বোঝে নাই। দশ বছর আগের কথা, তারপরেও ক্যামন জানি লাগে। যা-ই-হোক, এটা একটা জুয়ার মতো ছিল।

পেইজ : আরেকটা বলতেছি। আর্ট কলেজে আমাকে সেশনওয়ার্ক করতে হইত। সবাই মনে করত স্টুডিয়োওয়ার্ক খুব আহামরি গোছের কিছু। ইয়ার্ডবার্ডে জয়েন করাটা ছিল কমদামী রুটি খাওয়ার মতো, কিন্তু যেহেতু বাজাইতেই হবে — সব ছাইড়া দিছিলাম, মনে হইত স্টুডিয়োতে মনমতো বাজাইতেছি না। দিনে তিনবার সেটিঙে বসতে বসতে ওইসব মানুষ হয়া যাইতেছিলাম যাদের সবচেয়ে ঘিন্না করি।

প্রশ্ন : সেশনওয়ার্কে কী ঝামেলা?

পেইজ : কিছু সেশন অবশ্যই ভালো ছিল, সমস্যাটা হইতেছে তুমি নিজেই জানো না কী করতে যাইতেছ তুমি। আমি কিন্তু বার্ট ব্যাকোরাকের সাথেও বাজাইছি, কখনো বুঝিই নাই কী করতেছি। দুই-আড়াই ঘণ্টার নামে একটা স্টুডিয়ো বুক কইরা টানা বাজাইতাম। মাঝে মাঝে ভাল্লাগতেছে, আবার মনে হইতেছে, ‘কি করতেছি এইখানে’?

সেশন শুরু করার সময় গিটারের চলটা ছিল খুব। প্রতিদিন সলো বাজাইতাম। তারপরে স্ট্যাক্স আর পুরা ব্র্যাস সেকশনের সাথে পরিচিত হওয়ার পর দেখলাম, টুকটাক কিছু রিফ বাজাইতেছি … সলোটলো সব বাদ। মনে আছে টানা কয়েকমাস কোনো সলো বাজাই নাই। আমাকে যখন রক্যানরোলের উপরে সলো দিতে বলল, দিলাম এবং দেখলাম বাল বাজাইতেছি। এত্ত বিরক্ত ছিলাম নিজেরে নিয়া, ভিতরে ভিতরে পাক খায়া যাইতেছিল সব। তারপরেই বের হয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

rs-244379-led-zeppelin-stairway-to-heavan-lawsuit-verdictপ্রশ্ন : ইয়ার্ডবার্ডের সাথে দিনগুলা ক্যামন ছিল?

পেইজ : ভালো, বেশ ভালো সময় কাটছে। একটা ট্যুর বাদে যেইখানে আমরা সবাইকে জানে মাইরা ফেলতে নিছিলাম, কিন্তু মিউজিক্যালি অসাধারণ গ্রুপ ছিল বাজানোর জন্যে। কোনো আফসোস নাই যা করছি, যে-কোনো মিউজিশিয়ানই চাবে এ-রকম ব্যান্ডে যোগ দিতে। সবচেয়ে ভালো ছিল যখন আমি আর জেফ দুইজনেই লিডগিটারে ছিলাম। আলাদা কিছু করার ক্ষমতা এই ব্যান্ডের ছিল, কিন্তু ভিতরের গড়বড়টাই বড় হয়া দাঁড়াইল। ‘ব্লো আপ’ ফিল্ম থেকে ‘স্ট্রল অন’ কিংবা ‘হ্যাপেনিংস টেন ইয়ার্স টাইম অ্যাগো’ ভাল্লাগত। খুব বেশি যাইতাম না স্টুডিয়োতে ওই সময়।

অবশ্যই উঠানামা ছিল। সবাই আমাদের ছুটছাট ঝামেলা আর দ্বন্দ্বগুলার কথা জানতে চায়। অবস্থা এতটা খারাপও হয় নাই কখনো, অন্তত আমার কাছে। জিনিশগুলা ভালোভাবে উপস্থাপন করা হইলে হয়তো ইয়ার্ডবার্ডসের ট্যুর কিংবা কোনো একসময় অ্যালবাম করা সম্ভব ছিল। জেফ বেক মনে হয় না করবে। খুব মজার মানুষ ও।

প্রশ্ন : তোমরা অ্যালিস্টার ক্রাউলির বাসায় থাকো? (ক্রাউলি কবি আর জাদুকর ছিল মধ্যশতাব্দীর, কুখ্যাত ছিল ব্ল্যাক ম্যাজিকের জন্যে)

পেইজ : হ্যাঁ, অ্যালিস্টার ক্রাউলির বাসা। কিন্তু ক্রাউলি ছাড়াও দুই-তিনজন এই বাসার মালিক ছিল। ওই একই জায়গায় একটা চার্চ মানুষজন সহ পুড়ায়া মিশায়া দেয়া হইছিল মাটিতে। অনেক অদ্ভুত ব্যাপারই হইছে যার সাথে ক্রাউলির কোনো সংযোগ নাই। একটা মানুষকে জবাই করা হয় এইখানে, আর মাঝে-মাঝেই খুলি গড়ায়া যাওয়ার আওয়াজ পাওয়া যায়। আমার এক বন্ধু শুনছে, সে আমাকে বলছিল এমন আওয়াজের কথা। ভাবছে বিড়ালের আওয়াজ, লোকজন ডাকার পর ও বলছে —  ‘রাত্রিবেলা বিড়াল বাইন্ধা রাখো ক্যান? অনেক জ্বালায়, হলের ভিতরে ঘুইরা বেড়ায়।’ ওরা বলল, ‘বিড়ালকে একটা রুমের মধ্যে রাত্রে আটাকায়া রাখা হয়।’ তারপর ওরা বাড়ির কাহিনি জানায়। তার মানে ক্রাউলির আগেও এইসব জিনিশ চাউর ছিল বাড়িটায়। অবশ্যই ক্রাউলি সেখানে আত্মহত্যা করছিল, মানুষজন ওরে মানসিক হাসপাতালেও নিয়া গেছিল।

প্রশ্ন : তার মানে ভূতপ্রেতের কোনোকিছু নাই এইখানে?

পেইজ : সেটা বলি নাই। বলছি মাথা গড়ায়া পড়ার শব্দ শুনি নাই।

প্রশ্ন : ওই বাড়ির কী ভাল্লাগে?

পেইজ : অপরিচিত। অপরিচিতের প্রতি আকর্ষণ আছে আমার। তবে সাবধানতা অবলম্বন করি, খালি অন্ধের মতো ছুইটা যাই না।

প্রশ্ন : বাড়িতে নিরাপদ বোধ করো?

পেইজ : হ্যাঁ। আসলে আমার সবগুলা বাড়িই নির্জন জায়গায়। অনেকসময় আছে বাড়িতে একা বইসা থাকি। পানির কাছাকাছি থাকি অনেক। ক্রাউলির বাড়ি স্কটল্যান্ডের লক নেসে। সাসেক্সে আরেকটা বাড়ি আছে যেইখানে বেশিরভাগ সময় থাকি, লন্ডনের বেশ কাছেই। চারপাশে পরিখার মতো লেইক। মানে, বলতে পারি, ধারণাটা পাইতে পারো। এমনকিছু জিনিশ ঘটছে যেগুলা শুনলে মানুষ পাগল হয়া যাবে, কিন্তু অবাক হইছি যে এত ধীর-সুস্থ ছিলাম ঘটনাগুলার সময়। ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা জাদুটাদুর সাথে সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলতে পারব না। হ্যারিসন কিংবা টাউনশেন্ডের মতোও না। আমি যা হয়ে গেছি সেটা অন্য কেউ হোক, সেটা চাই না। কেউ কিছু খুঁজে বের করতে চাইলে, তারা একা-একাই পারবে। মনেপ্রাণে মানি …

প্রশ্ন : অ্যালভিন লি, জেফ বেক, পিট টাউনশেন্ডের সাথে গিটারমাফিয়ার সদস্য হিশাবে ‘রক ড্রিমস’-এ (ইলাস্ট্রেটেড বুক) তোমাকে যেইভাবে দ্যাখানো হইছে, সেটা নিয়া কী মতামত?

পেইজ : যেপেলিনের কোনো বালাই-ই নাই সেইখানে। বইয়ের লোকটা সারাক্ষণ রোলিং স্টোন্সের নাম নিয়া হাত মাইরা গেছে, তাই না? স্টোন্স কী করছে, কী বাল ফালাইছে। প্রথমে যখন দেখলাম, মনে হইল, ‘ও! ভালো বই।; … সত্যি যখন মনোযোগ দিয়া দেখলাম, অনেককিছুই পছন্দ হয় নাই। গাড়ির মধ্যে রে চার্লস একটা মেয়েরে কোমরে ধইরা ড্রাইভ করতেছে এইসব ছবি তুইলা লোক হাসানো যায়, কিন্তু দেখতে ভাল্লাগে নাই। লোকটা ফ্রেঞ্চ, আর কী বলব? আর রে চার্লস অন্ধ নাকি! কী ধরনের রসিকতা এইটা! তারা হয়তো ওর রকড্রিম, আমার না।

ষাইটের দশকে যেসব গিটারিস্ট বের হয়া আসছে — বেক, লি, টাউনশেন্ড আর আমি — সবাই এখনো বাজাইতেছি। বেক, ক্ল্যাপ্টন আর আমি অনেকটা রিচমন্ড/ক্রয়ডন গোত্রের মতো, কিন্তু অ্যালভিন লি কইত্থেকে আসছে জানি না। লেস্টার অথবা ওইরকম কোনো জায়গা থেকে। তার মানে ও এইসবের ভিতরে ছিল না। আর টাউনশেন্ড আসছে মিডলসেক্স থেইকা, ক্লাবে ঘুইরা ঘুইরা অন্যসব গিটারিস্টের বাজানো দেখত। ‘আই কান্ট এক্সপ্লেইন’-এর আগে ওকে দেখিও নাই। ওইটার উপর সেশন গিটারওয়ার্ক করতেছিলাম। টাউনশেন্ডরে অনেকদিন ধইরা দেখি না। আমরা সবাই নিজের কাজটা করে গেছি আরও ভালো কিছু করার জন্যে। বেকের এলপি-র সলো শুনলাম, ফাটায়া ফেলছে একেবারে। খুবই ভালো। জানি না, এটা সম্পূর্ণ ইন্সট্রুমেন্টাল আর গিটারিস্টের গিটারসোলো সম্ভবত। ও খুব মোলায়েম বাজায়, আর বেক যখন খুব ভালো বাজায়, টেইস্টি হয় খুব।

প্রশ্ন : এরিক ক্ল্যাপ্টনের নতুন ব্যান্ডের সাথে কাজ শুনছ?

পেইজ : ওহ! এরিক। ফাকিং হেল! এরিক। হ্যাঁ। নতুন ব্যান্ডের সাথে আর রেইনবো কন্সার্টে দুই জায়গায়ই দেখলাম। রেইনবোতে বিচিওয়ালা কিছু মানুষ ছিল। টাউনশেন্ড, রনি উড, জিমি কার্স্টেইন আর জিম ক্যাপাল্ডি — সবাই। ‘পার্লি কুইন’ তো জোস। ভাবছিলাম এরপর সম্ভবত ও বলবে, “ঠিক আছে। আমার কয়েকজন ইংলিশ মিউজিশিয়ান দরকার।” সে যেদিন থেকে অ্যামেরিকান মিউজিশিয়ানদের সাথে কাজ করতেছে, খালি পিছায়াই পড়তেছে।

রেইনবো কন্সার্টের পর ওর কাছে গেছিলাম, বুঝতে পারতেছিলাম ডেরেক আর ডমিনোজরে মাইনা নেয়া নিয়া সে খুব হতাশ। ক্রিম যা করছিল, ওরা সেটা অর্জন করতে পারতেছে না। কিন্তু কথা হইল ক্রিমের মতো একটা ব্যান্ডের কেমিস্ট্রি দ্বিতীয়বার গইড়া তুলতে গেলে সফলতার চান্স একশো কোটিতে একবার। খুব খুব কঠিন।

লেড যেপেলিনের স্থায়িত্বের চাবিকাঠি চেইঞ্জ হইছে। আমাদের প্রথম এলপি-র থেকে দ্বিতীয় এলপি সম্পূর্ণ আলাদা, আর তৃতীয়টা আরও ভিন্ন। সবসময়ই এইটা হইছে। আমি জানি প্রেসে এত খারাপ রিপোর্ট পাই কেন। মানুষজন বুঝতেই পারে না কেন আমরা এলপিগুলার নাম যেপেলিন এক, দুই, যেপেলিন তিনের সাথে ‘দ্যাটস দ্যা ওয়ে’ এবং আরও কয়েকটা অ্যাকুয়েস্টিক গান দিয়া এইভাবে সাজাইছি। রবার্ট আর আমি ওয়েলসের ব্রন-ওয়াই-অউর কটেজে গিয়া গান লেখা শুরু করছি। এইটাই অবলম্বন। ‘আমাদের কিছু হেভি রক্যানরোল করতে হবে কারণ আমাদের ইমেজের সাথে যায়’ — এ-রকম কিছু ভাইবা না। এক-একটা অ্যালবাম ধইরা আগাইছি, লোকজনের বুঝতে সময় লাইগা যাইতেছে।

প্রশ্ন : তৃতীয় অ্যালবামের জন্য ব্রন-ওয়াই-অউর কটেজে ক্যান গেছিলা?

প্ল্যান্ট : সময়টা ছিল একটু পিছায়া যা জমাইছি সেগুলা নিয়ে কাজ করার, এগুলার মধ্যে হারায়া না গিয়া। লেড যেপেলিন বিখ্যাত হয়ে যাইতেছিল, এবং আমরা চাচ্ছিলাম অন্যরকম একটা উচ্চতায় পৌঁছাইতে। ফলে পাহাড়ের মধ্যে গিয়া অপার্থিব পেইজ আর প্ল্যান্টের আবিষ্কার দরকার ছিল। ভাবলাম কিছুদিন শান্তিতে থাইকা, সানফ্রান্সিস্কো না গিয়া ওয়েলসেই ম্যারিন কাউন্টি ব্লুজের মতো আসল ক্যালিফোর্নিয়ান কিছু বাজাই। চমৎকার জায়গা। এরে ‘দ্যা গোল্ডেন ব্রেস্ট’ নামে ডাকা হয়, নামেই পরিচয়। ছোট্ট একটা উপত্যকা, যেখানে সূর্য বরাবর চলে। জিমি উপরে উইঠা ছোট্ট একটা ট্র্যাক বানাইছিল নতুন অ্যালবামের জন্যে, জিপে ঘুইরা বেড়ানোর ওই সময়গুলার একটা সাধাসিধে দিনের বর্ণনা।

ভালো পরিকল্পনা ছিল। আমাদের সেকেন্ড অ্যালবামের অনেকখানিই রাস্তায় করা, আসল রাস্তা-অ্যালবাম। সমালোচকরা যা-ই বলুক না কেন, মানুষজনের ভাল্লাগছে। রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের সমালোচকটাও ছিল একজন হতাশ মিউজিশিয়ান। হইতে পারে ইগো থেকে কথা বলতেছি, কিন্তু মানুষজন মাঝেমাঝে প্রতিভা সহ্য করতে পারে না। মনেও নাই সমালোচকরা কী বলছে, যতদূর মনে পড়ে অ্যালবামটা ভালো ছিল। আর তৃতীয় অ্যালবাম হইল অ্যালবামের অ্যালবাম। কেউ যদি আমাদের হেভিমেটাল গ্রুপ বইলা তকমা দেয়, সেটার কোনো নামনিশানা এইখানে নাই।

প্রশ্ন : কিন্তু কিছু অ্যাকুয়েস্টিক ট্র্যাক তো প্রথম অ্যালবামেও ছিল।

পেইজ : এই তো। ঠিক বলছো। তৃতীয় অ্যালবাম বের হওয়ার পর রিভিয়্যু পায়, তারপর ক্রসবি, স্টিলস আর ন্যাশ মাত্র তখন শুরু করে। সেই এলপি বের হইল আর যেহেতু অ্যাকুয়েস্টিক গিটার সামনে আইসা পড়ল আলোচনার — হুট করে কথা শুরু হইলো, ‘লেড যেপেলিনগো অ্যাকুয়েস্টিক।’ ভাবলাম, — আল্লা! ওদের কান আর মাথা বইলা কিছু নাই? প্রথম অ্যালবামে তিনটা আর দ্বিতীয় অ্যালবামে দুইটা আকুয়েস্টিক ট্র্যাক ছিল।

প্রশ্ন : জিমি, তুমি সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়ের কথা তো বললা। চল্লিশে গিয়া নিজেরে কই দেখতে চাও?

পেইজ : আমি জানিও না চল্লিশ পর্যন্ত বাঁচব কি না। হয়তো পঁয়ত্রিশও না, নিশ্চিতও না। সিরিয়াস্লি। আমার তো মনে হইত ত্রিশ পর্যন্তই টিকব না।

প্রশ্ন : কেন?

পেইজ : এই আশঙ্কাটা কাজ করে, মৃত্যুভয় না … জানি না কী, খালি মনে হয়। জন্মগত কিছু-একটা। ত্রিশ পার কইরা ফেলছি, এতদূর আশা করি নাই। দুঃস্বপ্ন ছিল না কোনো, মৃত্যুভয় নাই। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। সবই সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়, যাত্রা। কখন কী হবে আগে থেকে আঁচ করা যায় না। আমার আঙুল ভাঙার মতো, পুরা হাত ভাঙলে দুই বছর বইসা থাকতে হইত।

প্রশ্ন : তোমারে তো বলা হয় তুমি পুরানা ধাঁচে ফুল-লতাপাতা-শিশু নিয়া লিরিক ল্যাখো।

প্ল্যান্ট : কেউ কীভাবে ‘পুরানা ফুল-শিশু’ হইতে পারে? পুরা ট্রিপটার আমেজটা ছিল নীরবতা আর প্রশান্তি নিয়া, একটা মনোরম অবস্থা। সবাই তো এটাই চায়, তাই না? তাহলে এটা কীভাবে পুরানা ধাঁচের ফুল-শিশু নিয়া লেখা গান হইল? যদি তা-ই হয়া থাকে, আমি এইসব নিয়াই পুরানা থাকতে চাই। লিরিক লিখতে অনেক কষ্ট করি। সবগুলাই যে আহামরি তা না। যেমন ‘ব্ল্যাক ডগ’ তো বাথরুমে গিয়ে আনন্দে গাওয়ার মতো গান, কিন্তু একই কথা। লোকজন তো শোনে। তা না হইলে, ইচ্ছা করলে তুমি কন্টিনেন্টাল হায়েত হাউজের মেন্যুও গাইতে পারো।

প্রশ্ন :  ‘স্টেয়ারওয়ে টু হেইভেন’ তোমাদের কাছে কতখানি গুরুত্ব বহন করে?

পেইজ : আমি ভাবছিলাম, ট্র্যাকটার আমাদের ব্যান্ডের মূলভাবটা ক্রিস্টালাইজ করছে। ব্যান্ড যা করতে পারে তার সর্বোচ্চটা এর ভেতরে আছে … একটা ইউনিট হিশাবে। সলো বা অন্যকিছু নিয়ে বলতেছি না, সবকিছুই। খুব ভাইবাচিন্তাই আমরা সিঙ্গেল হিশাবে রিলিজ করি নাই। এটা আমাদের মাইলস্টোন। সব মিউজিশিয়ানই এমনকিছু চায় যেটা বহুদিন টিকে থাকবে, তাদের কথা মনে করাবে। ‘স্টেয়ারওয়ে’ এমন একটা ট্র্যাক। টাউনশেন্ড যেমন তার ‘টমি’ নিয়া ভাবে। জানি না এমনকিছু আর করা সম্ভব কি না। পরিমিতি আর প্রতিভার এমন কোনো পর্যায়ে আবার যাওয়ার জন্যে অনেক শ্রম দিতে হবে।

আমার ধারণা খুব কম মানুষই এমন করতে পারে। হয়তো একটা। জনি মিশেলের মিউজিক বাসায় সবসময় বাজাই। ‘কোর্ট অ্যান্ড স্পার্ক’ ভাল্লাগে কারণ আশা করছিলাম সে হয়তো কোনো ব্যান্ডে কাজ করবে। ওর সবচেয়ে ভালো জিনিশ হইল, যা দেখছে সেটা উপলব্ধি কইরা পুরা জিনিশটাকে ক্রিস্টালাইজ করে লিখতে পারে। ওর গান শুনলে কান্না আসে। খুব বিব্রতকর। “পুরানো বন্ধুগুলা বদলে গেছে / তারা মাথা ঝাঁকায় / আর বলে আমি বদলে গেছি”  — খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি ও কী বলতে চাইতেছে। জানতে ইচ্ছা করে সে কয়টা আসল বন্ধু পাইছে। জানতে ইচ্ছা করে একজন মিউজিশিয়ান কয়টা ভালো বন্ধু পায়। তুমি অবাক হয়া যাবা — বিশেষ কইরে এই বদলায়া যাওয়ার ব্যাপারটা। সবাই ভাববে তুমি বদলে গেছ। খুব কম মানুষকেই আসল বন্ধু, কাছের বন্ধু বলতে পারি। আমার কাছে তারা অনেক মূল্যবান।

প্রশ্ন : তুমি কি কিছু বলবা?

প্ল্যান্ট : যাদের সাথে আছি, তাদের সাথেই সবসময় ছিলাম। ভালো আছি। অনেকটা বিটনিক দিনগুলার অবশিষ্টের মতো। ওদের সাথে খুব ভালো সময় কাটাই। ট্রিপে অহেতুক কিছু হয় না, কারণ অনেক আগে থেকেই ওদের চিনি। এখনো তেষট্টির সেই দিনগুলার কথা হয় যখন আমার কাছে কেউ হয়তো দুই ডলার পাইত। আমি ছিলাম ওয়াশবোর্ডওয়ালা একটা ফতুর ব্লুজ গায়ক।

প্রশ্ন : অ্যামেরিকার কারো গিটার বাজানো ভাল্লাগে?

পেইজ : আচ্ছা। আমাদের যে-কারো মধ্যে সবচেয়ে ভালো যে হেনড্রিক্স, ওকে আমরা হারাইছি। আরও যারা ছিল তারাও মারা গেছে — যেমন ক্ল্যারেন্স হোয়াইট। যা ছিল! জোস! অন্য স্টাইলে যে মারিয়া মুলডউরের ‘মিডনাইট অ্যাট দ্যা ওয়েসিস’-এ বাজাইছিল সে। অ্যামোস গ্যারেট। ও লেসপল অরিয়েন্টেড ছিল। সে যদি ইলেক্ট্রিক গিটার আবিষ্কার না করত, আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। আরেকজনের নাম বলতে গেলে এলিওট র‍্যান্ডাল। ‘স্টিলি ডে’-তে ও অতিথি শিল্পী ছিল। ব্যান্ডের দিক থেকে বললে, ‘লিটল ফিট’ আমার প্রিয় অ্যামেরিকান গ্রুপ।

‘জিনিয়াস’ টার্মটা আমি গ্রহণ করব না। রক্যানরোলের সাথে জিনিয়াসের কোনো সম্পর্ক নাই। তুমি যদি খুব মেলোডিক স্ট্রাকচারে করা ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক শোনো, তাহলে বুঝবা রক্যানরোলের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের একটা মান আছে যেখানে হয়তো ‘জিনিয়াস’ শব্দটা ব্যবহার করা যায়, কিন্তু রক্যানরোলে এইটা ইউজ করার মানে হচ্ছে তুমি পাৎলা বরফটাকে পা দিয়া মাড়ায়া দিতেছ। রক্যানরোল হচ্ছে ফোকমিউজিক, স্ট্রিটমিউজিক। রকমিউজিক স্কুলে শেখানো হয় না, এটাকে তুলে ধরতে হবে। রাস্তার মিউজিশিয়ানদের মধ্যে তুমি জিনিয়াস পাও না তার মানে এই না কিছু সম্ভব না। রক্যানরোলে যতখানি দিবা, শৈল্পিকভাবে ততখানিই ফেরৎ পাবা। তোমাকে কেউ শেখানোর নাই। যা করার নিজ থেকেই করতে হবে এবং সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার এইটাই।

প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের ছেলেমেয়েরা লেড যেপেলিনকে যে তাদের প্রিয় ব্যান্ড বলছে জাতীয় টেলিভিশনে, ক্যামন লাগতেছে?

প্ল্যান্ট : আমাদের চায়ের দাওয়াত না-দেয়াটা খুব ছোটলোকগিরি হইছে। জেরি ভাবছে আমরা সবকিছু তছনছ কইরা দিব। তিন ট্যুর আগে থেকে যদি আমাদের পাব্লিসিস্ট থাকত, তাহলে সে হয়তো এখন আমাদের সাথে রাস্তায় থাকত। শুইনা খুব ভাল্লাগতেছে হোয়াইট হাউজের মানুষজন আমাদের গান শোনে। তাদের রুচির প্রশংসা করতে হয়।

প্রশ্ন : শেষমেশ কিছু বলবা?

পেইজ : আমি এখনো একজন ডানাকাটা পরীর সন্ধানে আছি। আজকাল সেগুলা পাওয়া সম্ভব না, বিশেষ করে তুমি যখন প্লাজা হোটেলে থাকতেছ।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you