জো

জো

জোসেফ। জোসেফ ফিয়েনেস। সংক্ষেপ জো। অবশ্য জোসেফ ফিয়েনেস নামেই সিনেমার চরিত্রতালিকায় আমরা তার নামগ্র্যাফ লক্ষ করে থাকব। নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে এই অভিনয়শিল্পীর কাজ আমরা হলিউডি সিনেমায় দেখেছি, কিছু কাজের তো প্রশংসাও করেছেন অকুণ্ঠ সবাই। উল্লেখ না করলেই নয় ‘শেইক্সপিয়্যর ইন ল্যভ’ ম্যুভিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে জো ফিয়েনেসের জোরালো অভিনয়। শেখর কাপুরের ‘এলিজাবেথ’ ম্যুভিতে এর আগেও অভিনয় করে মনোযোগীদের নজর কেড়েছেন। অনেকদিন হলো অভিনয়ে দেখা না গেলেও দর্শকমনে এখনও উঁকি দেন তিনি, যেমন দিচ্ছেন এই রিভিয়্যুয়ারের মনে শেইক্সপিয়্যররূপী জোয়ের অভিনয় ফিরে দেখতে যেয়ে।

‘এলিজাবেথ’ সিনেমাটা রানী প্রথম এলিজাবেথের জীবনগল্প অবলম্বনে শেখর কাপুর নির্মাণ করে সেই-বছর অজস্র অ্যাক্লেইম লভেছিলেন। বর্তমান যুক্তরাজ্যের একদা রানী, বিশ্বেরই বলতে গেলে একদা রানী ছিলেন তিনি, চিরকুমারী এলিজাবেথ। চিরকুমারী বলতে ম্যারিট্যাল স্ট্যাটাসের বিচারে ভার্জিন বোঝানো হচ্ছে, বাকিটা যার যার আন্দাজ ও আলো-আঁধারী ইতিহাসমতো বোধ্য। গল্প হচ্ছে, সেই রানী নাকি ছিলেন আর্ল অফ লেসেস্টার রবার্ট ডাডলির ডাইহার্ড প্রণয়নিমগ্ন। পরে এলিজাবেথ জানতে পারেন যে প্রেমিক ডাডলি বিবাহিত, শুধু বউ আছে তা-ই নয় রীতিমতো সন্তানাদিরও জনক, শুনে এলিজাবেথ বেচারি কি-আর করবেন অগত্যা। বেজায় বেদনায় প্রেমিকের বিশ্বাসঘাতকতায় এলিজাবেথ চিরকুমারীই থেকে গেলেন। প্রতিশোধই নিলেন, হয়তো, অভিমানজাত প্রতিশোধ। ‘এলিজাবেথ’ ম্যুভিতে এই রবার্ট ডাডলি ক্যারেক্টারে জো ফিয়েনেস অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়েই দিয়েছিলেন।

অবশ্য জোসেফের কৃতিত্বগাথা গাইবার সময় ‘এলিজাবেথ’ ম্যুভিতে তাকে নিয়েছিলেন যিনি ডাডলি চরিত্রে, সেই নির্মাতা শেখর কাপুরের নামটা আলবৎ নিতে হবে। শেখর প্রায়-অপরিচিত কেইট ব্ল্যাঞ্চেট আর আস্ত-অপরিচিত জোসেফ ফিয়েনেস উভয়কেই বিশ্বাস করেছিলেন দুইটা বাঘা চরিত্র তুলে দিয়ে। এই বিশ্বাসের অমর্যাদাও করেননি দুজনের কেউই। ক্যুয়িন এলিজাবেথের চরিত্রে কেইট ব্ল্যাঞ্চেট তো দুর্ধর্ষ অভিনয় দেখিয়েছিলেন। সমানে সমান জোসেফও। যদিও রবার্ট ডাডলি চরিত্রটা ছায়াছবিতে নেহায়েতই ছোট কলেবরের, গুরুত্বপূর্ণ নো সন্দেহ, জো অতিশয় ভালো করেছিলেন চরিত্রস্ফুটনে।

এলিজাবেথের কথা এতক্ষণ ধরে বলা হলেও জোকে খ্যাতি এনে দেয় ‘শেইক্সপিয়্যর ইন ল্যভ’ ম্যুভিটা। আটলান্টিকের দুই তীরে তো বটেই, তীর ছাড়ায়ে বিশ্বের ময়দানান্তরে বেজায় খ্যাতি পাইয়ে দেয় শেইক্সপিয়্যরের পয়া ক্যারেক্টারটা। ফিয়েনেসের ক্যারিয়ার আগ বাড়তে থাকে একে একে কেল্লা ফতে করতে করতে। ‘শেইক্সপিয়্যর ইন ল্যভ’ ম্যুভিতে কেবল তো জো নয়, আনকোরা জোকে অভিনয় করতে হয়েছে হলিউডের বাঘা বাঘা অ্যাক্টিং-আর্টিস্টদের সঙ্গে। নায়িকা গিনিথ প্যাল্ট্র্যো, পরিচালক জন্ ম্যাডান। দুই কি তিনটা নয়, ছয়-ছয়টা অ্যাওয়ার্ড বগলদাবা করে শেইক্সপিয়্যর সেবারকার অস্কার থেকে।

মূলত মঞ্চের অভিনেতা জো ফিয়েনেস। পরিবার পুরো হলিউডবর্তী। অনেকেই অভিনয়শিল্পী জো ফিয়েনেসের ব্লাডের। কোরিয়োগ্র্যাফার, ড্যান্সার, ডিরেক্টর ইত্যাদি পেশায় ফিয়েনেসের রক্তসৌত্রিক লোকেরা জড়িত। মা একজন লেখক, উপন্যাসকার, বাবা আলোকচিত্রশিল্পী। স্বীয় সহোদর র‍্যালফ ফিয়েনেস, জোয়ের এল্ডার ব্রো, লব্ধপ্রতিষ্ঠ অভিনয়শিল্পী। ক্রিয়েটিভ একটা অ্যাটমোস্ফিয়ারেই বিকাশ তার ছেলেবেলা থেকে প্রতিষ্ঠালগ্ন অব্দি।

সিনেমায় পার্ট পাবার আগে থেকে দ্য রয়্যাল শেইক্সপিয়্যর কোম্প্যানিতে অ্যাপিয়ার করতেন নিয়মিত ছোটপরিসর চরিত্রাবলিতে। স্টেজই জোয়ের স্বাচ্ছন্দ্যস্থল। ম্যুভিপর্দার অভিনয়ে একঘেয়েমি এলে ফের মঞ্চেই ফিরেছেন। অনেক ম্যুভিই ফিয়েনেসের অভিনয়ের কারণে মেমোরেবল। অত্যন্ত মিষ্টি, মজাদার, নির্দোষ একটা ছবি ‘মার্থা মিট ফ্র্যাঙ্ক’, ‘ড্যানিয়েল অ্যান্ড ল্যরেন্স’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়া ‘রাউন্ডার্স’, ‘র‍্যান্সিড অ্যালুমিনিয়াম’, ‘ফরেভার মাইন’, ‘কিলিং মি সফটলি’ প্রভৃতি সিনেমা ফিয়েনেসের উল্লেখযোগ্য অভিনয়কলার সিগ্নেচারবহ।

প্রতিবেদনকারী : বিদিতা গোমেজ

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you