‘ল্যান্ডস্কেপ’ — গ্রিসের ছবি। গ্রিস বলতে ইতিহাস আর পুরাণ, তার অলিভ অরণ্য, গ্রিক ফিলোজোফি আর গ্রিক ট্র্যাজেডি। গ্রিস মানেই অতীত। পৃথিবীর মানচিত্রে সে তো আজ দক্ষিণ-পূর্ব ইয়োরোপের একেবারে সেই নিচের দিকে একটি খণ্ডৎ-ত মাত্র! লুপ্ত বেড়ালের মতো সে যে আজও তার মূঢ় হাসিটি নিয়ে জেগে, এটা তো জানা ছিল না। গ্রিস যে ফিল্ম করে, তা-ই জানা ছিল না।
অথচ, প্রথমদিনে গ্রিসের উদ্বোধনী ছবিটি দেখেই মনে হয়েছিল বুঝি উৎসবের সেরা ছবিটি পয়লা রাতেই দেখা হয়ে গেল। রবীন্দ্র সরোবর মুক্তমঞ্চের প্যান্ডেলটি ৪০০০ দর্শক বসার উপযুক্ত করে নতুনভাবে বানাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধনক্ষয়ে কার্পণ্য করেননি। নিতম্ব-স্থাপনের ভঙ্গিমা কী একেকজনের, যেন ইতিহাসে যে-যার আসন গ্রহণ করছেন! যেন, গ্রিসের ছবি দেখাতে হবে বলেই এই বিশাল অ্যাম্ফিথিয়েটার! এর মূল্য নাকি কোটি টাকার ওপর? ফেস্টিভ্যালে সরকারের মোট খরচ নাকি দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে! ইফফির সভাপতি মাইকাসুর (মাইক+অসুর) জি.পি. সিপ্পি তা-ই বললেন।
যা-ই হোক, কার যেন এ ধনক্ষয়ের (রঞ্জি ইন্ডোরে করা যেত না কি?) সব গ্লানি মুছে গেল, প্রথম ছবিতেই, ওই নিঃসঙ্গ কাক, থিও অ্যাঞ্জেলোপুলাসকে, প্রান্তরের কুয়াশার মধ্য দিয়ে উড়ে যেতে দেখে।
গানপারটীকা : লাস্ট মিলেনিয়ামের লাস্ট সেঞ্চুরির লাস্ট ডিকেইডের শুরুর দিকটায়, নাইন্টিন নাইন্টিসের জানুয়ারিতে, একটা চলচ্চিত্র-উৎসবের রিভিয়্যু করেছিলেন বর্তমান রচনার লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। ধারাবাহিকটি লিখেছিলেন সম্ভবত ইন্ডিয়ার পশ্চিমবাংলা রাজ্যের কোনো দৈনিক/সাময়িক পত্রিকায়। সেইটা বাদে একদিন বইয়ের অন্তর্ভূত হয়েছে। এই নিবন্ধটা গানপারে রিপ্রিন্টেড হচ্ছে সেই বই থেকে; বইয়ের নাম, — বই না-বলে চটিপুস্তিকা বললেই ব্যেটার বর্ণনা হয়, — ‘চলচ্চিত্র চঞ্চরী’। ইন্ডিয়ার প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই বই/পুস্তিকা জানুয়ারি পঁচানব্বইয়ে বের হয়েছে। এই নিবন্ধটি গৃহীত হয়েছে সেই পুস্তিকা বা বইয়ের প্রথম মুদ্রণের পৃষ্ঠাঙ্ক ষোলো থেকে। এইটা আস্ত রচনার অংশবিশেষ। মূল লেখা আরও অনেক বড়। প্রতিটা আলাদা নিবন্ধে একেকটি শিরোনামা আছে। এই নিবন্ধের শিরোনামাটা গানপারে রিপ্রিন্টকালে অপরিবর্তিত রাখা গেছে। এই রচনা ছাপানোর সময় এইটুকু শুধু মনে রেখে যেতে পারি যে একটা ছায়াছবিপ্রদর্শনীর প্রেক্ষাগৃহ ব্যতিরেকে এই কিছুদিন আগেও উন্নত বই/সিনেমা দেখার/উপভোগের বিকল্প উৎস বলতে গেলে ছিলই না কিছু। তখন চলচ্চিত্র উপভোগের, বিশেষভাবেই বিদেশের চলচ্চিত্র উপভোগের জন্য চলচ্চিত্রোৎসবের বিকল্প কমই ছিল। বর্তমানে ফেস্ট লাগে না। জামার বুক/পাছার পকেটে এইটুকু একটা সেলফোনে দেশবিদেশের এক-দুই গণ্ডা খ্যাতনামা ছায়াছবি নিয়া ঘোরে সবাই। কিন্তু ম্যুভিক্রিটিক বা ফেস্টরিভিয়্যু যে কত বৈচিত্র্যে লেখা যাইতে পারে, এর একটা ভালো উদাহরণ হতে পারে এই কিসিমের ন্যানো গদ্যগুলা। — গানপার
… …
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS