আমি নিশ্চয় ভালোমানুষ, তবে ফেরেশ্তা নই। নিশ্চয় পাপ করি, কিন্তু দৈত্যদানো নই। বিপুলা এই ভুবনে নেহায়েত এক সাধারণ মেয়ে আমি, নিঃশঙ্ক নির্ভরতায় ভালোবাসা যায় এমন কাউকে খুঁজে ফিরছি।
মেয়েটাকে দাও তার পায়ের মাপের জুতা, দুনিয়া জয় করে দেখাবে সে।
নিখাদ কিচ্ছুতেই নান্দনিকতা নাই, খাদ থাকাতেই সৌন্দর্য; ভদ্দরলোকিতায় শিষ্টাচারে আকৃষ্ট হবার কিছু নাই, উল্টাপাল্টা পাগলামিতেই নিহিত প্রতিভা; যারপরনাই বিরক্তিকর হবার চেয়ে ব্যাপক অভিনয়ভানপটু হওয়াও অনেক ভালো।
আমি স্বার্থপর, অধৈর্য ও অনেকটাই নিরাপত্তাহীনতায় ভীতসন্ত্রস্ত। করি ভুলভ্রান্তি বেজায়, সাধ্যি নাই নিয়ন্ত্রণ করবে কেউ আমায় এবং আমি নিজে ছাড়া কারোর ক্ষমতা নাই আমারে সামলায়। জেনে রেখো, যদি বিপন্ন সময়টায় আমারে তুমি আগলাতে না পারো তবে আমার কাছ থেকে শ্রেয় কোনোকিছুরই হিস্যা পাবে না তুমি।
সকলে প্রত্যেকেই আমরা আকাশের নক্ষত্র, সকলে প্রত্যেকেই ঝিকিমিকি ফুটে রইবার মতো যোগ্য।
বুদ্ধিমতী মেয়েরা ত্যাজ্য হইবার আগেই ত্যাগ করে তার ত্রাতা হাম্বাগটিকে।
প্রণয়বিশারদেরা হামেশাই বলে যে হ্যাপি ম্যারেজের জন্যে প্যাশনেইট প্রেমের চেয়ে বেশি কিছুর দরকার হয়; মিলনের দীর্ঘস্থায়িতায় চাই একের তরে অপরের সত্যিকারের পছন্দ ও আশনাই; কিন্তু প্রণয়বেত্তাদের এই সিদ্ধান্তগুলো বৈবাহিকতার কোনো শর্ত নয়, প্রেমশর্তও নয়, এইগুলা আসলে একেকটা ভালো বন্ধুতার সংজ্ঞা।
আমি নিজেরে ঝেড়েঝুড়ে তুলি, তিলে তিলে সযত্ন কুড়াইয়া লই এবং নিখোঁজ নিজেরে ফিরিয়া পাই যখন আমি নিজের সঙ্গে একলা থাকি।
একটা মেয়েকে যদি তুমি হাসিয়ে তুলতে পারো, তোমারে সে যে-কোনোকিছুই দিয়ে দেবে দ্যাখো চাহিবামাত্তর।
তোমার সফলতায় চারপাশের মানুষগুলো তোমার প্রতি বিদ্বিষ্ট হয়ে ওঠে। এখন আমি প্রায়ই ভাবি যে এমনটা না হয়ে অন্যভাবেও তো হতে পারত। কতই-না দারুণ হতো যদি ঈর্ষাদষ্ট মুখগুলো হুদাহুদি ঘৃণা না-পুষে উপভোগ করত সোল্লাস তোমার সঙ্গে এই-সমস্ত সফলতার মুহূর্তগুলো!
সঙ্গী নিয়া আনহ্যাপি হবার চেয়ে নিঃসঙ্গ একলা আনহ্যাপি হওয়া অনেক সুখের।
যৌনতা বা রতিক্রিয়া হচ্ছে ন্যাচারের অংশ। সবসময় আমি ন্যাচারের সঙ্গে এবং ন্যাচারাল থাকি।
শাঁসালো প্রেমিক হচ্ছে সে-ই যে তোমার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বা হাসিদৃষ্টি বিনিময়ে এমনকি নিরুদ্দিষ্ট উদাস অপলক তাকিয়ে থেকেই তীব্র ও উন্মুল তোমায় কাঁপিয়ে তুলতে পারে।
যৌনতা আকর্ষক ও উপাদেয় তখনই যখন সেইটা হয় স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত।
ভয় জিনিশটা হাবাগোবাদের জন্য। অনুতাপ জিনিশটাও তদ্রুপ।
দুনিয়ায় হাইহিল জুতার কে উদ্ভাবক আমি জানি না, বাট দুনিয়ার তাবৎ নারী তার প্রতি কৃতজ্ঞতাসূত্রে আবদ্ধ।
কোনো ধরনের মেইকাপ ছাড়া মাথায় একটুকরা স্কার্ফ আর একটা আলখাল্লা টাইপের পোলো কোট গায়ে চাপায়ে এবং হাঁটার একটা বিশেষ ভঙ্গি নিয়া আমি মাঝেমধ্যে রাস্তায় বেরোই, কিছু খরিদ করতে বা খামাখাই দিনযাপনরত মুখর মানুষের মেলা দেখতে। এবং তখন কি দেখি জানো, খুব ধারালো উজ্জ্বল চেহারার টিনেইজার মেয়েরা চারপাশে চরাফেরা করছে, উঠতি বয়সের সেই কিশোরীপ্রতিমারা আমায় দেখে কেমন চঞ্চল উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে, এ ওরে ঠেস দিয়া ফিসফিসায়, “আরিব্বাপ, দ্যাখ দ্যাখ, কে যায় দ্যাখ!” ওরা আমার পিছু নেয়। দেখেও না-দেখার ভান করে আমি হাঁটি। আমি কিছু মনে করি না।
খ্যাতি কখনো পরিতৃপ্ত করে না। খানিকটা উষ্ণ করে, খ্যাতি জিনিশটা, এবং খ্যাতিজাত উষ্ণতার আয়ু অতি ক্ষণিকের।
কোশেশ করছি নিজেরে খুঁজে পেতে ঠিকঠাক। কিন্তু কাজটা আদৌ সোজা না।
বুড়ো হয়ে বেঁচে থেকে কিসের ফায়দা? আসো, লোলচর্ম বুড়ো হবার আগে এবার বেঁচে থাকাটা শুরু করি সব্বাই মিলে।
আমার এই গোটা জিন্দেগিটা, মাঝে মাঝে মনে হয়, ব্যর্থ মনোরথের মহা একটা মালা।
দুনিয়ায় যা-কিছু সবই নিজেরে বুঝ দিয়া রাখবার ভাওতা, তাই না?
সহজাত প্রবৃত্তি দিয়া বা আহরিত বুদ্ধিবিবেচনার প্রখরতা দিয়া নারীরা জানে যেভাবেই হোক কোনটা তাদের জন্যে ভালো কোনটা না।
পুরুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে এমনকিছু সমস্যার দেখি না যতক্ষণ পর্যন্ত ওই পৃথিবীতে আমার নারী হওয়াটায় কেউ বাগড়া না দেয়।
অনুভূতিটা আমারে হামেশা পাকড়াও করে, এবং কখনো কখনো স্পষ্ট বুঝতে পারি, বেদম বোকা বানায়ে চলেছি কাউকে; কে, কিংবা কাকে এবং কীভাবে, তা জানি না; ম্যে-বি নিজেকেই।
আমি নিঃসঙ্গ; সঙ্গে যে-ই থাকুক, উৎসবে হোক বা উদ্বাহু উল্লাসে, আমি একা।
আমাকে যদি জীবনে একটাকিছুর জন্য গর্ব প্রকাশ করতে বলা হয় তো বলব যে এই জিন্দেগিতে আমি কারো ঘরে-পোষা নারী কিংবা রক্ষিতা নই এবং এইটাই আমার সবেচেয়ে বড় গর্ব।
ঘুম জিনিশটা আমার কাছে শ্রেষ্ঠ সুন্দর জিনিশ। যা চাই তার কিছুই তো করতে পারি না জেগে থেকে, অ্যাট-লিস্ট ঘুমের সময়টায় স্বপ্নটা তো দেখতে পারি।
কুকুর আমায় কামড়ায় নাই কোনোদিনই, বিস্তর কামড়েছে মানুষ।
দুনিয়াবি নিয়মনীতিগুলো যদি মান্য করে আসতাম, বসে বসে কুরুশকাঁটায় মাফলার বুনতে হতো, কোথাও পৌঁছাতে পারতাম না।
হলিউড হচ্ছে এমন একটা জায়গা যেখানে একটামাত্র চুমুর জন্য তোমায় দেয়া হবে কড়কড়ে নোটের হাজারটাকা, আর তোমার আত্মার জন্য পুরানা আধুলি একটা।
পয়লা আমি নিজেরে অ্যাট-লিস্ট নিজের কাছে একজন স্বায়ত্তশাসিত ব্যক্তি হিশেবে দাঁড় করায়ে এরপরে চেষ্টা করব অভিনয়শিল্পীর অভিধাটা হাসিল করতে।
বিছানায় কি পরে শুই আমি? হ্যাঁ, ভালো প্রশ্ন করেছেন। শ্যানেল ফাইভের সুবাসটাই শুধু।
ক্যারিয়ার হয় জনতায়, আর ট্যালেন্ট নির্জনতায়।
সেন্সরওয়ালাদের নিয়া ঝামেলাটা হচ্ছে যে এরা নায়িকার ক্লিভেইজ বা স্তনসন্ধি নিয়া ব্যাপক দুশ্চিন্তায় দিন কাটায়; কিন্তু দুশ্চিন্তা তো করবে একটা নায়িকার স্তনসন্ধি বা ক্লিভেইজ না থাকলেই, তাই না?
আমি কোন যোগ্যতায় কারো কাম্য হব বলো? সন্তান পেটে ধরতে পারব না, রান্ধাবাড়া পারব না, আমি তিন-তিনবার তালাকপ্রাপ্তা। আমারে কে-আর চাইতে পারে চাওয়ার মতো দুনিয়াধামে?
এই ভয়ে আমি সিঁটিয়ে থাকতাম যে একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাবো হয়ে গেছি আমি আমার মায়ের মতো এক ধৈর্যশীলা মাথানিচু মহিলা!
চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ
… …
- শৈলিন উডলির কথাগুলি (৭) - August 11, 2019
- কেইটের কথাবাত্রা (১০) - July 25, 2019
- টিল্ডা টোল্ড (২) - May 12, 2019
COMMENTS