রাজনীতি হইল সেইটা, যা খুব কম লোকে পাল্স বুইঝা চালায়ে যাইতে পারে। ইতিহাস খুবই অন্যরকম জিনিস। নট এভরিওয়্যন্স কাপ অব টি।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার বা যে-কোনো পুরস্কার বিসর্জনের মধ্য দিয়া যেই ‘গ্রেটনেস’ সমাজে আপতিত হয়, তথা ইতিহাসে; তার মূল্য পুরস্কার গ্রহণের চাইতেও বড়। এইটুকু খুবই সরল মানবিকী-রাজনীতির উদাহরণ।
প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা আদতে ব্যক্তিকে শক্তিশালী করে, তার মানে, ব্যক্তিই প্রধান রাজনৈতিক অবলম্বন বা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হন, কালক্রমে। সচেতনভাবেই তা ওই ব্যক্তিটির প্রস্তাব।
Mashrur (মাসরুর আরেফিন) ভাই যেভাবে সবার যুক্তি খন্ডন করতেছিলেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার ঘটনা ঘটলে তা গ্রহণ বা বর্জন বিষয়ক অভিমতে; তাতে উনার ওই প্রতিষ্ঠানবিরোধিতাই প্রকাশ পায়, যা সব রকম পুরস্কার বা অ্যাপ্রিসিয়েশনের উপরে অবস্থান করে। এইটা হইল মানুষের গ্রেট হইবার প্রয়াসের রাজনীতি। তা পুরস্কার গ্রহণ করতে পারার সক্ষমতা বা মানসিক ও সামাজিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই নগণ্য জিনিস। তা-ও কিছু কিছু অবস্থান যেমন সময় থাকতেই নিতে হয়, তেমনই অবস্থান হইল কিছু কিছু পুরস্কার গ্রহণ করা। তাতে গ্রেটনেসের দিকে আগাইয়া যাওয়ার যাত্রা কমে না।
মাসরুর আরেফিন নানাভাবে আসলে বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিলে কী হবে, না হবে; এইটা নিজেও মনে হয় খানিকটা ঝালাই করে নিলেন। তাতে উনার বাংলা একাডেমি পাওয়া আরও দুরূহ হইল, মনে করি। ভবিষ্যতেও। আর তাতে যে উনার সায় সর্বাজ্ঞক্রমে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার গ্ল্যামার আছে, তার ইম্প্যাক্টও খুবই সুদূরপ্রসারী। তা কাটানো খুব-একটা সোজা নয়।
এই দোদুল্যমানতাই হইতেছে শিল্পসাহিত্য করার প্রাইস। মানে এর সর্বদা জায়মান প্রেক্ষাপট। তাই সরকার বা ক্ষমতার সাথে সাহিত্যিকের মূল জায়গাটা হইল এই ইকুইলিব্রিয়াম রচনার অলটাইম সম্ভাবনা ও প্র্যাক্টিক্যালিটি। যা সবসময়ই দুঃখজনকভাবে স্ট্র্যাটেজিক।
২৬/০১/২০২৩
প্রাসঙ্গিক পাঠ / কথাসাহিত্যিক ও কবি মাসরুর আরেফিনের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পেইস্ট করা
কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র আজ একটা এক লাইনের নোংরা পোস্ট দিয়েছেন। তাতে লেখা : ‘মাসরুর আরেফীন বাংলা একাডেমি পাওয়ার জন্য নাকি উঠেপড়ে লাগছেন‘। — আজব পোস্ট! হঠাৎ আচমকা কারও হাতে ছোরার আঘাত খাবার মতো।
ব্যাংকের কাজে অন্য শহরে যাওয়ার পথে পথচলতি আমি তাকে উত্তরটা দিয়েই দিলাম। নিচে তাঁর পোস্ট এবং আমার উত্তর। উত্তরটা তাঁর পোস্টের কমেন্ট বক্সে দেবার পরপরই মনে হল, উনি হয়তো পোস্টটাই মুছে দেবেন। তাই সবকিছুর স্ক্রিনশট নিয়ে রাখা। কারণ, আমাদের সাহিত্যজগতের ঘোর নোংরামির এই ইতিহাসগুলো মুছে যাওয়া একদমই উচিত নয়। কারণ, লেখক হিসেবে আমার আপনাদেরকে দেখিয়ে দেবার একটা কাজ রয়েছে যে — ভাইয়েরা দ্যাখেন এই যে বোনেরা ও ভাইয়েরা এই যে, পৃথিবী আসলে এইভাবে চলছে যে!
——
সালাহ উদ্দিন শুভ্র :
মাসরুর আরেফীন বাংলা একাডেমি পাওয়ার জন্য নাকি উঠেপড়ে লাগছেন।
আমার উত্তর :
কত বড় ভুল কথা আপনার Salah Uddin Shuvro, এবং কত অকারণ এক কথা। আপনি জানেন না কিছুই, জাস্ট আমাদের দেশের সাহিত্যজগতের এই প্রশ্নযোগ্য পরিবেশে কার থেকে কী শুনলেন, কে কী আমাকে নিয়ে মিথ্যা বলল, আর ওই আপনি আমার সঙ্গে একবার ইনবক্সে সেগুলো কী তা জানতেও চাইলেন না, কিন্তু দুম করে সরাসরি আমার নাম ধরে ওপেন পোস্ট দিয়ে দিলেন?
মানুষের ব্যক্তিগত মর্যাদার ওপরে এত অশ্রদ্ধা, এত অবমাননা! আবার মানুষের জন্যেই আপনি লেখেন ও সাংবাদিকতা করেন?
আপনি আমার শেষ উপন্যাস আড়িয়াল খাঁ নিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন: ‘অনেকদিন পর একটা বই পুরা পড়লাম। একটা উপন্যাস, নাম আড়িয়াল খাঁ।…পড়া শুরুর পর আমার অন্যরকম লাগল। উপন্যাস পাঠের যে-অভ্যাস আমাদের, তার সঙ্গে মাসরুর বেমানান।…তিনি যা করবেন তা-ই করবেন…কোনো কিছুতে তাকে ঠেকানো যাবে না বলে মনে হয়।’ সেটাই শেষ না। আপনি আরও বলেছিলেন এরকম যে, মাসরুর শহিদুল জহিরের চাইতেও বড় বা ভাল লেখক। ইত্যাদি।
তো, আমার যখন আপনার মতো সাহিত্য-বোঝা পাঠক আছে, যখন আমার বই বেরোলেই সাড়া পড়ে, দু তিন হাজার কপি কদিনেই বিক্রি হয়ে যায়, যখন আমি নিজেই জানি যে আমার লেখা অন্য অনেকের চাইতে ভাল এবং দিন দিন আমার পাঠক বাড়ছেই, আর আমার সমালোচকেরা জ্বলছে কিন্তু তারা আমাকে ফেলতে পারছে না, আমাকে ফেলা অসম্ভব, কারণ আমি ভোরের পাছায় নতুন সূর্যের আলো জ্বালানো আমাদের তথাকথিত মানবকল্যাণকামী ভণ্ড এনজিও কথাসাহিত্যিকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছি, এতটা যে, তারা আমাকে তাদের ঈর্ষার সবুজ দুঃস্বপ্নে দেখে, দেখে যে, আলথুসার আবছায়া আড়িয়াল আগস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড খা খা করে তাদের টেবিলের দিকে তেড়ে আসছে — তখন আপনার কি সত্যি সত্যিই মনে হয় যে, এই মাসরুর আরেফিন, এই প্লেটো নিয়ন্ত্রিত হিউম্যান ওয়ার্ল্ডের সোশ্যাল ও পলিটিক্যাল মেশিনটা নিয়ে ভাসাভাসা চিন্তায় থাকা বাঙালি লেখকদেরকে করুণা করা মাসরুর আরেফিন কোনোদিন মানুষের হাতে গড়া বুরোক্রেসি ও পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের ফিতে দিয়ে বাঁধা কোনো পুরস্কারের জন্য লালায়িত হতে পারেন? তিনি পুরস্কারটা প্রত্যাশা করতে পারেন, কিন্তু পাবার জন্য ‘উঠেপড়ে লাগতে’ পারেন না।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার আমাদের লেখকদের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কার এ অর্থে যে, এটা জাতীয় পুরষ্কার। একে অসম্মান করা মানে বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদার বোধকে অসম্মান করা। এটা পেলে তাই যে কোনো লেখকেরই ভাল লাগবে। কিন্তু এটা পাবার জন্য ‘উঠে পড়ে, লাগা? নাহ!
আমার মতন ভাল কথাসাহিত্য এখন কেউই এখানে লিখছেন না, এই বোধ আমার আছে। আমার লেখা আস্তে আস্তে হচ্ছে, বেশ ভাল হচ্ছে। হুম, আস্তে-আস্তেই হোক এবং তাতে করে আমাদের লেখকেরা আরও কিছু দিন এই শান্তির বোধের মধ্যে থাকুন যে, মাসরুর পুরস্কার পাচ্ছেন না।
আপনার এই পোস্টে ব্যক্তির আত্মমর্যাদা নিয়ে বেশ একটা তামাশা হয়েছে। ওটা হলে মানব সমাজের আর কিছুই অবশেষ থাকে না। — মানুষের কুকুরবৃত্তি ফেরি করে বেড়ানো বন্ধ করুন। কারণ এরই শেষ পর্যায়ে গিয়ে আপনি আপাত চোখে একজন মানুষ হয়েই আবার বাস্তবে হাহাখাখা করতে করতে একদিন কোনো লিফটের ভেতরে আপনার আপন ভাইকেই ঘেউ করে তার ঘাড়ে কামড়ে দেবেন এবং পরে জিভ ভরে স্ল্যারপ-স্ল্যারপ সেই ঘাড়ের রক্ত খেতে লাগবেন।
এই যে এবারের পুরস্কার ঘোষণা হবার আগেই আমাদের জাকের তালুকদারের আমাকে নিয়ে পোস্ট (সেখানে অহেতুক কষ্টে অন্ধ হয়ে উনি জিকির করেছেন যে, মাসরুরকে অনুবাদে পুরস্কারটা দেওয়া উচিত!), আর এই যে আপনার পোস্ট, সেটাই আমার জন্য কত বড় পুরস্কার।
— মাসরুর আরেফিন / ২৩ জানুয়ারি ২০২৩
COMMENTS