‘ম্যাট্রিক্স রিজারেকশন্স’ ম্যুভিটা দেখার পরে অনেক রকম পুনরুত্থান নিয়া আপনে ভাবতে পারেন। আমি মনে করি, সবচেয়ে ডিপ এন্ড ডোপ হইলো ট্রিনিটির পুনরুত্থান। কারণ ট্রান্স-ওয়াচোস্কি সিস্টারের লাস্ট বাট বক্স অফিস লস (হোয়াট আ শেইম! দুনিয়াটা হইলো এখন মার্বেলস, ট্রোলার্স-মিমার্স আর টিকটকার্স টাইপ সবলাদের হারেমখানা) ম্যুভিটা হইলো গহিন ঘন এক প্রেমের গল্প। নিও আর ট্রিনিটি … রূপকথা না, সাই-ফাই ওয়ান-ও-ওয়ান প্রেমকথা।
ইন রিয়্যালিটি, একদিকে ওয়াচোস্কিদের ট্রান্সফর্ম্যাশন আর অন্যদিকে শেষ বিপ্লবের পরে ট্রিনিটিরে হারাইয়া ফেলা নিও ফের নতুন এক ম্যাট্রিক্সে বন্দি। যেইখানে তার নিজের ঘটানো বিপ্লব প্লে-স্টোরে তুমুল জনপ্রিয় গেইম হিসাবে হাজির। আয়রনি হইলো ওই গেইমের স্রষ্টা নিও, নিজে! হিস্ট্রি রিডিং আর মেধায় ওয়াচোস্কিদের ধারেকাছে কেউ আছে এইটা হইতে পারে না, কাভরন!
নতুন ম্যাট্রিক্সের ডিজাইন, সাই-ফাই লজিক এত স্ট্রং আর সিন্টিলেটিং — যেমন নিও এমন এক বিভ্রমে (এইসব প্রমিত শব্দে সাই-ফাই ভাষা ব্যাখ্যা করা যায় না ইন ফ্যাক্ট!) বা বলা যাক, এমন এক প্রোগ্রামে হ্যাকড, যেইখানে তার চেহারাটাও নতুন কইরা কন্সট্রাক্ট করা। তার আইডেন্টিটিও। মানে একটা হ্যাকড রিয়্যালিটির ট্র্যাপে বা বলা যাক, একটা ডিসিভিং প্রোগ্রামের ভিতর ইন্টার্টওয়াইন্ড তার সমস্ত চিন্তা। তার অস্তিত্ব।
২০০৪ সালে ইসাক আসিমভের লেখা ‘The caves of steel’ উপন্যাসের সিনেমাকরণ করেন এলেক্স প্রয়াস। মুভির নাম ‘i-robot’ যেইখানে মেশিন আর মানুষের মধ্যে ম্যাগ্নেটিক এক রিলেশনের সম্ভাবনা লইয়া ঝড় তোলেন এলেক্স। ওয়াচোস্কিরা এইসব নিয়া কাজ শুরু করে আরো বছর পাঁচ-ছয় আগ থেইকা। ম্যাট্রিক্স রিজারেকশন্স ম্যুভিতে ওয়াচোস্কি সহোদরা আরো বেশি ডাইমেনশন নিয়া হাজির । একদিকে মানুষের উপর মেশিনের ডোমিনেশন, প্রোগ্রামিং, অল্টার-প্রোগ্রামিং সাথে টোটালি প্রোগ্রামড হইয়া থাকা ক্যারেক্টারের সাইকোলোজিক্যাল বাহাস — মানে এর থেইকা চিন্তার অ্যাপেক্স আর কোথায় যাইতে পারে? সাইকোলোজিক্যাল ডিজঅর্ডার পশ্চিমের এক অবধারিত নিয়তি। ওইখানে মাস-পিপলের মধ্যে কাউন্সেলিং একটা কমন থেরাপি।
তার উপর ম্যুভিতে হোয়াইট র্যাবিটের তুমুল ভাইব্রেটিং এক গান ব্যবহার করা হইছে। One pill makes you larger / And one pill makes you small / And the ones that mother gives you / Don’t do anything at all… পশ্চিম, ফার্মাসিউট্যিক্যালস্, পিলস্, স্বাস্থ্যসেবার নামে ওষুধের উপর ব্যাপক নির্ভরশীলতা — মানে পুরাটা হইলো নিটশের ওই তামাশা-করা হ্যিউম্যান সিভিলাইজেশ্যন! আহ! ওয়াচোস্কি সহোদরা…
অ্যানিওয়ে, আমার কাছে সবচেয়ে স্টানিং ক্যারেক্টার মনে হইছে বাগস্ নামের মেয়েটারে। জেসিকা ইউ-লি হ্যানউইক। ব্রিটিশ-চাইনিজ অ্যাক্ট্রেস। ম্যুভিতে তার চুলের রঙ মেজেন্টা কালারের বা নীলও হইতে পারে। নট শিওর। কালার নিয়া কিছুটা দ্বিধার মধ্যে থাকতে হয় আমারে, বরাবর। বাগস্ হয়তো ট্রান্স-ওয়াচোস্কির একটা সুপার ইমাজিনেশন। তাদের প্রোটোটাইপ। বাগস্ হইলো ম্যুভির ওই শূন্যস্থানের জোয়ার যেইখানে নেতৃত্বশূন্য একটা সোসাইটির সকল বেনামি ভাষা অস্থির হইয়া থাকে, নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় যে হইয়া ওঠে নেতা অথবা বিস্মৃতির ভিতর ডুইবা থাকা নেতার খোঁজে যারে হইতে হয় বেপরোয়া…
অক্টোবর ২০২২
হাসান শাহরিয়ার রচনারাশি
গানপার ম্যুভিরিভিয়্যু
- স্বরচিত কবিতা আর তার গানপ্রতিবেশ : প্রচ্ছন্ন অনুপ্রেরণার গল্প || হাসান শাহরিয়ার - January 21, 2025
- স্যামুয়েল বেকেট, নিরর্থকতা, সাইলেন্স আর ভাষার পরাজয়… || হাসান শাহরিয়ার - January 6, 2025
- মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ, ক্ষমতাবান বনাম ক্ষমতাহীন, গণমানসিক বৈকল্য ও অন্যান্য তাধিন তাধিন || হাসান শাহরিয়ার - November 28, 2024
COMMENTS