কথাফুল অথবা ফুটন্ত ম্যাক্সিম ১ || জয়দেব কর

কথাফুল অথবা ফুটন্ত ম্যাক্সিম ১ || জয়দেব কর

শেয়ার করুন:


সাধারণের যেখানে সমাপ্তি ঘটে সেখান থেকেই শুরু শিল্পীর; তাই শিল্প কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠের তুষ্টি ঘটাতে পারে না। সাম্প্রতিকতা সাধারণের নিকট খুবই জনপ্রিয় হয় এই কারণেই। সাম্প্রতিকতা ও আধুনিকতার মধ্যকার বিরাজমান আকাশপাতাল ফারাক দৃষ্টিগোচর হয় না বলেই অধিকাংশের নিকট শিল্প হয়ে ওঠে দুর্বোধ্যতার দোষে দুষ্ট!


লৌকিক শব্দের লোকোত্তর রূপ উদ্ভাসিত হয় যেখানে সেখানেই আলোকিত সঙ্ঘের মতো শব্দরাজি, দিব্যবিভা আমার, কবিতা, কবিতা এবং কবিতা।


কবির কেনো বিষদাঁত নেই।


মদ পান করি, পাত্র নয়! মাগার কবিতার ফেনাতোলা দাদা-দিদিরা কিন্তু দুটোই খেয়ে ফেলতে আরামবোধ করেন!


আমার কবিতা আমার মতোই। অবশ্য আপনি চাইলে তা যে-কোনও উপায়ে একজন ভিনগ্রহীর সাথেও মিলিয়ে ফেলতে পারেন, যদি মদের চেয়ে পাত্রই আপনার কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়।


সাম্প্রতিকতা আধুনিকতা নয়।


কেউ করে নেশা, আর কেউ হয় মাতাল! চলো মাতাল হই। মদের বদনাম করা তো আমাদের মানায় না!


যেখানে একজন সাহিত্যিক রাজনীতিসচেতন হওয়ার মানে যিনি রাজনীতিকে সাহিত্য মনে করেন আর সাহিত্য নিয়ে রাজনীতি করতে পারেন বোঝায়,—সেখানে সাহিত্য ও রাজনীতি দুটোর দুটোই নির্বাসিত।


পূর্ব-অনুমানের বোঝা মাথায় বহন করে কতটুকু অভ্যন্তর দেখতে পাও তোমরা? কতটুকু নিজের কাছে পৌঁছা যায় পীড়নের সংশয় চোখে করে মিথ্যা ময়ূরের নৃত্যকলায়?


অসুস্থ হলে মমতার প্রশ্রয় খুঁজি আমি চরম গোপনে! যদিও মমতা ও প্রশ্রয় উচ্চ এক ঘাতক ব্যাধির নাম!


মিথ্যা পরিত্যাগ কঠিন। খ্যাতির দাস হয়ে গেলে পাখিও বুঝি মিথ্যুক হয়ে ওঠে!


চিন্তাবীর্য বোঝে না লিঙ্গান্তর! বোঝে শুধু যোগ আর বিয়োগের তুমুল ধারাপাত।


শাসকের হাতে বন্দুক উঠলে জনতা নামক কিছু কী আর থাকে? ‘জনতার সেবক’ একটা হাস্যকর বিষয়! শেষ পর্যন্ত তো জনতার মাইনেতে বেঁচেবর্তে থাকা সেবকের প্রভু হয়ে ওঠার গল্পগুলোই প্রজাতন্ত্রের গল্প হয়ে যায়!


রাষ্ট্র যখন পাগলা কুকুর, তখন পালাবে কোথায়? কামড় খাবে আর প্রতিষেধক খুঁজবে? প্রতিকারের ভিক্ষা চাইতে আরাম পাও, কিন্তু বুঝি না, প্রতিরোধের চিন্তা করতে এত শরম পাও কেন তোমরা?


গোলামদের রাজা বিশাল বড় গোলাম! গোলামির দর্শন তবে কত বিশাল!?


বামডান বুঝি না, মানুষ বুঝি। ভূখণ্ডের স্বাধীনতা দিয়ে কী করব যদি ব্যক্তির স্বাধীনতার প্রতি রাষ্ট্র উদাসীন থাকে? রাষ্ট্রের দৃষ্টি তো থাকবে নাগরিকের দিকে। নাগরিক শুধুই নাগরিক। হিন্দু নাগরিক, মুসলমান নাগরিক, ধনী নাগরিক, গরিব নাগরিক এমন বিভাজন শতভাগ শয়তানের কাজ। বামডান অনেক শয়তানপূজারী রাজনীতির মাঠ কাঁপায় বিভিন্ন তত্ত্বমূলা ঝুলিয়ে।


ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তাকেই বলে যার একটা রাষ্ট্রধর্ম থাকে এবং রাষ্ট্রধর্মের অনুসারীরা হন প্রথম সারির গণতান্ত্রিক। যেমন রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, পাহাড়ে সমতলে তাদের অবাধ বিচরণ!


দু-পায়ের তলে যতটুকু মাটি ধরে ততটুকুই আমার স্বদেশ। দ্রাঘিমার হিসেব পুরোটাই রাজনৈতিক,—গণমানুষের অশুভ প্রতিপক্ষের কারসাজি।


রাষ্ট্র তার নাগরিককে প্রথমত কীভাবে দেখে? মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নাস্তিক? নাকি মানুষ? রাষ্ট্র পরিচালনা যারা করে তারা মানুষ হিসেবে তা করে নাকি আস্তিক বা নাস্তিক হিসেবে তা করে? মানুষ শব্দটি কি নাগরিকদের বিভাজন তৈরি করে? রাষ্ট্রের ধর্ম সম্প্রদায়ের সংকীর্ণ গলিতে সংজ্ঞায়িত হবে নাকি মানবমুক্তির মহাসড়কে প্রমাণিত হবে?


ভূখণ্ডের স্বাধীনতা দিয়ে কী করব, যদি নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় রাষ্ট্রই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়? আর সংস্কৃতির পায়ে ধর্মের শিকল বেঁধে পাথুরে উন্নয়ন, তা নিয়ে শুধু ছাগলেরাই মত্ত থাকতে পারে।


সাপুড়ে নিজেই যখন উত্তম প্রজাতির বিষধর প্রাণী, তখন সাপ আর সাপুড়ের পার্থক্য শুধুই প্রজাতিগত! মূর্খ জনতার স্বাধীনতা তাই এক প্রজাতির বিষ থেকে মুক্ত হয়ে আরেক প্রজাতির বিষে আরো বেশি নীল হওয়ার শুকনো গৌরব দেখানো!


ধর্ষক রাষ্ট্র, ধর্ষক সমাজ, ধর্ষক পুরুষ । এ তিনটির অণ্ডকোষে পাথর বেঁধে দাও।


বালু-পাথরের উন্নয়ন দিয়ে কী করব যদি ঐতিহ্যঘাতি খিলজিদের ঘরজামাই বানিয়ে নেন? ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রধর্ম বাঙালিদের আত্মধর্মের ধ্বংস চায় কেন?


অবৈধ টাকাওয়ালারাই মূলত মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষক। অবৈধতা আর সংস্কৃতি একসাথে যেতে পারে না। তথাকথিত সংস্কৃতিবানগণ মোল্লাদের পায়ের নিচে থাকা রাজনীতিকদের পায়ের নিচে বসে থাকলে আর বুঝতে বাকি থাকে না যে স্লোগান পাল্টে গেছে — সংস্কৃতি ধন নয়, ধনই সংস্কৃতি। পুড়ুক রামু পুড়ুক ব্রাহ্মণবাড়িয়া! রোল মডেল মোদের সৌদি অ্যারাবিয়া!


মুজিব-হত্যাকাণ্ড একাধিক রাজবংশের জন্ম দিয়েছে এবং এটাই চল্লিশ বছরের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অর্জন…মধ্যযুগ এখনো এখানে সবচেয়ে নিরাপদ বলেই ক্লাউনেরা এইসব রাজবংশের সফল প্রতিনিধিত্বকারী…


আমরা সেই সময়ে বেঁচে আছি মাতা যখন জবার মতো স্বপ্ন মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে যত্রতত্র প্রিয় পতাকায় বাড়ায় বৃত্তের পরিধি।


একটি আধুনিক দেশের রাষ্ট্রধর্ম হবে ধর্মনিরপেক্ষতা আর তার ভিত্তি হবে ব্যক্তিস্বাধীনতা, সাম্য ও প্রজ্ঞা।


কোনো বিশেষ ব্যক্তি-দল-ধর্মের পরিচর্যা নয় গণমানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার চর্চা ও বিকাশের পরিচর্যায় রত হোন। ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী পরিচর্যার দরুণ প্রাথমিক পর্যায়ের ফলভোগ করা আমাদের শুরু হয়ে গেছে। যে-রাষ্ট্র ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিচর্যা করে না সে-রাষ্ট্র মূলত কালসাপ জন্ম দেয় যা তার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। এটা মনে রাখতে হবে যে, ব্যক্তির বিকাশের পরিচর্যা না করলে সেখানে সংস্কৃতির পরিচর্যার ক্ষেত্রও সংকুচিত হয়ে যায়। এতে করে সংস্কৃতিহীনদের সহিংস উত্থান ঘটাটাই স্বাভাবিক। এবং এই শক্তিই রাষ্ট্রের ভুল পরিচর্যার পুষ্ট সন্তান যারা মায়ের হৃৎপিণ্ড টুকরো টুকরো করে দিতে পারে নিমিষেই আদর্শের নামে।


সামরিক স্বৈরাচার আর গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার শুধু একই চরিত্র বহন করে না প্রয়োজনে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে। বিশ্ববেহায়াও বিশেষ দূত হয়।


জয়দেব কর রচনারাশি
গানপার সদুক্তিনিচয়

শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you