মৌসুমী ভৌমিক : আবেগ ও অভিজ্ঞতার মেলবন্ধ || কুনাল রায়

মৌসুমী ভৌমিক : আবেগ ও অভিজ্ঞতার মেলবন্ধ || কুনাল রায়

[সিঙ্গার-স্যংরাইটার মৌসুমী ভৌমিকের সাক্ষাৎকার এইটা। সাক্ষাৎকারটা সম্প্রতি গৃহীত। ২০১৭ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ইংরেজিভাষিক অনলাইন ‘দি হিন্দু’ পত্রিকায় পাব্লিশ হয় এইটা। বাংলা গানের দুনিয়ায় মৌসুমী ভৌমিক গত তিন দশক ধরে ব্যাপক সমুজদারগ্রাহ্য সংগীতকার হিশেবে পরিচিত। অত্যন্ত নম্রকণ্ঠ, মিতবাক, তন্নিষ্ঠ অনুধ্যানের এই শিল্পীকে ইন্টার্ভিয়্যু দিতে খুব বেশি দেখা যায় না। কালেভদ্রে হয়তো কথা বলেছেন আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকারগ্রাহীদের সঙ্গে, সেসব কথা আমরা কাগজে পড়েছি, এমনিতে নিজের কাজ নিয়াই নিরন্তর মগ্ন থাকেন তিনি।

রিসেন্টলি ফিরেছেন অনেকদিন পরে একটা অ্যালবাম নিয়ে। এর মাঝখানে পাক্কা ষোলো বছরের গ্যাপ, অন্তর্বর্তীকালে সংগীতকেন্দ্রী বিবিধ কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত রইলেও মৌসুমী নিজের গানের কোনো সংকলন প্রকাশ থেকে বিরত ছিলেন। দীর্ঘ গ্যাপের পরে এই অ্যালবাম, ‘স্যংস্ ফ্রম টোয়েন্টিসিক্স-এইচ’ শীর্ষক, মৌসুমীলিস্নারদের কাছে এক মরুঝর্ণার মতো। বর্তমান সাক্ষাৎকারকৃতিটিতে এমনকিছু কথাবার্তা আছে যেখানে এই সময়ের সংগীততৎপরতা ছাড়াও মৌসুমী ভৌমিকের সংগীতভাবনা খানিকটা আঁচ করা যায়। সাক্ষাৎকারে ধৃত কন্টেন্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায় গানপার থেকে এইটা ভাষান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়।

কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তিরই, বিশেষত মৌসুমী ভৌমিকের ন্যায় খ্যাতকীর্ত ব্যক্তিদের, কথাবলার চলনটা আলগ ও অনন্য। অনেকটাই লিপ্যান্তরকালে সেই ইউনিক্নেস খোয়া যাবার আশঙ্কা থাকিয়া যায়। এবং তদুপরি তা যদি হয় ভাষান্তর, তবে আশঙ্কা বাড়ে বৈ কমে না। বাচিক বিভূতি নিখোঁজ হলে অর্থের প্রতিসরণও অনিবার্যপ্রায়। এই বিপদ এড়ানোর রাস্তা আদৌ আছে কি না, আমরা বাদে এক-সময় ভাবতে পারি। ইংরেজি থেকে বাংলায় তর্জমাকালে এই ইন্টার্ভিয়্যুটাতেও প্রোক্ত বিপদাপদ এড়ানো যায় নাই নিশ্চয়। সেক্ষেত্রে মৌসুমীর কথাভিব্যক্ত কণ্ঠস্বরের সঙ্গে যারা আগে থেকে পরিচিত, তাদের সমস্যা হতে পারে। একটা সমস্যা হতে পারে এমন যে, মৌসুমী তো এই টোনে কথা সাধারণত বলেন না; আরেকটা, ভাষান্তরকারীর অনবধানতা হোক বা স্বাধীনতা ইত্যাকার কারণে টেক্সটে বেহুদা বাড়তি জিনিশ যোগ হয়ে যেতে পারে। একেবারে উড়িয়ে দেবার নয় আশঙ্কা। তা, পাঠক হিশেবে এইটেকে আমরা ভাষান্তরকারীর ভার্শন হিশেবেই দেখব; মূল দেখবার সুযোগটাও তো নাগালে। এখানে আমরা মূল সাক্ষাৎকারের লিঙ্কটা রাখছি, ইংরেজি থেকে একটু সহায়তা নিয়ে তর্জমাটা খানিক সহনীয় করে নেবেন সদাশয় পাঠকবর্গ।

কুনাল রায় নিয়েছেন সাক্ষাৎকারটা। ভাষিক মাধ্যম ইংরেজি। ইন্টার্ভিয়্যুগ্রহণকারী ‘দি হিন্দু’ পত্রিকার কন্ট্রিবিউটর সম্ভবত। উভয়ের আলাপচারিতার ভিতর দিয়া সাংগীতিক অভিজ্ঞতার কিছু কন্সিডারেশন লভ্য। বঙ্গানুবাদক গানপারেরই নিয়মিত অবদায়ক; অনুবাদকের ব্যক্তিগত বাছাই হিশেবে এই ইন্টার্ভিয়্যু যথাসাধ্য সোজাসাপ্টা বাংলায় আনা হয়েছে। দেখি তাহলে, এইবার, মৌসুমী ভৌমিকের মিউজিক্যাল জার্নিটা। — গানপার]

______________________________________

মৌসুমী ভৌমিক ইন্টার্ভিয়্যু

সেপ্টেম্বর ২০১৭

Both part and alone : Labels don’t fit Moushumi Bhowmik, whose songs stem from experience and emotion

মূল / কুনাল রায়
অনুবাদ / সুবিনয় ইসলাম

______________________________________

 

লেবেল সাঁটা যায় না তার নামের পাশে, একটা ছাপ্পা দেগে দেয়া যায় না তার কাজের পরিচয়লিপি হিশেবে, এমনই শিল্পী তিনি। শিল্পের সংসারে তাকে একটাকিছু সোজাসাপ্টা খাপের ভিতরে এঁটে ওঠানো মুশকিল। তার গানগুলো অভিজ্ঞতা আর আবেগের মিলমিশ থেকে উৎসারিত। মৌসুমী ভৌমিক তার নাম। বাংলায় গান লেখেন, সুর করেন, কণ্ঠে নেন। মৌসুমী ভৌমিক নিজের রচিত সংগীতমালার মতোই নির্দিষ্ট কোনো খোপে আটকাতে নারাজ নিজেকে। লেবেল দাগিয়ে প্রচলিত তরিকায় সৃজনের জাতবিভাজন অগ্রাহ্য করেন জোরগলায়। নিজের রচিত সংগীতে যেমন তাকে তাড়াহুড়ো জনপ্রিয়তার ধারকাছটাও মাড়াতে দেখা যায় না, দাগাতে চান না নিজের কাজের গাত্রে চটজলদির ছাপ্পা। আবহমান বাংলা ভূখণ্ডের লোকসংগীতের প্রতি সপ্রেম আগ্রহ মৌসুমীকে তাড়িত করেছে সেসব লুপ্তপ্রায় সংগীতকলার সংগ্রহণ, সংরক্ষণ, সুলভকরণ ও সম্প্রসারণে; এবং প্রজন্মান্তরে এই ঋদ্ধ লোকসংগীতের প্রবাহ যাতে অব্যাহত থাকে, সেই লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন দুর্লভ সমস্ত লোকসংগীতধারার সমবায়ে এক অনন্য মোহাফেজখানা। ট্র্যাভেলিংআর্কাইভ নামের এই ভার্চুয়ালজাগতিক লোকসংগীতসঞ্চিতা বাংলা মুলুক ছাড়াও দুনিয়া জুড়ে সংগীতসমুজদার কর্মক-চিন্তকদের কাছে এক আরাধ্য আকর। দুই দশকেরও অধিক কাল ধরে এই শিল্পী বিচরণ করছেন সার্বক্ষণিক সংগীতের জগতে, তথাপি তার অ্যালবামসংখ্যা একটা আঙুলের রেখার বাইরে যায়নি, একেবারেই স্বল্পপ্রজ এই শিল্পীর অ্যালবামগুলোর মধ্যে ‘এখনো গল্প লেখো’ ও ‘আমি ঘরবাহির করি’ সমকালিক বাংলা গানে এক নয়া আওয়াজের অবতারণা করেছে। একাধারে গায়ক, গানলেখক, সংগীতসংকলক ও ভাবুক মৌসুমী নিজেই এক ঘরানার নাম। অথবা তা না হয়তো, ঘরানার ঘেরাটোপে এই শিল্পী সীমাবদ্ধ থাকেন না আদৌ। সম্প্রতি, অতি সম্প্রতি, শিল্পী ফিরেছেন তার নানাবিধ সংগীতসংক্রান্ত তৎপরতা পাশ কাটিয়ে একটা অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতার মজলিশে। শেষ অ্যালবাম প্রকাশের ষোলো বছর পরে এই ফেরা। ‘স্যংস্ ফ্রম টোয়েন্টিসিক্স-এইচ’ শীর্ষক ২০১৭ সনে রিলিজড অ্যালবামটি মিউজিশিয়্যান মৌসুমী ভৌমিককে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। একটা সাক্ষাৎকারে মৌসুমী ভৌমিকের সাম্প্রতিক সংগীততৎপরতা নিয়ে কিছু কথাবার্তা ধারণ করা সম্ভব হয়েছিল, চুম্বকাংশ উপস্থাপন করছি নিচের প্যারাগ্র্যাফগুলোতে।

moushumi

সংগীতের তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক তালিম আপনার নাই বলিয়াই জানি আমরা। আপনার কি মনে হয় যে এই স্ট্রাকচার্ড সাংগীতিক ট্রেইনিং না-থাকাটা আপনার ক্ষেত্রে সুবিধের হয়েছে?

এইটা আমার ক্ষেত্রে সুবিধের হয়েছে বা অসুবিধের হয়েছে এমন কোনোটাই মনে করি না। মানুষের জীবন বহু পরিস্থিতির ভিতর দিয়া যায়, এই পরিস্থিতি মানুষকে যেমন সীমায়িত করে তেমনি স্বাধীনও করে। ব্যাপারটা হচ্ছে যাপিত জীবনের পরিস্থিতিগুলোতে আপনি কীভাবে ক্রিয়া করছেন এবং সেইটা সামাল দিয়া আপনি ঠিক কোনদিকে যাচ্ছেন। পদ্ধতিমানা তালিম বা যাকে বলে সংগীতের স্ট্রাকচার্ড ট্রেইনিং সেইটা আমার হয় নাই স্বীকার করব, অবশ্যই স্বীকার করব সংগীতের প্রণালিবদ্ধ প্রশিক্ষণ আমি নিই নাই, কিন্তু আপনি যদি মিউজিকচর্চায় আমার পথরেখাটা খেয়াল করেন তবে দেখবেন যে এর মধ্যে একটা স্ট্রাকচারের দেখা পাওয়া যায়। একটা আলগ ও নির্দিষ্ট পথে হেঁটেছি আমি বরাবর, কেননা আর-কোনো পথে যেতে পারার ক্ষমতা আমার ছিল না। আমি শুধু বলতে পারি নিজের মাড়ানো পথটারই কথা, যেই পথটা আমার সেইটা নিয়াই বলতে পারি আমি। কী হতো যদি এই পথে না হেঁটে বেছে নিতাম অন্য পথ, সবকিছুই কি তখন অন্যরকম হতো, বুঝি শিখতে পারতাম আরেকটু ভালো করে, একদম নিয়মমাফিক শিখতে পারতাম বুঝি সবকিছু তখন, পদ্ধতি জেনেবুঝে পদ্ধতির ভিতরে থেকে একটু উন্নত অনুশীলন করতে পারতাম কি না সংগীতের — এইসব ভাবি। ইস্, যদি আমি সব-কয়টা রাগরূপ-রাগঠাট ঠিকঠাক চিনতে পারতাম, কীর্তনে যেমন পৌরাণিক প্রচ্ছন্নতা বা মায়াবিভ্রম শুনতে পাই তা-সব যদি ঠিকমতো সনাক্ত করার রাস্তা জানতাম, মহান সংগীতশিল্পীদের কণ্ঠসম্পদ যদি থাকত আমার যার বদৌলতে অশ্বিনী দেশপান্ডের মতো অক্টেইভ বাড়ায়ে নিতে পারতাম, যদি শ্রীমতী রাজেশ্বরী দত্তের মতো কণ্ঠমসৃণতা আমার থাকত বা তার মতো চারুকণ্ঠ হতাম আমি, কিংবা থাকত যদি শিল্পী মালতি ঘোষালের মহত্ত্ব, অথবা আমি যদি পৃথক করতে জানতাম ‘বরোক’ থেকে ‘রোম্যান্টিক’, ওই-রকমটা পারতাম যদি, ভালো হতো না? আমার তো মনে হয়, তেমন হলে ব্যাপারটা আরও ভালো হতো। অথচ ওইসব কোনোটাই আমার হয় নাই। রিয়্যালিটি এইটা, আমারই সীমাবদ্ধতা। আমি শুধু ওইভাবেই বলতে পারি। নিশ্চয় বুঝতে পারছেন তাহলে যে ‘স্ট্রাকচার’ জিনিশটা আসলে একটা সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাপারও বটে।

আপনি গায়ক ও গানলেখক। একটা গানের জন্ম হয় কীভাবে, ব্যাপারটা জানতে ইচ্ছে করছে আপনার কাছে। একজন গায়ক এবং একজন গীতিকারের মধ্যে তো হরহামেশা কাজিয়া বা দ্বন্দ্ব হয় বলিয়া আমরা জানি, আর তা যদি সত্যি হয় তাহলে ব্যাপারটা আপনি কীভাবে সামলান?

এইটা বলা মুশকিল। আমি গান লিখতে শুরু করি ১৯৯০ সনের গোড়ার দিকটায়। সেই হিশেবে তো বহু বছর হয়ে গেল। প্রত্যেকটা গানই কিন্তু জন্মেছে একটা-না-একটা যাপিত অভিজ্ঞতা থেকে কিংবা আবেগিক অনুভূতি থেকে, এবং কখনো-বা আবেগ ও অভিজ্ঞতা উভয়েরই মিশ্রিত রসায়নে একেকটা গানজন্ম সম্ভব হয়েছে। এখনও আমার গানরচনার মূল প্রবণতা তা-ই। যদিও গানলেখা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে, কোনোদিনই দুইহাতে গানলেখা আমার হয়নি, এখন আরও কালেভদ্রে লেখাটা আসে। সেইটা যা-হোক, একটা গানের কথা দানা বাঁধতে যখন শুরু করে তখন কোন শব্দটা বা কোন লাইনটা আগে আসবে আর কোনটা পরে এ-ব্যাপারে আমি বিলকুল অন্ধকারে থাকি। ধীরে ধীরে শব্দ ও সুর পুঞ্জীভূত হতে থাকে, শব্দ ও সুরের প্রবাহ বয়, এবং কোনো কোনো গানে শব্দ-সুর জড়াজড়ি করে একইসঙ্গে জন্মায়। ‘যশোর রোড’ গানটার কথাই ধরা যাক। একটানা ষোলো স্তবকে গোটা গানটা আমি লিখে উঠেছি এবং গেয়েছিও একটানে একবারের আয়াসে। কেমন করে ব্যাপারটা পেরেছি তা জানি না, তবে ব্যাপারটা তা-ই। নিছক একটা শব্দ থেকেও কখনো কখনো জন্মায় গান, উৎপত্তি একটা শব্দ থেকে, তেমনি কিছু-একটা বাকনকশা বা ফ্রেইজ্ থেকেও জন্ম হয় গানের। যেইটা আমি কখনোই করি না তা হচ্ছে একটা গান লিখতেই হবে যেনতেন প্রকারে বলিয়া নিজের উপর জোরাজুরি করি না। গান যদি নিজে থেকে আসে আমার কাছে, আপনাআপনি আসে, তবে এল নয়তো না। আর তাছাড়া সৃজনপ্রক্রিয়ার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা তো মুশকিলই। কিন্তু বলতে পারি যে একটা গান আমি লিখবার পরে প্রাথমিক অবস্থা থেকে পার্ফেক্ট একটা জায়গায় নিয়ে যেতে আমাকে বিস্তর ঘষামাজা খাটাখাটুনি করতে হয় বৈকি। বিবর্তনের ভিতর দিয়া গানটা যাইতে যাইতে এক-সময় একটাকিছু হয়ে ওঠে যা হয়তো শ্রোতার সামনে নেয়া হয়। গানের আসলে নিজেরই জীবনচক্র রয়েছে বোধহয়। যেহেতু গানের একটা আলাদা জীবন আছে, আমাদের জীবজগতের আর-সব প্রাণের যেমন জীবন, কাজেই জীবিত ও সত্যিকারের ভালো গান এক-সময় জীবনাবসানের দিকে যাবে, মৃত্যুতে নির্বাপিত হবে সে, এইটাও মনে হয় আমার।

একটা আলাদা ধারা আপনার হাত ধরে এসেছে এখানকার সংগীতে, বাংলা গানশ্রোতার অভিজ্ঞতায় একটা আলাদা আস্বাদনের রসদ যুগিয়েছেন আপনি, নেহায়েত-না-হলেই-নয় এমন গুটিকয় বাদ্যযন্ত্রের যোজনায় একটা আলাদা সাংগীতিক নন্দনের নতুনতা আপনার গানবাজনায় পেয়েছে সংগীতশ্রোতা। আপনি কি দ্বিমত পোষণ করবেন কথাগুলোর সঙ্গে? আরেকটা কথা জানতে চাইব এই ফাঁকে যে গানের ভিতর দিয়া আপনি কি বিশেষ কিছু অর্জন করতে চান বা বলতে চান বিশেষ কিছু?

আলাদা ধারার জন্ম হয়েছে কি না তা আমি বলতে পারব না। বাংলা গানের ইতিহাস নিয়া যারা কাজ করেন এইটা তারাই বলতে পারবেন। আমি শুধু বলতে পারি যে একটা বিশেষ সময়ে আমার গানগাওয়া শুরু হয়েছিল এবং গণিতের হিসাবে কয়েকটা বছর হয়তো কাজ করে শেষ হবে আমার পালা। আমার গান কয়টা বাঁচবে, কতদিন আয়ু পাবে, এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। আমি এইভাবে ভাবিই না আসলে। গান গেয়ে আমি কিছুই হাসিল করতে চাইনি। গান লিখে গান গেয়ে আমার ভালো লাগে তাই কাজটা করি যতটা সম্ভব নিষ্ঠার সঙ্গে। এ-ই তো, আর কিছু না, সংগীত আমার স্বভাবেরই অংশ।

moushumiআপনার গানগুলো মডার্ন স্যং বা আধুনিক গানের আওতায় শ্রেণিভুক্ত করা হয়ে থাকে দেখতে পাই। ঠিক এই রকমের ক্যাটেগোরাইজেশন বা বর্গীকরণ ব্যাপারটাকে কেমন লাগে আপনার কাছে?

এইটা আসলে উইকিবিন্যাস। উইকি থেকে ক্ল্যাসিফিকেশন করা হয়েছে এভাবে এবং আপনি তা-ই দেখেছেন। অনেকদিন ধরে আমি ভাবছিলাম উইকিপৃষ্ঠায় এই ব্যাপারটা এডিট করা দরকার। কিন্তু ব্যস্ততা আমার এত বেশি এবং আমি অলসের হদ্দ। করব করব করছি কিন্তু উইকিপৃষ্ঠায় যেয়ে এডিটিংটুকু করা হয়ে উঠছে না। আচ্ছা, বলুন তো, বাংলা আধুনিক গান বলতে আমরা কি বুঝিয়া থাকি সাধারণত? যখনই নিজে এই জিনিশটা আমি ভেবেছি, বাংলা আধুনিক গান কথাটা আমার কানে এসেছে যখনই, বিশেষ একটা কালের কিছু বৈশিষ্ট্যের গানগুলোই মনে পড়েছে সবসময়। সেই কালটা ধরুন ১৯৫০, ১৯৬০, মোটামুটি এই দশকগুলো। খুবই মিষ্টি শুনতে, সমৃদ্ধ, সেন্টিমেন্টাল, রোম্যান্টিক একটা সাউন্ডের গানবাজনা। আমাদের ছোটবেলায় ‘অনুরোধের আসর’ নামে বেতারপ্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোতে এই ধারার গান শুনে বেড়ে উঠেছি আমরা। বাংলায় রিমেইক শিল্পী নামে একটা আলাদা বিপুলকায় শিল্পীগোষ্ঠীই ছিলেন এবং আছেন যারা বাংলা আধুনিক গানগুলো ঘুরেফিরে গেয়ে যেতে থাকেন। এরা সাক্সেসফ্যুলও হয়েছেন। কথা হচ্ছে, এই উত্তর-আধুনিক সময়ে একটা গান এবং একজন মিউজিশিয়্যানকে একটি বিশেষ সময়ে বা বিশেষ যুগে বেঁধেছেঁদে স্থির করে রাখা যাবে কি? কিংবা আমার গানের যে-সাউন্ড, সেইটা ‘আধুনিক’ বলবেন কি? কিন্তু ধরেন যদি আপনি কন্টেম্পোরারি অর্থে আধুনিক ব্যাপারটাকে বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো আমাকেও আধুনিক বলতে পারেন। আমি তো আমারই সময়ের, অন্য কারো অন্য কোনো সময়ের নই। ঠিক এই কন্টেম্পোরারি কথাটাই যদি কোনো ওয়েস্টার্ন মিউজিশিয়্যানের নামের আগে বসান তবে সেইটা আলাদা আরেকটা বাঁধা অর্থ প্রকাশ করবে, একটা বিশেষ ঘরানারই মিউজিক বোঝাবে। এখন বুঝতে পারছেন তো? বলতে চাইছি, লেবেল দাগানো সবসময়ই সমস্যার ব্যাপার। আমাদের রাজনীতিটাই তো হচ্ছে একেকটা পরিচয়ে একেকজনকে একেক খোপে ফেলে দেয়া। আপনি-আমি কীভাবে এই অপরাজনীতির খপ্পর থেকে নিজেদেরে বাঁচাব বলেন?

লোকসংগীতে আপনার আগ্রহ কেমন করে হলো এবং ট্র্যাভেলিংআর্কাইভ গড়ার পেছনে আপনার ভাবনাটা জানতে চাই।

আচ্ছা। ‘দি ট্র্যাভেলিং আর্কাইভ’ ওয়েবক্ষেত্রটা আমাদের গোটা সাংগীতিক প্রকল্পের যাত্রাগল্পটা ধারণ করে রেখেছে। একদম অল্পকথায় যদি বলি তো বলব যে এইটা ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও উৎসাহ থেকেই শুরু হয়েছিল। গানবাজনার বিপুল ভুবনে একজন সংগীতশিল্পীর সফর ধরে রাখা হচ্ছিল কুড়িয়েবাড়িয়ে, একে একে এরপরে বেশকিছু দরোজা-জানালা খুলে যেতে শুরু করে এবং গোটা মানচিত্র স্পষ্ট হতে থাকে আস্তে আস্তে আমাদের চোখের সামনে। এক-পর্যায়ে এসে আমার সঙ্গে জয়েন করেন সুকান্ত মজুমদার, যিনি পেশায় একজন সাউন্ডরেকর্ডিস্ট। শুরুতে এমন কোনো মহৎ উদ্দেশ্য বা প্ল্যানপরিকল্পনা আমাদের আদৌ ছিল না যে আমরা লোকায়তিক সংগীত সংগ্রহ ও সুরক্ষা করব ইত্যাদি যেইটা আমরা এখন করছি। সুকান্ত ও আমার যৌথপ্রয়াসে এই যাত্রাটার দশক অতিক্রান্ত হয়েছে এরই মধ্যে। একটু একটু করে, একেবারেই তিলে তিলে, ট্র্যাভেলিং আর্কাইভ আজকের এই শেইপে এসেছে। তেমন কোনো বড়সড় ব্রত নয়, একটাকিছু করতে চাইছিলাম গানলেখা গানগাওয়ার পাশাপাশি মিউজিক নিয়ে। একটু ঘরের বাইরে বেরিয়ে, মঞ্চের আড়ালে যেয়ে, ব্যাপ্ত দুনিয়ার গানবাজনাটা দেহাতি জীবনযাপনটা দেখতে চাইছিলাম শুনতে চাইছিলাম। কবে যেন শুনতে লেগে গিয়েছি বিচিত্র সব গানের আওয়াজ, ফিরে দেখছি বিপুলায়ত জগতের সঙ্গেই জড়িয়ে গেছি আসলে। সেভাবে তেমন মিশন ছিল না আমার। কিন্তু আজকে এতদূর এসে যে-পরিমাণ রেকর্ডিং জমেছে আমাদের হাতে, এগুলোর দেখভালের দায় এবং দায়িত্বও আমাদের, এড়াতে পারি না এই দায়। এইটুকুই বলতে গেলে ট্র্যাভেলিং আর্কাইভ নিয়া আমার কথা।

আপনি কি মনে করেন যে ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক হচ্ছে এলিটিস্ট একটা ব্যাপার?

এলিটিস্ট বলতে কোন সময়ের, কবেকার এলিট, এইটাও প্রশ্ন একটা। কালকের এলিট আজকে এলিট নয় কিন্তু, কিংবা আজকের এলিট আগামীকালে এলিট থাকছে না। আজকের এলিট আগামীকাল আসতে না আসতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে খেয়াল করবেন। এলিটিজমও কেনা যায়। এইভাবে লেবেলিং আমি ভয় পাই। ধরুন ড্যানিয়েল ব্যারেনবয়েমের (Daniel Barenboim) ভিভালদি (Vivaldi) সবাই শুনতে পেলে তো ভালোই হতো। কিন্তু প্রখ্যাত পিয়ানিস্ট ও কন্ডাক্টর ড্যানিয়েল ব্যারেনবয়েম একবার বলেছিলেন যে একদিন সন্ধ্যায় তাঁর হয়তো ভিভালদি বাজানোর কথা কোনো নামকরা সভাগৃহে, আর সেদিনই তাঁর হোটেলের লিফটে এলিভেটর মিউজিক হিশেবে ওই সুরটাই বাজছে, তখন তাঁর কাছে মিউজিক মিউজ্যার হয়ে যায়, তিনি ওই কম্পোজিশন বাজানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

moushumi
আর ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে যে-দেয়াল গড়ে তোলা হয়েছে, যে-লক্ষণরেখা দাগিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে যুগ যুগ ধরে, এর থেকে বেরোনোর চেষ্টা আগে যেমন হয়েছে এখনও হচ্ছে। ক্ল্যাসিক্যালটাকে লোকসাধারণের কাছে নিয়ে যেতে চেষ্টা তো করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কানের কাছে হাতের কাছে ক্ল্যাসিক্যালটা রাখতে হবে। এবং দাম দিয়েই কিনতে হবে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকটা, মাগনা শুনিয়ে প্যাট্রোনের কাঁধে চেপে ক্ল্যাসিক্যাল পারবে না গাঙ পার হতে। জেরেমি কোর্বিন নামে এক প্রার্থীর নির্বাচনী ওয়াদাই ছিল এমন যে প্রত্যেক শিশুর জন্য একটা করে বাদ্যযন্ত্র, শিশুটি যেন সংগীতে খেলতে খেলতে বেড়ে ওঠে বিকশিত হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বেঙ্গল মিউজিক ফাউন্ডেশন ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের একটি বিশাল উৎসবের আয়োজন করে চলেছে দেখবেন। ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামের বিরাট ময়দানে হাজার হাজার লোক রাত জেগে বিনিপয়সায় শুনছে পণ্ডিত যশরাজ এবং উলহাস কশল্কারের মতো গুণী শিল্পীদের কাজ। এর ফলে কি হচ্ছে? আমি ঠিক কখনোই নিশ্চিত করে বলতে পারব না আসলে এর ফলে কী ফায়দাটা আসবে। কেউ বলতে পারবে না যে একই শ্রোতা যে কিনা কশল্কারের পরিবেশনা শুনেছে আগের রাতে, সে পরের সন্ধ্যায় নিজের বাসায় টেলিভিশনে বস্তাপচা কাজিয়াফ্যাসাদের বোকা নাটকীয় সিরিয়্যাল দেখবে না। তা-ই যদি হয় তাহলে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক, যশরাজ বা কশল্কার প্রমুখের সংগীত এই শ্রোতার উপরে কি ইম্প্যাক্ট রাখতে পারছে এইটা ভাবা দরকার। এইভাবে গণশোনা আদৌ শ্রোতার মনোজগতে ছাপ রেখে যায় কি? হয়তো যায়, ছাপ রাখে, হয়তো না। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের কন্টেন্ট কিন্তু উচ্চমার্গীয় নয়, এলিটিস্ট নয়। এই ধারার বিমূর্ত শিল্পক্রিয়ায় এমন একটা ব্যাপার থাকে যা সবার জন্য উপভোগ্য হবার কথা। এর সৌন্দর্য সর্বকালের সর্বজনের হবার কথা। ব্যাপারটার সঙ্কট বোধহয় ডিনায়্যাল অফ অ্যাক্সেস এবং কমোডিফিকেশন অফ অ্যাক্সেসের মধ্যেই খুঁজতে হবে।

আপনি তো একাধারে একজন গবেষক, সংগ্রাহক ও সংরক্ষক। অধিকাংশ ইন্ডিয়ান মিউজিশিয়্যান গবেষণায় এবং আত্মখননে অনীহ থাকেন কেন?

প্রথমত, আমি মনে করি না যে বেশিরভাগ ভারতীয় সংগীতকার রিসার্চে কিংবা ক্রিটিক্যাল কোয়েশ্চনিঙে অনীহ। কথাটা ঢালাও এবং খুবই আপত্তিকর সাধারণীকরণ মনে হয় আমার কাছে। এমন অনেক শিল্পীকেই আমি চিনি যারা ব্যাপক পড়াশোনা করেন, খোঁজাখুঁজি করেন, এবং তাদের কাজে তাদের মিউজিকে সেই চিহ্ন স্পষ্ট। আমি কিন্তু মনে করি না যে একজন শিল্পীকে ভালো গাইতে গেলে বা ভালো কিছু পয়দা করতে গেলে রিসার্চ করতেই হবে। না, তা নয়। আর আত্মখনন তো শিল্পী মাত্রেরই স্বভাবের অংশ। একজন শিল্পী বিকশিত হতেই পারবে না যদি সে আত্মখননে লিপ্ত না হয়। এই খনন সবসময় বাইরে থেকে দেখা যাবে তেমন কিন্তু নয়। আর খালি ইন্ডিয়ান আর্টিস্টের কথাই কেন বলব আমরা? আসমুদ্রহিমাচলে আরও কত শিল্পী এবং শিল্পানুশীলনের তরিকা রয়েছে, সবখানে সবকালে, ভারতীয় ছাড়াও দুনিয়ার শত শত সংস্কৃতিতে।

বৃহত্তর অর্থে শিল্পীসমাজ নিয়া আমরা প্রায়শ বলাবলি করি। শিল্পীসমাজের ঠিক কোন জায়গাটায় আপনি নিজেকে দেখতে পান? মানে, আপনি কি নিজেকে বৃহত্তর ভারতীয় শিল্পীসমাজের একজন মনে করেন অথবা আপনি কি নিঃসঙ্গ ও ব্যক্তিক প্রতিভাবলে একক শিল্পী হিশেবে নিজেকে রেখে দিতেই আগ্রহী অধিক?

আমি একইসঙ্গে একটা প্রবহমান ঢেউয়ের অংশ এবং একক একটা ঢেউ। আমি এইভাবেই নিজেকে দেখি। কিন্তু অন্যরা আমার ব্যাপারে অন্যভাবে ভাবতেই পারেন। তারা ভাবতে পারেন যে আমি বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকের এক গানশিল্পী, ভাবতে পারেন আমি এক গানলেখক-গায়ক; ভাবতে পারেন আমি রাজনৈতিক মর্মার্থবহ গানের কারিগর এক; নারী শিল্পী ভাবতে পারেন কেউ; আধুনিক, জীবনমুখী ইত্যাদি দিয়া আমার পরিচয় দিতেও অনেকে এখনও স্বচ্ছন্দ বোধ করতেই পারেন। আমার প্রায়ই মনে হয় যে লোকে একটা-কোনো পরিচয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে বেঁধে ফেলতে না পারে ততক্ষণ তার শান্তি হয় না। তারা চায় আপনি কি এবং কে সেইটা তারাই নির্ধারণ করবে। এইভাবে তারা শান্তি পায়, পাক। আমি নিজের ব্যাপারে এরচেয়ে বেশি কি আর বলতে পারি বলেন?

আপনার ধারায় একজন-কেউ যদি মিউজিক প্র্যাক্টিস চালিয়ে যেতে চায় তাহলে সে তা কীভাবে চালিয়ে যাবে?

এইটা আমারও প্রশ্ন। কীভাবে চালিয়ে যাবে এবং এই ধারাটা সুস্থায়ী হবে কেমন করে। একবার একটা তথ্যচিত্রে একটুখানি কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম আমি, যেখানে ১৯৯২ সনে সংঘটিত কলকাতা রায়টের নির্মম শিকার এক ব্যক্তি সিনেমায় জিগ্যেশ করেছিলেন, অদ্ভুত শূন্য চোখে জিগ্যেশ করেছিলেন, “বাঁচব কীভাবে? এই জীবন দিয়া আমি করবটাই-বা কী?”

একটানা ষোলো বছর বিরতির পরে বেরিয়েছে একটা অ্যালবাম। আপনার নতুন অ্যালবামটার কথা বলছি, রিসেন্টলি রিলিজ্ হয়েছে যেইটা। এইবার সেই ‘স্যংস্ ফ্রম টোয়েন্টিসিক্স-এইচ’ সম্পর্কে একটু যদি বলেন অনুগ্রহ করে …

songs from 26-H

‘স্যংস্ ফ্রম টোয়েন্টিসিক্স-এইচ’ একটা ঘরোয়া রেকর্ডিং, স্টুডিয়োরেকর্ড এইটা না। অ্যালবামটা আমরা তিলে তিলে বহু বছর ধরে তৈরি করেছি। বাড়ির ঘরোয়া আবহ রয়েছে এর পরতে পরতে। এবং শুধু এই মহাদেশের বাড়ির বাতাবরণ নয়, একাধিক মহাদেশের একটা বাড়ির আবহ। বন্ধুরা মিলে এইটা আমরা বানিয়েছি। বিদেশের এবং দেশের বন্ধুরা মিলে। এখানে একটা রবীন্দ্রনাথ এবং একটা অতুলপ্রসাদ ছাড়া আছে আমার নিজের লেখা গানগুলো। অলিভার উইক্স, অলি, লন্ডনের এক কম্পোজার এবং বহুবাদ্যযন্ত্রবিদ আমাদের সঙ্গে এই অ্যালবামে কাজ করেছে। অলির সঙ্গে সেই ২০০২ থেকে আমি মিউজিক করে আসছি বিভিন্ন সময়ে। এছাড়া আছে সাত্যকি ব্যানার্জি, যে একাধারে গায়ক ও দোতারাবাদক; আছে সুকান্ত মজুমদার, সাউন্ডরেকর্ডিস্ট এবং আমার ট্র্যাভেলিংআর্কাইভ পার্টনার। অ্যালবামের নামকরণ থেকে শুরু করে এর প্রত্যেকটা গানে, বাজনায়, অ্যালবামনকশায় বাড়ি ব্যাপারটা প্রাধান্য পেয়েছে। কেন্দ্রীয় থিম বলতে এইটাই। বাড়ি। বাড়িখোঁজা। বাড়ির সন্ধান। এইটা আমরা রিলিজও করেছি নিজেদের বাড়ি থেকে, অ্যালবামনামেও বাড়ির নাম্বার, আমাদের নিজেদেরই রেকর্ড লেবেল দি ট্র্যাভেলিং আর্কাইভ রেকর্ডস থেকে বেরিয়েছে এইটা। আমাদের অন্য সংকলনগুলোর মতো, যেগুলো এই লেবেল থেকে বেরিয়েছিল আগে, রয়েছে একসেট সিডি এবং ব্যুকলেট, রয়েছে একটি বিশেষ এমপিথ্রি ডাউনলোডকোড এবং দ্বিভাষিক ব্যুকলেটে রয়েছে বেশকিছু রচনা ছাড়াও প্রাসঙ্গিক ফোটোগ্র্যাফস্।

[২০১৭ সেপ্টেম্বর মধ্যভাগে এই ইন্টার্ভিয়্যুটিদি হিন্দু’ পত্রিকায় ছাপা হয় গানপারের জন্য অনুবাদ করেছেন সুবিনয় ইসলাম ]

কুনাল রায়

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you