অন লেখালেখি, ইনফর্ম্যাল (দুস্রা দাগ)

অন লেখালেখি, ইনফর্ম্যাল (দুস্রা দাগ)

লিখতে লিখতে বাঁচা, না বাঁচতে বাঁচতে লেখা — থাক, এই নিয়া আলাপজিলিপি কিংবা বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাজাল বানাতে না-বসলেও চলে। হ্যাঁ, তা চলে, কিন্তু বাঁচা আর লেখা না-থামে যেন তোমার। কোনো অজুহাতেই বাঁচা থামানো চলবে না মনে রেখো, সম্ভব হলে বাঁচানো, ওজর-আপত্তি দিয়া থামানো চলবে না লেখা। বাঁচাবাঁচি আর লেখালেখির বেনিফিট নিয়া, নেসেসিটি অফ লিভিং বা নেসেসিটি অফ রাইটিং নিয়া, বাঁচতে চায় যে কিংবা চায় কেবলি লিখে যেতে তাকে বেহুদা না-ভাবলেও চলে। ত্যানা প্যাঁচানো নয়, মেইক অ্যান এম্ব্রোয়ডার্ড কুইল্ট ইফ য়্যু ক্যান। হুদা হাউকাউ অথবা আখাম্বা গাম্ভীর্য উভয়েই ইক্যুয়্যালি হেলথহানিকর, লাইফে এবং লেখায়, অতএব পরিত্যাজ্য। নকশিকাঁথা বানাইতে যেয়ে সুচশিল্পে পারঙ্গম না-হলেও চলবে। ধ্যান ও দরদ কতটা তা কাঁথা দেখলেই যায় টের পাওয়া, গায়ে দিলেই টের পাওয়া যায় তার ওম ও মায়া, পারদর্শী হোক জগতের যত স্যুইংমেশিন ও টেইলর লোকেরা। বাঁচো, লেখো; কেন লিখি, কেন বাঁচি — ভাবুক অন্য লোক, যত্ত মহাজ্ঞানী ও উজবুক।

*
ক্ষমা করো, রজনী-নিগূঢ়া হাওয়া, মার্জনা করো উতল জলের পারাবার! যদি না-বলতে পারো নাম তার, উচ্চারে অপারগ যদি ঠিকানাসাকিন, ওই অসহ মধুর মর্মরের উৎস ও ক্রমবিকাশ যদি নির্ব্যক্ত রাখিতেই চাও, তবে উপায়? নিরুচ্চারে জপ করো তারে, অশব্দ করো উপাসনা আস্তিক-নাস্তিক ইড়িঙ্গির এই বিদ্যারত্নখচিত সংসারে, এ-ই হোক তোমার জানু-পেতে-বসা নামাজ ও রোজা। বাবরের প্রার্থনা। আর ময়দানে তো মন্ময় কিংবা তন্ময় কোনোটাই ঠিকঠাক হবার জো নাই। কিন্তু ময়দান ছেড়েও দিও না তাই বলে! ময়দানে থাকো গুহার মায়াবী নিরালাচ্ছন্নতা আস্বাদনের অগ্রিম ও অত্যাবশ্যক ধাপ হিশেবে। এখন যদি নিতান্ত জিজ্ঞাসে কেউ এসে, তারে তুমি বাসো কি না ভালো, তো উত্তর দাও সদর্থক। নাম বোলো না, নাম বলা বারণ, নামে কেউ কোনোকালে থেকেছে কোথাও? নজির নাই একটাও। তুমি তো, ট্রু স্পিকিং, অবগত নও তার কুর্সিনামা। তার বংশলতাতন্তু, গোত্রপরিচয় তার, সম্যক জানো তুমি? জানো না যেহেতু, গোল কোরো না খামাখা, খাটে ঘুমায় আদ্যিকালিক ছড়ায়ত খোকাখুকু, ছোটনকুমার ঘোড়া দাবড়ায় মাঝরাইতের তেপান্তরের মাঠে, নোয়াববাড়ির হাটে যেয়ে ঢ্যাড়া পেটাতে বারণ করো, ছোটনকে দাও ঘুমাইতে ঠিকমতো। ওদের হাঁকডাক-হুহুঙ্কার নয়, ছোটনের একটা সাউন্ড স্লিপ আমাদের আগামীদিনের উজ্জ্বল দিশারি। নিশ্চয় তুমি তাকে, ছোটন ও তার বন্ধুদেরকে, এছাড়া বাদবাকি সবাইকে দুনিয়ার, ভালোবাসো। কথাগুলো শুনে যদি নিতান্ত বোকা ঠাওরায় পৃথিবী তোমাকে, তাহলে তুমি তা-ই, সানন্দ লও মেনে। হ্যাঁ, নির্দ্বৈধ জানায়া দাও, তুমি বোকাই হইতে চাও। হ্যাঁ তুমি হয়েছ তো বোকাই। হতে চাও পুনঃপুনঃ অমন বোকা, হাঁদা, গাউয়ালি গীতের খেইড়-খেলাওরা কানাই।

*
কী হবে এত চালাকি করে? কে হায় বসিয়া প্রহর ভরিয়া খালি চালাকিই করে চলে? কী হয় এত উপরচালাকি করে? বেশি বাঁচা যায় নিয়তিনির্ধারিত মেয়াদের চেয়ে বেশি নিরাপদে একটিদিনও? দুনিয়াটা জান্নাতের বাগিচা বানাতে পারা যায়, দিগগজ মুফাসসির, হে অ্যানথ্রোপোলোজিক্যাল ক্রিটিক? যদি ভীষণ প্যাঁচুয়া চালাকি দিয়া যাইত খরিদ করা শান্তিস্নিগ্ধ সুখের সুগন্ধ, হতাম না-হয় ত্রিভুবনের শ্রেয় লড়াকু চালাক-চলুয়া। তা যখন যায় না, বালের চালাকির তলে-উপরে চালাকিই হয় খালি, তাইলে কেন হতে যাব অমন ন্যাস্টি ইন্টেলিজেন্ট তথা দার্শনিক হেঁয়ালিভরা মাজাক? অতএব, সমস্ত বোলচাল-টালবাহানার হোক মুলতবি এখানেই। সমস্ত ত্যানাপ্যাঁচানো কথার শেষে সমুদ্র সমুখে, এসো নামি পাৎলুনের পাও গোটায়া, আসো সোচ্চার হই নিকটে এবং দূরে : বেঁচে থাকি, বাঁচায়া রাখি! আর নিরুচ্চারে নেই এসো নামখানি তার তথা যার যার প্রিয়তমার। যার যার মধুরতমার, যার যার ভবসংসার, যার যার অভ্যাসের রাধা ও অধিরথের, যার যার উপশম ও উদরাময়ের।

*
বাঁচতে বাঁচতে যদি মৃত্যু আসে, তো বরণ করো তারে। লিখতে লিখতে যদি চোয়াল বা মগজে নেমে আসে ঐশী চাপাতির কোপ, ওয়েলকাম জানাও রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট দৈব খুনপিপাসুকে। বাঁচতে যেয়ে, লিখতে যেয়ে, কোনো লাইক কোনো কমেন্ট কোনো সমর্থকগোত্রের ধার ধারে না কোনো লিখুয়া-বাঁচুয়া। বাঁচো, লেখো, মউত পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস সহিসালামতে। যে চায় দর্শন না-সমঝে দর্শনবাদিতায় মত্ত থাকিবারে, তারেও সকৌতুক লক্ষ করে ফের নিজের বাঁচাটা নিজের লেখাটা বাঁচতে থাকো লিখতে থাকো। কবুল? — কবুল!

জাহেদ আহমদ


সমধর্মী বিভিন্ন রচনা

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you