তথ্যপ্রযুক্তি, নিসঙ্গতা, নির্লজ্জতা, মননশীলতা ও সৃজনশীলতা

তথ্যপ্রযুক্তি, নিসঙ্গতা, নির্লজ্জতা, মননশীলতা ও সৃজনশীলতা

 

নিসঙ্গ লাগছে খুবই। নিসঙ্গ লাগছে — এহেন তথ্য এই নিশীথগভীরে, এই ইনফর্মেশন হাইওয়ের গরিমাপ্রান্তরে দাঁড়ায়ে, ব্রডকাস্ট খুব জরুরি ছিল বুঝি? ছিল, জরুরি, এই নিবন্ধনোটের জন্যে। কেননা প্রাগুক্ত ওই বাক্যটাই — নিসঙ্গ লাগছে খুবই — লিখতে আমায় তাড়িত করছে এক্ষণে এই চিলতে লেখাটা।

সমস্ত সৃষ্টিসৃজনই নৈসঙ্গ্যের উৎপাদ কি না, তা বটে একটা ভাবার মতো দশাসই ব্যাপার। আবার, খুব ভাবারও তো কিছু নাই। বিষয়টা তো একপ্রকার মীমাংসিতই, তাই না? যতই তুচ্ছ অনুল্লেখ্য রচনাকর্ম হোক, উৎস তার নৈসঙ্গ্য। কোনো-না-কোনো পর্যায়ের একটা নিসঙ্গতা আর্টসৃজনকর্মে ক্রিয়াশীল থাকবেই। ড্যান্সফ্লোরে ক্যালিপ্সো পার্ফোর্ম করতে করতে তো আপনি লিখতে বা আঁকতে পারবেন না। আরেক দিক থেকে দেখতে গেলে, ক্যালিপ্সো ইটসেল্ফ একটা আর্টসৃজনকর্ম, সন্দেহাতীত শিল্পসৃজন, ফলে একইসঙ্গে এবং একই সময়ে দুই শিল্প সমানভাবে করে ওঠা আদৌ সম্ভব নয়। নিদেনপক্ষে এই কথাটা আইডিয়্যালি বিলকুল সহি।

কিন্তু লাইফ তো অনেক ব্যতিক্রমও করে এই দিনদুনিয়ায়। জনতার মাঝে থেকেও কেউ কেউ নির্জনতা চাহিদামাফিক তৈয়ার করে নিতে পারেন, তৈরি করে নিতে পারেন এক অপরূপ নৈসঙ্গ্যবলয়। নিসঙ্গতা আপনি বিচিত্র পথে নির্মাণ করে নেবেন নিজেরই কাজের গরজ বুঝে। যুদ্ধক্ষেত্রের ডামাডোলে বসেও একজন লেখক লিখতে পারেন যখন, অথবা কোনো আমআদমি যখন চিঠি লেখেন তার আপনজনকে রণাঙ্গন থেকে বা প্রাত্যহিক জীবনযাপনের বৈদেশ থেকে, বুঝতে হবে কোনো-না-কোনো স্তরের নৈসঙ্গ্য এসে পেড়ে ফেলছে তাকে, এমন কোনো অনুভূতি যা মৃত্যুর চেয়েও অমোঘ ও জরুরি, জীবনেরই ভীতি-ভুলানিয়া গান। অজস্র আওয়াজের ছিদ্রপথেও নির্জনতা এসে গ্রাস করেছে তাকে, ভর করেছে তার ওপর কোনো অতিকায় আদিম গুল্মের কুহকান্ধকার। ভয়ানকতার উর্ধ্বে ব্যাখ্যাতীত একাকিত্ব ভর করেছে বলেই তিনি সৃষ্টি করছেন, নির্মাণ করতে পারছেন নিজের বোধ, নিজের বোধ ও ভাবের পথ ধরে নির্মাণ করছেন নিজের ভাষা, বোধের অনুসারী ভাষ্য। একের পর এক, অর্থ অথবা/এবং অবধারিত অনর্থ, সুকুমারের আবোলতাবোল।

অনেক হয়েছে। এইবার যাওয়া যাক পূর্বোক্ত প্রসঙ্গে। এই ইনফর্মেশন-টেক্নোলোজির পরাক্রমপূর্ণ রমরমা কালে, এই তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে অথবা গাড্ডায়, নৈসঙ্গ্য নিয়া বাক্য রচনা কোনো কাজের কথা না। আমার বন্ধু বলেন, এইসব সিম্পলি ইম্যাচিউরিটি, অ্যাডাল্ট মানুষের, অ্যাডাল্ট একজন ব্যক্তি বা ইন্ডিভিজুয়্যালের কাজ নয় ছিঁচক্রন্দন প্রকাশ। লিখিত ফর্মে এসব কর্ম ও অন্যান্য ক্যারিক্যাচার তিনি নির্লজ্জতা বলে মনে করেন। আমার হাতে এইধারা দুষ্কর্ম সাধিত হতেছে দেখে তিনি আমাকে বেশরম-বেলেহাজ সম্বোধনে ভৎসনাপূর্বক (খণ্ডতয়ের মুণ্ডুর উপর বৃষ্টিছিটা-গ্র্যাফিকের রেফ দেয়া সম্ভব হলো না, ইউনিকোডের অথবা পার্টিকুলার এই ইউজারের অপারগতা হেতু; সুতন্বী মোস্তফা জব্বারে এর পূর্ণ রূপ প্রস্ফুটিতব্য) মুহুর্মুহু হুমকিধামকি দিয়ে চলেছেন এইসব নোটনৌটঙ্কি অবিলম্বে বন্ধ করিবারে। এমন হুমকির গমকে আমার আবেগ বাষ্পরুদ্ধ, নৈসঙ্গ্য পলায়নোদ্যোগী, পাত্থর-কি-ফুল হয়া আমি হাবা যুবকের ন্যায় হা-দৃষ্টি নির্নিমেষ তাকায়া আছি মহাকালগগনের পানে। দেখি বৃষ্টিধারা নামে কি না… তা, এইটা সত্যি যে, এই নিবন্ধনোটখাতার প্রতিটি পৃষ্ঠাই নিসঙ্গতার নোটেশন টুকে চলেছে একাগ্র মনে।

এখন, এইবেলা, একটু ঘুমাবার বন্দোবস্ত করা যাক বরঞ্চ। তথাস্তু। কিন্তু বাতি নিভাইবার সঙ্গে সঙ্গে চটকে যাবে ঘুম, অভিজ্ঞতা পাঁচবছরাধিকের, তোমাদের পাড়াপাহারাদারের পোস্ট অতএব আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়ে যাব নো-ডাউট, শুধু ওয়াক-ইন-ইন্টার্ভিয়্যুতে এন্ট্রিটা পাইলেই হয়।

জাহেদ আহমদ


এই সিরিজের অন্যান্য রচনা

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you