সাহিত্যিক সাংবাদিকতা, সাংবাদিকী সাহিত্য

সাহিত্যিক সাংবাদিকতা, সাংবাদিকী সাহিত্য

শেয়ার করুন:

 

সাংবাদিকী সাহিত্যয় বাংলাদেশ ভরা। আগের কালের বুকিশ ভাষায় আমার মুখে এসেই গিয়েছিল সয়লাব। ক্ষণেক ভেবে দেখলাম, সয়লাবটয়লাব বলে যেহেতু বড় কোনো রসগোল্লা লাভ হয় না লেখার, বরং ক্ষতিই, তাইলে কেন লোকে যেই ভাষে বোঝে, কানেক্ট করে বেটার, সেই ভাষে না লিখে বেহুদা আমরা বুকিশ আওড়াই? যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু করি সাহিত্যিক সাংবাদিকতা শব্দজোড়ায় আমি কী মিন করতেসি তা আগায় বলে রেখে।

এমন একটা লেখার কথা ভাবি, লিখব অথবা আর কারো রচনায় পেলেও পড়ব, ভীষণ অন্তঃসারশূন্য অবস্থাটা আনকাট আনএডিটেড যথাসাধ্য র রেখে প্রণীত যেই লিখনকর্ম। কোদালরে কোদাল, শাবলরে শাবল, ডিরেক্টর জেনারেলের চুরিরে ডিরেক্টর জেনারেলের চুরি বলবে যে-লেখা। তা করতে যেয়ে বেহুদা, বা বাংলায় অ্যাকাডেমির ডিজি ইত্যাদি, প্যাঁচাল পাড়তে হবে না। তাইলে, দেখি, নিজেই তুমি লিখে দেখাও অমন একখানা কাছাখোলা লেখা! তা, যায়, যাবে না কেন, যাওয়াইলেই যায়। লাজশরমের মাথামুণ্ডুগুর্দা খাওয়া লেখা না হলে এই চিকিৎসাতীত হীনচিন্তার হাসিতামাশার হিংসাহানাহানির হৈদরি লিট্রেচার থামবে না। কাছাখোলা আলেখ্য রচনার, সময়ের শূন্যসার প্রণয়ন করবার, মুহূর্ত মুখ ঘুরায়া তাকায়। টাইম স্রোতোস্ফূর্ত অগ্রসর হয়, যেতে যেতে তটরেখার বালির ঘষায় নিমীলিত অমসৃণ আওয়াজ করে, যেন বলে, লেখার আগে লেখার ভঙ্গি নির্ধারণ করে নিতে পারাটাই লিখনকর্মের বেইসিক কর্তব্য।

কর্তব্যের কথায় ইয়াদ হলো, সংবাদপত্রগুলা বাটপারতন্ত্রের সাক্ষাৎ স্তম্ভগুলার মধ্যে একটা হয়ে ওঠায় দেশের বা এই ভাষার লেখক ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় নিয়া আশা আর হারাম একফোঁটাও কারোর মধ্যে নাই। লিখবে এই বাটপারির বাইরে থাকবে যারা। বাইরে কী থাকতে পারবে? তা জানি না। যার যার তার তার মামলা। বাইরে থাকতে পারবে যারা, তারাই লিখবে। বাকিরা, যারা থাকবে ভেতরে, ম্যাজরিটি যারা, তারা সারাজীবন ধরে লেখার নামে এক ধরনের রোল প্লে করে যাবে। এই কিসিমের রোল প্লেয়ার দিয়া বাংলা সাহিত্য ভরা।

কাছাখোলা লেখা বলতে যা মিন করতে চাইছি, আমাদের ব্যক্তিগুলা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলা কেমন করে খাড়ায়া আছে ক্যাম্নে ওয়ার্ক করতেসে এবং না তা টায়েটায়ে ডিটেক্ট ও ডেলিনিয়েইট করবার দুর্মর বাসনাস্পর্শী লেখা। জার্নালিজম লুণ্ঠকের কব্জায় যাওয়াতে রেগ্যুলার সোসাইটিতে যারা মান্যগণ্য সুসাহিত্যিক, তাদেরেই জঞ্জাল সাফা রাখবার লিটারেরি জার্নালিজমটা চালু ও অব্যাহত করা দরকার। সুবাতাস আর সুদিন কবে এবং কোথায় এসেছিল অনেক অনেক দিনের প্রস্তুতি ও নামাজকালাম পূজাআচ্চা ছাড়া?

আমি ইদানীং একটা কাছাখোলা লেখার উদ্গমসম্ভাবনা দেখতে পাই দিনের সপ্তম ও অন্তিম চুরট ধরাবার সময়। হামেশা। মানে তখন রাত্রি মাঝভাগ প্রায়। বাংলা একাডেমির ডাইরির শুরুতে দেয়া পুরস্কারপ্রাপকদের তালিকা ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ কাটাছেঁড়া করে দেখানো সম্ভব গত পঞ্চাশ বছর ধরে কয়জন আমলা, তাদের পরিজন, তল্পিবাহক জিনিশটা বগলদাবা করেছে। দেখানো সম্ভব পঞ্চাশ বছরের এই পুরস্কৃত লেখকদের গুটিকয়েক ছাড়া আর কারো নাম দেশের বইক্রেতারা জানে না। তাহলে কেন এই জিনিশ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়া হয়? যেখানে নোবেল পাওয়া ১০০ বছরের লেখকদের সবাইকে বইপাঠক সকলে চেনে, লেখায় না হলেও নামে চেনে যে উনি নোবেল লরিয়েট, কেননা তাদের বই দোকানে দেখতে পাওয়া যায়, নেড়েচেড়ে রেখে দেয়া যায়, আমাদের পাশের দেশের পুরস্কারপ্রাপকদের বেলায়ও কথাটা সত্য। অতএব, আমি প্রস্তাব করব লেখার শেষে যে আগামী ৫০ বছরের জন্যে এই জিনিশ বন্ধ করেন, ভালো পাণ্ডুলিপি তালাশ করেন, ভর্তুকি দিয়ে বই ছাপিয়ে সেইটা পাঠকের সামনে হাজির রাখেন, এক কপিও কেউ না কিনলেও প্রমোট করেন বছরভর। এতে করে দেশে লেখকের কদর, লেখার কদর, বাড়বে। একটা পাঠকজনগোষ্ঠী তৈরি হবে। লাগুক তাতে ৫০ বা ১০০ বা তারও বেশি বছর। এই লেখাটা লিখতে যেদিন শুরু করব, তোমার হাতে থাকা ডাইরির তালিকাপাতাগুলা আমি চেয়ে নেব, হে বাংলা একাডেমির লাইফ মেম্বার বন্ধু আমার! বা, এই লেখাটা তুমিও লিখতে পারো। তবে লিখতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়। ট্রেন্ডি কোনো ট্রোল বা পৌক না করে।

একটাই রিস্ক, এই কিসিমের কাজে, ক্রাইম সিন খুঁজতে খুঁজতে নিজের ক্রিয়েটিভিটি খুইয়ে বসা লাগতে পারে। এইগুলা সার্চ করতে গেলে আপনার বা তোমার নিজের নিমগ্ন কাজকর্ম আর করতে পারবেন বা পারবা না। যাত্রাপালা বিষয়ে, ধরা যাক, আপনার বা তোমার জানাশোনা আর সংগৃহীত উপাত্ত-উপকরণ অনেক, ফলে এই বিষয় নিয়া আপনার বা তোমার কাজগুলা আপনি বা তুমি করে যাবেন বা যাবা জানি। কিন্তু চোর বাছতে গেলে গেরাম উধাও হয়া যাবে, এদেশে সাধু পাইবেন বা পাইবায় কই? খিয়াল রাখতে হবে খালি ‘চোরে চোরে বেয়াইয়ালা’ না পাতাই যেন। অবশ্য ফোকলোরে অ্যাওয়ার্ড পাইতে গেলে দেখবেন বা দেখবা সামনের বছর এই (বা অন্য কোনো) চোর অথবা তাচ্চে বেঁড়ে জোচ্চুরই জুরিবোর্ডের ইনফ্লুয়েনশিয়্যাল মেম্বার। ফোকলোর অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিটায় খেয়াল করলে দেখবেন বা দেখবা, বাউলের গীতিকাগুচ্ছ বইয়ের পাতায় ছাপিয়ে বের করে সেই বইয়ের জন্য মধ্যবিত্ত বলয়ের রিকগ্নিশন আদায় করে নেয় বাউল নয়, ছাপক! বাউল আর শ্রোতার মাঝখানে কেন বইয়ের শুকনা ভাঙা তরী নিয়া বাংলাদেশের ফোকলোর টালবাহানায় কাটায়া যাইতেসে দিন, বোঝা নামুমকিন। মুৎসুদ্দি মধ্যস্বত্বভোগী পরজীবী একটা আজব লেখকসম্প্রদায় বাজার ভরায়া রাখল যার ক্যাটাগরিক্যাল নাম ফোকলোর গবেষক! যেমন আরেকটা আছে, সেভেন্টিওয়ান রিসার্চার বা মুক্তিযুদ্ধ গবেষক। এই ক্যাটাগরিক্যাল এররগুলা আমাদের আলাপের আওতায় নাই। আমাদের বলতে লেখকদের, সাহিত্যিকদের, কবিদের আলাপের আওতা। আমরা জানি, সাফার করি, লিখতে যেয়ে একটা প্যাটার্নের পশ্চাদ্ধাবন করি। লিখে অ্যাওয়ার্ডেড বা রেকগ্নাইজড হতে গেলে ক্যাটাগরিক্যালি নিশানা তাক করে আগানো লাগে। লেখকেরা ডাইরেক্ট পাতার পর পাতা কাটিং পেস্টিং করে সোজা রাস্তায় অ্যাওয়ার্ড বাগাইতে চায়, অ্যাওয়ার্ড বাগায়। এই প্রক্রিয়ায় লাস্ট ফিফটি ইয়ার্সে কয়টা বাক্য ফোকলোরের ইনফ্লুয়েনশিয়্যাল টেক্সট জন্মাইসে, কেউ স্টক-টেইক করবে না?

না, তা করবে না। তারচে বেটার ওই সোজাসাপ্টা রাস্তায় নিজে একটা ট্রাই মারবে। ঢ্যাঁড়শ। হোক। লুটে লেবে।

জাহেদ আহমদ


এই সিরিজের অন্যান্য রচনা

শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you