ধানমাড়াই হলো ধান উত্তোলন পক্রিয়ার একটি বিশেষ ধাপ। হাওরাঞ্চলের বৈশাখের এক পরিচিত শব্দ। কাটা ধানগাছ হতে ধানকে ছাড়ানোর নাম। বাংলা একাডেমি অভিধানে ‘মাড়া’ শব্দ দিয়ে মর্দন করা বা পেষণ করা আর ‘মাড়াই’ শব্দ দিয়ে মাড়ানোর কাজ উল্লেখ থাকলেও ভাটির হাওরে ধান ‘মাড়াই’-এর চেয়ে ‘মাড়া’ নামেই অধিক পরিচিত।
মাড়াইয়ের সংজ্ঞা খুঁজতে চোখে পড়ে, “যে-পদ্ধতিতে দানাজাতীয় ফসলের ভোজ্য অংশ (দানাশস্য, যেমন — ধান, গম প্রভৃতি) থেকে ফসল উদ্ভিদের অন্যান্য অংশকে আলাদা করা হয়, তাকে মাড়াই বা থ্রেসিং বলে।” গরু বা মহিষকে কাটা ফসলের উপর দিয়ে মাড়াই করে অথবা থ্রেশার নামক যন্ত্র ব্যবহার করে হাতে মাড়াই করা যেতে পারে।
মানুষের দীর্ঘ চিন্তা ও বিজ্ঞানের বদান্যতায় বর্তমানে ধান মাড়া দেয়া মেশিন নির্ভর। আমাদের ছোটবেলায় দেখা ধানমাড়া মেশিন নির্ভর ছিল না, ছিল গরু নির্ভর। ক্বিত্তার পর ক্বিত্তার জমির ধানের মাড়া দেওয়া হতো গরু দিয়ে। হাওরের পর হাওর জমির ধান মাড়া হতো গরু দিয়ে। সাতক্ষেইরা, দশক্ষেইরা, আঠারোক্ষেইরা, লোঙ্গার পর লোঙ্গা এমন জমিনের মাড়া হতো দুইদিন, তিনদিন হতে চারদিন, পাঁচদিন পর্যন্ত চলতো। এমনও হতো একটু দূরের হাওর হলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত মাড়া চলতো। বাঁশ বেতের দাঁড়া দিয়ে হুড়া (টেম্পোরারি ঘর) বানিয়ে থাকা হতো। হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে খড়ের লাছিতে (শুকনো খড়ের গোলাকৃতি স্তূপ) জায়গা করে নেয়া হতো। বস্তায় বস্তায় ধান ভরে, বেশি হলে গোলি ধানের স্তূপ বানিয়ে, একেবারে মাড়াকাজ শেষ করে ধান খলাতে পাঠানো হতো। হাওরের অবস্থান বুঝে অনেকে নৌকা, গরুর গাড়ি, হল্লা এসব ব্যবহার করতো। সিংহভাগই গরুর গাড়ি ব্যবহার করতো।
আশি নব্বই দশকেও দেখা যেত, গ্রামের ছোট ছোট কৃষক মিলে গড়ে তোলে মাড়ার সঙ্গ (দল)। গ্রাম্য জনজীবনের কাছে ‘মাড়ার হঙ’ হিসেবে ছিল পরিচিত। বিবেচনা করা হতো কে বা কার কতটুকু জমি চাষ, কতটি গরু, মাড়াকর্ম সাধনে কতজন লোকবল। আরো দেখা হতো জমির অবস্থান (দূরের, কাছের), দেশি ও বিদেশি ধানের ধরন। সাব্যস্ত করা হতো মাড়াচক্করের জন্য দাঁড়া, খড় (ক্ষের) ও ধান বহনের জন্য গরুর গাড়ি, হল্লা, জোয়াল, গরুর গাড়ির জন্য শক্তিশালী বলদ, ষাঁড়, শক্তিশালী গাভি। সিদ্ধান্ত নেয়া হতো ফাগা, কাঁচি, ডাবা-আইল্ল্যা, লাইঙলা এমনসব তৈজসপত্রের। তবে কোনো কোনো গ্রামে মহিষের প্রচলন চোখে পড়ত।
ধানমাড়া নির্ভর করে ধান পাকা ও কাটার উপর। সঙ্গের মধ্যে যাদের আগে কাটা হয়েছে তাদের; আবার একতরফাভাবে শুধু যে একপক্ষের তাও নয়। বৎসরের পরিস্থিতি, জমির অবস্থান (দূরের ও কাছের হাওর), জমির পরিমাণ ও ধানকাটাকে প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনা করা হয়।
সাধারণত প্রত্যুষে মাড়া দেওয়ার জন্য বাড়ি হতে যাওয়া হয়। ভোরের তারা কিংবা ভোরের ফিঙে (প্যাছকোন্দা) পাখির ডাককে লক্ষ করে ঘুম ভাঙানোর ডাকাডাকি শুরু হয়। প্রতিযোগিতা শুরু হয় কার আগে কে হাওরে পৌঁছাবে। কার আগে কে মাড়া শুরু করবে। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাড়ার সঙ্গীদের বাড়ি হতে লামাতে গরু জড়ো করা হবে। সময় অপচয় রোধ করতে জোয়ালের সাথে লাইঙলা (তুলনামূলক মোটা দড়ি) বেঁধে রাখা হবে। বড় বলদ/ষাঁড় দিয়ে গরুর গাড়ি জোড়া হবে। মাড়া চক্করের জন্য সঙ্গে বাঁশবেতের দাঁড়ার বুন্দা নিয়ে যাওয়া হবে। কোনো-একজনের দায়িত্বে মাড়ার জন্য গরু নিয়ে যেতে হবে। বাদবাকিদের মধ্য হতে স্ব স্ব দায়িত্বে মাড়ার আনুষঙ্গিক পত্র যেমন ফাগা, কাঁচি, ডাবা-আইল্ল্যা নিতে হবে। প্রয়োজনে অতি তাপমাত্রায় পানিপিপাসার জন্য কলসি ভরে খাবার পানি নিতে হবে।
ধানমাড়ার সময় বৈশাখকে সুবৈশাখী ও কুবৈশাখী হিসেবে অভিহিত করা হয়। নির্দিষ্ট করে বৈশাখের বৈশাখী হলেও ধানমাড়া অনেক সময় চৈত্রের শেষ হতে, কোনো কোনো বৎসর জৈষ্ঠ্যের কিছু দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। নির্ভর করে প্রকৃতির উপর। অনেকে অতিবৃষ্টির কারণে ‘ডগরার বছর’ আবার অনেকে ‘কাঁচাইরার বছর’-ও বলে থাকেন। তখন অতিবৃষ্টিতে ধান পাকতে সময় নেয়। তুলনামূলক নিচু, বিলঘেঁষা জমির ধান পানিতে হাবুডুবু খায়।
তুলনামূলক খরা থাকলে আবহাওয়া ভালো বলেই ধরা হয়। বলা হয়ে থাকে সুবৈশাখ। তখন বাড়ির উঠান, খলা, মাঠঘাট, হাওর লামায় সর্বত্র মানুষ বিরাজ করে। অনেক সময় গরুর পালও ঘাস খেতে খেতে হাওরে থেকে যায়। দুধ দোহনের জন্য গাভিকে খুঁজে আনতে হয়। জনজীবনে আনন্দের সীমা থাকে না। কান পেতে রাখলে কানে বাজে বিলে-আটকে-থাকা জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, রাতের রূপালি চাঁদ ও পাকা ধানের শীষ কিংবা কান্দার চাইল্ল্যা ঘাসের শীষ মিশ্রিত লোকজীবন, পল্লিজীবনের রূপকথার সুর। তবে আবহাওয়া বৈরী হলে কানে বাজে বিধুরের সুর। কষ্টের থাকে না অন্ত। নগরজীবনের পিচঢালা রাস্তার ন্যায় হাওরের বুক চিরে গোপাট নামক কাঁচা রাস্তাগুলো হয়ে ওঠে কাদাময়। গরুর গাড়ি চলতে ঘটে ব্যাঘাত। মাড়া দিতে গিয়ে বাঁধতে হয় হুড়া (টেম্পোরারি ঘর)। খড়কুটো শুকাতে অনেক ভুগতে হয়। খলায় জমে যায় স্তূপের পর স্তূপ গোলি ধানের ঢেরি। লোকমুখেই নিঃসৃত হয় কাঁচাইরা বছর।
পাকা ধান কেটে চার-পাঁচ মুঠি করে একেক আঁটি বাঁধা হয়। এসব আঁটিকে আঞ্চলিক ভাষায় মুইট, মুইট্টা হিসেবে বলতে শোনা যায়। ধান কাটার পর এসব মুইট্টা টেনে প্বার্শবর্তী উঁচু কান্দা বা জাঙ্গালে তোলা হয়। তুলনামূলক উঁচু জায়গা লক্ষ রাখা হয়; যেখানে ধান ‘মাড়ার চক্কর’ দিতে সুবিধা হয় এবং বৃষ্টি হলেও যাতে পানি না জমা হয়। বৃষ্টির পানি হতে পচা ও ছুটা গরু হতে রক্ষার জন্য কাটা ধানের এসব মুইট্টাকে দুই পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়। একটি হলো গাইলা (গাইল/ঢেঁকির ন্যায় স্তূপাকৃতি) আর অন্যটি হলো লম্বা চতুষ্কোণাকৃতির ‘পাড়া’।
কৃষিকাজের ইতিহাস যুগ যুগ ধরে চলে আসলেও লিপিবদ্ধ আকারে ভাটির হাওরের ‘ধানমাড়া’ নামক এমন কর্মটির আনুষ্ঠানিক বিধিবিধান সম্পর্কে তথ্যসম্বলিত তেমন কোনো প্রতিবেদন বা রচনাকর্ম এখনো চোখে পড়েনি। জানা যায়, ছোট সঙ্গ (দল) বিশিষ্ট ‘ধানমাড়া’ করা হয়ে থাকে ৯টি দাঁড়া দিয়ে তৈরি চক্কর ও এক হাঞ্জুর গরু (৪/৫টা) দিয়ে। ১৬টি দাঁড়ার চক্কর দুই হাঞ্জুর গরু (৪/১০টা) দিয়ে। ২৫টি দাঁড়ার চক্কর দুই হাঞ্জুর গরু (১২/১৪টা) দিয়ে ধান ‘মাড়া’ হয়ে থাকে। চক্করের কেন্দ্র বা হাঞ্জুরের ভিতরের দিকের গরুকে ‘মেইয়া’ আর বাহিরের দিকের গরুকে ‘ধাপা’ বলে। সাধারণত অপেক্ষাকৃত বড়, বয়স্ক, হৃষ্টপুষ্ট ও সমজদার কেন্দ্রের দিকের গরুকে “মেইয়া” আর অপেক্ষাকৃত ছোট, চালাক ও চতুর গরুকে “ধাপা” হিসেবে হাঞ্জুরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ক্ষেতের আশপাশে অপেক্ষাকৃত উঁচু টেক, উঁচু কান্দা দেখে ধানমাড়ার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। খড় শুকানোর জন্য যথেষ্ট জায়গার ব্যবস্থা মাথায় রাখতে হয়। সাধারণত সূর্য উদয়ের আগে হাওরে পৌঁছেই মাড়ার চক্কর বিছিয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়। অনেক সময় বড় মাড়া হলে আগের দিন সন্ধ্যায় মাড়ার জন্য মুইট্টা চক্করে সাজানো হয়। মুইট্টাগুলো চক্করের চতুর্দিকে সাজাতে যেন এক শিল্পের প্রয়োগ করা হয়। ধানের ছড়াগুলো ভিতরের দিক দিয়ে একটার উপর আরেকটা রাখতে হয়। বিছানো দাঁড়ার চক্করের চতুর্দিক হতে সাজানোছড়ানো মুইট্টাগুলো আস্তে আস্তে কাঁচি দিয়ে মুইট্টার বাঁধা অংশটুকু কেটে চক্করের মাঝের অংশে ছড়িয়েছিটিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ করে পয়লা মাড়ার সময় সর্বশেষ মুইট্টা কেটে মাড়াতে ছড়ানো বা ভাঙার সময় স্তুতির ন্যায় লোকজ প্রবাদের ব্যবহার হয়। যেমন :
আইলো লক্ষ্মী দিলো বর,
ধানে চাউলে ঘর ভর;
ধানের নাম মাইট্টা,
উঠে ধান ফাইট্টা।
কাইমে খাইলো, কুঁড়ায় খাইলো,
মাড়ার সময় আইন্না দিলো;
পুবত আয়, পশ্চিমত আয়,
চারকোনা ভাঙিয়া আয়।
চক্করে গরু প্রবেশ করার জন্য একটু জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। অতঃপর গরু প্রবেশ করিয়ে ফাগা (গরু বাঁধার রশি) দিয়ে গরুর গলায় বেঁধে হাঞ্জুর (গরুর সমষ্টি/পুঞ্জ) করে গরু ডাকানো শুরু হয়। গরু ডাকানোর সময় গানের মতো নানান সুরেলা কণ্ঠ, লোকজ প্রবাদ ব্যবহার হয়। যেমন : হ্যাই; হ্যাই! হাঁটো; হাঁটো! হাঁটো রে; হাঁটো হাঁটো … নানান ভঙ্গিতে নানান সুরে। ব্যবহার করা হয় হ্বলা (বাঁশের তৈরি লাঠি ও মাথায় কুঁতি, ছোট আলপিনের মতো লোহা)।
সাধারণত চক্কর শুরু করা হয়ে থাকে ঈশান কোনা ধরে ঘড়ির কাঁটার দিকে। আর এই ঈশান কোনা হতে ঐ ঘড়ির কাঁটার উল্টাদিক ধরে মানুষ ‘কাইচ্ছা দেয়’/‘কাছা টানে’(চক্করের মাঝের অংশে মুইট্টায় গরুর পা লেগে চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেলে, এর কিনারা হতে অতিরিক্ত অংশকে টেনে আবার মধ্যবর্তী জায়গায় ফিরিয়ে দেয়া)। এভাবে ধান মাড়াতে প্রথমে কাছা টানা, দ্বিতীয়ত লাড়া দেয়া, তৃতীয়ত তলা ঝাড়া দিয়ে তিনটি ধাপে মাড়া দেওয়া সম্পন্ন হয়। মাড়া বড় হলে একেকটি ধাপকে আবার দুই-তিনবার করেও দেওয়া হয়। বিশেষ করে মাড়া বড় হলে দুই/তিনবার করে লাড়া দিতে হয়। চক্করে ধান জমা শুরু হলে কিংবা মাড়া শেষ হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ করে ধান বস্তায় ভরে বাড়ির খলায় পাঠানো হয়। সেখানে পায়ে পা মিলিয়ে ধান শুকানো হয়। ধান পাঠাতে ও গরুর গাড়ি চালাতে দক্ষ ও গতরে জোর আছে এমন একজনকে গাড়ি পরিবহনে পাঠানো হয়। কারণ মাড়াতে ধানভরা বস্তা গাড়িতে উঠাতে একে অন্যের সহায়তা করলেও খলাতে বস্তা নামাতে, মাড়া হতে যে নিয়ে যায় তার উপরই নির্ভর করতে হয়।
ধান মাড়ার সময় গরু দিয়ে ঘাঁটানোর ফলে কাটা ধানের ছড়া হতে ধান বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ‘গুডা’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে শোনা যায়। পয়লা মাড়ার সময়ে “গুডা” আসলে মাড়া হতে একটা ক্ষের (খড়) নিয়ে আংটির ন্যায় “ভাড়াল” বানাতে হয়। উক্ত ভাড়ালটি মেইয়াগরুর (কেন্দ্রের গরু) মাথার বামপাশের ‘শিং’-এ লাগিয়ে মাড়ার আড়াই ঘুর্ণনের পূর্ণতায় খোলে নিতে হয়। পরে চক্কর বা চকরের ঈশান কোনায় ধানের নিচে রাখতে হয়। ধানমাড়া সম্পর্কে এমনই কথাবার্তা জানা যায় পঞ্চাশোর্ধ কৃষক নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার কাজল সরকার সাহেবের কাছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানধারী তেমন উচ্চ প্রতিষ্ঠানে যেতে পারিনি, তবে বাপদাদা পূর্বপুরুষদের কর্মদর্শন এবং সেই শৈশব হতে নিজে করে আসা কৃষিকর্ম করার অর্জিত কর্মজ্ঞানে আমরা এভাবেই ধানমাড়া করে ও দেখে আসছি।
আশির দশকে গড়ে-ওঠা বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির শাল্লার অন্যতম কর্মী দুরন্ত দাশ বলেন, হাওরের এক প্রান্ত হতে অন্যপ্রান্তে লোকআনুষ্ঠানিকগত ধানমাড়াই পদ্ধতির পার্থক্য বা তেমন একটা হেরফের চোখে পড়েনি, তবে এর যদি কোনো আনুষ্ঠানিক বিধিবিধান থেকেও থাকে তা আমার জানা নেই। তবে ছোটবেলায় অনেক বড় বড় মাড়া দেখেছি। দেখেছি ছাত্রজীবনে রাজানগর হাইস্কুলে পড়ার সময় জমিদারবাড়িতে (পিলু চৌধুরী কাকু) থাকা অবস্থায়। আগেকার দিনে হাওরের বড় বড় গৃহস্থ যেমন মহেন্দ্র মাস্টার (আঙ্গারুয়া,শাল্লা), জয়দেব বাবু (আবদা,শাল্লা), তারা মিয়া (কাশিপুর, শাল্লা), রাজেন্দ্র ডাক্তার (সুখলাইন,শাল্লা), শরৎ মেম্বার (বন শিবপুর, খালিয়াজুড়ি), গকুল বাবু (রওয়াইল, খালিয়াজুড়ি), গকুল সরকার (রওয়াইল কাদিরপুর, খালিয়াজুড়ি) উনাদের বাড়ির বড় বড় মাড়া হাওরে হাঁটলেই চোখে পড়ত। আর সমানে তুলনামূলক ছোট ছোট গৃহস্থদের মাড়া তো হাওর জুড়েই থাকত। এখনের দিনের জন্য এসব গল্প মনে হবে। আর ধানমাড়াই মেশিন এসে, এখন, এসব তো প্রায় উঠেই দিয়েছে।
বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে ধানের বিচিত্র নজির দেখা যায়। ধানচাষ প্রাচীন ভূমির মধ্যে বাঙালি অধ্যুষিত ব্রহ্মপুত্র ও গাঙ্গেয় অববাহিকার নিম্নভূমি অন্যতম। প্রাচীন পূর্ববাংলার মহাস্থানে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০ অব্দে এবং উয়ারী-বটেশ্বরে ৪০০-৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ধানচাষের প্রমাণ আছে। প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, বাংলা ভাষার প্রথম রচনা চর্যাপদ, মধ্যযুগের সাহিত্যে ধানের কথা দেখা যায়। তাই ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের এই প্রধান খাদ্যশস্য, তার উত্তোলন বা সংগ্রহ সম্পর্কে লিপিবদ্ধকরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যথায় নতুন প্রজন্মের কাছে ‘ধানমাড়া’ বা ‘ধানমাড়াই’ গল্পের মতো লাগলেও এক সময়ের পালের নৌকার মতো শব্দদ্বয়ের অচিরেই বিলুপ্তি ঘটবে।
*লেখক সুশান্ত দাস একজন রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। নিবাস সেন্টক্যালিক্সট, কানাডা। বাংলাদেশের, আরও ঘনিষ্ঠ অর্থে হাওরের, মানুষ। লেখকের লগে সংযোগসূত্র sushantadas62@yahoo.co.uk
- মেঠোসুর কলরব : আবহমানের উৎসব || রূপকার - May 17, 2025
- মেঠোসুর আনন্দযাত্রা : গানময় এক সংবেদনশীল বাংলাদেশ || বিমান তালুকদার - May 9, 2025
- মাড়া || সুশান্ত দাস - May 3, 2025
COMMENTS