পোয়েট ও তার পার্টনার

পোয়েট ও তার পার্টনার

 

অভিযোগ উঠেছিল, অনুযোগ বলাটা ভালো, কবিদের লাইফপার্টনার/জীবনসঙ্গী ঠিক কবিতার বা শিল্পসাহিত্যের সমুজ়দার অনুরাগী বিবেচনা করবার সুযোগ খুব-একটা নাই। কারণ, তারা তা না। তারা কাব্যের আর্টের কদর করে না। তারা তা পারে না করতে ন্যাচারাল সিলেকশনেরই যোগসাজশে। এই ব্যাপারটা ভালো বোঝা যায় শিব আর পারুর সম্পর্কটায়। শিবস্বভাবী মং পুং কবিরা তাদের কাউন্টার পার্ট পুং মং পার্বতীস্বভাবীর সঙ্গে জোড় বাঁধলেই সংসার সুখের হয়। এ-কথার পিঠে কেউ কমেন্ট করেছিল, সোশ্যাল মিডিয়ার ২০১৩ সময়রেখায়, সংসার না-করলে হ্যাপিনেস আরও অধিক হয়। রিপ্লাই মিলে নাই। মানে, থ্রেডে কেউ কমেন্ট করে নাই ইনস্ট্যান্টলি। কিন্তু জরিপগুলা ফানি হলেও সমাজের স্বাভাবিক ঠাট্টামাজাক থেকে যে-বোধিগুলো ঘটে তা গাম্ভীর্য-সঞ্চারকারী সিরিয়াস পোস্টগুলো থেকে সেভাবে ঘটে না।

অ্যানিওয়ে। এবারে স্ট্রেইট আলাপে যাওয়া যায়। এদেশের কবিদের (পুং মং) উভয়ত পতি ও পত্নীরা কেন কবিতা বোঝেন না তা এক রহস্য। গ্যুড সাইড হচ্ছে যে, কবিপত্নীগণ কবিতাবোদ্ধা না-হইলেও কবিতারাধিকা বটে। তারা কবিতা ভালোবাসেন। খোদ কবিকে, কবিতাঘটনাটার হোতাটিকে, এই লোকগুলা ভালো তো বাসেন বটে ন্যাচারের আজব কোনো খেয়ালে। এমন না-হলে, ভেবে দেখুন, ম্যাসাকার হয়ে যেত কিন্তু! ঘরে ঘরে কবির ধর্মসহকারীরা/সহধর্মীরা/সহধর্মীণীরা তাদের বোদ্ধাবাজি দিয়া কবির লাইফ বর্বাদ করিয়া দিতেন। কবিপতি/কবিপত্নী কবিতাবোদ্ধা না-হইলে কবি জিন্দেগিভর কবিতা লিখিয়া যাইতে পারেন নির্বিঘ্নে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন শামসুর রাহমান এত বড় কবি হয়েছেন কেন জানেন? কারণ তাঁর ওয়াইফ জোহরা রাহমান কবিতা-বোঝাবুঝি তো বহুদ্দুর রাহমানভাষা বাংলাটাই ঠিকঠাক জানতেন না। ভাগ্যিস! নইলে এত প্রেমের কবিতা আমরা পাইতাম না। আবুল আহসান চৌধুরী ইন্টার্ভিয়্যু করেছিলেন রাহমানের, সেখানে একটা জায়গায় কবি জানাচ্ছেন : “একটি কথা বলতে হবে যে আমার স্ত্রী কখনো আমার এই লেখালেখির ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি বা কোনো বাধার সৃষ্টিও করেননি। এবং এই যে আমি বাইরে যাই কিংবা বাইরে থাকতে হয় কিংবা নানা ধরনের ক্রিয়াকাণ্ডের সাথে জড়িত হতে হয়, এতে তিনি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াননি। বলা যায়, তিনি কখনো বাধা না হয়ে আমাকে একধরনের সাহায্যই করেছেন।” অথবা, উদাহরণ হিশেবে, আমরা ঠাকুরের কথাটাও বলতে পারি। উনার ওয়াইফ নিরক্ষরপ্রায় ছিলেন বলেই তিনি বাংলা ভাষায় ছাব্বিশখণ্ড প্রমাণ রাখিয়া গিয়াছেন স্ত্রীর বোদ্ধাগিরি না-করার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ।

বোদ্ধাবাজির ফলে ফেইসবুকে ও ফেইসবুকবহিরস্থিত ক্ষুদ্রকায় যে-একটা মানবসমাজ আমাদের আছে সেইখানে ক্যারাব্যারা যা-সব মহাসৃষ্টি হচ্ছে তা নিয়া আমাদের সন্তানেরা আমাদিগেরে সকালে একবার বিকালে একবার ঝাঁটা দিয়া ঝাড়পোঁছ করিবে বলিয়া আমার আশঙ্কা দিন-কে-দিন বাড়িছে। অ্যানিওয়ে। এই নিবন্ধে এই নোক্তায় এই নোটে কবিপতি নিয়া, কবিদিগের স্বামী নিয়া, বাতচিত বিশেষকিছু করা যাইল না। তার একটা কারণ হতে পারে যে এই দিক নিয়া নোটকার বিশেষভাবেই অজ্ঞ, সমলৈঙ্গিক লোকগুলোর মুখরক্ষাও হিডেন অ্যাজেন্ডা হিশেবে কাজ করে থাকতে পারে। ব্যাপারটা না-বললেও অনুমেয় বটে যে কবিদের স্বামীগণ নিজ নিজ বোদ্ধাবাজিকর্মে কী ভয়াবহ নৈপুণ্য দেখায়ে চলেছেন যুগ যুগ ধরে! আদারোয়াইজ আমরা আজ বিপুল সংখ্যায় নারীদিগেরে অ্যাক্টিভ দেখতাম কবিতাক্রিয়ায়। কী বিকট কবিতাবোদ্ধা আমাদের স্বামীরা! আর তারা কী সিন্ডিকেইটেড! কথা না-বাড়ায়ে কেবল খনার পরিণতি চিন্তা করা যাক, মনে পড়ানো যাক খনার প্রেমিক তথা স্বামীর অবস্থান, খনার শ্বশুর বরাহ ও স্বামী মিহির দুয়েরই ছিল সায় খনার জিভকর্তনের পেছনে। এইসব তো ফ্যাক্ট। এই ইতিহাস স্মরণ করানো হলে নিজেই বিপদে পড়ব। অতএব নোটক এই পয়েন্টে সেইফ সাইডে খামোশ রহিল।

কবিদের, এবং কবিপতি/কবিপত্নীদের, বোদ্ধাবাজিহীন প্রেমময় দীর্ঘায়ু কামনা করছি। বিদায় জানাবার প্রাককালে একটা ফানি ইমোটিকন দিচ্ছি, ইনভিজ়িবল, দাঁড়িচিহ্নের শেষে।
জাহেদ আহমদ


এই সিরিজের অন্যান্য রচনা

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you