‘গান’ শব্দটির ব্যবহারভেদে ব্যঞ্জনাবৈভিন্ন্য : রবীন্দ্রনাথের গান থেকে চয়িত || সৈয়দ শামসুল হক

‘গান’ শব্দটির ব্যবহারভেদে ব্যঞ্জনাবৈভিন্ন্য : রবীন্দ্রনাথের গান থেকে চয়িত || সৈয়দ শামসুল হক

অনেকদিন থেকে একটি স্বপ্ন লালন করছি; রবীন্দ্রসংগীতে যাঁর নাম এদেশে সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয়, রবীন্দ্রগবেষণায় যিনি নতুন পথের পথিক, সেই সনজীদা খাতুনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বহুবার কথা বলেছি যখন তিনি ‘ধ্বনি থেকে কবিতা’ বিষয়ে শান্তিনিকেতনে গবেষণা করছিলেন। সনজীদাকে আমি বলেছিলাম, এবং এটি আমার আপন লেখার অভিজ্ঞতা থেকেও উচ্চারিত, যে, একই শব্দ একই কবি কখনোই এক স্তরে দু-বার ব্যবহার করেন না; প্রতিবারই শব্দটির সঙ্গে তাঁর দূর-নিকটের পরিবর্তন ঘটে, শব্দটির সঙ্গে কবির কৌণিক সম্পর্কটি ভিন্ন হয়ে যায়; শব্দের চেহারায় বানান ও আভিধানিক অর্থ এক হলেও প্রতি ব্যবহারে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে যায়; অনন্য এবং সদ্যোজাত হয়।

‘গান’ — এই শব্দটি তো আমাদের কত চেনা; রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গান থেকে আমি কয়েকটি পদ তুলে দিচ্ছি এবং ভেবে দেখতে বলছি, এই সরল, সহজবোধ্য, জীবনের বহুব্যবহৃত শব্দটি কি একই স্তরে, একই দূরত্বে বা নৈকট্যে এবং একই দৃষ্টিকোণে রবীন্দ্রনাথ প্রয়োগ করেছেন?

‘আমার মনের মাঝে যে গান বাজে শুনতে কি পাও গো?’
‘তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো তুমি ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া।’
‘কাল রাতের বেলা গান এল মোর মনে।’
‘নিদ্রাহারা রাতের এ গান বাঁধব আমি কেমন সুরে?’
‘আমার কণ্ঠ হতে গান কে নিলো ভুলায়ে?’
‘গান আমার যায় ভেসে যায়। চাসনে ফিরে, দে তারে বিদায়।’
‘অনেক দিনের আমার যে গান আমার কাছে ফিরে আসে।’
‘তবে শেষ করে দাও শেষ গান, তারপরে যাই চলে।’

গোড়াতেই যে স্বপ্নটির কথা বলেছি, সেটি এই যে, রবীন্দ্রনাথের গান এবং কবিতা থেকে যাপিত জীবনে বারবার ব্যবহৃত কিছু শব্দ — যেমন ‘গান’, ‘প্রেম’, ‘আলো’, ‘তুমি’ — একজন শব্দঋষির উচ্চারণ থেকে তুলে এনে পরীক্ষা করে দেখি।

স্বপ্ন দীর্ঘ হয়, কিন্তু বড় হ্রস্ব এ জীবন।


রচনাটি লেখকের ‘স্বাদিত রবীন্দ্রনাথ’ বই থেকে নেয়া হয়েছে। এই বইটা রবীন্দ্রনাথকেন্দ্রী বিভিন্ন রচনার সংকলন, রচনাগুলো লেখকের পূর্বপ্রকাশিত গ্রন্থধৃত, এবং অগ্রন্থিত বা সাময়িকপত্রে প্রকাশিত, এই বইটিতে সেগুলো জায়গা করে নিয়েছে একত্রে এক-মলাটের ভিতরে। এইখানে রিপ্রিন্টেড রচনাটা ‘স্বাদিত রবীন্দ্রনাথ : হৃৎকলমের টানে’ লেখা থেকে নেয়া, গদ্যটা বইয়ের সর্বদীর্ঘ রচনা, লেখকের বিখ্যাত বই ‘হৃৎকলমের টানে’ থেকে এই গদ্যভুক্তিগুলো গ্রহণ করা হয়েছে এই বইয়ের ভিতরে, সেই গদ্যভুক্তিগুলোই শুধু যেগুলো রবীন্দ্রনাথকেন্দ্রী। ‘স্বাদিত রবীন্দ্রনাথ’ বইটা বাংলাদেশের ‘শুদ্ধস্বর’ প্রকাশনী থেকে ২০১৩ সনে বেরিয়েছিল। বর্তমান প্রকাশকালে কেবল গদ্যশীর্ষপঙক্তিটা আমরা বসায়েছি, মূল গদ্যভুক্তিগুলো শিরোনামছাড়া। — গানপার


… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you