ছোট ডুবুরি, পাতি সরালি, চড়াই ও না-পাখি || জ্যোতি পোদ্দার

ছোট ডুবুরি, পাতি সরালি, চড়াই ও না-পাখি || জ্যোতি পোদ্দার

শেয়ার করুন:

ছোট ডুবুরি

এত বড় শহরে এইটুকু জলাধার দেখে তৃষ্ণা মেটে না।
কুরশা বিলের ভারি জলে পা ডুবিয়ে বসে থেকে
ভাসমান কচুরিপানা দেখি।
পাট-জাগ-দেয়া জলের তীব্র গন্ধের মাদকতায়
আমি দুলে দুলে বেগুনি রঙের কচুরিফুলকে ডাকি।

মোটা কালো জলে কচুরিপানা ও ফুল জলের তোড়ে
সরে যেতে যেতে ছোট ডুবুরি জলের উপর মাথা তুলে
ঘাড় বেঁকে আমাকে দেখে হলদে ঠোঁটে ডাকল—
আয় আয় জলের ভাঁজে জলের তলে ডুবসাঁতার খেলি।

 

 

পাতি সরালি

পায়ের পাতাডোবা জলের মাটি নরম ও তুলতুলে।
উবু হয়ে জলমাটি হাতে তুলতে না তুলতেই
আঙুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়ে সবটুকু।

জলমাটি তুলে তুলে স্বচ্ছ জলের বিস্তারকে করে
ফেলেছি ঘোলাটে। উবু হয়ে কতবার এই আলবাঁধা
জলে হাঁটতে হাঁটতে নিজেকে দেখেছি ক্রমশ ঘোলা

জলে এক অপরিচ্ছন্ন মানুষ। পাতি সরালি তখন
আলে বসে পাখনার ভেতর মুখ গুঁজে খুঁজছে
নিজস্ব ওম। আমাকে দেখেই বুঝি জল থেকে

উঠে গেল পাতি সরালি দম্পতি? বাদামি রঙের পশম
বাতাসে উড়তে দেখে তাকাতে দেখি ছোট্ট পাতি সরালি
মা-সরালির দুই পায়ের ফাঁকে বসে খুটিয়ে খুঁটিয়ে

কেঁচো গিলে খেতে খেতে আমাকে দেখছে ভয় আর
শঙ্কায়। ইচ্ছে করছে জল ও মাটি তোলার মতো
করে উবু হয়ে পশমীর মতো ছোট্ট পাতি সরালিকে

কোলে তুলে নেই—হাতের আঁজলায় তুলে সোহাগ করি।
আমার কোষ্ঠী ভালো না। পায়ের পাতাডোবা জলে শুধু
নয় যেখানেই নামি স্বচ্ছ জল ঘোল ও ঘোলাটে হয়ে পড়ে।

 

 

চড়াই

তিনি এলেন।

দুলে উঠল ডাল।
কয়েকটি পাতা ছিল গতকালও।

অস্থির তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে পালকে
মুখ ঘষতে লাগলেন। আমাকে দেখে সরে বসলেন।
আবার দুলে উঠল পাতাহীন ডাল
শুকিয়ে গেছে রোদের দাপটে।
কালচে রঙের কঙ্কালসার হাতের মতো
বাঁকানো হাতে ক-দিন আগেও পাতার পাশে পাতা ছিল।
আর ছিল চড়াইদের ক্যাচম্যাচ।

উঠানে রোদে-মেলে-দেওয়া মুগে একটু ঠোঁট ছু্ঁয়েই
খুব নিম্নস্বরে শিস বাজানোর মতো ধ্বনি তুলে
তিনি উড়ে গেলেন পড়শীর উঠানে যজ্ঞডুমুরের ডালে।

 

 

না-পাখি

আতাগাছের বাবরি-দোলানো পাতার ঝোপে আতাকে
খুঁজতে গিয়েই চোখে পড়ল লালচে হলুদ ডেউয়ার
মতো রঙের এক পাখি পাতার ফাঁকে ফাঁকে
উড়তে উড়তে বসছে আবার বসতে বসতে উড়ছে।

ছোট্ট চোখে ভয় আর মনখারাপ বাসা বেঁধেছে বলে
কোনো ডালেই বসতে পারছে না।
নখের আঁচড়ে ডাল আঁকড়ে ধরলেও হড়কে যাচ্ছে;
পাখনা ঝাপ্টাচ্ছে আর পাশের ডালে উড়ে বসছে।

যে-ডালেই যাচ্ছে পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে
একবার দুইবার করে ভয় আর বিস্ময় চোখে
ঝুঁকে দেখছে একজন না-পাখি আতাগাছে
কী যেন খুঁজছে।


গানপার কবিতার, কবিতার গানপার

জ্যোতি পোদ্দার
শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you