সিনেমা, কাব্য, অনুবাদ ও অন্যান্য আয়রনিসমূহ || সুমন রহমান

সিনেমা, কাব্য, অনুবাদ ও অন্যান্য আয়রনিসমূহ || সুমন রহমান

আজকের দুনিয়ায় সিনেমা সবচে প্রভাববিস্তারী শিল্পমাধ্যম। ফলে, তৃতীয় বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে তার একটা প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক তৈরি হওয়া অবধারিত। একমাত্র কবিতার পক্ষেই জবরদস্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার কার্যকরী ক্রিটিক হওয়া সম্ভব। আপামর অমনোযোগের মধ্যেই সে একটি নতুন ভাষাব্যবস্থার দিকে ধাবিত হয়।

আজকের দুনিয়ায় সিনেমার পক্ষে এতটুকু অমনোযোগের সুবিধা গ্রহণ করা আর সম্ভব নয়। ফলে, সে কেবল সেলিব্রিটি উৎপাদন আর ক্ষমতাসম্পর্কের পুনরুৎপাদনই করে চলে। শিল্প হিসাবে এটাই সিনেমার ট্রাজেডি।

তবে, বাংলাদেশে, আয়রনি হলো, বেশিরভাগ কবি রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্কে যাবার কিউতে দাঁড়ায় আছেন। আর বহু সিনেনির্মাতা হৃদয়ে প্রতিরোধ আর ভাষাব্যবস্থা উদ্ভাবনের উত্তেজনা নিয়ে ভগ্নহৃদয়ে মাসালা বানাচ্ছেন।


অনুবাদ নেহাত কোনো ভাষা বা সাহিত্যের মামলা নয়। এইটা পুরাদস্তুর ক্ষমতাসম্পর্কের মামলা। আমাদের নারীবাদ নেহাত পুরুষবিদ্বেষ থেকে বেরোয়নি, এবং ব্যাপকভাবে ইসলামবিদ্বেষী থেকে গেছে পশ্চিমের অনুকরণে, যেটারে সাবা মাহমুদরা বলেন ‘জেন্ডার্ড ইসলামোফোবিয়া’। অথচ ফেমিনিজম কেবলি নারীবাদ নয়, বরং সব ধরনের প্রান্তিকীকরণের বিরূদ্ধে কথা বলবার ফ্রেমওয়ার্ক। তসলিমা নাসরিনের লড়াই ন্যায্য। কিন্তু, পরবর্তীতে, মুসলিম আইডেন্টিটিকে পশ্চিমে যেভাবে প্রান্তিকীকরণ করা হয়, অনূদিত তসলিমা নাসরিন সেই ডিসকোর্সে একটি সুন্দর নমুনা আকারে ব্যবহৃত হন। এই ফেমিনিজম হেজিমনিক।

ট্রান্সলেশন ফেস্ট নামক একটি প্রোগ্রামে সেদিন আমন্ত্রিত প্যানেলিস্ট হিসেবে এই কথাগুলো বলবার জন্য উসিলা আকারে বেছে নিয়েছিলাম সায়দিয়া গুলরূখ ও মানস চৌধুরী সম্পাদিত ‘কর্তার সংসার’ নামক বইটি। অনেক জরুরি কাজ। বাংলাদেশের নারীবাদী তৎপরতায় বইটিকে আরো গুরুতরভাবে পাঠ করা দরকার ছিল। হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ আর তসলিমা নাসরিনের লজ্জার বাইরে আমাদের নারীবাদ আজো বিকশিত হলো না!

  • ব্যানারে ব্যবহৃত ছবির শিল্পী  সত্যজিৎ রাজন

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you