নভেম্বর মনামর

নভেম্বর মনামর

শেয়ার করুন:

ইন্ট্রো

নোটন নোটন নভেম্বরগুলো
জোটন বেঁধেছে
গান্স অ্যান্ড রোজেসের গান
শুরুতে বেজেছে

একটা বাপের ব্যাটার মতো
তুমুল গিটারসোলো
সঙ্গে ড্রামিং রিদম বাসিং
হেভি রক্যানরোলো

নোটন নোটন নভেম্বরগুলো
ন্যুব্জ দিনের ধুলো
তুমুল বাজায় বিষাদমাদল
শিমুলফাটা তুলো

নোটন নোটন নভেম্বরগুলো
হয়েছে, এবার চলো!

 

নভেম্বর রাইম

তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য প্রিয়
অক্টোবরের বৃষ্টিলিরিক উইন্টার-উত্তরীয়

তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য প্রিয়
রৌদ্রনকশা ব্যাল্কোনিগ্রিল টিয়ের ক্যাটলিটিও

তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য প্রিয়
টঙ দোকানির থ্যাবড়া হাসি হৃষ্ট মফস্বলীয়

তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য প্রিয়
রোডসাইডের কারেন্টতারে পক্ষী প্রণয়ক্রিয়

তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য প্রিয়
স্বপ্নবীক্ষা জ্যামিতিবাকশো ফ্রয়েড-ইউক্লিডীয়

তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য প্রিয়
গোলাপ এবং গানের সঙ্গে ক্যান্ডি-পিনোকিয়ো

তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য প্রিয়
অক্টোবর রাইম, নভেম্বর রেইন, ডিসেম্বরের ডিয়্যু

 

নোটন নোটন নভেম্বরগুলো

তোমাকে শুনছি; হিমের তিমির ফুঁড়ে
ফুলের মতন মৃদু ফুটিতেছ তুমি
নিভু জ্যোছনার নভেম্বরনিশি জুড়ে
দেউটিগুলোও উড়িছে গগন চুমি

নত নভতলে দ্যাখো অম্বর ভরিয়া
রহিয়া রহিয়া গান গায় স্মৃতিকীট
কলার মোচার শরীরে জোনাকিহিয়া
খানিক জিরায়া যায় উড়ি’ মিটিমিট

ঘুরিয়া ঘুরিয়া অনুসন্ধানরত
কচুরিঝোপের গোড়ায় ব্যাঙাচিগুলো
তোমার আমার মতন অসম্মত
উহারাও দেখি জীবিকাধ্বস্ত নুলো

খঞ্জ পাখিটি বেলাশেষে বাড়ি ফিরে
রেখেছে হৃদয় পাখিনীর কোল ঘেঁষে
আশশ্যাওড়ায় ঘেরা পুকুরের তীরে
হেরিছে পেঁচা চাঁদটিরে অনিমেষে

বেদনার মতো সমাহিত নক্ষত্র
শক্তির শ্লোকে যেমতি রয়েছে অবনী
শিরোনামহীন তুমিও রয়েছ অত্র
শেয়ালের স্বরে অপরূপায়িত রজনী

 

নভেম্বর, আনডেইটেড

গাহি বিষণ্নতার গান
জীবনখাতায় বিষাদ যদিও নহে তেন মহীয়ান
নহে প্রিয় নহে এ-জীবন শুধু গগনভরা আনন্দ অম্লান

গাহি বিষণ্নতার গান
কুমার-কামার-তাঁতি-তস্করে একপুকুরেই সারিছে স্নেহের স্নান
নহে নহে প্রিয় এ-ভুবন শুধুই বিদ্বেষে বলীয়ান

গাহি বিষণ্নতার গান
অটম স্যোন্যাটা বাজিছে দ্যাখো দূরে ও হৃদয়ে গাছে-জলে একতান
তোমাকে চেয়েছি এটুকু সত্য এটুকুতে গরীয়ান

গাহি বিষণ্নতার গান
সংগতিসীমিত ছোট এ-তরণী, জীবন যদিও অগাধ সটান
সমুদ্র অফুরান

 

মনামর

তুমি আসছ, ক্রমশ, নভেম্বরনম্র শরীরে হে সংগীতিকা!
আসন্ন তোমার সুর উড়ছে হেমন্তপত্রালিভরা গাছে গাছে

এইখানে, এই নিশানের ন্যায় নৃত্যপঙক্তিদৃপ্ত দুপুরবেলায়
লেখা আছে লিরিকোচ্ছ্বল তোমার নাম

তুমি শীতের মতো, স্বচ্ছ ও সন্তর্পণ, অবিকল প্রাণায়াম
অতিথির মতো তুমি চিরসমাদৃতা
সাবধানে দেখতে হয় এমন কোনো দুর্লভ শিল্পকাঠাম

তুমি আসছ, এসেই গেছ, হেমন্তপথের প্রান্তে তুমি শীতের দুহিতা

 

চা, মাঘসন্ধ্যার

শীতের কুয়াশা উঠছে পেয়ালার গতর ফুঁড়ে
যেনবা ভাপাপিঠাবাষ্প ছুটছে পেয়ালা ছাড়ায়া
অ্যালিয়েনদের দেশে

পথিমধ্যে, বায়ুমণ্ডলসড়কে, এই চোখে দিয়া যায় ঝাপট
রোমন্থনঝিরিঝিরি স্মৃতিনিঝরের

স্মৃতিশীত, স্মৃতিরোদ, স্মৃতিশিশিরের শামিয়ানা
মাঝখানে একটা চা-বাগান বসে আছে দেহটুকু ঝুঁকায়া
এই প্রীতিনিঃশ্বাসনমিত ক্ষণে কেউ এসে নেবে তারে ডেকে
লেবুসুরভিত অপরাহ্নে নেমে-আসা আরণ্য প্রচ্ছায়ায়

নেই। কিচ্ছুটি ঠিক আগের মতো। শীত
ফুরায়ে এসেছে দ্যাখো চায়ের পেয়ালায়
তিনচুমুকেই নিঃশেষিত সুরম্য সংগীত

পৌষপ্রভাত। মাঘবিকেল। সমাগতা ফাল্গুনসন্ধ্যা

আমি কিন্তু রয়ে গেছি, সৃজনে হেমন্তমায়া, শীতপ্রিয়
শচীনগানের ন্যায় বিশ্রুত উদাসী

 

পর্ণমোচী ঋতু

কমলাবাকল থেকে তেজ ও সুরভি
শীতপ্রভাতের সূর্যালোকে এনেছে একতাল
লাকড়ি-শুকানো অচঞ্চল উত্তাপ

স্যুরিয়্যাল রৌদ্রাহুত অরণ্যমহাল

অপরাহ্ন লোকালয়ে এন্টারের আগে
যেয়ে একটু জোগাড় করে আনি ত্রিপ্রান্তরের খড়নাড়া
আগুন তাপানো ছাড়া মাঘরাত ঘুমায় না পাড়াগাঁয়

একদিন, অয়ি শীত, কুড়ায়েছি তোমারে কত-না আঙিনাকোণে
পুঁইলতায়, শিমের মাচানে, সকালসন্ধ্যাফুলের ঝোপে, সংলগ্ন বনে

এই কথাটি মনে রেখো : অপেক্ষায় কেটেছে দিন আমারও
পর্ণমোচী ঋতুটির নাম ধরে ডেকে ডেকে
নিভৃতিনীল ভাস্করের ন্যায় বিজনে—

কবিতায়, গানে এবং অনুরূপায়ণে

 

বনতাঁবু

তবে এ-ও অসত্য নয় যে শীত অতি সন্তরণশীলা ঋতু—
স্বতন্তরা, স্বাগতিকা, আর শরীরসংবেদী

বিস্তারিত বিবরণে প্রোক্ত ভাব অত্যল্পই সম্প্রসারকরণ সম্ভব

শীত যেমনটা সাংকেতিক, সবার কাছে এর অ্যাপিল
সমান ও অভিন্ন নয়
কেউ ভাবে শীত গোড়া থেকে চূড়া অব্দি চিত্রভাষ্য—পলায়নের;
রগরগে ফেনোমেনা—ব্যালেরিনা রাজহংসী—ভাবে কেউ কেউ

অথচ উইন্টার এলে এই-সমস্ত তত্ত্বতর্ক
লোকে মেমোরি থেকে ইরেইজ্ করে ফ্যালে
এবং স্যুয়েটারহাতা রিফ্যু করে স্মিত রোদে সকালবেলার
তারপর বেরোয় ব্যাগ হাতে বাজারের পানে, যায় রোজগারকাজে

শীত প্রকৃতই পিক্নিকঋতু, পরাভুবনাগত পরিযায়ী
হিরণ্য বনস্ফূর্তির তাঁবু

 

দৃশ্য ২০১১

পায়ে পা বাঁধায়া ঝগড়ার আয়োজন করি চলো
অজস্র পোকার গানে ভরে তুলি আমাদের রাত

আর যখন ভোর হবে
স্বস্থ বাতাস বইবে কামরাঙাগাছে
বন কাঁপায়া বাঙ দিয়া উঠবে ঝুঁটিমুর্গার ঝাঁক—

সন্ধিচুমু বিনিময় করে
দুইজনে নিদ্রা যাই শান্তিবিছানায়

 

অংশত শৈত্য

সব্জির শোভা দেখে মনে পড়ে যায়
এসেছে শীতের দিন এই বিরানায়

শিশিরের ফোঁটাগুলো টোম্যাটোর গাছে
দেখিব ফুটিয়া আছে সবুজের আঁচে

পাখির চোখের মতো সকালের রোদ
শরীরে শরীর ঘষে গাভি ও বলদ

ভোরবেলা আজানের আওয়াজের শেষে
একটি নিমের গাছ পুকুরের দেশে

একে একে নিমফুল পতনের স্বর
শোনা যায় স্পষ্টত শীতের খবর

কিছুই স্পষ্ট নয় আবছা আলোয়
পাড়ার গলির মুখে শীত সেঁটে রয়

কারেন্টখুঁটিতে ঠেস দিয়ে দ্যাখো ভোর
লতিয়ে উঠতে চায় আস্ত শহর

শীতের এমনই রূপ গোটা দিনমান
ভোরের নরম রঙে রোদঝরা গান

বড়রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে
একশলা শীত নিয়া টানো রকগানে

 

ফ্যুলস্লিভ উইন্টার

চলে যায়, মরি হায়, স্লিভলেস ঋতু!

বসন্তের আগে দ্যাখো সকলে কেমন
ধরে ফ্যালে ট্যাগোরানা রবীন্দ্রফ্যাশন
জবুথবু চরাফেরা আলখাল্লা চাপায়ে
কেউ স্যুয়েটার কেউ পশমিনা গায়ে
কারো অঙ্গে ব্যথাস্ফূর্ত রৌদ্রকার্ডিগ্যান
প্রথম প্রেমের মতো হুডির নিশান

চলে যায় হাফস্লিভ টিশার্টের দিন!

দুয়ারে দাঁড়ায়ে তব ফ্যুলস্লিভ শীত
ধানভানা থুয়ে চলো শুরু করি গীত
শিশির শিকার করে নিয়ে যেতে এসে
থেকে যাই শিমলতাটিরে ভালোবেসে
দ্যাখো সোনা আমি নই অ্যালিয়েন অচিন
পোশাকে ভারিক্কি যেন ইউরি গ্যাগারিন

তোমারও শরীরে দ্যাখো উইন্টারশোভা
পাঠ্যবইয়ের ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা

 

আননেইমড

ওই তো একটা হাসির মতন কথা
আসতেছে ধেয়ে আমাদেরই দিকে দ্রুত
ওই তো দুইটা বাঁশের পাতার মতো
পলকা হাওয়ারা আনাগোনারত অতন্দ্র অমরতা

ওই তো তোমার নাকছাবিটির আলো
কোমরকিনারে উল্কি দিতেছে উঁকি
ওই তো পথের কিনারে একটু ফুঁকি
তিনটাকা আটআনার চুরট ভালো

জোর করে এই মিলের খেলাটা বানোয়াট
ঘটনাগুলোরে ঘটে যেতে দেই নিরবধি নির্ঝঞ্ঝাট

 

শীতডাকাডাকি ২০০৯

আকুল হয়ে ডাকি তাকে আষাঢ় হয়ে ডাকি
ডেকে ডেকে রাহমানের সেই রক্তকোকিল পাখি

সে যদি হায় শুনিতে না পায় শেষের পাতার আগে
পুনরায় সেই একটাই গান বাজিবে বেহাগ রাগে

দ্বিতীয় মৃত্যু, তৃতীয় মৃত্যু, মৃত্যুর অধিক মুখ
অপর্ণা নয়, সুপর্ণা নয়, অনঙ্গ অসুখ

 

প্রাকশীত ২০১২

শীতসর পড়বার আগে দেখেছিলাম তুমি শিমের মাচা তৈয়ার করছ। অনেকটা পথ হেঁটে এবার আমি জিরিয়ে নেব বলে একটু ফুরসত সন্ধান করছি। কিন্তু অক্টোবরের শেষলায় এসে এখনও তুমি নিষ্ঠুরতমা নামের মর্তবা বাঁচায়া রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রলাপ বকবার সময় পাগলও পরিচয় দেয় নিজেরে প্রেমিকশ্রেষ্ঠ হিশেবে। এদেশে খেজুরগাছ নাই, কিংবা থাকলেও দুইয়েকটা তারা লাঠিঝোলা। তাই শীতচিহ্ন বলতে যে-দেশে লোকে বোঝে খেজুরের রস, সে-দেশের মানুষদেরে আমি ঈর্ষা করি। কিন্তু আমাদেরও আছে নদী এক সুরমা নাম্নী, ঈর্ষণীয় রসোচ্ছলা আর আটপৌরে পেখমগর্বিতা, আছে আরও জনাপাঁচেক সখাসখি তার। কয়েক কুড়ি টিলা আর কয়েক কুড়ি বিল সম্মিলিতভাবে ডেকে নামায় নেচে-নেচে-ভেসে-বেড়ানো স্বচ্ছডানা শীতপরীটিকে। এরপর তারে বসতে দেয় বনজারুলের পাতা, খেতে দেয় ঝুমকোজবার মধু, ঘুমোতে দেয় তিসিবিস্তীর্ণ পুষ্পনম্র মাঠ। তক্কে তক্কে থাকি আমি, শীত এসে পাতবে আসন তোমার শিমশোভা মাচায়।

জাহেদ আহমদ


নভেম্বর মনামর ।। জাহেদ আহমদ ।। নভেম্বর ২০২৫ গানপার


গানপার কবিতার, কবিতার গানপার
জাহেদ আহমদ রচনারাশি

শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you