দ্য রেডিয়ো রিমাইন্ডস্ অফ মাই হোম্ ফার অ্যাওয়ে …
ডেনভারের গান, ‘টেইক্ মি হোম্, কান্ট্রিরোডস্‘
সুর্মাপাহাড়ের রঙ ধরেছে মেঘগর্ভা আকাশ। গম্ভীর, ঘনমন্দ্রিত, ঘূর্ণিহীন অটল। নড়াচড়া নাই তার, বাতাস নাই হেতু, তবুও কঠিন নয়। আকাশ নরম, নাজুক, নন্দনাদ্য। দূরের পাহাড়গুলি, নিকটের টিলা, জঙ্গলের দূরাগত গন্ধবহ। বহুদিনের বৃষ্টিশেষের রইদে যেন মৌতাত বোধ হচ্ছে। যেমন হয় খাঁটি মধু হাতের ডাবুতে কিংবা জামবাটিতে ঢেলে নাকের কাছে টেনে নিলে; একটা তাত পাওয়া যায়, একটা টানটান চনমনে তেজ আসে শরীরগতরে, নাসিকার নিকটদেশে মধু নিয়ে গেলে। এখানে বনের ধারে ক্যাম্প ফেলা যায় বেলা আরেকটু পড়ে এলে। এখানে ঘাইহরিণীর ডাক শোনা যায়। এখানে বন নেই হয়তো, সুন্দরবন আছে সুন্দরবনেই তো, তবে এইখানে আছে বিভোর বনের আবছায়া ছাপ।
কয়দিন বৃষ্টি খেয়ে তাজা হয়েছে এখানকার ঘাস। মহীনের ঘোড়াগুলো জ্যোৎস্নামাখা ঘাস পাবে রাত্তিরের পাতে। এরপর বাদুড়ের নিয়োলিথিক সংগীতে স্নাত হয়ে একগাল ঘেসো হাসি হেসে ঘোড়ারা ঘুমাতে যাবে গল্পছড়ানো খড়ের জাজিমওয়ালা আস্তাবলের শয্যায়। কিন্তু ঘোড়া কি সত্যিই আছে? হ্যাঁ, রিয়্যালি রয়েছে তারা আমাদের কল্পনায়। জীবনানন্দের কবিতায় তারা আবহমান ঘাস খাচ্ছে, চরছে-ফিরছে, কেবল শীতকালে এবং চরাচর-আঁধার-করা বাদলির দিনে সেইসব ঘোড়ারা বাস্তবের ভেজা ঘাসমাঠে বেড়াইতে বেরোয়। ছাগলগুলো মুখ নুইয়ে রেলিশ করে ঘাস খাচ্ছে, কেউ কেউ শুঁকছে কেবলি বৃষ্টিস্নাত সোঁদাগন্ধা ঘাস, ব্ল্যাক্ বেঙ্গল্ গোট সকলেই। কৃষ্ণকলিকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। উড়ুক উড়ুক তারা পৌষের জ্যোৎস্নায় কিংবা ভাদ্রে-আশ্বিনে হাঁসগুলি ছাগলছানাগুলি ঘোড়াগুলি নীরবে উড়ুক। বর্ষার বাদলিতে ব্ল্যাক্ বেঙ্গল্ নেচে নেচে ঘাস শুঁকে যাক।
স্ট্রিটসাইড ফ্রুটশপগুলো ঝলমল করছে কয়েকদিনের বৃষ্টির পরে এই রৌদ্রময়দানে। হরেক ফলের পসরা সাজানো খোপ-খোপ খোলা চালার দোকানগুলো রৌদ্রগরবিত হাসিখুশি হয়ে আলো ছড়াচ্ছে চারপাশে। তরমুজের গতরে রোদ পড়ে আরও মোহনীয়া আহ্লাদি হয়েছে তরমুজগুলা। বাঙ্গিগুলো রৌদ্রপুষ্ট সুবাসে ফেটে পড়তে লেগেছে ক্রেতার নাসারন্ধ্রে। মর্তমান আর চম্পা কলার সারিবদ্ধ শোভার দিকে তাকায়ে ফের চোখ ফেরায়ে নেয়া আদৌ সহজ নয়। ক্রেতা যিনি দরদাম করছেন লাগোয়া দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে, তার শাড়ি ও এক্সেসোরিজ্ থেকে বাসনাবিভোর স্বাস্থ্য উড়ে আসছে এই নিকটদেশের সমুজদারের নয়নে, তার পায়ের গোড়ালি থেকে সোনালি ঝিলিক উঠছে রহি রহি স্প্রিঙজেল্লায়। জীবনের চারিপাশে রোদের রঙ, রোদের বাহার, রোদ্দুরের মাতনদোলা। নাগরিক নিসর্গে নেই পাখির প্রেজেন্স, তবু পাখিদের পাখার ফুর্তি চারিপাশে।
থেকে থেকেই বৃষ্টি। রিপিটেডলি রইদ। নোটিস না দিয়াই বৃষ্টি তার ঝাঁপ ফেলতেসে। ফের মেলতেসে পেখম রইদে, ফের গুটায়ে নিতেসে। এইভাবেই দিন গড়ায় রাইতের দিকে। এইভাবেই বৃষ্টিদিন, রৌদ্রক্ষণ, ষড়ঋতুর জাদুটোনা। জাদুবাস্তবতা নয়, ভাদ্রবাস্তবতা।
ভাদ্র মাসের প্রবাদ অনুসরণ করে গেলে এর বৈশিষ্ট্যটা ঠাহর করা যায়। নৌকার এই গলুইয়ে রইদ ওই গলুইয়ে মেঘঝমঝম বৃষ্টি। দিস্ ইজ্ দ্য ভাদ্র। দূরে নয় শীত আর। উইন্টার ইজ্ নট ফার বিহাইন্ড। তেরোই ভাদ্র শীতের জন্ম, প্রবাদ বলতেসে। সেহেতু শীত আর ভ্রূণ নয়, ভূমিষ্ঠ অলরেডি। পিএম স্বয়ং উদ্বিগ্ন উইন্টার নিয়া; গেইম অফ থ্রোন্সের গলায় সেই উদ্বেগ প্রকাশও পেয়েছে, উইন্টার ইজ্ কামিং, দেখলাম আখবারে। কে টেকে কে মরে এইবারকার কোভিড দোসরা ধাক্কায়, সেকেন্ড ওয়েইভে, আল্লা সহায়।
লেখা / জাহেদ আহমদ
… …
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
- লঘুগুরু - November 8, 2024
COMMENTS