ঐতিহ্যবাহী সুদৃশ্য বিদ্যাপীঠ মুরারিচাঁদ কলেজে এক দম্পতি এসেছে একটু অবকাশ যাপনের জন্য। সূর্যাস্তকাল কিংবা সন্ধ্যারাত সময়টি। মন নির্মল করা ও রাখার ক্ষেত্রে সৌন্দর্যের অনন্য সময় ও দৃশ্য এটি। যদিও একজন পর্যটক কিংবা ভ্রমণপিয়াসী মানুষের জন্য চব্বিশ ঘণ্টার সবকটি মুহূর্তই তার মতো করে মূল্যবান। আনন্দের। অথচ এইসব সুন্দর দেখার মতো, গ্রহণ করার মতো মনমগজ, রুচি এখনো কলেজশিক্ষার্থীদের তৈরি হয়নি। তারা আবার এই কলেজেরই ছাত্রলীগ নামক মহান সংগঠনের দায়িত্বে আছে। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে কেন জানি মনে হয় কলেজে কারা আসে যায়, পড়াশোনা করে এমন একটি অলিখিত দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের দিয়ে রেখেছেন। নতুবা তারা জোর করেই এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এর বলী হয় কতজন সে-পরিসংখ্যান আদতেই কী আছে! সত্যিকার পরিসংখ্যান থাকলে হয়তো শিউরে উঠতে হতো। যারা এসব টের পান তারা অক্ষম না হলে সন্তানকে দেশে ভর্তি করাতে চান না।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যায় শিক্ষাক্ষেত্র ও ধর্মালয় যেখানে বেশি মান্যতা, শৃঙ্খলা, মানবিকতা প্রদর্শিত হওয়ার কথা সেখানেই এমন বীভৎস বিকৃত প্রকাশ ধরা পড়ছে বেশি। অবশ্য এও এক আশার কথা যে অন্তত প্রকাশ তো হচ্ছে!
ক্ষোভ তো তখনই বড় আকার ধারণ করে ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পরও যখন সংশোধনের, পরিশুদ্ধির পথ তৈরি না হয়। কেবল অরাজকতা আর দুর্নীতির পথ তৈরি করে নিজেরা আত্মঘাতী হয়ে ওঠা।
শুধু কী প্রতিষ্ঠান! গ্রামে-গ্রামে পাড়ায়-মহল্লায় ঘরে-ঘরে এমন অশুভ অপকর্মের চর্চা হচ্ছে। একে আমরা স্বাভাবিক জীবনমান ধরে এগোচ্ছি। এমন অগণিত ঘটনা রোজ পেরোয়। আমরা কেবল বধির হয়ে আছি। অন্তরের যে ধ্বনি আছে তা শোনার সময় কই, দেখি ক্ষমতা আর শুনি আসুরিক শক্তির দাপট।
প্রতিদিন আমরা অপকর্ম অপরাধ ও অশুভের পূজা দিতে দিতে ফুলনৈবেদ্য আর পাহারার মতো মহত্বময় কাজের সাথে যে লোকটি নিবেদিত তাকেই কেবল অভিশপ্ত করে তুলছি। ঘরের যে লোকটি সবচেয়ে কাজের তাকে হেয় ও অযোগ্য বলায় ব্যস্ত। সত্যিকার অর্থে পাহারা দেওয়া লোক হচ্ছে দেশের জনগণ তাদের আমরা হিসেবেই আনছি না! দীর্ঘমেয়াদী পীড়ন তাই সকলকেই পেতে হচ্ছে।
ভেতরে ভেতরে অপরাধ বয়ে বেড়াতে বেড়াতে, টেনে নিতে নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে এই অপরাধই বড় হলো — দারোয়ান কী করল! প্রশ্নটা কী এমন হওয়া সঙ্গত নয় শিক্ষাক্ষেত্র, রাজনীতি, শিল্প, সংস্কৃতিক্ষেত্রকে কেন আমরা মানবিকতা চর্চার দিকে নিয়ে যেতে পারছি না? রাজনীতি কি কেবল শিক্ষায়তনের বাইরের লোকেরা করে!
কলেজের ছেলেপেলেরা কলেজেই এই কাণ্ড ঘটাল। এটি একটি আধ্যাত্মিক নগরী পবিত্র নগরী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এমন শব্দে আমরা আপ্লুত হই। এইসব জায়গা থেকে যেহেতু এমন কাণ্ড হয়েছে তার মানে সারা বাংলাদেশের চিত্রই যেন এই। অবশ্য ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে-অকাজে নানা জায়গায় যাই এসব চোখে পড়ে।
মেট্রোপলিটন সিটিতে ঘটনাটি তাই হয়তো ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হয়নি। অগণিত পরিবার এইসব সহিংসতার শিকার হয় কিংবা হবে বলে পালিয়ে বেড়ায়। দেশ ছাড়ে। আমরা তাদের ক্রন্দন বিচ্ছিন্নতা টের পাই না।
আর-দশজনের মতো ক্লাবে রেস্তোরাঁয় হোটেলে কাটাতে পারত সময়টুকু। অনেকে সে-রকম কাটায়। আবার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র, পার্ক, বনবনানিতেও কাটাতে চায় মানুষ আন্তরিক মুহূর্তগুলো। এইসব ভ্রাম্যমান ধারাবাহিকতায় তারা এসেছে প্রকৃতির কাছে। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষালয়ে।
আমরা তাদের সেই সুন্দরতম পবিত্রতাটুকু মুক্ত ঘোরাঘুরিটুকু নিতে পারিনি, দিতে পারিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কলেজের ফুল পাতা দিয়ে, নাস্তাপানি খাইয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে অসুরদের তুষ্ট করতে করতে, পূজা দিতে দিতে বড় করা হচ্ছে। কত ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকশিক্ষিকা, জনগণকে তার বলী হতে হয়েছে তা আমরা জানি না।
কতকাল এইসব দীনতা এইসব অক্ষমতা আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে কে জানে!
বিমান তালুকদার। কবি, লোকগায়ক, ব্রতচারী সমিতির অনুশীলক ও প্রশিক্ষক
… …
- ঘুম ও না-ঘুমের গদ্যলেখা || ফজলুররহমান বাবুল - June 12, 2025
- অবসাদ ও অন্যান্য || জওয়াহের হোসেন - June 11, 2025
- ছোট ছোট লেখাগুলো || যুথিকা ঋতু - June 11, 2025
COMMENTS