বাংলাদেশে এখন রাজনীতির মূল ক্যাচাল শুরু হবে ’২৪-এর চেতনা বনাম ’৭১ সালের চেতনা এই বাইনারি দিয়ে।
২০২৪ সালের চেতনার নাম দিয়ে ’৭১-এর চেতনা প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে এই দ্বন্ধ শুরু হবে। ’৭১ সালের চেতনাকে কুক্ষিগত করে একটা গোষ্ঠী যেভাবে দেশ চালাইছে ঠিক সেইভাবে আরেকটা গোষ্ঠী ’২৪-এর চেতনার ঢোল বারবার বাজাইতে থাকবে। আগামীতে ’২৪-এর গোষ্ঠীর দ্বারাও স্বৈরতন্ত্র কায়েমের সম্ভাবনা প্রবলভাব আছে।
এইক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কি হবে?
আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দুইটারেই বাংলাদেশের ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরি। আমাদের সামনে সুযোগ আছে অনেক সম্ভাবনাময় দেশ গড়ে তোলার। কিন্ত এটাও মনে করি, ১৯৭১ সালের সাথে ২০২৪ সালের তুলনা করাটা একটা অসম ব্যাপারস্যাপার। মুক্তিযুদ্ধকে কোনোকিছু দিয়ে রিপ্লেস করা সম্ভব না। আমিও সলিমুল্লাহ খানের মতো মনে করি, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কিছু বলা ঠিক নয়। আমরা স্বাধীন হয়েছি একবার, সেটা ১৯৭১ সালে। আমরা এখনো গণতন্ত্রের জন্যই লড়াই করছি। ২০২৪ সালেও মূলত গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে লড়াই করেছি।
এখানে আগামী দিনে আমার মিত্র তারাই হবে যারা ’৭১ সালের সাথে ’২৪ সালের কোনো তুলনায় যাবে না। যারা এই দুইটার পক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের মতো স্বৈরাচারী হাসিনাকেও অপরাধী মনে করে এদের সাথেই আমার পলিটিক্যাল অ্যালায়েন্স হবে।
আর যারা ’৭১ সাল নিয়ে মিনমিন করে জোরে ’২৪ সাল বলবে এদের সাথে আমি কোনো ইডিওলজিক্যাল পারপাস সার্ভ করতে যেমন যাব না তেমনি ’২৪ সাল নিয়ে মিনমিন করে ’৭১ নিয়ে জোরে আওয়ামী আওয়াজ দিবেন তাদের সাথেও যাব না।
একজন বাংলাদেশি নাগরিকের আগামী দিনের পরিচয় নির্মাণ হবে ১৯৭১ সাল এবং ২০২৪ সালের পক্ষে তার অবস্থান দিয়ে।
আপনি এর যে-কোনো একটার পক্ষের লোক মানে আপনার ভেজাল আছে। আপনি এই দুইটারে অ্যাক্নোলেজ করার পরে আপনার সাথে বাকি আলাপ। নইলে নাই।
লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার।
.
.
২
তোমরা যে-সকল আওয়ামিলীগাররা এখনো আমার ওয়ালে এসে হাসাহাসি করো, পোকিং করো তারা নিজেদের আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে বের হয়ে এই দেশে নতুন করে ডিগ্নিটি নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখো। অন্তত চেষ্টা করো।
মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে জামাত-শিবির এই ন্যারেটিভের দিন শেষ। লোকে এখন সবকিছু স্বৈরাচার দিয়েই শুরু করবে।
মাইন্ড ইট।
এতদিন জামাত-শিবিরকে যে যুদ্ধাপরাধী তকমা দিছো সেই কলঙ্কতিলক তোমাদের ললাটের লিখন হয়ে গেছে। ইতিহাসে আওয়ামিলীগ এখন দাগি আসামী। তোমাদের আজন্ম গ্লানির নাম পতন। শেখ হাসিনার পলায়ন। গণভবনে লুটপাট। ধানমণ্ডিতে আগুন। আর শেখ মুজিবের মর্মান্তিক অপমান।
সবকিছুই ডকুমেন্টেড। সোশ্যাল মিডিয়ায় সবকিছু অমোচনীয়। এই দুঃসহ স্মৃতির দঘদঘে ঘা নিয়ে এই দেশে তোমরা বেশিদিন গলাবাজি করতে পারবা না।
ইতিহাসের পুনর্লিখন হয়ে গেছে।
পারলে নিজেদের দল গোছাও। ডেডিকেটেড কর্মী আর সৎ নেতাদের দিয়ে। জয়ের মতো অপদার্থ দিয়ে কিছুই হবে না। আর পরিবারতন্ত্রের কবর এই দেশে ঘটে যাবে অচিরেই।
তারেক জিয়া অনেক ম্যাচিউরড হইছে। এইটা তার বিগত সময়ের অনেক বক্তব্যে বোঝা গিয়েছে। আওয়ামিলীগ ২০০১-২০০৬ সালের তারেক জিয়ারে গালি দিতে দিতে ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকল। কিন্তু এই সময়ে তারেক জিয়া আরো অনেক বেশি পরিণত হয়েছে, সংযত হইছে, যুক্তি-বুদ্ধিসম্পন্ন হইছে। সে বিদেশে থাকার পরেও রুহুল কবীর রিজভী আর মির্জা ফখরুল ইসলাম দলটাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাইছে। এই লেভেলের ডেডিকেশন এখন দেখানোর মতো কেউ নাই আওয়ামিলীগে। সবাই পচে গেছে একেবারে। তারেক জিয়া দলটারে সমূহ ভাঙন থেকে বারবার আটকাইছে এই রিজভী আর ফখরুলকে নেতা মেনেই।
অন্যদিকে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় এসেই পুলিশ, আমলা আর মিলিটারি দিয়ে দেশ চালাইছে। সারাদেশের ৩০০ এমপি কোনো দলীয় বা নির্বাচিত কেউ ছিল না। এরা সবাই ছিল শেখ হাসিনার নিয়োজিত লোক। কেউ কিছু বলতে চাইত না। বলার সাহস ও ছিল না। এদের বুদ্ধিজীবী হলো মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ৫ আগস্টের যে বিপ্লব তার পেছনে এক পিনাকী আর ফরহাদ মজহার যে ভূমিকা রাখছে, এদের সামনে একটা যুক্তি করার মতো ইন্টেলেকচুয়ালিটি তার নাই।
মিডিয়ার কথা আর না-ই বললাম। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নাম শুনলেই লোকে হাসে। পরপর তিনটা অবৈধ নির্বাচন নিয়ে তোমাদের কাউরেই একটা কথাও বলতে শুনিনি। শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী হবার সুযোগ তোমরাই করে দিয়েছ। সামনের দিনগুলো তোমাদের জন্য আরো ভয়ঙ্কর আর ভয়াবহ। একটার পর একটা ব্লান্ডারিং আসতেই থাকবে। পত্রিকা, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া ভর্তি হয়ে যাবে আওয়ামী কুকর্মে। গত ১৫ বছরে আওয়ামিলীগ এত এত পাপ করছে যে, এখনকার কোনো অপরাধই তাকে ছাপিয়ে যেতে পারছে না। লোকে ধানমণ্ডি বত্রিশের সামনে যারে কান ধরে উঠবস করাইছে তার সিম্প্যাথি নিতে গিয়ে দেখা গেছে সে আসলে জাবির ধর্ষণ সিন্ডিকেটের হোতা।
পরিস্থিতি আসলেই খুবই খারাপ। এই যে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতির জন্য কোটা চাইল, এরা স্রেফ বাটপার। অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই এরা এসব চাইছে। কোথাও আর তোমাদের মাথা উঁচু করে বলিষ্ঠতা দেখানোর সুযোগ নাই।
নো মার্সি ফর আওয়ামী লীগ।
এটাই আগামী দিনের চিত্র। যত দ্রুত নিজেদের ভুল অ্যাক্নোলেজ করবে ততই আত্মশুদ্ধির পথ তৈরি হবে। ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
এই দেশের মানুষ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে শুধুমাত্র কোটার দাবিতে রাস্তায় নেমে ইতিহাস বদলে ফেলছে। এইটাই তোমাদের শিক্ষা হোক।
জুলাই জেনোসাইড, লাল জুলাই : গানপার সংকলন
কাজল দাস রচনারাশি
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS