মৌখিক ধর্ষণমচ্ছব ও টিউবমোল্লারা ||  মাকসুদুল হক

মৌখিক ধর্ষণমচ্ছব ও টিউবমোল্লারা ||  মাকসুদুল হক

ইউটিউবে ওয়াজোলোজি ভাইরোলোজি নিয়ে অনেক সুড়সুড়িময় ট্রোলজি ইত্যাদি প্রমাণ করে যে অল্প ঘষা খেলেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগে কাচের মতো টুকরো টুকরো চুরমার হয়ে যাওয়া অলস বাঙালি জাতির বিনোদনের খরা — এখন রুচির দুর্ভিক্ষে পরিণত হয়েছে — যা অ্যাকচুয়ালি ১০০ ভাগ হালাল কুরুচির মহাপ্লাবন।

জাতপাত স্তর ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ বয়স নির্বিশেষে কুরুচিপূর্ণ বা পার্ভার্টেড মানুষ পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কমতি নেই। একেকজন একেক লেবাসে — তবে তাদের মূল চরিত্র এক ও অভিন্ন। তাদের কাছে তার মা, তার বোন, তার মেয়ে — সবই সুড়সুড়ি — এজতেমালের মাল — ব্যবহারের পর কলার খোসার মতো ফেলে দাও। কেইস ফিট।

সকাল বিকেল সন্ধ্যা ২৪ ঘণ্টায় এমন কোনো সময় বাদ নেই ওয়াজ নামক এই মৌখিক মহাধর্ষণের মচ্ছব ভাইরাল হচ্ছে না। তাতে অনেক মানুষ কেবল খুশিই না — রীতিমতো আসক্ত। কিছুকিছু রগরগে বর্ণনা কামসূত্রকেও হার মানাচ্ছে।

অনেক সুন্দরী রমণীগণ এই বেজন্মার দলের অনেকের উপরে আবার ক্রাশ খাচ্ছে বা হট হচ্ছে। ফেইসবুক তো আছেই — অনেক প্রাইভেট পার্টি যেখানে মদ্যপানও চলে — সেখানেও ওই একই আলাপ — “ওয়াও হুজুরটা কি বললো শুনসিস — হি ইজ সো ক্যুল অ্যান্ড সেক্সি!!”

ওয়াজধান্দাবাজেরা জেনেও জানে না যে, কোরানে বলা আছে — “হিদায়ার বিনিময়ে পয়সা নেয়া হারাম”। ওয়াজ করে যারা পয়সা দাবি করে তারা হারাম খাচ্ছে। হারাম খেয়ে শরীর তরতাজা হলেও কলব হয়ে যাচ্ছে পচা নর্দমার মতো। আর এই নর্দমার মতো পচা হৃদয় থেকে পর্নোগ্রাফি আর অ্যাবিউজ ছাড়া অন্য কোনো থট উৎপাদিত হওয়ার কথা না।

অথচ কোরানের সুরা নিসার এক নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে নারী ও পুরুষের সৃষ্টি স্রষ্টার কাছে সমান সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং এ-কারণে স্রষ্টাকে ভয় করার পাশাপাশি সেই গর্ভকেও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ এক থেকে একাধিকে পরিণত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই আয়াতের অধিকাংশ বাংলা তর্জমাতে সচেতনভাবে ‘গর্ভ (womb)’ শব্দটিকে বাদ দিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তবে এই যে হুজুরেরা জেনা জেনা বলতে বলতে মুখের থুতুকে ফেনা বানিয়ে ফেলছেন তারা কি জানেন অপর নারীদের নামে অপবাদ, কুৎসা বা নোংরা কথা বলাও জেনার পর্যায়ভুক্ত?

তারপরও তাদের খপ্পরে বুঝে বা না-বুঝে পা ফেলছে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলে — কারণ একটাই। এই হারামিপনা জায়েজ করার জন্য তা কৌশলে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে ধর্মের ঠোঙা দিয়ে। কখনোই ভুলবেন না : সেক্স এবং ধর্ম দুটোই মিডিয়াটিআরপি-র শীর্ষস্থানে রয়েছে সেই তাহানিকাল থেকে। “যতদিন পর্যন্ত আমরা সস্তায় জান্নাত কিনতে চাইব ততদিন ধর্মের পর্নোগ্রাফিক ইন্টারপ্রিটেশন বন্ধ হবে না।” — বলেছেন সুফি আহমেদ মাহফুজ। তাদের কাছে ধর্ম কোনো জাত স্তর লিঙ্গ বয়স বা অনুমতির ধার ধারে না — কারণ তাদের মজলিশগুলো সম্পূর্ণ পুরুষতান্ত্রিক। এখানে ইমান আকিদা তাহজিব তামাদ্দুনের আরেক নাম তেঁতুলতন্ত্র — যার বয়ান ও শিক্ষায় আমরা হাফেজাতুল শয়তানের প্রধান শয়তান লালাবাবার কাছ থেকে গ্রাফিক ডেসক্রিপশন সহ সেই ২০১৩ থেকেই শিক্ষিত।

এই “মৌখিক মহাধর্ষণের মচ্ছব” থেকে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত না থাকলেও — নিরাপদে ছিলাম। এখন আর সেই সুযোগ নেই। খেয়াল করেছেন কি এই ভার্চুয়াল ধর্ষণ ঠিক কবে শুরু হলো?  এদের একটাই বিনোদন ছিল — পর্নোগ্রাফি; — সেটা নিষিদ্ধ করে হালাল এসলামি পর্নোগ্রাফিক ফাইজলামি তৈরি করে দিয়া দেশ হয়েছে সয়লাব। আগে ওরা আস্তাগফিরুল্লাহ জপতে জপতে দেখত ‘ইহুদি নাসারা’ নারীর ল্যাংটা দেহ — এখন তা বন্ধ হওয়াতে তাদের বিষচোখ পড়ছে দেশি নারীদের উপর — আমাদের মা, বোন, শিশুসন্তানদের এবং — জি হা — বাচ্চা ছেলেসন্তানদের উপরেও।

তাদের ক্ষুধা না মেটাতে পারলে ভার্চুয়াল থেকে অ্যাকচুয়াল ধর্ষণের দিকেই সময় গড়াচ্ছে। দুঃখ এ-জায়গায় যে তা হচ্ছে ধর্মের দোহাই ও অপব্যবহারের মধ্য দিয়ে। এ নতুন কোনো কথা নয় — আমরা সবাই জানি। প্রতিটি মাদ্রাসাতে শিশু ধর্ষণ আর বালক বলাৎকারের ঘটনা এখন অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু কেন? এতে কি আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার কথা নয়? কিন্তু কী আশ্চর্য — আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতেও যে আঘাত লাগতে পারে বা লাগছে — তা নিয়ে একজনকেও দেখলাম না মামলা করতে। কারণ একটাই। আমরা ভয় পাই। ওই যে, “চেপে যাও, ধর্মীয় অনুভুতি – মামলা খাইয়া জেলে পচবা – দেখতাসো না অমুক-তমুকের কি অবস্থা!”

পশু-অধিকার ছাড়া যেহেতু মানব-অধিকার হয় না — তাই এ-মুহূর্তে বাংলাদেশে মানব-অধিকার হচ্ছে এই মানবরূপী পশুদের আদরযত্ন ও অনেক অনেক চুমু দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা।

অনেক হয়েছে; — এখন প্রতিরোধ করার সময় — তা না করলে হাসাহাসি তো বহু দূরের কথা আপনারা পালাবার সুয়োগ পাবেন না। এমনকি হুজুরগণও রেহাই পাবেন না। সালাত তো দূরের কথা উনাদের অতি প্রিয় ইস্তেঞ্জা কুলুক করারও সময় পাবেন না। তওবা করার ও ফুরসত মিলবে বলেও মনে হয় না; কারণ — যে-কারণে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব — সেই আইয়াম-এ-জাহালিয়ার ডিজিটালযুগে উনারা আমাদের ফের ঠেলে দিচ্ছেন। এবং আমরাও তা গিলছি আর হজম করছি — বদহজমের কথা ভাবছি না …

আপনারা আখেরাতের আরামের কথা চিন্তা করেন ঠিকই কিন্ত নিজের সন্তানের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর একটি সমাজ গঠনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। এ আমাদের দয়াল সৃষ্টিকর্তা বরদাশ্ত করবেন না। বাকিটা সময় তার নিজের সময়ে কথা বলবে।

সকলকে ভক্তি।

আদেশ আলেক সাঁই! জয় লালন! জয় গুরু!

পল্লবী, মিরপুর ২০.০২.২০২০

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you