২০১৬ জুলাইয়ের পয়লা দিনের সন্ধ্যায় ফ্যামিলি নিয়া ঈদশপিং করতে গেছি মিরপুরের একটা শপিংম্যলে। অ্যারাউন্ড রাত আটটায় ফেসবুকে একচক্কর ঢুঁ দিতে যেয়ে দেখি নিউজফিডে এক বন্ধুর পোস্ট এবং সেখানে লেখা, “গুলশান দুই নাম্বার এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। এর আশেপাশে যারা আছেন প্লিজ সাবধানে থাকেন।” খুব-একটা পাত্তা দিবার মতো সিরিয়াস কিছু মোটেও মনে হয় নাই এই সতর্কবার্তাটা।
শাহবাগ আন্দোলন চলাকালীন ২০১৩ সাল থেকে এই ধরনের অতর্কিত বন্দুকযুদ্ধ-গোলাগুলির আওয়াজ আর মুক্তচিন্তার মানুষদের উপর হামলা ও অবধারিত মৃত্যুর খবর শুনে শুনে একদম অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা। আর এই ধরনের গোলাগুলি-কোপাকুপি ২০১৩ থেকে শুরু করে পুরো ২০১৪ ও ২০১৫ সনের একটা বড় অংশ জুড়ে অবাধে চলেছে। এরপর একটা সময়ে এসে ভেবেছি সেসব বন্ধ হয়েছে শেষমেশ, ভেবেছি বাংলাদেশে বুঝি ‘শান্তি’ ফিরল অবশেষে! এই পুরা ব্যাপারটাই ছিল অদ্ভুতুড়ে, ভীতিকর ও অস্বাভাবিক, কেমন একটা সাড়সংবেদহীন অথর্ব করে রেখেছিল সবাইকে সেই দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের দিনরাত্রিগুলো। সবার জীবনে বেশকিছু শব্দের সম্ভার ততদিনে এসে যুক্ত হয়েছে, সেই শব্দসম্ভার নিয়া আমরা যার যার কাজকর্মে ফেরত গেছি; ‘জঙ্গিবাদ’, ‘জঙ্গি তৎপরতা’, ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’, ‘আস্তিক’, ‘নাস্তিক’ ইত্যাদি যেমন রোজকার শব্দভাণ্ডারে যোগ করে নিয়েছি, তেমনি ‘জিরো টলারেন্স’ ইত্যাদি বুলিগুলোও কথাবার্তায় আমরা ব্যবহার শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু দূরপরাহত তখনও ‘শান্তি’, ২০১৬ পয়লা জুলাইয়ের সেই বিপন্ন সন্ধ্যায় এইটা আমরা আবারও বুঝতে পারলাম।
হামলার আকস্মিকতা আর হিংস্র ভয়াবহতা গোড়ার দিকটায় আমাদের সবাইকেই বিমূঢ় করে দিয়েছিল। গোলাগুলি হচ্ছিল অবিরাম, কখনো থেমে থেমে, তবে কেন গোলাগুলি কিংবা ভিতরে কী হচ্ছিল কিছুই কেউ বলতে পারছিল না তখনও। ততক্ষণে কোনোমতে শপিং সেরে আমরা বাসায় ফিরে এসেছি। ফিরে এসে বসেছি টিভি খুলে খবর পেতে। এমন একটাকিছু ঘটছিল যা আমার মন বলছিল খবরে অনুপস্থিত। চোখের সামনে যা দেখছি তার আড়ালে একটাকিছু ঘটছিল যা আমরা তখন কল্পনাও করতে পারছিলাম না। আমার শুধু কু ডাকছিল মনের ভিতর। টিভিলাইভে দেখাচ্ছিল অকুস্থল। তখনও অচিহ্নিত অচেনা হামলাকারীরা গানফাইট চালিয়ে যাচ্ছিল প্যুলিসের সঙ্গে এবং সবদিক থেকেই বিব্রতকর হয়ে উঠছিল সরকারের জন্য গোটা ব্যাপারটা। প্রায় তিনঘণ্টা বা তারচেয়েও বেশি সময় লেগেছিল পরিস্থিতির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আনতে।
টিভিকর্মীদের যখন নিরাপদ জায়গায় যেতে বলা হলো এবং নিরাপত্তা-রক্ষাকারী বাহিনী যখন হোলি-আর্টিস্যান অ্যারিয়া ঘিরে নিচ্ছিল তখনই মিসাইলের মতো খবরটা আমাদের কানে এসে আঘাত করল। শোনা গেল হোলি-আর্টিস্যানের ভিতর হামলাকারীদের হাতে জিম্মি কিছু অসহায় মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিক এবং ‘অল্পকিছু স্থানীয়’ বাংলাদেশি, তখন পর্যন্ত এইটুকু শোনা যাচ্ছিল। অতটুকুই ছিল যথেষ্ট, খবরটা আন্তর্জাতিক গণ্ডিতে যাবার জন্য। সংবাদমাধ্যমে প্রভাবশালী সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা চ্যানেলগুলা তাদের ব্রেইকিং নিউজে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছড়িয়ে দেয় বিশ্বজোড়া মানুষের বোধবুদ্ধির দোরগোড়ায়। এইভাবেই বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা, আমাদের নাইন/ইলেভেন বলে কোনো ঘটনা আমরা যদি চিহ্নিত করতে চাই তবে সেটা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছাড়া আর কী হতে পারে?
সেই রাতেই আনুমানিক দশটার দিকে সিসিটিভি-ওয়াশিংটন আমার সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করে এবং বলে যে তাদের চ্যানেলে ব্রেইকিং-নিউজ চলাকালে লাইভে যুক্ত হয়ে ঘটনার ব্যাপারে আনুপূর্বিক আলোকপাত করতে। রাত দুইটায় আমি যখন ওয়াশিংটনভিত্তিক নিউজচ্যানেলটিতে যুক্ত হয়ে অ্যাটাকের আপডেট দিচ্ছিলাম তখন পর্যন্ত খুব বেশি কিছুই ছিল না জানাবার মতো। তখন পর্যন্ত আমাদের লোক্যাল সংবাদমাধ্যম ও আমার কিছু সাংবাদিক বন্ধুদের মারফতে আমি যা-কিছু জানতে পারছিলাম তা অত গুরুত্বপূর্ণ অবলোকনযোগ্য বলা যাচ্ছিল না। আদতে রেস্তোরাঁর ভিতরে কী ঘটছিল তা আমরা তখনও পর্যন্ত জানি না। তখন অব্দি দুইজন প্যুলিস্ সদস্যের নিহত হবার খবর ছাড়া আর-কোনো হতাহত অথবা হামলাকারীদের দাবিদাওয়া-মুক্তিপণের ব্যাপারে কেউ কিছুই বলতে পারছিল না। আর প্যুলিস্ সদস্য দুইজনেই নিহত হয়েছেন প্রথম দিকটায় হামলাকারীদের মুকাবিলা করতে যেয়ে একদম অপ্রস্তুত অবস্থায়। সময় যত গড়াচ্ছিল পরিস্থিতি তত ঘোলাটে, হতাশাজনক ও ভয়াল হয়ে উঠছিল।
রাত তখন সাড়ে-তিন হবে প্রায়, দ্বিতীয় জুলাই দিনের শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে, রাত জেগে অজানা আশঙ্কায় দুর্ভাবনায় আমরা ক্লান্ত। তখনই আমার এক প্রবাসী বন্ধু ভয়ঙ্কর খবরটা আমায় পাঠালেন। প্রবাসী সেই বন্ধুটি যেভাবেই হোক আইএসআইএস-এর ওয়েবসাইটে ঢুকতে পেরেছিলেন এবং সেখানেই তিনি দেখতে পান আইএসআইএসের সোল্লাস তিনশব্দের এই সংবাদ, “কার্য সম্পন্ন হয়েছে” এবং সেইসঙ্গে দেখতে পান কিছু করুণ অসহায় মানুষদেহের রক্তাক্ত বীভৎস লাশের ছবি, লাশগুলো স্যুইমিংপুলের পাশে ইতস্তত ছড়ানো। অবিশ্বাস আর অবসাদে আমার শরীর ও সমস্ত ইন্দ্রিয় অসাড় হয়ে গিয়েছিল ছবিগুলো দেখামাত্র। মনে হয় প্রায় ঘণ্টাখানেক আমি নিঃসাড় অবস্থাতেই ছিলাম যতক্ষণ-না আমার স্ত্রীর সন্ত্রস্ত ভয়ার্ত চিৎকার আমার কানে এসে সজাগ করে আমায়। “অ্যাই, প্লিজ জলদি এসো, কী বলছে এসব ইশরাত সম্পর্কে!” চেতনা ফেরে এবং আমি কী হয়েছে দেখার জন্য প্রস্তুত হই বিচলিতভাবে।
ফেসবুকে কেউ-একজন কনফার্ম করেছে পোস্ট দিয়ে যে সেদিন ইশরাত হোলি-আর্টিস্যানে গেছিল বন্ধুদের সঙ্গে এবং হামলার সময়টায় সে ভেতরেই আটকা পড়ে এবং তাঁর বেঁচে থাকবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। পোস্টে এর বেশি কিছু তখন জানা যায়নি। ফেসবুকপোস্টে পাওয়া এই খবরের সত্যতা যাচাই করতে একাধিক বন্ধুকে একের পরে এক ফোন দিতে থাকি, সেসব বন্ধুরা আমার ও ইশরাতের কমন ফ্রেন্ডস্, কিন্তু তারাও কনফার্ম করতে পারে না। তারা জানায় যে একের পর এক সবাই ইশরাতের ফোনে এসেমেস দিয়ে কল্ দিয়ে একটাও উত্তর পায়নি এখন পর্যন্ত। বন্ধুদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রেখে টেক্সট বা ফোনের রিপ্লাই না-দেবার মতো মানুষ ইশরাত নয়। এমন আচরণ ইশরাতের ক্ষেত্রে বেমানান। সে অত্যন্ত ভদ্র, অমায়িক ও সৌজন্যপরায়ণ। দুপুরবেলার দিকে সেই উৎকণ্ঠা অমোঘ সত্যে পরিণত হয়, আমরা জানতে পারি যে হোলি-আর্টিস্যানের ভিতরে আমাদের বন্ধু ইশরাত নিহত হয়েছেন। ‘লোক্যাল’ যে-দুইজন দুর্ভাগা সেদিন আমাদের সেই বিদেশি মেহমানদের সঙ্গে জঙ্গিদের বর্বরোচিত হামলায় নিহত হয়, ইশরাত তাদের মধ্যে একজন। স্মরণকথায়-শোকবার্তায় ফেসবুক সহ সমস্ত সামাজিক সংযোগমাধ্যম উপচে ওঠে এবং আমি বধির-বিপন্ন শুধু ভাবতে থাকি ইশরাতের সঙ্গে এ-জীবনে আর কোনোদিন দেখা হবে না আমার।
ইশরাতের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ২০১৩ সালের দিকটায় শাহবাগ ম্যুভমেন্ট চলাকালে ফেসবুক মারফতেই হয়। ইশরাতের যে-ব্যাপারটা আমায় আকৃষ্ট করেছিল তা হচ্ছে ফেসবুকে প্রথম পরিচয়কালে একদম অল্প গুটিকয় বাক্যে জানিয়েছিল যে সে আমার মিউজিকের ফ্যান এবং দুনিয়ার বিচিত্র আর্টকালচারের ব্যাপারে আগ্রহী ও সমুজদার। তারপর সে ‘ইন্সটিটিউট অফ এশিয়ান ক্রিয়েটিভ’ সংক্ষেপে ‘আইএসি’ নামে একটা সংগঠন গড়ে তোলে এবং আমাকে তার কাজ দেখার আমন্ত্রণ জানায়। একাধিকবার কথা দিয়েও যেতে ব্যর্থ হয়ে শেষে গুলশান-২ এলাকায় তার ইন্সটিটিউট ঘুরে আসতে সক্ষম হই একটা গ্র্যান্ড আর্ট এক্সিবিশনের সময় এবং ইশরাতের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়।
ইশরাতের উদ্যোগ ও আয়োজনে সেই এক্সিবিশনটা আমায় আকৃষ্ট করেছিল। প্রদর্শিত কাজগুলার সবই ছিল লড়াকু তরুণ ও সম্ভাবনার চিহ্ন বহনকারী শিল্পীদের সৃজন। চিক্রকলা ও ভাস্কর্য উভয় শাখারই ছিল কাজগুলা। তখনকার উল্লেখযোগ্য তরুণ চিত্রী-ভাস্করদের সঙ্গেই সে সংযোগ করে নিতে পেরেছিল এবং সব মিলিয়ে তাদের শতাধিক কাজ সেই প্রদর্শনীতে সংকুলান করা সম্ভব হয়েছিল। প্রদর্শনীতে দেশের সুশীল সমাজের উচ্চবর্গীয় লোকজন ছাড়াও রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিদেশি বিভিন্ন পর্যায়ের পদস্থ নাগরিক অনেকেই সমবেত হয়েছিলেন এবং উদ্বোধনী দিনেই প্রদর্শিত শিল্পকর্মের ষাট শতাংশ বিক্রয় হয়ে যাওয়ায় আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম ইশরাত তার ইন্সটিটিউশন নিয়া আটঘাট বেঁধেই নেমেছে এবং বাংলাদেশের শিল্পকলার উন্নয়ন ও প্রসারে সে তার পরিকল্পনায় অ্যামেচারিশের ছাপ কোথাও রাখে নাই।
সেই এক্সিবিশনে দেখেছি আমাদের তরুণ শিল্পীরা কী উচ্ছ্বাস আর আশাকরোজ্জ্বল চোখে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন চারপাশে এবং তাদের অনেকেরই জীবনের প্রথম প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ ছিল সেইটা তা-ও কথা বলে জেনেছি। কী যে আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোচ্ছিল তার দৃষ্টিপাতে তা বলে বোঝাবার নয়। জীবনের প্রথম স্বীকৃতি এবং তদুপরি শিল্পকর্ম বিক্রি হবার আত্মবিশ্বাস তো অন্যকিছুর সঙ্গেই তুলনীয় হতে পারে না। আরও বোধহয় চারটা এমন প্রদর্শনী ইশরাত আয়োজন করেছিল তার ইন্সটিটিউশন থেকে। এরপর রূঢ় জীবন ও অন্ধকার তাকে এত অল্প বয়সে থামিয়ে দেয়।
এরপরে এক বিকেলে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ইশরাত আমাকে ফোন করে বেশ হকচকিয়ে দেয়। সে তখন জানায় যে গুলশান-২ সংলগ্ন ওর ইন্সটিটিউটের পাশেই একটা ফাইভস্টার হোটেলে জ্যেষ্ঠতর পদে সে যোগ দিয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট আর্টকালচার-গুণগ্রাহী হওয়ায় ইশরাতের নিজস্ব সংগঠন ‘আইএসি’ ব্যাহত হবে না নিশ্চিত হয়েই সে চাকরিটি নিয়েছে বলে জানায়। এখন সে একটা আরও বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ চায় বলেই আমায় ফোন দিয়েছে। কী সেইটা? “ম্যাক, একটা বড়সড় কন্সার্ট আয়োজন করতে চাই। হেল্প করবেন আমায়? এই কাজটার জন্যই দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিলাম আমি।” — ইশরাত আমার জবাব জানতে চায়।
এর কিছুদিন পরেই আমি বেশকিছু মিউজিশিয়্যান বন্ধুদের ডেকে নিয়ে ইশরাতের সঙ্গে বসি তার সেই মহাপরিকল্পনায় শামিল হতে। প্ল্যান হয় বাংলাদেশে এ-যাবতকালের সবচেয়ে বড় সিঙ্গার-স্যংরাইটার হবে এই কন্সার্ট। টানা একমাসের কঠোর পরিশ্রমে সেই কন্সার্টের লজিস্টিক্স, ইভেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সহ সমস্ত পরিকল্পনা আর জোগাড়যন্ত্র হয়। কিন্তু অপ্রসন্ন ভাগ্য আমাদের, সমস্ত তোড়জোড় সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায় শেষে। পরিত্যক্ত হয় আমাদের স্বপ্নের সেই কন্সার্টপ্ল্যান। নিয়তির পরিহাস কী অদ্ভুত যে দেশে জঙ্গিদের অপতৎপরতা আশঙ্কাজনক বেড়ে যাওয়ায় সেইবার সরকার সব-ধরনের মুক্তমঞ্চ কন্সার্ট আয়োজনের উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং এভাবেই পরিত্যক্ত হয় আমাদের সেই কন্সার্টস্বপ্ন।
প্রতিভার জন্য যদি স্মরণ করতে হয় তাহলে ইশরাতের মধ্যে তা ছিল অনেক, অগণন। অতি হৃদয়সংবেদী এবং বন্ধুবৎসল মানুষ ইশরাত আখন্দ। তার ছিল অতুলনীয় জীবনোদ্দীপনা। যা-কিছু করেছে সে তার স্বল্পকলেবর জীবনে তা-সবেই নিজের অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছে। তার মধ্যে এমন এক-ধরনের গতিশীলতা ছিল যা তার সান্নিধ্যে-আসা চারপাশের সবাইকেই স্পর্শ করত। টেলকো থেকে শুরু করে ট্যুরিজম সহ অনেক রকমের পেশায় সে বিভিন্ন সময়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছিল ও সর্বত্রই তার মনীষার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিল। সর্বশেষ জার্মান একটা ফার্মে সে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান হিশেবে কর্মরত ছিল এবং ২০১৬ ফেব্রুয়ারিতে তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কাজের সম্ভাব্য সমস্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সে সোৎসাহে যেন টগবগ করছিল। এতটাই উদ্দীপিত স্বভাবের ছিল ইশরাত।
প্রবাদে বলে, “মৃত্যু আমাদের মধ্যে এমন এক হৃদয়বেদনা রেখে যায় যা আর-কেউ সারিয়ে তুলতে পারে না, আর ভালোবাসা রেখে যায় এমনই স্মৃতির চিহ্ন যা আর-কেউ চুরি করে নিয়ে যেতে কখনোই পারে না।” ভালোবাসা আর সহানুভূতির এক অনন্য মিশেলে গড়া মানুষ ইশরাত, তার সংস্পর্শে-সাহচর্যে যারাই গিয়েছে সে যে-কোনো স্তরের যে-কোনো সমাজের মানুষ হোক না কেন ইশরাতের মায়া ও মমতা তার অবশ্যই জুটেছে। ভালোবাসা, মায়া, মানবিক মমতা আর সহানুভূতি … এবং সঙ্গে বন্ধুত্ব ও বন্ধুদের প্রতি বিশ্বাস … এই উপাদানগুলাই ইশরাত আখন্দ নামের ব্যক্তির গোটা ব্যক্তিত্বটা নির্মাণ করেছিল।
২০১৬-র ভয়াল সেই দিনটির পর থেকে দুনিয়ায় অনুপস্থিত ইশরাত আখন্দ আমার কাছে আজকের উদীয়মান বাংলাদেশী নারীর আদর্শ প্রতিমূর্তি। একাকী, নির্ভয়, নিঃশঙ্ক, অনাপোস ও অপ্রতিহত এক মানুষ তার জীবনের শেষ দিনটি অব্দি। এবং, সত্যি বলতে, এই গল্পটি আমাদের সময়ের এক সত্যিকারের নায়িকার গল্প। শান্তিতে ঘুমাও তুমি, ইশরাত, প্রিয় বন্ধু আমার!
লিঙ্ক ১ ।। সিসিটিভি-ওয়াশিংটন চ্যানেলে ম্যাকের ইন্টার্ভিয়্যু / পর্ব ১
লিঙ্ক ২ ।। সিসিটিভি-ওয়াশিংটন চ্যানেলে ম্যাকের ইন্টার্ভিয়্যু / পর্ব ২
ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ / জাহেদ আহমদ
- Are we ready for Khilafa E Bangal? || Mac Haque - September 5, 2024
- সিজনাল মায়াকান্না ও আমাদের প্রতিবাদের ফ্যাশনেবল কালচার || মাকসুদুল হক - October 22, 2021
- স্মর্তব্য ১৭৭১ || মাকসুদুল হক - October 20, 2021
COMMENTS