ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে দেখেছি, আমরা যারা নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা একেবারেই অজপাড়াগাঁ কিংবা জেলাশহর হতে উঠে এসেছি, তাদের সাথে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের উচ্চবিত্ত সমাজের ছেলেপেলেদের রুচিগত তফাৎ বেশ চোখে পড়ার মতন। জীবনযাপনের নানান অনুষঙ্গে সেইসব পার্থক্য বিদ্যমান থাকলেও তা নিয়ে কথা উঠাচ্ছি না। কথা বলতে চাচ্ছি, আমরা যখন জেমস্ কিংবা অর্ণবের গানের প্রতি মোহাসক্ত, তখন তাদের দেখেছি হার্ডরক বা ডেথমেটালে বুঁদ। দেখেছি তারা ইউরোপিয়ান কিংবা আমেরিকান বিভিন্ন নামীদামী ব্যান্ডের বীভৎস ড্রামস কিম্বা মেটালের শব্দের ভিতর বসে, তুমুল সুখে ঢেঁকুর উঠাচ্ছে। আমাদের মধ্যে যাদের নতুন কিছুতে অভ্যস্ত হওয়া ছিল সময়ের বিষয়, তারা সেই দলে যোগ দিয়েছিল। তাদের কাছ হতেই প্রথম জেনেছিলাম, সাইকো ম্যুভির কথা। হলে, বৃহস্পতিবারের রাত জেগে, হরর ম্যুভি বা সাইকো ম্যুভি দেখার হিড়িক চলত। এমনি এক ম্যুভি — ‘স্য’ — মানে করাত — দেখার পর এক বন্ধু প্রস্রাব করতে গিয়ে, রাত দুইটায়, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। সাথে পৈতৃক মাথাটাও ফেটেছিল তার, যদ্দুর মনে পড়ে।
এখন কথা হচ্ছে অন্য জায়গায়; ইদানীং দেখছি, বিভিন্ন টিভিতে, এইসব সাইকো ম্যুভির আদলে, বিভিন্ন রঙেচঙে ঢেকে, ক্যামেরার অদ্ভুত ক্যারিশমায়, ইংরেজি গানের ব্যাকগ্রাউন্ডে, একপ্রকার ভয়ানক নতুনতর ভঙ্গিতে, ফলন হচ্ছে কেবলি মানসিক অসুখের। নৈসঙ্গের। খুনের। রক্তের। ওয়াইল্ড এক্সপেরিয়েন্সের। সিরিয়াল কিলিঙের মতন জঘন্য আরো অনেককিছুর। যদি পারত তাহলে হয়তো এইসব সোনাফলা কৃষকেরা ‘স্য’ বা অন্যান্য সাইকো ম্যুভির রিমিকই বানিয়ে ফেলত। আহা কৃষিজীবী প্রতিভা!
এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, যেহেতু ভিজ্যুয়াল মিডিয়া বা নাটক-সিনেমা, — আমরা জানি, — কোনোরকম দূরত্ব ছাড়াই, সরাসরি, সমাজের বিভিন্ন মানুষের সাথে সংযোগ ঘটায়, সেই হেতু এই নাটকগুলোকে আমরা কীভাবে নেব?
এই প্রশ্নটা রাখছি বন্ধুস্থানীয় তরুণ ফিল্মমেকার, কবি ও সাহিত্যিকদের কাছে।
০২
তার আগে, সাফাই হিসাবে বলতে চাই, যদি আপনাদের কাছে মনে হয় আমার এ প্রশ্নটি কেবলি নিম্ন-মধ্যবিত্তের রক্ষণশীল আহাজারি, সেটা ধরিয়ে দিলেও আমি খুব খুশি হব।
০৩
যে-নাটকগুলো দেখে এ প্রশ্ন, সেগুলোর নাম ইচ্ছে করেই আমি নেব না। কেননা গত কয়েক বছরে এই চর্চা বহু হয়েছে। শুধু গত দুয়েকদিনে দেখা তিনটি নাটকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ কি? তবে, নাটকগুলি দেখে মনে হয়েছে, আগে নাটকের কাহিনি আসত সমাজ হতে। আর এখন নাটক হতে কাহিনি বা ভাবনাগুলো যাচ্ছে সমাজের ভিতরে। আর সমাজের যারা আর্বান জীবন অথবা যাপনে আগ্রহী, তারা হয়তো ভোগবাদের এই বিকৃত মন্ত্রগুলোকে হজমও করবেন। চর্চাও করবেন। ভয়টা এদের নিয়েই। তাই আজ এ প্রশ্নটা তুলছি।
নভেম্বর ২০১১
… …
- শহীদ কাদরীর দেশে || বিজয় আহমেদ - April 13, 2025
- ঈদ : সাউন্ডবক্সময় ফিতাক্যাসেটের, প্রেম-না-পাওয়া হতাশ রাত্রিদিনের || বিজয় আহমেদ - April 3, 2025
- গান শুনি ৩ : রোজালিনের গল্প || বিজয় আহমেদ - March 22, 2025
COMMENTS