অসীমের স্পন্দ

অসীমের স্পন্দ

পকেটে একটা পাথর নিয়া বালক খামখেয়ালে এক বিকেলবেলায় খেলাশেষে যে-কোনো কমন্ দিনের ন্যায় ফেরে বাড়ি। ফিরে সান্ধ্যাহ্নিক সেরেটেরে অনিচ্ছ ঢুলে ঢুলে টেবিলে গ্যাঁট হয়ে বসে ইশকুলের পড়া তৈয়ার করে, এরপর ইহলোকে একমাত্র অলৌকিক বলিয়া গ্রাহ্য জননীর হাতে বেড়ে-দেয়া রাতের বর্তনে মায়ার সালুন দিয়া ভাত খায়, এক-সময় সারাদিনের দস্যিগিরি নিয়া মায়ের জেরায় এবং অপার্থিব অনুনয়মাখা মাতৃস্নেহসিক্ত বকুনি খেতে খেতে চাঁদের তরুণীর চর্কাসুতো গণনায় মন দেয়। বালক ঘুম যায়। বালিশের পাশে সেই পাথরটাও সঙ্গে নিদ্রা যায়। সিন্ডারেলার ন্যায়। বালক ঘুম হইতে জাগে। পাথরটাও ঘুমোত্থিত বালকের পকেটে ঢোকে। বালক ইশকুলে যায়। পাথরও। বয়স বাড়তে থাকে বালকের। পাথরেরও। উভয়েরই গায়ে গত্তি লাগে। একদা পাথরটি ছিল নুড়ি, দিনে দিনে হয় বোল্ডার। বালক এবং পাথর উভয়ে একটা সময় পর্যন্ত পরস্পর পাল্লা দিয়া গায়েগতরে বাড়ে। এক-সময় বালকের বৃদ্ধি স্তিমিত হতে হতে থেমে যায়। কিন্তু পাথরটা থাকে বর্ধিষ্ণু। গতি বৃদ্ধি পায় পাথরের বহরগতরস্ফীতির। পকেটে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না আগে থেকেই, বালক অগত্যা পাথরটা হাতে নিয়া যাতায়াত করত নগরসরণি দিয়া, কিছুদিনের মধ্যেই পাথর বুকে চেপে বালক তার গার্লফ্রেন্ড ও গণসংযোগ সহ সমস্ত দুনিয়াবি কাজকামে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এক-সময় পাথর কান্ধে ওঠে, এক-সময় কান্ধেও নেয়া যায় না যখন — পাথর মাথায় চাপাইয়া বালক চরে ফেরে এখানে-ওখানে। একদিন দুর্বহ পাথরেরই ভারে বক্ষশ্বাস বিকল হইয়া বালক চিরনিদ্রা যায়। শান্তি চিকচিক করছিল চোখে, চিরনিদ্রাপ্রাক্কালে, এমন তৃপ্তিনিদ্রা সাধারণ্যে দেখা যায় না। বালক থামিয়া যায়, জৈবনিক নিয়মে এই থামা, পাথর কিন্তু থামে না। আর ততদিনে বালক প্রৌঢ় হয়ে গেছিল, বলা বাহুল্য, প্রস্তরের কিন্তু প্রৌঢ়তা নাই। সীমার মধ্যে আটকা মানুষের সারাটিজীবন আমাদের দেখা হয়ে যায়, সীমাহীন পাথরের জীবনচক্রটা আবহমান আমাদের শুধু অনবলোকিত রয়ে যায়। দেখা হয় না, যদিও চক্ষুযুগল মেলিয়াই রাখি।

ঠিক আমাদের বানানো নয়, এই কিচ্ছাটা আমাদেরে শুনিয়েছেন অসীম দাস (Asim Das)। ছোটবেলায় একটা নাটক দেখেছিলেন তিনি, বিটিভি প্রচারিত মঞ্চনাটকের স্টুডিয়োরেকর্ড বোধহয়, ছিলেন তখন ইশকুলবালক তিনিও। সম্ভবত ইবসেনের নাটকের বাংলা অ্যাডাপ্টেশন, সাঈদ আহমেদ তখন বিটিভিতে ‘বিশ্বনাটক’ নামে একটা সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক অনুষ্ঠান করতেন, ওই বয়সে খেয়াল করার কথা না নাটকনাম বা নাট্যকারের ঠিকুজি। কিন্তু মনে আছে একটা পাথর, একটা আশ্চর্য পাথর, ওই বয়সে ব্যাপারটা খানিক উয়্যিয়ার্ড মনে হলেও বড়বেলায় পাথরটা আলবৎ চিনতে পেরেছেন বলিয়া দাবি করেন অসীম। কথা বলছিলাম তার সঙ্গে গান নিয়া, গান ও গিটার শোনার পানফোকরে, পানীয়ও বটে হেইনরিক ইবসেনেরই প্রতিবেশীদেশের ছিল। সহসা পাথর উদিত হয় গান ও পানের মাঝখান দিয়া।

Asim Dasনা, আদৌ সহসা না, পাথর অনিবার্যই ছিল। যদি আমরা এতক্ষণে জেনে যেতে পারি যে এইটা পাথরের মেটাফোরে প্রেম ও প্যাশনের প্রতিস্থাপনা। ভালোবাসা আর অনির্বচনীয় প্রণয়ারাধনার চলচ্চিত্র। সফল সমস্ত রূপক, মেটাফোর, আর অ্যালিগোরির গল্পগুলোতে ম্যাজিক এইখানেই তো যে ব্যাপারটা দাগ রাখিয়া যায়। বিয়ন্ড বোঝাবুঝি ব্যাপারটা ভায়ব্র্যাশনের ন্যায় ট্র্যান্সমিটেড হয় মেমোরিকার্ডে। এই কিচ্ছাশ্রোতার ক্ষেত্রেও সম্ভবত তা-ই হয়েছে। ব্যবসাটা ভালোবাসার, প্যাশনের, প্রণয়সঞ্জাত পরিণয়াবদ্ধ হবার। সংগীত, সাহিত্য, কলাবৃত্তির ব্যাপারটা নাটকের সেই পাথরটির মতো। কোনোকিছু সৃজনের ব্যাপারটা বালকেরই সারল্যে, খেলাচ্ছলে, খেয়ালের বশে, একটা পাথরনুড়ি শিথানে নিয়া রাত্রিনিদ্রা আর পকেটে নিয়া দিবাজাগৃতির মতো উন্মাদনাকারিক্রম। প্রোফেশন্যালিজম দিয়া নয়, অ্যামেচারিশ চমকচিহ্ন দিয়াও নয়, প্যাশনেইট সুরপরিব্রাজকদের বিচার হয় আলগ তরিকায়। এরা সাহিত্যের, সৃজনের, সংগীতের, শিল্পকলার এলাকাটা বাড়ায়ে চলেন এমনকি নিজেরও অজান্তে। টের পাই আমরা যারা চারপাশের সংসারে খেয়াল করি সিসিফাসের ধ্যানে একটা পাথরের ভার পালকেরই মতো পল্কা জ্ঞান করে একটি জীবন গইয়ে দ্যায় প্যাশনেইট পাগলেরা। তারা আঁকে, লেখে, গান বাঁধে, গায় এবং গর্জনও করে যেখানে দুঃশাসন। দুনিয়াটা আজও বসবাসযোগ্য রয়েছে এদেরই জন্য।

অসীম দাস গান বাঁধেন। বাগগেয়কার বলে যে-জিনিশটা বাংলায় জ্ঞাপিত, অসীম দাস তা-ই। লিরিক লেখেন নিজের গানের, সুর চড়ান সেই লিরিকে, সংগীতের যোজনায় নিজেই গিটার কোলে একটু একটু করে অভিপ্রেত মোকামটা হাতড়ায়ে ফেরেন, মোকাম পেয়েও যান বলিয়া আমাদের মনে হয়েছে তার কয়েকটা গানের স্বকণ্ঠ উপস্থাপন শুনে। এখন পর্যন্ত অসীম বন্ধুবৃত্তেই নিজের গানটা গাইছেন। বন্ধুরা তালিয়া বাজাবে, এমনটা আশাও অসীম করেন না। ফ্যাক্ট এ-ই যে, তালিয়া হইতে দূরেই রইতে চান তিনি সো-ফার। গানবাজনাটাকে অসীম যেহেতু রোজগারের ক্ষেত্র করে তোলেন নাই, সেই ইচ্ছা বা সম্ভাবনাও নাই, কাজেই ক্রিটিকের বা পাঠকের অ্যাক্লেইমের মুখাপেক্ষীও নন তিনি। নিজের আনন্দের জন্যই মিউজিক করেন তাহলে? এই প্রশ্নের উত্তরে একটা আবছা হাসিই দেখা যায়, পানরঞ্জিত সংগীতরসিকের মুখাবয়বে, নিঃশব্দ। বুঝে নিতে হয়, নিশি-পাওয়া লোক আর পাথরে-পাওয়া বালকের হিসাবটা আনন্দ-নিরানন্দের জ্যামিতিক জাগতিকতার সঙ্গে বেমানান।

নো, কোনোই হিসাব কষতে বসি নাই আমরা; গান শুনতে বসেছি। কিছুটা বেইমানিও হয় পানের অনুল্লেখে। এ এক পরিতাপ যে, এদেশে গান আর পান বহুবিধ ওছিলার ফোকর দিয়া সারতে হয়। এই সিটিঙে যেমন গানের ওছিলা হিশেবে মজুদ ছিল কিঞ্চিৎ পান, প্রণয়স্মৃতিচারণ, মাতৃশোক ও সন্তানবাৎসল্যের সুখ। মুখ-দেখা-যায়-না আন্ধাইরে কথা আর গানের ছাড়া-ছাড়া লাইনের ভিতর দিয়া আরও উজ্জ্বলতর হয় বিমূর্ত মুখটাই। নিখোঁজ স্বজনের মুখ, মমতা, হাসিবিকিরিত চোখগুচ্ছ। অসীমের গান ও গিটারধ্বনি ফিরাইয়া আনে সেই ভোকাট্টা ভাসান বাতাসের গুড্ডিদিনগুলো।

সংগীতই পারে এই ফিরাইয়া আনার কাজটুকু করতে সবচেয়ে ভালো। অথবা পারে কবিতাও, গল্পও, উপন্যাসও, ম্যুভিও। তবে যেভাবে সংগীত, সেভাবে আর-কেউ নয়। সে যেন অদ্বিতীয়। অসীমের ডাক তো সংগীতেই শুনতে পাওয়া যায়। মিউজিক ইটসেল্ফ ইনফিনিটি। মিউজিকে এই ইনফিনিটির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, হামেশা পাই আমরা নানাবিধ মুহূর্তে, কেউ খেয়াল করি কিংবা থাকি বেখেয়াল কখনো। অসীমের স্পন্দ সংগীতবাহিত হয়েই আমাদের অস্তিত্ব উদযাপনযোগ্য করে তোলে। এই স্পন্দ সংগীতে যেমন থাকে, লিরিকেও থাকে কখনো-কখনো, এবং কখনো কুল্লে একটামাত্র শব্দেও ব্রহ্ম আস্বাদন করা যায় বৈকি। বিশেষত কথারিক্ত সংগীতে, গীতাখ্যনিরপেক্ষ সংগীতে, এই ইনফিনিটির নিত্য আসাযাওয়া। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক বলি আমরা, বা ধ্রুপদ বলি, বা পাশ্চাত্য অপেরা সিঙ্গিং ইত্যাদি ইনফিনিটির ইমেইজারি নিয়া হাতছানি দিতে থাকে শ্রোতামাত্রেরে। গান, যত উপেক্ষণীয় শুনতে মনে হোক না কেন, উৎকর্ণ শুনে গেলেই ইনফিনিটির ইকো ধরা পড়ে। এইটা ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তদ্রুপ কীর্তনে, তদ্রুপ বাউলা গানে বা আধুনিক বাংলায় এবং অবশ্যই ব্যান্ডগানের ক্ষেত্রেও সমান সত্য।

অসীমের গান শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, মঞ্চ কল্পনায় রেখে লিরিক লেখেন নাই বলেই নিশ্চয় তার লিরিকগুলো সহজেই পৃথক হয়ে এমনটা বাজিতেছে কানে। এতই মিনিম্যালিস্টিক মিউজিক অ্যাপ্রোচ, তবু মনে হচ্ছিল যেন ভুবনজুড়ে যেখানে-যা বাজবার কথা বাদ্যিবাজনা তা-সবই সমানুপাতে যেতেছে বেজে বেজে। রেন্ডিশন, সংগীতযোজন, সুরসংগতি ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়েই অসীমের গানবৈঠকীটি ছিল মর্মদ্রাবী। কিছুটা কারণবারির প্রভাবেও মর্ম দ্রবীভূত থাকা ন্যাচারালই ছিল। অসীমের ভোয়েস কোয়ালিটিও উল্লেখ করার মতো। দোচুয়ানিতীক্ষ্ণ, কোমল ও কিন্নর, মৃদু হয়েও দৃপ্ত। সবচেয়ে বড় কথা, হার্মোনাইজড। গিটারের সঙ্গে একদম হার্মোনাইজড গলা হাজারে একটা পাওয়া যায়, দুইটা কদাচিৎ, অসীমের গিটারবাদন ও গলার ডিস্টিলড টিউন শুনতে শুনতে এই কথাকাকলির উদয় হয়েছিল সে-রাতে।

Asim Dasএমনিতে প্ল্যান নাই গানবাজনা নিয়া, জানা গেল অসীমের গিটারটিউনিঙের ফাঁকে ফাঁকে খুচরা আলাপচারিতায়। গিটারটা তালিম নিতে শুরু করেছিলেন প্রবেশিকাবান্ধবীদের নজরটা খানিক নিজের দিকে টেনে নেবার মতলব থেকে, এবং ওই প্রাথমিকতার পরে তালিমটাও সম্পূর্ণ রপ্ত করেন নাই আর, এহেন সবিনয় স্বীকারোক্তির সারল্য অসীমের মিউজিকডেলিভারি নিয়া আমাদেরে বিভ্রান্ত করবে না নিশ্চয়। কিন্তু উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছিল কি না, বান্ধবীভোলানো মতলব হাসিল হয়েছিল কি ইন্টার্মিডিয়েইট-উড়ুক্কু ওই বয়সটায় — এহেন সকৌতূহল প্রশ্নের যে-কৌতুকী রিপ্লাই দিয়াছিলেন শিল্পী, উহ্য থাক সেসব। সেন্সর্ড থাক আরও বাক্যাবলি কিছু। পরের প্যারায় যাওয়া যাক।

রাজনগরের বনটিলাবেষ্টিত বিলবাড়ি ভিটামাটি হলেও অসীম শহরেই বর্ন অ্যান্ড ব্রট-আপ। বিদ্যায়তনিক শিক্ষাদীক্ষাও সমাপন করেছেন সময়মতো, যদিও অসীম মনে করেন বিদ্যালয়স্নাতক হওয়াটা আদৌ গুমর করার কিছু না, অসীম হ্যাজ বিন টট ইন দ্য লেইনস্ অ্যান্ড বাইলেইনস্ অফ দ্য গ্রেইট অ্যান্ড অ্যাইনশিয়েন্ট সিটি শ্রীহাট্টা, আধুনিক সিলেটেই দ্বিচক্রযানে প্যাডেল মেরে একটা প্রাকপৌরাণিক শ্রীহট্ট খুঁজে বেড়ান অসীম রোজগারধান্দার অবসরে রোজ সন্ধ্যায়। কিছুটা পানাহারও করেন মনের মানুষ খুঁজেমেগে, মাংশাসী, বেজায় আগ্রহ উদ্ভিদে এবং বিশেষভাবেই ঘাসগাছড়ায়।

পার্সোন্যাল ডিটেইলস বেশি জিগ্যেশ করা যায় নাই। পিতৃদেব গুণেন্দু লাল দাস, মাতৃদেবী কল্পনা রানী দাস; অসীম দাস, অস্বাভাবিক নয়, অত্যন্ত মাতৃঅন্তঃপ্রাণ। বিয়াশাদি করে এরই মধ্যে থিতু হয়েছেন। অসীমেরা তিন ভাই। বোন নাই। স্ত্রী এক। সন্তান এক। সন্তানের ভিতর দিয়া আপন শৈশব দেখে দেখে এখন সময়টা আশ্চর্য উদ্ভাসে কেটে যেতেছে বলিয়া জানাইলেন অসীম। মানুষ যে জাতিস্মর, পূর্বজন্মের স্মৃতি ফিরাইয়া আনতে পারে মানুষ, এইটা ভালো বোঝা যায় প্যারেন্টিঙের দিনগুলোয়।

এইখানে আমরা পাঁচটা গান শুনব অসীমের। অবশ্য ওই-অর্থে শ্রবণব্যবস্থা আমরা রাখতে পারছি না গানগুলোর সঙ্গে, কেবল পঙক্তিনিচয় দেখতে পাবো, কেবল পড়তে পারব গানগুলো। গল্পভাঙা জাম্পকাট পঙক্তিগুলো অসংখ্য গল্পেরই আদল ফোটায় আমাদের সামনে। এই গুণটা বাংলাদেশের ব্যান্ডগানের সুবাদে আবহমান বাংলায় দেদীপ্যমান হয়েছে দিনে দিনে যে, আপাত-পারম্পর্যহীন পঙক্তিনিচয় যে-বিমূর্ততা সামনে রাখে সেইটা দিয়া যার-যার গল্পটা সাজায়ে নিতে পারা যায়। বিমূর্ততা হাজার মূর্তির মা। কাজেই অসীমের গীতাখ্য আমাদেরে সেই বিমূর্ত গল্পগগনেই বিহার করায়ে নেবে সন্দেহ নাই। নিচের লিরিকপঞ্চকে দেখতে পাবো কেমন করে একাঙ্গে খেলা করে যায় বাংলা গানবাদ্য, জন্মান্ধ প্রণয়পাথর ও স্পন্দিত অসীম।

_____

নির্বাচিত গানগুচ্ছ :: অসীম দাস

জলছবি ।। মধুচন্দ্রিমা ।। নিষ্প্রভ নিরাশায় আশারবির স্তোত্র ।। অসময়গান ।। তফাৎ থাকো
কথা, সুর, সংগীত ও কণ্ঠ : অসীম দাস
গানপার প্রকাশ ২০১৮
_____

Asim Das

 

জলছবি

বাতাসে কান পেতে কানটুপি পরে আছে মানুষ
সাতরঙা তুলিতে মনে মনে আঁকা কথা ধরে আছে মানুষ
ভাঙতে ভাঙতে ক্ষুদ্র হতে হতে ক্ষুদ্রতা নিয়ে আছে মানুষ
যোগাতে যোগাতে বৃহৎ হতে হতে অহমিকা ধরে আছে মানুষ

ছবিতে জল ঢেলে জলছবি ঘিরে দেখে মানুষ
মৌসুমী ফেরিওলা যা-ই বেচে তা-ই কেনে মানুষ

সবকিছু জুড়ে আছে মানুষ
সবকিছু নিয়ে আছে মানুষ
সবকিছু ঘিরে আছে মানুষ

শুধু মানুষকে ঘিরে নেই মানুষ

মধুচন্দ্রিমা

ফুলেরা কথা বলে না
কথা বলে যায় মন
সেই মনের বাসনা ফুটে
ফুল হলো হনন

মৌমাছিরা কথা বলে না
কথা বলে তার ডানা
সেই ডানার কামনা কেটে
প্রেম হলো বুনন

তুমি বুঝে না-বুঝে
যাচ্ছ আঁকাবাঁকা পথে
ঘুরছ এ-বাড়ি ও-বাড়ি
যাচ্ছ সোজা পাতালপুরী

শুধু একবার যাপিয়া যাও মধুচন্দ্রিমা

ও পাষাণ বিবাগী
এ-প্রেমের সিন্ধুতে
মনের বিন্দু মিলাইয়া যাও

নিষ্প্রভ নিরাশায় আশারবির স্তোত্র

বুঝে গেছো সব সময়ের দাবি
দেয়ালে টাঙানো মানুষের ছবি
সততার ছাঁচে আঁকা

বুঝে গেছো নদনদীর মোহনা
বাতাসে টাঙানো সব শামিয়ানা
দেশের নামে সাঁটা

ভেবে গেছো এই মায়াময় ভূমি
জলাধার পেলে চলে যাবে দূর
দূরে দূরে একা

তবু চেয়ে দেখো
সব চোখের চাহনি
তোমার চোখেতে মাখা

ভুলে গিয়ে
সব অভিমান
দ্যাখো অভিমানীটাই বোকা

বুঝে গেছো সব ভুলগুলি ভুল নয়
ফুল মানেই তো পরাগায়ন নয়
কিছুটা তো চাওয়া থাকেই

বুঝে গেছো ওই বাঁকা চাঁদ সব নয়
তারপরেও তো মিটিমিটি জ্বলে রয়
কিছুটা তো আশা রবেই

অসময়গান

ফাল্গুনে বৃষ্টি অসময়ে গান
বসন্তের সৃষ্টি তোমার অভিমান
অসময়গানে কেন প্রাণ থাকে না
আমাতে তোমার কেন মন বসে না

হোক রোদেলা কি মেঘলা
হই তুমি-আমি একলা
শুধু গানের টানেই
ফিরে আসা বারবার

ফাল্গুনে বৃষ্টি অসময়ে গান
বসন্তের সৃষ্টি তোমার অভিমান
অসময়গানে কেন প্রাণ থাকে না
আমাতে তোমার কেন মন বসে না

সেই সেই-সে ঝরাদিন
হোক অপলক অমলিন
শুধু তোমার হাতটি ধরে
বসে থাকা

ফাল্গুনে বৃষ্টি অসময়ে গান
বসন্তের সৃষ্টি তোমার অভিমান
অসময়গানে কেন প্রাণ থাকে না
আমাতে তোমার কেন মন বসে না …

তফাৎ থাকো

অস্থির কেন হও
নয়নে নয়নে থাকো
রঙ দিলে ঢঙ যদি সাজো
তফাৎ তফাৎ থাকো

ফুল ফুটিলে
বাগানে বাগানে থাকো
দাম দিয়ে কেনো যদি মহুয়ার মদ
তবে তফাৎ তফাৎ থাকো

দূরত্বসাধনায়
দূরে দূরে কেন থাকো
কাছে এলে পাও যদি বেদনা
তবে তফাৎ তফাৎ থাকো

তফাৎ তফাৎ থাকো
তফাৎ তফাৎ থাকো …

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you