প্রাক্তন পত্নীর প্রযত্নে এক পণ্ডিতের প্রতিকৃতি || আহমদ মিনহাজ

প্রাক্তন পত্নীর প্রযত্নে এক পণ্ডিতের প্রতিকৃতি || আহমদ মিনহাজ

শেখ তাসলিমা মুন বিরচিত যদ্যপি আমার গুরু পতি  বইয়ের চমৎকার দিক বোধ করি এই, আতিশয্য ছাড়া নিজের স্ট্রাগলের গল্পটি পাঠককে তিনি বলতে পেরেছেন। প্রতিবন্ধী শিশুকে একলা বড়ো করার দায় কাঁধে নিয়ে প্রথম পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের পালা চুকেছিল। সিঙ্গেল প্যারেন্টের ভূমিকায় জীবনের কঠিন পর্ব পার করার সময় দ্বিতীয় পুরুষের প্রবেশ ঘটে জীবনে। প্রবাসে টিকে থাকার জঙ্গ তো ছিলই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল শিশু হৃদমের বাবা ও মায়ের যৌথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার চাপ। ভরসা করা যায় এমন কাউকে মুন হয়তো মনে-মনে খুঁজছিলেন। পুরুষটি অবশেষে তার জীবনে দেখা দিলেন। পাঠকের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে মুন লিখছেন :

ভদ্রলোক তিনি অত্যন্ত মেধাবী। ব্রিলিয়ান্ট। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি রেজাল্ট তার গ্লোরিয়াস। বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হন সবসময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকর্ড নম্বর পাওয়া এবং গোল্ড মেডেল পেয়ে পাশ করা ছাত্র। যে ক’জন অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষক দেশ পেয়েছে তিনি তাদের একজন। কিন্তু একাডেমিক জীবনে যতটা মেধাবী ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম এবং বৈবাহিক জীবনে তিনি ততটাই বিফল। বারবার। কিন্তু তিনি সেসব থেকে বেরোতে পারেননি। উল্টো অসহায়, একটি থেকে আরেকটি জটিল অবস্থা তৈরি করে গেছেন একের পর এক, ক্রমাগত। শুধু তাই নয়, তিনি এ দুর্বোধ্য অবস্থার ভেতর ঘূর্ণিপাক খেয়েছেন। জীবনে একমাত্র বই কেনা, বই পড়া এবং লেখা, একমাত্র জগৎ যেখানে লুকিয়ে যেতে পারেন নিমেষে। অনেক বছর নির্বাসিত জীবন পার করেছেন। সবকিছু থেকে পালিয়ে বইমুখী হয়ে জীবনযাপন করেও সেসব পুরনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। এ তার এমন এক নিয়তি যার সাথে ঘটনাচক্রে আমিও জড়ালাম। ভাল করে জড়ালাম। শুধু জড়ালাম না, মূল্য দিলাম এমন যে নিজের জীবনের থেকেও বড় হলো সে দাম। পরিশোধ করে গেলাম জীবনব্যাপী।

প্রেম এবং বৈবাহিক জীবনের দুর্বিপাকে নিপতিত এই পুরুষটির নাম সলিমুল্লাহ খান। খান সাহেবের সঙ্গে নিজের জড়িয়ে পড়ার কাহিনি ভানতে বসে যদ্যপি আমার গুরু পতি  বইয়ের জন্ম। জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যে ক্ষুরধার কিন্তু সংসাররঙ্গে বিফল মানুষটির প্রতি মমতা আর মুগ্ধতা, বৈষয়িক ঝড়ঝাপটায় তাকে আগলে রাখার উদ্বেগের কাহিনি মুন সহজ বুনোটে বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। মানুষটিকে স্বস্তি দিতে সংসারের জোয়াল একলা ঘাড়ে তুলে নিয়েছিলেন সেই সময়। বিনিময়ে এটুকু চাওয়ার ছিল,—খান সাহেব তার শরীর-প্রতিবন্ধী শিশুকে পিতৃত্বের স্বাদ দেবেন, তাকে মমতায় আগলে রাখবেন তিনি। ট্রাজেডি বটে, বাবা হতে গেলে যা লাগে অর্থাৎ সাংসারিক ও মানবিক সক্ষমতা খান সাহেবের ছিল না। তাঁর বিদ্যা বা বুদ্ধিজীবীতা মুনের সঙ্গে ঘরসংসার পাতানোর দিনকালে কাজে লাগেনি। কিতাব থেকে পাওয়া বিদ্যা ধার করে সংসার নামধারী রঙ্গে নামতে গিয়ে উল্টো নাকাল হয়েছেন অবিরত।

মহামতি কার্ল মার্কস, মনোবিশারদ জ্যাক লাকা আর চিরকুমার আহমদ ছফা, পরিতাপের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, উনাদেরকে সঙ্গী করে লাভ হয়নি। উপকারী না হয়ে উনারা বরং তাঁর জন্য আপদের কারণ হয়েছিলেন। লাকা-ছফা-মার্কসের পাচন গলাঃধকরণ করে খান সাহেবের স্বামী ও পিতার ভূমিকায় মুনের সংসারে ঢোকার ফলাফল যারপরনাই ভালো হয়নি। নিজে যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং সঙ্গে বেচারি মুনকে যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। সংসাররঙ্গের সমীকরণ তাঁর জীবনে দেখা দেওয়া মুনপর্বে তাই মিলানো সম্ভব হয়নি!

মুন লিখছেন, হৃদমের জৈবত্রুটি খান সাহেবের নিকট অসহনীয় ঠেকছিল। এমনকি শিশুটির গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেননি। প্রতিবন্ধী শিশু নিজের বানানো ভুবনে বাস করে এবং যারা তার মতো নয় তাদেরকে অনবরত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। খান সাহেব ধকলটা সামাল দিতে পারেননি। কাহিনি এদিকে গড়াবে সেটা অবশ্য মুনের ধারণার বাইরে ছিল। মার্কস-লাকা-ছফা ও আরো শত-হাজার ভাবচিন্তকের জগতে ডুবুরি সলিমুল্লাহ খান দেশ-রাষ্ট্র-জাতির ভূত-ভবিষ্যৎ ব্যাখ্যায় পারঙ্গম হলেও মুন এবং তার প্রতিবন্ধী শিশুর মাঝখানে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর বিদ্যায় তাকে স্ববিরোধী এক হতভাগা মনে হয়েছে। মুনের অবোধ সন্তানকে বাবার ছায়া দিতে মুখে আকুলতা জ্ঞাপন করছেন ঠিকই কিন্তু মনের গহিন কোণে পিতৃত্বকে দুঃসহ বোঝা ভেবে আতঙ্কে কুঁকড়ে থেকেছেন দিনমান। জনাব খানের এই মনোবিকারটা মুন প্রথম-প্রথম সম্যক ধরতে পারেননি। তাঁর মনের গহিন কন্দরে চামে-চামে ফরাসি মনোবিদ জ্যাক লাকা ভজকট পাকাচ্ছেন কি-না এই ভাবনা বেচারি মুনের তখন মাথায় আসেনি।

লাকা নারীসঙ্গ করতেন প্রধানত তাদের থেকে পালানোর জন্য! নারী যখন কোনো পুরুষকে চায় তখন পুরোটা চায়। পুরুষও তাই। খান সাহেবের সমস্যা এক্ষেত্রে জটিল মানতে হয়। মুনের বিবরণ সহি হলে স্ত্রী হিসেবে তিনি তাকে আদৌ চেয়েছিলেন বলে মনে প্রত্যয় জাগেনি। হতে পারে মুনকে তিনি লাকার মতো করে চেয়েছিলেন। নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে সেই নারীকে চেয়েছিলেন যার সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুটির অস্তিত্ব জুড়ে নেই। ওদিকে পিতা হওয়ার শিহরণ নিতে চান বলে বারবার আকুলতা প্রকাশ করেছেন, কারণ এই শিহরণে পৌরুষ রয়েছে। বাস্তবে দায়িত্বশীল এক স্বামী ও পিতার ভূমিকা পালনে মনের ভয় ও বিগার তাঁকে সমানে জ্বালাতন করেছে। ভয় কাটাতে বোধ করি মনোগহিনে দায়িত্বশীল স্বামী ও পিতার কাল্পনিক আবেশে ডুব দিয়ে স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করেছেন তিনি। মুনের বিবরণ খান সাহেবের মানসিক টানাপোড়েনেরে জায়গাটিকে চমৎকারভাবে ধারণ করেছে। সৎ ছেলেকে পিতৃত্ব দিয়ে আগলে রাখার ঘোষণা যখন দিয়েছেন সেটা ওই আবেশ থেকে দিয়েছেন, যার সঙ্গে বাস্তবতার সামঞ্জস্য ছিল না।

পিতা হয়ে উঠতে গেলে গুরুতর যেসব দায়িত্ব ঘাড়ে চাপে সেটা সামাল দেওয়ার ভয় তাকে ক্রমশ ক্লান্ত করে তুলেছিল। মুনের বিবরণ থেকে বেশ বোঝা যায়, মুখে সংসার করতে চান বলে গলা ফাটালেও সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা ঢুঁরছেন তিনি। আজব এই দ্বৈততায় খান সাহেবকে নিপতিত করার দায় অবশ্য মুনের ঘাড়েই বর্তায়। দুজনের পরিচয় নিবিড় হওয়ার দিনে মুন ভুলটি করে বসেন। সংসারজীবনে থিতু খুঁজে ফেরা খান সাহেবকে তিনি তখন বলছেন :

…আমি বিয়েতে রাজী হলাম কিন্তু একটি শর্ত, আমি কি সেটি আমি কোনোদিন তোমার পরিবারের কাছে জাহির করতে যাব না। আমার আর আমার সন্তানের সম্মান, ডিগনিটি, অস্তিত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম। এটুকুন তুমি সেইভ করলে তোমার কাছে আমার কিছু চাইবার নেই। আমি স্বাবলম্বী নারী। নিজে একটি সন্তানকে নিয়ে একটি জীবন আমি অলরেডি মেইনটেইন করি। আমার পাঁচ রুমের একটি ডুপ্লেক্স বাসা রয়েছে। এখানে তোমার জন্য লাইব্রেরি কাজের ঘর থেকে শুরু করে সব রেডি করে রাখার সামর্থ্য আমার আছে। আমাকে তোমার ভরণপোষণ কোনদিন করতে হবে না। এখানকার বাসার ভাড়া তোমার কোনোদিন গুনতেও হবে না। আমি এখানকার জীবন দেখব। তুমি ঢাকার বাসার যে দায়িত্বগুলো নির্বিঘ্নে করবে। এখানে যখন তুমি আসবে, তুমি শুধু লিখবে। এছাড়া তোমার কোনো কাজ নেই। আমাকে ম্যাটেরিয়াল কিছু দেয়ার তোমার কিছু নেই। আমি চাই তুমি তোমার লেখক স্বত্বাটুকুন ফেরত আনো। ১৫ বছর তুমি আমেরিকায় আছো, একটিমাত্র কবিতার বই তুমি লিখেছো শেষের দুবছর আগে। এটি ভাঙতে হবে। তোমাকে আবার লিখতে বসতে হবে

সম্মান, ডিগনিটি, অস্তিত্ব…এই শব্দগুলো অন্তত খান সাহেবের জন্য ভয়াবহ! এর মধ্যে প্রচণ্ড নৈতিক চাপ থাকে। লাকায় বুঁদ বাগ্মীর জন্য ওটা অত্যাচারের শামিল। তাঁকে নির্ভার রাখতে ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে চাওয়ার সঙ্গে সম্মান, ডিগনিটি, অস্তিত্বকে জুড়ে দেওয়া ছিল মুনের ভুল। ফ্যাটাল এরর। খান সাহেব এইবেলা নিজেকে মার্কসের জায়গায় পতিত দেখতে পেয়েছিলেন। এঙ্গেলস দায়িত্ব না নিলে মার্কস কস্মিনকালে মার্কস হয়ে উঠতেন বলে বিশ্বাস হয় না! দিনের-পর-দিন গুরুতর ভাবনায় নিমগ্ন থাকার জন্য স্বাচ্ছন্দ্য প্রয়োজন ছিল। মার্কসের জন্য এই স্বাচ্ছন্দ্য এঙ্গেলস নিশ্চিত করেছিলেন। ওটা ব্যতিরেক ডাজ ক্যাপিটাল  সম্ভব হতো কি? মনে তো হয় না। এঙ্গেলসের বন্ধুতা মার্কসের অহংয়ে কভু ঘা দিয়েছিল কি? জিজ্ঞাসার জবাব ইতিহাস কেউ দিয়েছেন বলে জানা নেই। উপরন্তু উনারা একই পথের পথিক ছিলেন এবং দুজনের ভাবনার বিনিময় থেকে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর বনেদ তৈরি হয়েছিল। এই সমতার কারণে হয়তো তাঁদের মাঝে সংঘাত দানা বাঁধতে পারেনি। সর্বোপরি তাঁরা বন্ধু হলেও তাঁদের মধ্যে প্রেমঘটিত কোনো ব্যাপার ছিল বলে ইতিহাসে সাক্ষ্য মিলে না।

মুন ও খান সাহেবের বেলায় ঘটনা বিপরীত। আর্থ-সামাজিক অনুঘটকের বৈপ্লবিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সমতা ও ভারসাম্যে পৌঁছানোর উপায় মার্কসবাদ মানুষকে এক সময় বাতলে দিতে চেয়েছিল। সামন্ত ও পুঁজিবাদে নিহিত শ্রেণিকরণের কুশ্রী দিকগুলোকে এভাবে নিকাশ করা সম্ভব বলে মার্কস বিশ্বাস করতেন। যদিও সমাজে ব্যক্তিস্বকীয়তা ও অহংয়ের নিরাকরণ কেমন করে ঘটবে সে-বিষয়ে তিনি ঝেড়ে কাশেননি। নব্য মার্কসবাদীরা কতটা কী ভেবেছেন জানি না! পুঁজিবাদী সমাজের নিরাকরণ ভাবনায় উতলা খান সাহেব কিন্তু বাস করেন এমন এক যুগবিশ্বে যেখানে ফিউডাল ও ক্যাপিটাল জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকে, যেখানে পাতিবুর্জোয়া বিগার মন থেকে হঠানো পাহাড় ঠেলার শামিল হয়। নিজের লেখা ও বক্তিমায় পুঁজিবাদী বিকারকে আচ্ছা করে ঝাড়লেও খান সাহেবের বিপদ এই যে তাঁর রক্ত-শিরায় আর সবার মতো করে বিকারটা সমানে বহে। মুনের থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ক্ষণে সেটা বোধ করি নিজের দাপট দেখাতে শুরু করেছিল। যারপরনাই শ্রেণিকরণের ছকে তাকে দাগানো ছাড়া দায়িত্বের সুকঠিন শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসার পথ তিনি খোলা দেখতে পাননি।

নিজেকে স্বাবলম্বী ও ফেমিনিস্ট দাবি করলে কী হবে, খান সাহেবের রক্তে বহতা পুঁজ মুনের বালিকাসুলভ দাবিকে অনায়াসে ডিনাই করেছে। তাঁকে ভরণপোষণ ও প্রযত্নের মাঝে জনাব খান নিজের পৌরুষের অবনমন দেখতে পেয়েছিলেন। স্বামী ও পিতা হওয়ার ঘটনায় দেখেছেন সত্তার অবচয়। তাঁর মনে হয়েছে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া বা নির্ভার রাখার বাহানায় মুন তাঁকে ডমিনেট করতে চাইছেন। সুতরাং ‘ডিভোর্সি’, ‘বাচ্চাওয়ালা মহিলা’, ‘কি যোগ্যতা আছে আমার’ ইত্যাদি বাক্যবাণ তার দিকে ধাবিত হওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র!

যেমন এটা অবধারিত ছিল, পিতৃত্বের ফ্যান্টাসিতে মগ্ন লাকাভক্ত খান সাহেব মুনের গর্ভে নিজের সন্তান বেড়ে উঠার সংবাদে উচ্ছসিত হবেন এবং সন্তান জন্ম নিলে স্ত্রীকে ট্রমায় রেখে চম্পট দেবেন। বাস্তবিক পিতা হওয়ার ইচ্ছে তাঁর ভিতরে তীব্র ছিল না! অতিকল্পনার জগতে বসে পিতৃত্বের স্বাদ কেবল পরখ করতে চেয়েছিলেন। ওই জগতে বিচরণ করে পিতা হওয়া মানে হচ্ছে পৌরুষের অপরিমেয় উত্থান। পিতা হওয়ার উদ্বেগ  তাঁর ওপর চেপে বসেছে যখন মুনের সঙ্গে তিনি বাস্তবে দেহমিলন করেছেন ও তাকে শুক্রাণু ডোনেট করছেন। শুক্রাণু দান করাটা তখন আর নিছক মনোজাগতিক অবভাসে বন্দি ছিল না; কারণ ওটা সত্যি-সত্যি ঘটেছিল সেখানে! খান সাহেব বুঝতে পারছিলেন ঘটনাটি অতিকল্পনায় ভারাতুর অবভাসের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। বাস্তবে পিতা হওয়ার অর্থ হচ্ছে ধরায় ভূমিষ্ট অস্তিত্বের দুর্বিষহ দায় টেনে চলা। বহির জগতে ডুবে থাকা খান সাহেবের কাছে সেটা নিজেকে কয়েদ করার শামিল ছিল। মুনের গর্ভে দান করা বীর্য থেকে আস্ত মানবসন্তান বেড়ে উঠছে দেখে আতঙ্কিত সলিমুল্লাহ অগত্যা প্রিয় ছফা ভাইকে অবিরত কোট করেছেন :

আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম, সে ঘোরের ভেতর কথা বলে যায়। সে সময় কি বলে যাচ্ছে তাতে কতটা নিষ্ঠুরতা ও হিংস্রতা থাকে সেটা সে নিজেও জানে না। যে শুনছে তার কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তাতেও তার আগ্রহ নেই। সে বলে যাচ্ছে তো বলে যাচ্ছে। নিবিষ্ট হয়ে সমুদ্রের তলা থেকে তুলে এনে কথা বিলিয়ে যাচ্ছে। যে কথাগুলো মুক্তো সেগুলো মুক্তো। যেগুলো বিষ সেগুলো বিষ। দুটোই সে সমান ইন্টেন্স এবং গভীরতা দিয়ে বলে যায়। এ থেকে সে নিজকে মুক্ত করতে পারে না। কিন্তু একটি বিষয় সে কখনো ভুল করে না। রেফারেন্স। মন্দ কথাগুলো সে কারও রেফারেন্সে দিয়ে বলে।… আর ভালো কথাগুলোও সে একই ঢংয়ে বলে রেফারেন্স দিয়ে। যেমন ছফা ভাই বলতেন। অনেকবার সে ছফা ভাইয়ের একটি উদাহরণ দিয়েছে। ছফা ভাই বলতেন, ‘ম্যান তোমার জিহ্বায় একটি হিংস্র সরীসৃপ আছে। সে দাঁত দিয়ে তুমি বাইট করো, এটা কি তুমি বুঝতে পারো?’ ছফা ভাইয়ের আরও একটি কথা সে প্রায়ই আমাকে বলেছে, ‘ম্যান, মোমবাতি কোনোদিন দুদিক থেকে জ্বালাবে না।’

খান সাহেব বোধ করি মুনকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, তিনি তাকে ভালোবাসলেও লাকার পন্থায় মনোজগতিক অবভাসে ডুব দেওয়া অথবা মার্কসের শ্রেণিহীন সমাজ বিরচনের পদ্ধতি নিয়ে তার সঙ্গে সংলাপে গমন সম্ভব নয়, যেহেতু রক্তমাংসের নারীর বাইরে বিকল্প আয়তনে নিজেকে সে রাখতে জানে না। মুন তো ফেরত গিয়েছেন চিরাচরিত জায়গায়; সেখান থেকে খান সাহেবের পক্ষে তাকে আনটিপিক্যাল ভাবাটা অবান্তর। এই মুনকে অতিকল্পনার রংয়ে রঙিন করা সম্ভব নয়। খান সাহেবকে শর্তাধীন করে তবেই না সে তাঁকে কিতাবে মুখ গুঁজে পড়ে থাকার ছাড়পত্র দিচ্ছে। ছাড়পত্রটা এমন যে মুনের প্রথম পুরুষসঙ্গ থেকে পাওয়া হৃদম ও নিজের ঔরসজাত অর্থকে পিতৃত্বের ছায়ায় আগলে রাখার শর্ত থেকে নিষ্কৃতির সুযোগ নেই।

পিতৃত্ব কেবল জৈবিক ঘটনায় নিঃস্ব হওয়ার বিষয় নয়। সামাজিক চুক্তির জায়গা থেকে দেখলে শুক্রাণু ও ডিম্বণুর মিলনে যে-অস্তিত্ব ধরায় এলো তাকে আগলে রাখার দায় নারী-পুরুষ দুজনের ওপরেই বর্তায়। অস্তিত্ব স্বেচ্ছায় ধরায় আসেনি। মুন ও খান সাহেবের প্রণয়বাসনা তাকে ধরায় আসতে বাধ্য করেছে। সে আসবে কি আসবে না এই ব্যাপারে অস্তিত্বের নিজের কোনো স্বাধীন ইচ্ছা যেহেতু কাজ করেনি, এখন খান ও মুনের অধিকার নেই তাকে অবহেলার। মার্কস গুলে খাওয়া সলিমুল্লাহ খান নিজের স্বাধীনতা খোয়া যাবার ভয়ে ধরায় ভূমিষ্ট শিশু-অস্তিত্বকে পিতৃত্বের ছায়ায় বেড়ে ওঠার সহজাত অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। নিজের ঔরসজাত সন্তান অর্থ-র দায়িত্ব নেওয়ার চাপ থেকে বাঁচতেই যেন-বা দেশে পাড়ি জমান তিনি। ‘ম্যান তোমার জিহ্বায় একটি হিংস্র সরীসৃপ আছে। সে দাঁত দিয়ে তুমি বাইট করো, এটা কি তুমি বুঝতে পারো?’—প্রিয় ছফা ভাইয়ের উক্তিকে নিজের জীবনে খান সাহেব এভাবে সত্য প্রতিপন্ন করলেন! মুন যখন বিষয়টা ধরতে পারছেন ততদিনে তিনি সিঙ্গেল প্যারেন্টের দায় কাঁধে দ্বিতীয়বার সর্বহারা বটে। খান সাহেব একবার মুনকে ডিভোর্স দিতে চানে বলে নোটিশ পাঠাচ্ছেন, পরের মুহূর্তে সেটা নিজেই নাকচ করে দিচ্ছেন। লন্ডনে দুটি সন্তানকে নিয়ে নতুন সমরে লিপ্ত মুনের তখন বিচ্ছেদ নিয়ে ভাবার ফুরসত নেই। খান সাহেব তাকে মোটামুটি রিক্ত-নিঃস্ব করে পরিত্যাগ করেছেন। বিদ্বানের সঙ্গে ঘর করাটা সাইকেডেলিক ট্রমার মধ্য দিয়ে পথ হাঁটার সমতুল ঘটনায় মোড় নেবে সেটা সম্ভবত মুনের কল্পনার বাইরে ছিল। মনের খেদ মিটাতে তাই লিখছেন :

কি নাইভই না তখন ছিলাম আমি, তখনও বুঝিনি, গুছিয়ে গুছিয়ে কথা বলাই ওর নেশা। ঘোরের ভেতর থেকে ও কথা বলে। যখন সে এ কথাগুলো বলে সেগুলো যে মিথ্যে বলে তা নয়। গভীর থেকে উঠে আসা কথাগুলো তার ভেতরের ডিজায়ার কিন্তু সেগুলো পাবার ইচ্ছে আসলে তার ভেতর কাজ করে না। একটি সন্তান তার জন্য স্বপ্নের। কিন্তু বাবা না হলেও তার জীবন সুন্দর। কিন্তু বাবা হবার ডিজায়ার বিষয়ে বলতে গেলে এত সুন্দর করে গুছিয়ে বলবে যে সেটা হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে। আমি তখনও ছিলাম একটি জগতে যেখানে সে যা বলে তা আমার কাছে পবিত্র গ্রন্থের মতো সত্য বলে মনে হয়। আর তার মারপ্যাঁচে পড়ে একের পর এক বোকামি করে গেলাম আমি। একের পর এক বোকামি! কতদিন আমি শুধু এটা ভেবেছি, কি অসাধারণ অপচয়!

লাকামগ্ন সলিমুল্লাহ খানের জন্য তাঁর ভাবগুরু ছফার মতো চিরকুমারের ভূমিকায় নিজেকে কয়েদ রাখাটা হয়তো ভালো ছিল। সেপথে না যাওয়ায় মানবিক সংবেদনের জায়গাগুলোকে তিনি নিজের হাতে বিনষ্ট করেছেন। পিতা হয়ে শিশুকে শাসন করা আর তাকে প্রতিপক্ষ ভাবার মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক রয়েছে। হৃদমকে তিনি নিজের প্রতিপক্ষ ঠাউরে বসেছিলেন। মুনের কথায় সেই ইঙ্গিত গোপন থাকেনি :

মুহূর্তে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে এ নিরীহ মানুষটি। সে ঘরে ডিশ ওয়াশে আমাকে সাহায্য করে। হৃদম বাড়ি এলে আমার গা ঘেঁষে বসার সাথে সাথেই সে বলে, ‘হৃদম তোমার ঘরে যাও। এ বাড়িতে তুমি একমাত্র প্রিভিলেজড বাচ্চা। আমি, অর্থ, তোমার মা তিনজনে একটি রুম ব্যবহার করি। আর তুমি একা একটি ঘর ব্যবহার করো। যাও তোমার রুমে যাও।

মার্কসভক্ত খান সাহেবের স্ববিরোধীতা এখানে উঁকি দিয়ে যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের জয়জয়কার নয় বরং সংবেদনশীল সমাজ প্রতিষ্ঠাই মার্কসের মূলমন্ত্র ছিল; যেটা, তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যক্তির স্বকীয়তাকে ক্ষুন্ন না করেও তাকে সমাজে সংযুক্ত রাখবে। হৃদমের সঙ্গে খানের আচরণে মার্কসের ছিটেফোঁটা আভাস চোখে পড়ে না। ওটা একইসঙ্গে কর্কশ ও সংবেদনহীন ছিল। ছেলেটির প্রকৃত পিতার আচরণকে বরং এইবেলা উত্তম মানতে হয়। মুনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটলেও হৃদমকে পিতার ছায়া দিতে ভদ্রলোক কার্পণ্য করেননি। ছেলের সঙ্গে তার নিয়মিত ফোনালাপের ইশারা মুন লেখায় দিয়েছেন। এটা অন্যভাবে খান সাহেবকে ঈর্ষাতুর করেছে। পিতৃত্বকে মনোজাগতিক যেসব অবভাসের সাহায্যে তিনি বিবেচনা করে অভ্যস্ত এবং বাস্তবে সেটা প্রয়োগ করা সম্ভব নয় বুঝে আক্রোশপ্রবণ, হৃদমের জনক এতো কিছুর ধার না ধেরে কাজটি অনায়াস করে দেখে তাঁর ঈর্ষার আগুন দিনে-দিনে লেলিহান হয়েছে। মুন লিখছেন :

মাত্র সাড়ে নয় বছরের বড়ো হয়েও হৃদম অর্থর দায়িত্ব বহন করে আসছে। সেই বেবি থাকাকালীন সময়ই ওর কোলে দিয়েই আমি বাথরুমে গেছি। চড়ুই গোসল সেরেছি। দৌড়ে নিচে গিয়ে দোকান করেছি। ইদানিং অর্থকে ধরলে অর্থর বাবা হৃদমের কোল থেকে অর্থকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। আমার অবর্তমানে একদিন সে হৃদমকে বলেছে, ‘তুমি অর্থকে ধরবেনা। তোমার কাছে থাকলে অর্থ তোমার মতো খারাপ ছেলে হয়ে যাবে!

হৃদম যখন আমাকে জিজ্ঞেস করল, মা আমি কেন ভাইকে ধরতে পারবনা?

ভাইয়াকে ধরলে ভাইয়া কেন আমার মতো খারাপ ছেলে হয়ে যাবে? খারাপ ছেলে কি মাম্মা?

ওর কথা শুনে আমি তখন পৃথিবীকে দুভাগ হতে বললাম। আমি জানি না আমি কি করব? হে ঈশ্বর! বলে দাও তুমি! তোমাকে আমার বড় দরকার!

কার্যত ওটা ছিল খান সাহেবের বৈকল্য বিস্ফারিত হওয়ার প্রাকসংকেত। তাঁর অবভাসের জালে বোনা জগতে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর থাকার উপায় নেই এবং তারা সেখানে থাকেও না। এটা হচ্ছে সেই পৃথিবী যেখানে সকলই বায়বীয়। কিতাব থেকে উঠে অসা মনোজাগতিক ধোঁয়াশায় আক্রান্ত। বাস্তবে হৃদমের মতো বাচ্চারা পৃথিবী জুড়ে গিজগিজ করে; সেরকম কোনো বাচ্চা যখন খান সাহেবের ঘরে জায়গা করে নেয় তাকে সহ্য করা তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল। এর অর্থ হচ্ছে খান সাহেবের স্বপ্নের অপমৃত্যু, যেহেতু নিখুঁত বাক্যজালে বোনা স্বপ্নের পৃথিবীতে নারীসঙ্গ ও সন্তানের জনক হওয়ার ঘটনা সামাজিক চুক্তিনামার ওপর আদৌ দাঁড়িয়ে থাকে না। সকল প্রকার চুক্তি ও প্রতিবন্ধীকে সে প্রতিহত করে। সে ফিরে যেতে চায় মৌলিকতায়। এমন এক মৌলিকতা যেখানে নারী-পুরুষ-শিশু, প্রেম-রমণ-প্রজনন, সম্পর্ক ও সামাজিকতায় পারস্পরিকতা থাকলেও দায়বদ্ধতা নেই। সুতরাং এটা অবধারিত ছিল যে হৃদমকে তিনি অচিরে প্রহার করবেন এবং অকারণে হলেও ওটা ঘটতেই থাকবে। ঈশ্বর এই নিয়তি মুনের জন্য লিখে রেখেছিলেন, খান সাহেবের সঙ্গে ঘর করা তার কপালে নেই। সেইসঙ্গে এই স্বীকারোক্তি তাকে করতেই হবে,—

আমি হৃদমকে বললাম, আমি স্যরি বাবা। আমাকে তুমি ক্ষমা করো। আমি তোমার উপযুক্ত জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে পারিনি। আমি একজন ব্যাড মাদার। ব্যর্থ প্যারেন্ট! আমি তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারিনি।

হৃদম সেদিন আমাকে যা বলল, তাতে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। সে বলল মা, স্টকহোমের বাসায়ও একবার হয়েছিল। আমি বললাম কি? আমাকে বলোনি কেন? সে বলল, ‘তুমি যে ওকে অনেক লাভ করো মা! সেজন্য বলিনি।’

আমি হাত পা ঠাণ্ডা করে বসে থাকলাম আর হৃদমকে বললাম, তোর মা হবার কোনো যোগ্যতা আমার নেই। আমি এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী, আপন সুখের কাঙাল কীট। মানুষও না। তোর মতো সন্তানের কাছে চিরকালের অপরাধী মা হয়ে, তোর কাছে নতজানু হয়ে রইব আমি। আমাকে তুই ক্ষমা করিস না বাবা। কোনো দিন না।

জিহ্বার নিচের সরীসৃপটা বারবার অবোধ এক শিশুকে দংশন করেছে অবভাসে রঙিন জগৎকে বাস্তবিক কব্জা করতে না পারার দোষে। সে যাহোক, সময় বয়ে চলে। সে চলে তার নিজ গতিতে বল্গাহারা তানে। পৃথক দুই পুরুষের সন্তানকে একা হাতে সামলে সময়ের স্রোতে মুন নিজেকে বারবার দাঁড় করিয়েছেন। হৃদম ও অর্থকে বিদেশের মাটিতে মাথা উঁচু করে বাঁচার যোগ্য করতে একা হাতে তাদেরকে মানুষ করেছেন। অমানুষিক কাজটি হয়তো কেবল নারীর পক্ষেই করা সম্ভব! সমাজ তার থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে সত্য কিন্তু প্রকৃতি অকৃপণ হস্তে তাকে যা দান করেছেন, অবিনশ্বর সেই প্রজনন, মাতৃত্ব ও দায়িত্ববোধের গুণে সে পুরুষ থেকে চিরকাল এগিয়ে থাকে। দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে কিতাবভারে জর্জরিত খান সাহেব থেকে মুন তাই যোজন-যোজন এগিয়ে ছিলেন সবসময়।

শেখ তাসলিমা মুনের সহজ বাচনভঙ্গি পাঠ করতে গিয়ে মনে হলো ঢাউস সব কিতাব পাঠের জোয়ানকি দিয়ে পুরুষ জগৎ মাত করতে পারে কিন্তু নারী নামক কিতাবকে পড়ার যোগ্যতায় সে আজো দীনহীন। খান সাহেবের অতুল পাণ্ডিত্যকে খাটো না করেও মুন নিজের যোগত্যার প্রমাণ রেখেছেন। কিতাব পড়ে জ্ঞান রপ্ত করাকে যদি স্ট্রাগল বলা হয় এবং তার জন্য অতল খাদে নামতে হয়, সলিমুল্লাহ যেমন নেমেছেন, দিনের শেষে প্রশ্নটি উঠে বটে,—এইসব কিতাব থেকে যে-জগৎ ছলকায় তার কীবা মূল্য যদি সেখানে মানবিক অম্লযানটা খোয়া যায়? দোষটা এক্ষেত্রে সলিমুল্লাহ খানের নাকি কিতাবের সেও এক ধাঁধা বটে!

বিদ্যাধারী হিসেবে তাঁর প্রাপ্য সম্মানকে মুন কোথাও খাটো করার চেষ্টা করেননি। খান সাহেবের মেধা, পাণ্ডিত্য, দেশে পরিবারের প্রতি গভীর টান ও দায়িত্ববোধের সবটাই স্মৃতিসূত্রে বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে। তাঁকে তিনি আজো টকশোয় দেখেন। প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করেন নিরাসক্ত মনে। ফরহাদ মজহারের ভাবজগৎকে মোকাবিলা করার ভাষা খুঁজে পেয়েছেন সেটা লক্ষ করতে ভোলেন না। দিনের শেষে সবই স্মৃতি বৈ কিছু নয়। যা অতীত তাকে নিরাসক্ত মন নিয়ে বিচার করতে পারাটাই পুণ্য। মুনকে স্যালুট, প্রতিহিংসাগাথা রচনায় আয়ুক্ষয় না করে খান সাহেবের মনোজগৎকে তিনি ছাপার অক্ষরে তুলে এনেছেন। সেইসঙ্গে এক নারীর জীবনসংগ্রাম উঠে এসেছে ঋজু তালে। যারপরনাই যদ্যপি আমার গুরু পতি একইসঙ্গে ব্যক্তি সলিমুল্লাহর চিন্তনবিশ্বের প্রকৃতি আর নারীর সহজাত সংগ্রামী মানসিকতার গুণে সুখপাঠ্য তো নিশ্চয়।

তাৎক্ষণিকামালা
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি

COMMENTS

error: