পুরো চারটা দিনই কেটে গেল গুগল আর ফেসবুকের অফিসে। অফিসের কনসেপ্টই পাল্টে দিয়েছে এরা। শুরুতে অনেক সিকিউরিটি, কিন্তু একবার যখন ব্যাজ নিয়ে ঢুকে পড়া গেল, পুরাই অন্যরকম। বলে বোঝানো যাবে না। আবার ভেতরে ছবি তোলারও বিধিনিষেধ আছে। তবে, খাবার এবং পানীয় অ্যাবসলিউটলি ফ্রি। ভিজিটরদের জন্যও। প্রতিদিন কতপদের লাঞ্চ আর কতগুলা ক্যানের পানীয় যে খেয়েছি, গুণে শেষ করা যাবে না। মেটা/ফেসবুকের অফিসটা ম্যারিনা বে অঞ্চলে। একযুগ আগে এখানে প্রায় কিছুই ছিল না। আমরা এদিক নিয়ে ফুলারটনে বেড়াতে এসেছি, পোর্টে গেছি। পুরা এলাকাটাই ছিল আন্ডার কনস্ট্রাকশন। আর এখন সব স্কাইস্ক্র্যাপারে ভরে গেছে।
ইচ্ছা না থাকলেও সময়ের অভাবে ট্যাক্সি ব্যবহার করতে হয়েছে। আজকেও ডেসকার রোডে যাওয়ার সময় গ্র্যাব ট্যাক্সি কল করতে যাচ্ছিলাম। টিপ টিপ বৃষ্টি। সারাদিনের মিটিং ছিল, ফলে ক্লান্তও খুব। তবু র্যাফেলস প্লেস স্টেশনের সামনে গিয়ে মন ঘুরে গেল। আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকে পড়লাম। র্যাফেলস প্লেস থেকে ডেসকার রোডে যেতে হলে ধোবি ঘাট গিয়ে চেঞ্জ করতে হয়। ধোবিঘাট গিয়ে যখন মেট্রো থেকে নামলাম, তখন পুরাই আমার সিঙ্গাপুর। সব আগের মতো। এইটা আমার মেট্রো লাইন। সপ্তায় অন্তত দুইবার তিনবার উঠেছি বাচ্চাদের নিয়ে বা একা। গন্তব্য ছিল ফ্যারার পার্ক, সস্তায় মাছ সবজি পাওয়া যেত। এই সিঙ্গাপুর আমার চেনা। আমার বৃত্তি খোরপোষে চলা অনটনের জীবনের সাথে এই মেট্রোর নাড়ির যোগাযোগ। বাজার নিয়ে ট্রলি সহ মেট্রোতে উঠে পড়তাম। এখন মনে হয় সেই চল নাই। কেউ আর মেট্রোতে ট্রলি ইউজ করে না হয়ত। অন্তত আমার চোখে পড়ল না।
যদিও প্রচুর মিটিঙের ভেতর দিয়ে চার-পাঁচদিন চলে গেল, আজকে টের পেলাম সিঙ্গাপুর আমাকে এবার সাংঘাতিক রকম আনমনা আর নস্টালজিক করে রাখল। আমি অতীতের ভেতর শরীর ডুবিয়ে বর্তমানটাতে শুধু নাকটা বের করে রাখলাম। পরের বার যখন সিঙ্গাপুর আসব, তখন অতীত থেকে পুরোদস্তুর বের হয়ে আসতে হবে। আমার বড় ছেলে বলেছিল ওর স্কুলটা আর স্কুলের সামনে থাকা বুড়ো গাছটার ছবি তুলে আনতে। গাছটা হয়তো আছে, কিন্তু ছোট্ট কিন্ডারগার্টেন স্কুলটা কোথাও নাই। স্কুলটা না-থাকায় গাছটা আছে কি না সেটা বুঝবার আর উপায় থাকল না। গুগলের অফিস এই পুরো এলাকা গিলে নিয়েছে।
র্যাফেলস প্লেসে আজকেই শেষ রাত। হোটেলের জানলা দিয়ে সুনসান রাস্তা দেখা যায়। বৃষ্টিভেজা। এমনই রাত ছিল সেটা, ‘বিলবোর্ড-নিবাসিনী’ নামে একটা কবিতা লিখেছিলাম। হেইগ রোডে থাকতাম তখন। কতকিছু মনে পড়ে!
হোটেলের জানলা দিয়ে মধ্যরাতে নিষ্ঠুর লাগে শহরটাকে, অথচ খুব মায়াবি একটা আপিল আছে কোথায় যেন!
- আজ বাজার মে পা-বা-জৌলন চল / ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ || তর্জমা / নাফিস সবুর - December 27, 2025
- লোককবি অন্নদারঞ্জন দাস ও তাঁর গান || জফির সেতু - December 27, 2025
- লোককবি তাজউদ্দিন ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 25, 2025

COMMENTS