লাইক আ রিভিউ || আনম্য ফারহান

লাইক আ রিভিউ || আনম্য ফারহান

১.
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সদ্য-মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ দেখলাম। কারো এত পার্সোনাল কোনো কিছু নিয়ে কথা বলা খুবই অস্বস্তির। অভ্যাসও নাই আমার। অটোবায়োগ্রাফি বা বায়োপিক যখন খুবই পার্সোনাল জায়গায় প্লে করে, তখন যতই সার্বজনীনতা ইন্টারসেক্ট করুক না কেন, তা অত্যন্ত মেলোড্রামাটিক একটা ব্যক্তিগত স্ফিয়ারেই থাকে। মেমোয়ার পাঠ করা যেরকম হয় আর কি।

কিন্তু লেখ্য মিডিয়াম আর ফিল্ম মিডিয়ামের পার্থক্যজনিত কারণেই আরেকটু বেশি অস্বস্তির। ওটিটি কন্টেন্ট হিসেবে স্ক্রিনে সিঙ্গেলি দেখা আর দলগত দেখার জন্যও একই মত আমার। কিছু জিনিস আছে যা লিখতে হয়, কিছু জিনিস আছে দেখাতে হয়, কিছু আছে মুখে মুখে বলবার জন্য, আর কিছু আছে যা দিয়ে কিছুই করতে হয় না।

২.
যখন পার্সোনাল কোনো কিছু শিল্প হয়ে উঠতে চায়, তখন তার উপর আরোপিত দায়িত্বসমূহ এড়িয়ে জিনিসটাকে বিমূর্ততার দিকে নিয়ে যাওয়ার চাপ পরিলক্ষিত হয়। তা নাই এখানে। পুরোপুরি ওই জায়গাটা থেকে প্লে করা, যেখানে ব্যক্তি পরিপার্শ্ব দ্বারা আবর্তের মধ্যেই আরেকটা ক্যারেক্টার-ই। বায়োপিক, মেমোয়ার বা ইন্টার্ভিউ এজন্যই আমাকে আকর্ষণ করে।

৩.
পাবলিক প্ল্যাটফর্মে অ্যাভেইলেবল এরকম সিনেমা — তথা পাবলিক ফিগারেরই, তা আমজনতার জন্য যতটা কন্টেন্টের বিষয় ততটা ওইভাবে নির্মাতা বা চরিত্রগুলির নয়। এটা একান্তই রচয়িতা, নির্মাতা ও চরিত্রগুলির ব্যক্তিগত দায় (ফারুকী এবং উনার স্ত্রী তিশার সহ-রচনা, সহ-প্রযোজনা, সহ-অভিনয় এবং ফারুকীর ডিরেকশনে নির্মিত)। কন্টেন্ট ভ্যালুই কী তাহলে এই পথ রচনা করে যে তা সকলেরই হয়ে উঠার মেরিট রাখে? আবার পাবলিক ফিগারদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আমজনতার আগ্রহ বরাবরই প্রবল বলে এর মনেটাইজিং ক্যাপাসিটি?

এক্ষেত্রে আমি মনে করি, যে-রকম সমাজই আর্টিস্টকে ঘিরে রাখুক না কেন, তার ট্যাবু, তার পলিটিক্যল রিয়ালিটি, তার কমিটমেন্ট টুওয়ার্ডস ওউন চিলড্রেন, কমিটমেন্ট টু দ্য রিলেশনস, ব্লা ব্লা… প্রকাশের ক্ষেত্রে একটু প্রাইভেসির প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। ‘প্রাইভেসি’ শব্দটার যেই মূল্য বা ব্যাপ্তি, তা সকলেরই দেওয়া উচিত।

৪.
কথা বলবার চাপ, নিজের গল্প বলবার চাপ অনেক সময়ই আর্টিস্টকে প্রলুব্ধ করে এমন অনেক কাজ করতে, যেটা ব্যক্তিগতভাবেই সবার সামনে এমনভাবে এসে পড়ে যে, তা আর ওই প্রাইভেট বৃত্তটা ভাঙতে পারে না। আর ওটিটি এবং বড় আর্টিস্টদের অপরচুনিটি অ্যাক্সেস করার ক্ষমতা এই যুগে ওটাতে আরো সলতে উসকে দেয়।

৫.
যেমন, ফারুকী ‘ডুব’ (২০১৭) সিনেমা বানাতে গিয়ে যে-রকম বিমূর্ত থাকার চেষ্টা করেছিলেন এবং সেইসাথে ক্লেভার এনাফ, তা স্মর্তব্য।


৬.
উনার সিনেমা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ (২০০৭), টিভি সিরিজ ‘420’ (২০০৭-২০০৮), পরে আবার সিনেমা ‘টেলিভিশন’ (২০১২) — এইগুলোতে তো উনার সিগনেচার আছেই। এই মুহূর্তে ‘শনিবার বিকেল’ (২০১৯ সালে নির্মিত কিন্তু সেন্সরবোর্ডে দীর্ঘ ৪ বছর আটকে থাকার পর, দফায় দফায় তলব করা ও নানা প্রতিবাদ, সিন্ডিকেটেড দেনদরবার ইত্যাদির পর ২০২৩ সালে ছাড়পত্রপ্রাপ্ত) মুক্তির পরে এসে এই ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমায় পুলিশকে পজিটিভলি দেখানো এবং প্রোটাগনিস্টের (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) পলিটিক্যল লিডারের কাছে অপমানিত আত্মসমর্পণের গল্প হয়ত উনার বলার দরকার ছিল।

৭.
আমি মনে করি, এই যে এখন নাগরিক বনাম রাষ্ট্র দ্বন্দ্ব, এখানে পাওয়ার-পলিটিক্সে পলিটিক্যল লিডারদের বা পলিটিক্সকে যেভাবে অ্যাড্রেস করা হচ্ছে, তা সমস্যাজনক।

যেন রাষ্ট্রকে এমন মহীরুহ একটা দেহে রূপান্তর করতে চাইছে সিনেমাডিরেক্টররা, যে, নাগরিক সেবা দেওয়ার একটা গ্রুপ আর রাষ্ট্র; এই-ই থাকবে। ন্যূনতম সেবাগুলো পেতে হবে মর্মে যে অ্যাক্টিভিজম চলছে, কালচারাল ফ্রন্টে তার যে ছাপ, মনে হচ্ছে রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এর প্রধান অন্তরায়। এতে করে খোদ ব্যুরোক্রেসিকে ভগবান বানানোর চেষ্টা হয়, যা ক্ষতিকর এবং আরও বেশি অটোক্রেটিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করার অ্যাক্টিভিজম করা হয়।

এই চাহিদা মধ্যবিত্তীয়। আর এইটাই হলো মূল সমস্যা। মধ্যবিত্তীয় চাহিদার পরিমাপে কোথাও সিস্টেম সংস্কার করা হলে সেখানে বড়লোকের চাহিদা ষোলোআনা পরিপূর্ণ হয়। তখন দেশ পড়ে বড়লোকের খপ্পরে। সেই ইকোনমি, সেই রাজনীতি, সেই সিস্টেমও। ইওরোপ এখন এই সমস্যায় জর্জরিত। একটু ভালো অর্থনীতির এবং উন্নততর দেশগুলি এই ফেইজে ঢুকে গিয়েছে বা ঢুকছে।

৮.
বাংলাদেশে তা আপনারা হতে দেবেন?

রাজনীতিকে ব্যক্তিগত অপমান, লাঞ্ছনা ইত্যাদির একমাত্র হেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়ে রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ডেমনাইজ করার মাধ্যমে সমাজকে অটোক্রেটিক রাষ্ট্রযন্ত্র হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। অনাগত সন্তানের জন্য, ছোট সন্তানের জন্য এখন যা বলে যাচ্ছেন, রেখে যাচ্ছেন, তা পরিণত হবে ঘাটশূন্য, পাড়শূন্য এক অমানবিক রাষ্ট্রযন্ত্রে। যেখানে সিস্টেম ও তার কুহক রাজ করবে সবকিছু।

—২/১২/২০২৩


আনম্য ফারহান রচনারাশি
গানপার ম্যুভিরিভিয়্যু

COMMENTS

error: