ম্যুভি দেখার সিদ্ধান্ত নিজে নেবার মতো বয়স্ক/অ্যাডাল্ট হয়েছি যখন, নিজে অ্যারেঞ্জ ও অর্গ্যানাইজ্ করছি যখন থেকে নিজের দেখাশোনা/লেখাপড়া, দুনিয়ায় তখন অ্যাজেন্ট বন্ডের ভূমিকায় পিয়ার্স ব্রোস্ন্যান্ স্কোর করছেন চুটিয়ে। এর আগের অ্যাজেন্টদেরেও দেখেছি বিটিভি কিংবা ভিসিআর যন্ত্রে। এদের মধ্যে শ্যন্ কনোরি প্রমুখ কয়েকজনের সঙ্গে চেনাজানাও হয়েছে বেশ মনে করতে পারি। পিয়ার্স ব্রোস্ন্যান্ সেদিক থেকে বেশি ইম্প্যাক্ট রেখেছেন আমাদের জাসুসি জীবনে। এর পরে ড্যানিয়েল্ ক্রেইগ যখন বন্ডের জবটা তার প্রশস্ত স্কন্ধ ও ললাটে তুলে নিলেন, মুহূর্তের তরে হলেও থমকে ভেবেছি, কম্পেয়ার করেছি হু ইজ্ দি ফিটেস্ট। প্রথমদিকে ড্যানিয়েলের দিকেই ছিল ভোটের রায়। এখন, পুরো দশক আয়ুর পরে এসে, মনে হচ্ছে ফের ব্রোস্ন্যানই ফিটস্ বেটার ফর দ্য পোস্ট। কেন মনে হচ্ছে, সেই ফিরিস্তি দিতে গেলে লেংন্থ বাড়বে এই নিবন্ধের, ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে সুধী সমাজের। অতএব পরের প্যারায় যাই।
জেমস বন্ড সিরিজের নতুন ছবি রিলিজ্ হয়েছে এই বিদায়ভূত ২০১৫ সনের অক্টোবরে। এটি সিরিজের ২৪তম খণ্ড। উইকি থেকে জেনে লেখা এই ইনফোটুকু। বর্তমান বন্ডখণ্ডের নাম ‘স্পেক্টর’/’Spectre’। বরাবর যেমন হয়ে থাকে যে একেকটা এপিসোডের শীর্ষনাম হয় থিম্যাটিক্যালি ভিন্ন। বন্ডভূমিকায় ড্যানিয়েল ক্রেইগ চতুর্থবারের মতো অভিনয় করলেন এই ছবি দিয়ে। এর আগের বন্ড পিয়ার্স ব্রোস্ন্যানকে হটিয়ে নয়া বন্ডের ভূমিকায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন ক্রেইগ ২০০৫ সালে ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’ দিয়ে। এরপর একে একে ‘কোয়ান্টাম অফ সোলেস্’, ‘স্কাইফ্যল্’ এবং সর্বশেষ তথা সাম্প্রতিক ‘স্পেক্টর’। নিউলি রিলিজড্ বন্ডম্যুভিটি পূর্ববর্তী স্কাইফ্যলেরই সরাসরি সিক্যুয়েল্।
ইয়ান ফ্লেমিং সৃজিত চরিতালেখ্যটির গল্পাবলম্বনে ‘Spectre’/‘স্পেক্টর’ ডিরেকশন্ দিয়েছেন স্যাম্ ম্যান্ডেস্। উনি আমাদের প্রিয়তমা ক্যাইট উইন্সলেটের পতিধন সম্ভবত। কোন ক্যাইট? হোলি স্মোক? ওরে বদমাশ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চোখটিপুনি দিলি কিসের তরে? ক্যাইটের কোনটা রেখে কোনটা বলব? অনবদ্য। সমস্তই অনবদ্য। বয়স লুকাইয়া না-রাখা ক্যাইট একচ্ছত্র অনন্য। তো, কথা হলো, বন্ডম্যুভি হিশেবে এইটা স্যামের দ্বিতীয় পরিচালনা। আউটস্ট্যান্ডিং ডিরেকশন বলা যাবে কি? ডিফার করবে একের অপিনিয়ন্ অন্যের সঙ্গে, অ্যানিওয়ে, অ্যাট-লিস্ট বন্ডলিগ্যাসি বজায় রেখে ‘স্পেক্টর’ নতুন কিছু যোগ করতে পেরেছে কি? জিজ্ঞাসার জবাবে জেমস বন্ড ভক্ত কোম্প্যানির সবাই সিনেমাকামরা থেকে বেরিয়ে রেস্পোন্স করবেন একেকজন একেকভাবে। সিনেমাটি নিয়ে ক্রিটিকরা যদিও দ্বিধাবিভক্ত, বরাবরের মতো, মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে দর্শকজরিপেও। রটেন্ টোম্যাটো ইত্যাদি কিংবা আইএমডিবি পৃষ্ঠায় এতদসংক্রান্ত উতর-চাপান উপভোগ্যও। সমালোচকদের ঐকমত্য তো সোনার পাথরবাটি, ইজ্’ন্ট ইট? বরং ব্যবসায়ীরা হার্মোনি রাখে একের সনে অন্যে।
এই সিক্যুয়্যাল্-বন্ড নির্মাণকালীন সবচেয়ে বড় খবর হয়েছিল যেইটা যে এই প্রথমবারের মতো বন্ডহিস্ট্রিতে একজন ‘পঞ্চাশোর্ধ্ব উইডো’ হচ্ছেন বন্ডগার্ল! শব্দটাই উচ্চারিত হলো পয়লাবারের মতো, বন্ডগার্ল নয়, বন্ডলেডি। কিন্তু বন্ডলেডি হচ্ছেন শুনে এক্সট্রা আগ্রহ তৈরি হয়েইছিল যে এইবার কাহিনিতে একটা ভালো অভিনবতা আসবে। সেইটা আর হলো কই! দিনশেষে লেডি হয়েছেনও, স্টোরিপ্লটে বেধবা হিশেবে দেখানো হয়েছে, ব্ল্যাক কস্টিউমে মেক্সিক্যান অগ্নি, ইন রিয়্যাল লাইফ উইডো নন অবশ্য, বাস্তবেরই পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্বাসকাড়া দুঁদে অভিনয়শিল্পী মনিকা বেল্যুচি। কিন্তু যতটা গাম্ভীর্য ও এলিগ্যান্স মনিকার অভিব্যক্তিতে বাস্তবেই বিরাজ করে সবসময়, সেইটা কাজে লাগাতে পেরেছেন স্যাম্ সিনেমাখ্যানে? বন্ডগার্লদের খুল্লামখুল্লা সিলসিলা বাদ দিয়াও অন্য কোনোভাবে একটা দাগ-রাখার-মতো চরিত্র গড়ে তুলতে পেরেছে ল্যুসিয়্যা সিয্যারা নাম্নী মনিকাভিনীত অংশটুকু? উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে ‘স্পেক্টর’। যদিও বর্তমান নিবন্ধপ্রণেতার আশাভঙ্গ তো লুকায়ে রাখা যায় নাই মনে হয়। রাষ্ট্র হোক, রটিয়ে দেয়াই যাক, কী আছে জিন্দেগিতে! এত চুপায়ে রেখে কে কবে ফায়দা লুটেছে!
এমনিতে জেমস বন্ডের গাড়ি আছে, ঘড়ি আছে, পেন্ অ্যান্ড আদার ম্যাটেরিয়্যাল্স সবই আছে। এবং উমদা জাতের বিচিত্র ওয়াইন ও উয়োম্যান ব্যতিরেকে তো বন্ড দুইপা আগাইবারও বান্দা নয়। ‘এম’ ক্যারেক্টারের উপস্থিতি প্রেত/স্পেক্টারের মতো থাকলেও জুডি ডেঞ্চ তো অভিনয় করেন নাই, ন্যাচারাল কারণে এই বয়সে জুডি হয়তো বন্ডবস্ হিশেবে কোনোদিনই অভিনয় করবেন না আর। কবে থেকে, এবং মোটমাট কয়টা খণ্ডে, ডেঞ্চ অভিনয় করেছেন বন্ডের হেড অফ দ্য অপারেশন্ হিশেবে? এই বিষয়টা আমি রিসার্চ করিয়া দেখি নাই। কিন্তু কন্ডোলেন্স জানাইতে এত কথার দরকার পড়ে না নিশ্চয়। দেশের রিসার্চস্কলার কবিসাইত্যিকদের জন্য কন্ডোলেন্স একখানা ফাঁদা যায় অবশ্য।
কন্ডোলেন্স শুধু জুডির জন্য নয়, জেমস বন্ডের জন্যও শোকপত্র প্রস্তাব করার সময় এসেছে এবার। ব্যাপারটা বেশ কয়েক টার্ম ধরেই কিক্ দিচ্ছিল মাথায়, লাস্ট কয়েক এপিসোড বন্ড দেখার সময়, সেই দ্বিতীয় দুনিয়াযুদ্ধ-উত্তর গোয়েন্দাজাগতিক শত্রুমিত্রতার ছকে এমনটা ন্যারেটিভ আগাইয়া নিয়া যাওয়া আর কত! সেই সিআইএ-কেজিবি রেষারেষি! বিজনেস্ যদ্দিন হবে, আয়-ইনকাম্ হবে, ব্যাপারটা চলতেই থাকবে বোধহয়। কেবল বন্ড ক্যারেক্টারে স্ট্যারিং-করা পাত্রটির কথা বলছি না, খালি পাত্র বদলাইলেই কি মদের ভিতর তুখা ভাব আনা যাবে? এই ব্রিটিশ ঐতিহ্য বোধহয় মিউজিয়ামে নেবার কথা ভাবা দরকার এবার। ব্রিটেনের সূর্য তো অস্তমিত বহুদ্দিন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ধামা ধরিয়াই ব্রিটিশরা কালাতিপাত করিতেছে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা তো ভোঁতা হয়ে গেনু, বুডঢা হয়ে গেনু, বন্ডের এত শৌর্যবীর্য তাই বোধহয় হাস্যকর ঠেকে আজিকালি।
বিশেষভাবেই এইবার মনে হয়েছে, ‘স্পেক্টর’ ওয়াচ করতে যেয়েই, ডিটোনেটোর আর হ্যানত্যান নানান এক্সপ্লোসিভ দিয়া এমআই-সিক্স অপারেশন্ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়া মাথার-ঘাম-পায়ে-ফেলা অ্যাজেন্ট বন্ড তথা ড্যানিয়েল্ ক্রেইগ কি কিছুটা ক্লান্ত? নতুন বন্ড সার্চ শুরু হবে অচিরেই, নির্ঘাৎ, নিশ্চয় আপনিও সম্ভাব্য অডিশনলাইনে কিয়্যু দিয়া স্ক্রিনটেস্ট দিতে পারেন বহুবিধ ভঙ্গিমায়। ব্যায়ামাগারে এইবার ডাম্বেল ও মুগুর দুইটা দুইহাতে বেদম প্র্যাক্টিস্ করতে থাকুন। বন্ডগার্লদের জন্যও প্রোফাইল্ রেডি রাখতে বলতে হবে না নিশ্চয়। জিরোফিগারধারী দিব্যতন্বীরাই জিরোজিরোসেভেনে জমিজিরেত পাবেন মর্মে নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না। জামানা পাল্টাচ্ছে। খোদ বন্ডই ক্রমশ জমিজমা হারাতে বসেছে। বেচারা! আমাদের বাপদাদার আমল থেকে সার্ভিস দিয়ে চলেছে, ক্ষ্যামা দিন আদমের সুরতটারে এইবার, কাঁহাতক আর!
Film Title: Spectre ।। Released Year: 2015 ।। Genre: Action, Adventure, Thriller ।। Duration: 2h 28 min ।। IMDb Score: 6.8/10 ।। Director: Sam Mendes ।। Stars: Daniel Craig, Christoph Waltz, Léa Seydoux, Ben Whishaw, Naomie Harris, Dave Bautista, Andrew Scott, Monica Bellucci, Ralph Fiennes ।। Music Score: Thomas Newman ।। Net profit approximately $880.7 million
প্রতিবেদনপ্রণেতা : জাহেদ আহমদ
… …
- প্রকাশ্য সন্ধ্যায়, শীতে - January 4, 2025
- মর্মস্পর্শী মিসকিনদের দেশে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড - January 1, 2025
- যেহীন আহমদ, অনেক অনেক দিনের পরে… - December 12, 2024
COMMENTS