সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে (সম্ভবত)। এইটা দিয়াই কি সৈয়দ হকের সাহিত্যদুনিয়ায় যাত্রারম্ভ? অনুমান করছি, হিসাবও বলতেসে যে, এরও আগে হকের ছোটগল্পবই ‘তাস’ বেরিয়েছে। এবং সেই প্রকাশের সাল সম্ভবত ১৯৫৪, উপন্যাস প্রকাশের বছর-দুই আগে। মেট্রিকুলেশন সেরেই লিখনবাজারে সৈয়দের পদার্পণ। উইকিইনফো বলতেসে লেখকের প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আধাপথে ছেড়ে আসা ছাত্রত্বের দ্বিতীয় বর্ষে। এইটা কাজেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে ‘দেয়ালের দেশ’ লেখকের প্রথম উপন্যাস হলেও প্রকাশিত বইয়ের ক্রমানুসারে এটি দ্বিতীয়।
‘শহীদুল্লা কায়সার রচনাবলী’ তৃতীয় খণ্ড থেকে এই রিভিয়্যুটা আমরা গানপারে ছাপছি। কিন্তু বইয়ের আলোচনা বলতে যা বোঝায়, এইটা তা না পুরাপুরি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে শহিদ এই সাহিত্যিকের তৃতীয় খণ্ড রচনাবলির সাড়ে-ছয়শ পৃষ্ঠাকলেবরের অন্তিমে কয়েকটা বইয়ের আলোচনা পাওয়া যায় যেইগুলা আকারে একদমই ছোট, সৈয়দের বইটি নিয়া প্রায় বিচূর্ণ মন্তব্যের মতো এই লেখাটাও ওইখানে আছে। এত ছোট রচনা, আদৌ কোথাও দৈনিকে বা সাহিত্যসাময়িকে ছাপা হয়েছিল? খোঁজ নিতে যেয়ে দেখি যে এইটা কায়সারের নোটবুক থেকে এই রচনাবলিতে এসেছে, এর আগে এইটা ছাপা হয় নাই কোথাও।
রচনাবলির পরিশিষ্ট পর্যায়ে ‘গ্রন্থ-পরিচয়’ পার্টে এর সম্পাদক গোলাম সাকলায়েন জানাচ্ছেন, “দেয়ালের দেশ … উপন্যাস … সম্বন্ধে শহীদ সাহিত্যিকের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য Exercise Book-এর পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ। এই ক্ষুদ্র রচনাটিকে ‘সমালোচনা’ না বলে ‘কতিপয় মন্তব্য’ অভিধায় আখ্যায়িত করা শ্রেয়। লেখার তারিখ দেওয়া আছে বাংলা ১২ই ভাদ্র (১৩৬৬?)।”
অতএব, এর একটা দাম আছে বলেই রচনাবলি থেকে জিনিশটা গানপারে পুনর্মুদ্রিত করবার উদ্যোগ নিতেসি। একজন তরুণ লেখকের বই পড়ে অগ্রজ প্রবীণ প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক তাঁর একান্ত নোটবুকে ব্যাপারটা আলাদাভাবে টুকে রাখছেন, এই পাঠাভ্যাস এবং এই বিচারকালচারের মূল্য তো দিতেই হয়। অ্যাক্নোলেজ করার এইটাও ধরন একটা।
বাংলা অ্যাকাডেমি ঢাকা থেকে শহীদুল্লা কায়সার রচনাবলি তৃতীয় খণ্ড ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল। সম্পাদক গোলাম সাকলায়েন। রচনাবলির প্রচ্ছদশিল্পী উৎপল দাস। সৈয়দ হকের প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’-এর প্রচ্ছদ গ্যুগল করে অ্যাভেইল করা যায় নাই। — গানপার
দেয়ালের দেশ || শহীদুল্লা কায়সার
‘দেয়ালের দেশ’ না-রোমান্টিক, না-কাব্যধর্মী, না-বাস্তব বর্ণনাধর্মী উপন্যাস। একটি ছোটগল্পকে নেহাৎ যেন জোর করে উপন্যাসে রূপান্তরিত করা হয়েছে। লেখক প্লটটিকে টানাহ্যাচড়া করে উপন্যাসে পরিণত করার চেষ্টা না করে যদি বড় গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতেন তবে উত্তম হতো।
আবিদের প্রতি লেখক নিজেই অপ্রয়োজনীয় পরিশিষ্টে সমবেদনা জাগাবার চেষ্টা করেছেন কোনো ঘটনা বা বর্ণনার উপর নির্ভর না করেই। পাঠকের মনে কিন্তু আবিদের উপর শ্রদ্ধা বা সমবেদনা কোনোটাই জাগে না।
দ্বন্দ্ব-সংঘাত সত্ত্বেও তহমিনাকে খুবই দুর্বল আর কেমন যেন কমিক চরিত্রে রূপান্তরিত করেছেন লেখক। তাতে আপত্তি নেই। আপত্তি হলো কষ্টসাধ্য প্রচেষ্টায়। তহমিনার হঠাৎ সন্তান ত্যাগ করে আবিদের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়াটা কেমন যেন চোখে লাগে। পাঠকদের এই স্টান্টের জন্য আদৌ প্রস্তুত করেননি লেখক।
ফারুক চরিত্র হিসেবে এবং প্রেমিক হিসেবে তেমন কোনো রেখা আঁকে না পাঠকের মনে।
… …
- শাহ আবদুল করিম : জন্মের শতক পেরিয়ে আরও একটা আস্ত দশক || ইলিয়াস কমল - January 20, 2025
- সিনেমার চিরকুট ৮ - January 19, 2025
- টুকটাক সদালাপ ২ - January 17, 2025
COMMENTS