তারেক মাসুদের সাথে আমার সখ্য করবার খুব-একটা সুযোগ হয়নি। আমি ঢাকায় আসি ২০০৯-এর ডিসেম্বরে। ২০১১-র আগস্টে তিনি মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। এর মধ্যে একদিনই উনার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ আমার হইছিলো। সেইটা সম্ভবত ওই এগারো সালের প্রথম দিকেই।
একসময় ছাত্র ইউনিয়ন করতাম বলে, (তখনও আমার বন্ধুরা ইউনিয়নই করত) এক বন্ধু জানতে চাইছিলো তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’ দেখানোর আয়োজন করা যায় কি না, দেখাইতে চাইছিলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ। তখন তারেক মাসুদের সাথে যোগাযোগ করলাম। আমি ও আরও দুই-তিনজন গেলাম একদিন উনার মনিপুরিপাড়ার বাসায়। বললাম, যে বাকৃবিতে রানওয়ের শো করতে চাই। উন্মুক্ত প্রদর্শনী। উনি রাজি হইলেন না। বললেন, বাকৃবিতে সিনেমার শো করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছো, আমি শো করতে চাই। কিন্তু সিনেমা ফ্রি দেখার সুযোগ নেই। এটা টাকা দিয়েই দেখতে হবে। কিন্তু বাকৃবি প্রশাসনের এই নিয়ম নাই যে এখানে বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করবে।
তারেক মাসুদের চিন্তা ছিল, ছবি যদি সে ফ্রি দেখে তাহলে সিনেমার পেছনে যে-গুরুত্বটা তার দেয়ার দরকার ছিল, সেইটা সিনেমা পায় না। আর সিনেমার পেছনের ব্যায়ের বিষয়ও থাকে, তাই ফ্রি সিনেমা দেখানো উচিতই না। এই নীতিতে অটল থেকে বাকৃবির ভিসিকে রাজি করাইলেন তিনি। তারপর বাকৃবিতে প্রদর্শনী হইলো রানওয়ের।
একটা মানুষকে তার নীতিতে অটল থাকতে দেখা তখন ও এখন অনেকটাই রেয়ার। তারেক মাসুদ (ডিসেম্বর ৬, ১৯৫৬ – আগস্ট ১৩, ২০১১) সেই রকমই একজন দুর্লভ মানুষ ছিলেন। তাঁকে অনেক মিস করি।
০৬ ডিসেম্বর ২০২২
ইলিয়াস কমল রচনারাশি
সিনেমার চিরকুট প্রবাহ
গানপারে তারেক মাসুদ
- সিনেমার চিরকুট ২১ - June 23, 2025
- ববি রবসন বায়োডকুমেন্টারি || ইলিয়াস কমল - June 16, 2025
- সিনেমার চিরকুট ২০ - May 20, 2025
COMMENTS