পাওলো ও ভিট্টোরিও তাভিয়ানি, এরা দুই ভাই। এদের দ্বিতীয় ফিচার ‘আন্ডার দ্য সাইন অফ দ্য স্কর্পিয়ন’-এর (১৯৬৯) বিমুগ্ধ সমালোচনা টাইম-উইক্লিতে আগেই পড়েছিলাম। এরা ছবি করে দুজনে। কী করে? নন্দনমঞ্চে এরা যখন উঠে দাঁড়াল, দেখলাম এরা যমজ। তাই পারে দুজনে মিলে একটা সৃষ্টিকাজ করতে।
এদের সব ছবিই পলিটিক্যাল ফিল্ম। রাজনৈতিক ছবি হলেও এদের কাজ সর্বঅর্থে ক্লিশে-ক্লেদমুক্ত। মিউজিক এবং মেইকিং এদের তালুতে আমলকিবৎ। ডাকলেই বলে, ‘যাচ্ছি।’ রাজনৈতিক ছবি না বলে এদের ছবিকে রাজনৈতিক আদর্শবোধের, রাজনৈতিক স্বপ্নের ছবি বলাই উচিত।
‘আলঁজাফন’ ও ‘দ্য নাইট অফ সান লরেঞ্জো’ ছবিদুটি যাবজ্জীবন ভোলবার নয়। দুটিই বিপ্লবের, বিদ্রোহের ছবি। প্রথমটি ফরাশি রেস্টোরেশান পিরিয়ডের এক অভিজাত বিপ্লবীর বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে। দ্বিতীয়টির সময় মুসোলিনি-আমলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার ঠিক আগে।
১৯৪৪-এ সান লরেঞ্জো শহরের একদল মানুষ গির্জায় সমবেত হবার জন্য জার্মান আদেশ অগ্রাহ্য করল — পালাবার পথে তারা মুখোমুখি হলো স্বদেশী ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে ধর্মযুদ্ধ শেষ হলো। গল্প এই রকম। কিন্তু এখানে সব গল্পই প্রাচীন উপকথা বলার ঢঙে। যেন, এসব কবেকার কথা। অসম্ভব বলশালী এর মেইকিং, এককথায়, নাটকে যেমন ব্রেখট্, এ এক নতুন, অজানা চিত্রভাষা! শেষ পর্যন্ত এক অনির্বচনীয় চিত্ররূপকথা। শাশ্বত রাত্রির বুকে এখানে সকলই অনন্ত সূর্যোদয়!
যাঁরা বলছেন, নন্দন কমপ্লেক্সে সবচেয়ে বেশি গুঁতোগুঁতি আর মারামারি হয়েছে পর্নো-ছবিগুলি দেখতে, তাঁরা ঠিক বলছেন না। কেননা, তাঁরা সম্পূর্ণ ভুল বলছেন। নন্দন কমপ্লেক্সে তাভিয়ানির ছবি দেখতে যে সুদীর্ঘ লাইন পড়েছিল, চলচ্চিত্র-উৎসবে সম্ভবত সেটাই রেকর্ড। লেনিনগ্রাদ অবরোধের সময় রুটির জন্য লাইনের চেয়ে যদিও তা বেশ কমই। সে-তো সর্বকালের রেকর্ড!
উল্লেখ্য যে, ১২ জানুয়ারি নন্দন-১-এ যখন ছবিটি দেখানো হচ্ছিল, সেইসময় রবীন্দ্রসদন ফাঁকা যায়। ওখানে তখন চলছিল ‘ফ্লাইং ফক্স ইন অ্যা ফ্রিডম ট্রি’। গুজব ছিল ওটায় নাকি নগ্নতাকেও বিবস্ত্র করা হয়েছে।
গানপারটীকা : বাঁকা বাক্যাবলির ব্যঞ্জনায় বাবু সন্দীপনের যে-কোনো ননফিকশন্যাল রচনা আদ্যোপান্ত বৈভবপূর্ণ। গত শতকের নাইন্টিসের জানুয়ারিতে একটা চলচ্চিত্র-উৎসবের রিভিয়্যু করেছিলেন লেখক সম্ভবত ইন্ডিয়ার পশ্চিমবাংলা রাজ্যের কোনো দৈনিক/সাময়িক পত্রিকায়। সেইটা বাদে একদিন বইয়ের অন্তর্ভূত হয়েছে। এই নিবন্ধটা গানপারে রিপ্রিন্টেড হচ্ছে সেই বই থেকে; বইয়ের নাম, — বই না-বলে চটিপুস্তিকা বললেই ব্যেটার বর্ণনা হয়, — ‘চলচ্চিত্র চঞ্চরী’। ইন্ডিয়ার প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই বই/পুস্তিকা জানুয়ারি পঁচানব্বইয়ে বের হয়েছে। এই নিবন্ধটুকু বইধৃত বর্ধিত কলেবর একটা রচনার অংশবিশেষ, সেই রচনার শিরোনাম ‘ফিল্মোৎসব ১৯৯০ : রাজসূয় না অশ্বমেধ?’ রচয়িতা বাবু সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, গোটা বইটারই তিনি রচয়িতা। আর রচনার যে-অংশ থেকে কেটেছেঁটে এই নিবন্ধ সংক্ষেপিত রূপে এইখানে রক্ষিত হয়েছে, সেইটা ‘তাভিয়ানি ভ্রাতৃদ্বয়’ সাবহেডলাইনের আন্ডারে পেইজ্ টোয়েন্টিতে অ্যাভেইল করা যায়। ফিল্মোৎসবের খানিক আঁচ দিতেই লিখিত হয়েছে এই নিতান্ত হ্রস্ব রচনা। — গানপার
… …
- মধ্যনগরে বঙ্গাব্দবরণ ১৪৩২ || বিমান তালুকদার - April 18, 2025
- অতি সাধারণ ঋণ বা ন্যানো ক্রেডিট || হুমায়ূন আকাশ - April 17, 2025
- গাজায় মৃত শিশুর ভর্ৎসনা || মোহাম্মদ জায়েদ আলী - April 12, 2025
COMMENTS