খুনের আগে ও পরে

খুনের আগে ও পরে

“যারা খুন করে তারা জানে না, একজন মানুষ মানে একটা জগৎ। কত সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে একটা মানুষ — বৌ, বাচ্চা, মা, বাবা, ভাই, বোন — ওরা তা ভুলে যায়। ওরা মারে বিচ্ছিন্ন একটা মানুষকে। সেই মার সেই লোকটাকে ছাড়িয়েও ছড়িয়ে ছড়িয়ে যায়। একজন মানুষের সঙ্গে আরো কত মানুষ শেষ হয়! যারা খুন করে তারা কি তা জানে?” [ফেরা / শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়]

এই সিনেমায় একজন খুনির প্রতি সিম্প্যাথি কিংবা এম্প্যাথি যা-ই বলি অলক্ষে আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায় দেখতে দেখতে। এমনকিছু ঘটনার ঘনঘটা নাই যদিও, সচরাচর সিনেমাগুলোতে এলিট অ্যাস্যাসিন্ ধুন্দুমার খুনকাণ্ড করে থাকে যেমন, এই সিনেমায় একদম স্টার্ট থেকে ধীর লয়ে যেতে যেতে একটা পর্যায়ে বুঝতে পারি যে এর নায়ক এলিট অ্যাস্যাসিন্ একজন — যার পেশা মিহিন কায়দায় মানুষ খুন। লোকে যেমন আর-দশটা কাজ করে সশ্রম সপ্রেম ধ্যান-ধৈর্য ও অধ্যবসায় বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে, এই সিনেমার ক্যারেক্টার হিরোও অবিকল তা-ই। বিচ্ছিন্ন থাকে সে সাধারণ আবেগ থেকে, যেমনটা আবেগ আমরা সামাজিক পরিমণ্ডলে দেখাই নিয়ত পরিবার-সমাজ-সংসার ইত্যাদির প্রতি, এবং চরিত্রটার পারিবারিক-সামাজিক কোনো যোগসূত্রও ম্যুভিতে আমরা দেখতে পাই না। ফ্ল্যাশব্যাকে তার প্রেমিকাকে দেখি অবশ্য, অব্যবহিত পূর্ববর্তী কিলিং অ্যাসাইনমেন্ট সমাধাকালে সে তার প্রেমিকাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে দেখতে পাই নিজের কাজের প্রাইভেসি বা নিজের কন্ট্র্যাক্ট কিলার আইডেন্টিটি ব্যাহত হওয়া ঠেকাতে, পরে এই কিলিং নিয়া তাকে রিগ্রেট করতে দেখি বারবার গোটা সিনেমা জুড়ে এবং এইখান থেকেই সে তার পেশা ত্যাগ করার চিন্তাটা করতে থাকে। এইটা তার বলতে গেলে শেষ কাজ যেখান থেকে সিনেমা শুরু হয় এবং চলতে থাকে। একসময় সে বুঝতে পারে সেটআপ্, বুঝতে পারে এই শেষ কাজ আসলে সে করছে না, গোটা ব্যাপারটা প্ল্যানের অংশ, তার উচ্চবর্গীয় কন্ট্র্যাক্টোর তাকে পেশাছাড়া জ্যান্ত রাখতে অনিচ্ছ।

জর্জ ক্লুনি ‘দি অ্যামেরিক্যান্’ নামে সেই সিনেমাটায় কী বিস্ময়কর একটা ব্যাপার-যে করেছিলেন! ২০১০ সালের অ্যামেরিক্যান্ ম্যুভি এইটা। ছায়াচিত্রাখ্যানটায় ক্লুনি ছিলেন একজন গানস্মিথ এবং কন্ট্র্যাক্ট কিলার, সোজা বাংলায় নিজে সে অস্ত্র বানায়ে নিতে পারদর্শী নিজের কাজটা নিখুঁত ও সুচারু সমাধার লক্ষ্যে, রেপ্যুটেড ভাড়াটে খুনী। প্রোফেশন্যাল্ কিলারের ভূমিকায় ক্লুনিকে সেই সিনেমায় নিঃশব্দে একদম সন্ত-সমাহিত ধ্যানে কাজ করে যেতে দেখা যায়। যেমন করে একজন কবিতা লেখে ধ্যানস্থ শ্রম লগ্নি করে, যেমন করে সুরমগ্ন থাকে একজন গানশিল্পী কি চিত্রকর যেমন থাকে রঙরেখাব্যাকুল, খুনীও তেমনি নিজের কাজে শতভাগ ব্যাপৃত। ছবিটায় ঠিক তা-ই দেখানো হয়েছিল, যদ্দুর মনে পড়ে। একজন ভাড়াটে খুনী সিনেম্যাটিক্ উত্তেজ-উত্তাপহীনভাবে পুরো সিনেমা জুড়ে তার প্রস্তুতি নিয়ে চলে, দর্শক হিশেবে আমরাও সঙ্গী থাকি তার, এমন অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। কিন্তু খুনীকে কোনোভাবেই মহিমান্বিত করার চেষ্টা ম্যুভিনির্মাতার মধ্যে ছিল না স্বীকার্য। অথচ আবেগের কোথাও কোনো-একটা তন্ত্রীতে ব্যাপারটা ঘা দিয়া গিয়াছিল বৈকি।

ইতোমধ্যে প্রেম আসে ফের সন্তর্পণে, এলিট এই কিলারের জীবনে, সেই প্রকাশ যদিও গড়পরতা প্রেমের মতো নয়। একটা ছোট্ট শহরে সে যায় অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে। অ্যাসাইনমেন্টও ছোট্ট। ওই নির্জন নিস্তরঙ্গ স্বল্পজনবসতির একটা নিম্নবিত্তবলয়ের অ্যাপার্টমেন্টহাউজে থেকে একটা স্নাইপার রাইফ্যল্ বানানো। খুনের কন্ট্র্যাক্ট নয়, স্রেফ রাইফ্যল্ বানানো। কম হ্যাপা নয় এই কাজটা, যদিও জ্যাক্ নামের ক্যারেক্টারটা স্নাইপার হিশেবে এবং কাস্টোম্ স্নাইপার রাইফ্যল্ বানাতে সিদ্ধহস্ত শিল্পীর মতো। শুরু হয় ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে লোহা ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা। তারপর দিনের পর দিন রাতের পর রাত ধরে সেই রাইফ্যল্ বানানো দেখি সিনেমা জুড়ে। একঘেয়ে এক-অর্থে, এইটাই সিনেমাটার বিশেষত্ব। অস্ত্র বানাতে ধ্যানস্থ খুনীকে দেখে মানুষের ধর্ম ঐশী কোনো বস্তু নয় বরং তার কাজ, যার যার কাজেই তার তার ধর্ম তার তার সারবত্তা, কথাটা আরেকবার স্পষ্ট করেই মনে পড়ে। এতদিন লাগে কেন অস্ত্র বানাতে? একটামাত্র অস্ত্র বানাতে এতদিন লাগে কেন? কারণ, এই স্নাইপারের কাজে কোনো খুঁত থাকে না বলেই সে বিশেষভাবে খ্যাতিমান এবং অস্ত্র বানাতে যেয়ে যেন লোকালয়ে একরত্তি প্রমাণ না-থাকে সেইজন্যে এমন সময় নিয়া বানানো অস্ত্র। ফলে ডিমান্ড-এন্ড থেকে এই সাপ্লায়ারের কদর অনেক বেশি। পেইমেন্টও অনেক হাই, অনেক এক্সপেন্সিভ সে।

George Clooney
এই রাইফ্যল্ বানানোই দেখি সিনেমার পঁচাত্তর শতাংশ জুড়ে। একটি দিনের ভিতরে দূরবর্তী গির্জার ঘণ্টা যে-কয়বার বেজে ওঠে, সেই-কয়টা হাতুড়ির ঘা লোহাপাতের ওপরে। বাকি সময়টা সে পর্দা জুড়ে বসে থাকে, হাল্কা পায়চারি করে ছায়া-ছায়া আসবাবহীন কামরার অভ্যন্তরে, একটুকু উইন্ডোকার্টেন্ দিয়া উঁকি মারে শূন্য চোখে আশপাশের বাড়িভিলাগুলোতে। এর বাইরে সে অ্যাক্টিভিটিহীন প্রায়। একদম সংলাপহীন না-হলেও কথাবার্তা প্রায় নেই বললেও চলে। একদম নেই অস্ত্রের ঝননঝনন। শুধু মুখাভিব্যক্তি দিয়া সামগ্রিক পরিস্থিতি, ক্লাইম্যাক্স, ক্যাথার্সিস্ সবই বোঝানো হয় এবং আমাদেরও অবোঝা থাকে না কিছুই। ঠিক এইভাবে একে একে রাইফ্যল্ বানানো হয়, এর বুলেটগুলোও নিপুণ কায়দায় তিলে তিলে মেজেঘষে গলিয়ে বানানো হয় ক্রমে, এবং রাইফ্যলের নল পরিস্কার করার কাজটাও ক্রমে এইভাবে করা হয় দেখতে পাই।

ভীষণ ধৈর্যসাপেক্ষ ও সময়সাধ্য গোটা কাজটা করার ভিতরেই সিনেমার আশিভাগ যা-কিছু বলার তা বলা হয়ে যায়, একটুও ক্লেশ হয় না আমাদেরও বুঝে নিতে। এই নিস্তরঙ্গ মনোটোনাস্ দিনগুলোর কোনো কোনো সন্ধ্যায় সে স্থানীয় শরীরচাহিদা-নিবৃত্তির মণ্ডপে যায়, এবং প্রায়-পাশবিক গোঙানির শ্রমক্রিয়া শেষে চুপচাপ পয়সা রেখে ভাবলেশহীন চলে আসে। এইভাবে একসময় অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হয়ে যায় রেগ্যুলার সাবস্ক্রাইব্ করে যে-মেয়েটাকে, ক্লারা যার নাম, তার সঙ্গে। একটু স্বস্তিকর মানবায়ন ঘটে কাহিনিটার। নায়ক জ্যাক্/এডোয়ার্ড ক্রমে একটা আবেগিক মানুষজীবের যাপন জিনিশটা কেমন, তা বুঝে দেখতে প্রস্তুত হয় ধীরে ধীরে। সিনেমা ক্লাইম্যাক্সের দিকে যেতে থাকে। এই ক্লারা, এবং প্রজাপতির প্রতি জ্যাকের বিশেষ ফ্যাসিনেশন্, বা আরও গুটিকয় মোটিফ থাকাতে আমরা নায়কের জীবনতৃষ্ণা খানিকটা আগেভাগেই বুঝতে পারি নিশ্চয়।

কিলার, অ্যাসাসিন্, খুন করা যার প্রোফেশন্, টার্গেট-অব্জেক্ট তথা মানুষ মিহি কায়দায় নিকেশ করা যার স্কিল্ এবং এই স্কিল্ বেচেই নির্বাহ করে সে তার জীবনব্যয়ভার। উপন্যাসে এই জিনিশটা আমরা নানাভাবে পেয়েছি, ইংরেজি থ্রিলার ছাড়াও অন্যান্য উপন্যাসে তো বটেই। ইংরেজিতে এই বিষয় নিয়ে এমনধারা গান দুইয়েকটা আপনি নিশ্চয় শুনেছেন। তবে এই মাত্রায়, ‘দি অ্যামেরিক্যান্’ ম্যুভির মতো ধ্রুপদী ধৈর্যে, এর আগে এবং পরে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যুভিতে পেয়েছি মনে পড়ে না।

the american movie posterবাংলায় একটা গান আছে বটে এলিট অ্যাস্যাসিন্ নিয়ে। জেমসের গাওয়া গান, ‘জেল থেকে বলছি’ অ্যালবামে। এমনিতে আমরা দেখি কি, শিল্পী যখন মধ্যভাগী, মানে মধ্যবিত্ত বলয়ের লোক, তখন তিনি তো অন্ত্যজের হয়ে একটা এনিমি দাঁড় করান তার গানে, একটা প্রতিপক্ষ, এইটা আমরা হামেশা লক্ষ করব। কবিতায় এবং গল্পে-উপন্যাসে বিশেষভাবেই লক্ষ করব। সবসময় সেই প্রতিপক্ষ হয় ঘৃণ্য ও অবধারিতভাবেই ঘৃণিত। জেমসের এই গানটার উপজীব্য খোদ খুনপেশাজীবী। কিলার। এই প্রথম, বাংলা গানে, এমনভাবে। জেমসের আগে এমন হয়নি, ঠিক পরেও নয় এখনোব্দি, ছিল না আগে এহেন নজির। কোনো ঘৃণা নয়, ধিক্কার নয়, নিপাত যাবার চিৎকার নয়, নির্মোহ মমতায় এঁকে তোলা হয়েছে কথায় ও সুরে গানের অভীষ্ট চরিত্রটাকে। এইটি লিখেছেন লতিফুল ইসলাম শিবলী, গানের শিরোনাম ‘পেশাদার খুনী’, সুর ও সংগীত করেছেন জেমস তথা তার তৎকালীন ব্যান্ড ফিলিংস । গানটার লিরিক্স থেকে একাংশ চয়ন করা যায় : “আঁধারের বুক চিরে আততায়ী / অশুভ ছায়ার মতো নেমে আসে / জনপদে / নেই অভিব্যক্তি চোখে-মুখে / রক্ত-হিম-করা সাহস বুকে / জেগে আছে / হাজার লোকের ভিড়ে সে / অতি সাধারণ এক ব্যক্তি / জেগে থাকে / শীত-শীত নিষ্পাপ চোখটা / পেশাদার খুনি সেই লোকটা — / পেশাদার খুনিটা” … তারপরের স্তবকে এক-জায়গায় যেয়ে পাচ্ছি : “অমানুষিক বিভীষিকা / খবরের পাতা জুড়ে … শীতল চোখের ওই কপাল-পোড়া / নিষ্পাপ চোখের ওই কপাল-পোড়া / সর্বনাশা সেই খুনীটা ” … ইত্যাদি। লিরিকের ওজন খুব-যে অ্যাপ্রিশিয়েট করবার, তা নয়। বরং দুইয়েকটা জায়গায় একদম ক্ষ্যাত্, যেমন, “শীতল চোখের ওই কপাল-পোড়া / নিষ্পাপ চোখের ওই কপাল-পোড়া ” — এই জায়গাটা, এই ‘কপাল-পোড়া’ এক্সপ্রেশনটা ফাউল্ বললেও হয়। আবার ফাউল নয়ও, বরং উল্টাটা, যদি অর্ডিন্যারি এক্সপ্রেশনগুলোকে লেখাভুক্ত করবার ব্যাপারটাকে নেক-নজরে দেখি। কিন্তু ঘটনা তো মিছা না। ব্যাপারটা আসলেই কিন্তু ‘কপাল-পোড়া’। অ্যানিওয়ে। বাংলাদেশের গানে এমন জোড়াতালি তো হরদম হয়েই এসেছে। বেশ একটা লাইন পাবার পরক্ষণেই ক্ষ্যাত্ একগোছা লাইন। টোটাল মিলিয়েই আমরা গানটা সয়ে যাই। জেমসের এই গানটা অবশ্য সেসব বিবেচনায় বেশ ভালো মার্কস্ পেয়ে উৎরে যায়। একটা লাইন তো অভাবিত মনে হয় : “শীত-শীত নিষ্পাপ চোখটা / পেশাদার খুনী সেই লোকটা” — এইটা তো স্ট্রং পয়েন্ট একটা। ভাবা যায়! তা-ও বাংলাদেশের বাংলা গানে! এই গানটা, বলে দেয়া লাগবে না নিশ্চয়, ‘দি অ্যামেরিক্যান্’ ম্যুভিজন্মের ষোলো/সতেরো বছর আগেকার।

শুধু ওই একটা গান তো নয়, হে বন্ধু হে প্রিয়, সিনেমা দেখতে লেগে এমন অনেক কিছুই ইয়াদ হয় আমাদের যা আদৌ সরাসরি রিলেটেড হয়তো নয় সিনেমার সঙ্গে। যেমন কবিতা পড়তে যেয়ে হামেশা আমাদের মনে পড়ে কোনো ম্যুভি কিংবা আখ্যানের প্লট অথবা প্রোট্যাগোনিস্ট। অভিজ্ঞতার অদলবদল হয় পাল্টাপাল্টি। ‘দি অ্যামেরিক্যান’ দেখতে দেখতে তেমনি ইয়াদ হচ্ছিল পূর্বাভিজ্ঞতাভুক্ত উপন্যাসের একটা বাক্য। কবির লেখা উপন্যাস। সম্ভবত ‘মাল্যবান’ নামে পরিচিত উপন্যাসটা। “তার ভালোবাসা পেয়ে ভয়াবহভাবে সৎ হয়ে আছি — ভাবি।” জীবনানন্দ দাশের মাল্যবানোক্ত কবিতাপ্রায় লাইনটা আলোচ্য ম্যুভির স্টোরিলাইনের সঙ্গে বেশ যায়। এর নায়কও নিজের পেশায় এবং জীবনযাপনে একটা সাত্ত্বিক স্তরের ‘ভয়াবহ’ সততা বজায় রেখে চলে। এই লোকটাও মাল্যবানেরই মতো অলক্ষে প্রেমাচ্ছন্ন। অবসেসড পর্যায়ের মগ্ন প্রেমিক। মোটেও লাউড ল্যভমেইকার নয়; কিংবা নয় হৈচৈ হি-ম্যান তথা মাচো ইমেইজের মজমা নায়ক কিসিমের কিছু। অতি মিউট অথচ মন্দ্র অভিব্যক্তি তার। মনে হয় যেন কোনো ‘ভয়াবহ’ প্রণয়ত্রিশূলে সে ব্যাপক বিক্ষত। সত্যি সত্যি তা-ই কি না, তা অবশ্য অতটা চাউর হয় না ছায়াছবিটিতে। একেবারে প্রচ্ছন্নও নয় ব্যাপারটা, আগাগোড়া সধৈর্য দেখে গেলে টের পাওয়া যায় জীবনের প্রারম্ভিকায় এও প্রণয়দিশাহারা মাল্যবানই ছিল।

মোদ্দা কথা, না, আবহমান সৌরজগতে এবং সৌরজগতের বাইরেকার বিপুলা আয়তনিক অতিকায় প্রসারণশীল মহাজাগতিকতায় মোদ্দা কথা বলতে কিছু নেই। বিলকুল আপাত কথাগুলোকেই আমরা আমাদের স্বার্থে মোদ্দা জ্ঞানে সাব্যস্ত করি। কিন্তু নৈতিকতা আর বাঁধাধরা আইন-সংবিধির বাইরে বেরিয়ে এই জগতের সবকিছু যদি একটাবার মুক্ত চোখে দেখতে পেতাম, তখন বুঝতাম জগতের ধর্ম কেমন হয়েছে এবং কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। জর্জ ক্লুনি সিনেমায় যে-ক্যারেক্টারটা পোর্ট্রে করেছেন, সেই জ্যাক্, আমরা লক্ষ করব, রোজগার করে এসে কাউকে ঠকায় না, ভোগায় না, কাউকে এমনকি কটুকাটব্যও করে না। খালি নিজের অস্তিত্ব সঙ্কটে দেখলে বাধ্য হয় নিকটস্থ নিরপরাধকেও নিকেশ করে নিতে। এরচেয়ে বেশি কিলার কি নয় আপনার/আমার রোজগারঘরের কর্তাব্যক্তিটি/ব্যক্তিগুলো, যে/যারা আপনাকে/আমাকে প্রতিমাসে ঠকায়, আমাদের গোটা ফ্যামিলি জীবনভর সাফার করে এদের জন্যে, এরা রাষ্ট্রের সঙ্গে এবং অন্যান্য সমস্ত কাঠামোর সঙ্গে, আমাদেরই বানিয়ে-তোলা বিধিবিধানের সঙ্গে, কেমন মিহিন কায়দায় শঠতা আর চাতুরি আর খুন করে যায় আমাদেরে এবং তারা তাদিগের নিজেদের পরিবারের বিলাসব্যসন শনৈ শনৈ বাড়ায়ে যায়? এবং দেখবেন যে আমিও আমার অস্তিত্ব সুরক্ষার জায়গায় কেমন ভয়াবহ খল, শঠ ও হন্তারক; নই?

Film Title: The American ।। Released Year: 2010 ।। Genre: Thriller ।। Duration: 1h 45min ।। IMDb Score: 6.3/10 ।। Director: Anton Corbijn ।। Stars: George ClooneyThekla ReutenViolante PlacidoIrina Björklund, Paolo Bonacelli ।। Music Score: Herbert Grönemeyer ।। Net profit approximately $67.9 million

রিভিয়্যুপ্রণেতা : জাহেদ আহমদ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you