মনের জানালায় || পীযূষ কুরী

মনের জানালায় || পীযূষ কুরী

তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি, সময়টা নাইবা বললাম। দুর্গাপুজোয় একটা নতুন অডিওক্যাসেট বাসায় এল।

বাড়িতে নতুন বউ, মেজদার খুশ মেজাজ। ছোড়দার রুম থেকে গান বাজছে। গায়কীতে একটা মায়া আছে।

ক্যাসেটপ্লেয়ার খুব কাছাকাছি মনে হচ্ছে এবার। খেয়াল করলাম গান বাজছে মেজদার রুমে। কাকিমণি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছেন, আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন।

দুর্গাপুজোর দুপুরের সময়টাতে বাড়ির সবাই একটুআধটু বিশ্রাম নেয়। এই অবেলায় গান বাজালে বাবা হয়তো বকা দিতেন। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম হলো। বাবা কিছু বলেননি, শুয়ে শুয়ে শুনছেন।

পুরো বাসায় নীরবতা, সবাই মনোযোগী গানশোনায়। আমি বাড়ির দোতলায় বসে শুনছি আর অঙ্ক করছি।

সন্ধ্যায় আরতিতে যাবার সময় মেজদার রুমে উঁকি দিয়ে ক্যাসেটের নাম দেখলাম — ‘মনের জানালা’; শ্রীকান্ত আচার্য্যের (Srikanto Acharya) প্রথম অ্যালবাম।

ষোলো বছরের আমার মনে দাগ কাটল গানের কথা, সুর আর গায়কী। মনে মনে চিন্তা করে নিলাম, দশমীর প্রণামীর টাকা জমিয়ে একজনকে উপহার দেবো এই ক্যাসেটটি কিনে।

ক্যাসেটটা কেনা হয়ে গেল। অপেক্ষায় রইলাম কবে সেই সময় আসবে।

কোনো-এক বিকেলে দিতে গেলাম, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াল তার ইচ্ছে। কোনোভাবেই দেয়া গেল না। যদিও নানাবিধ সমস্যা বা পাড়ার লোকের কথার ভয় ছিল, নানা প্রশ্ন আসতে পারে পরিবারের সবার কাছ থেকে।

অনেকটা মনখারাপ করে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি ফিরে যখন একটা গানই বারবার শুনছি, তখন মেজবৌদি আমার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করল, সাথে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা।

কিন্তু আমার মনে গানের কলিগুলো দাগ কাটছিল —

আমি তো খুঁজি কারণ
মন আমায় করে বারণ
বলে কেন এমন মরণ
বিনা কারণে …

 

… …

পীযূষ কুরী

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you