কাল আহমদ ছফাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম।
খুবই তড়িৎ ছবি। খুবই প্রবাহ আছে যেটায়। খুবই ডাইরেক্টধর্মী সপ্রতিভ জিনিস।
দেখেছিলাম, কোনো-এক বুকস্টোরে আমি দাঁড়িয়ে কার সাথে জানি গল্প করছিলাম। ছফাভাই কোত্থেকে জানি কী কী কাজ সেরে আসছিলেন, ওইরকম মনে হচ্ছিল। এসে আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে সমানে চুমু খেলেন। কী গভীর ভালোবাসা ও স্নেহে, সেটা আমি বুঝাতে অপারগ। মনে হলো ওনার হারিয়ে পাওয়া কিছু।
উনি খুবই পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন কাপড়চোপড় পরা ছিলেন। সাদা শার্ট ইন্ করে পরা। ধূসর বা কালো প্যান্টের সঙ্গে। জুতাও ফর্মাল টাইপ স্যু। মানে কেতা-দুরস্ত। মনে হচ্ছিল কোনো অ্যাম্ব্যাসির কোনো রাষ্ট্রদূতের সাথে মন্ত্রণা করে চার-পাঁচটা সচিবালয় চষে বেড়িয়ে দুম করে এখানে আসছিলেন। ওই গতিটা ওনার ওই উপস্থিতিতে ছিলই।
ওনার সম্পর্কিত পঠনপাঠন ও গল্প যা শুনেছি, তারই নিরিখে স্বপ্নটা ফ্রেমড, মানে চরিত্রের মানস ও অ্যাপিয়ারেন্স। সেটা বোঝাই যাচ্ছে। আর পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা ও কেতাদুরস্ত কাপড়চোপড়ের জিনিসটা একান্তই আমার চরিত্রগত পছন্দ, যেহেতু স্বপ্নটা আমি দেখেছি।
তবে চুমু খাওয়ার বিষয়টা অকওয়ার্ড লাগেনি যে, সেটা পরিষ্কার। আমার সাথে আরেকজন অচেনা বুড়োমতো লোক গল্প করছিলেন, ছফাভাই আসার আগে; উনাকে দেখলাম মিটিমিটি হাসছেন। যেন হাততালি। যেন আশ্বস্ত হওয়ার ফুল।
ছফাভাইয়ের ওই লম্বা চুলের, কাঁধে পাখি নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল ছবিটা যদিও আমার খুবই প্রিয়। যেন অপ্রকৃতস্থ কোনো কবি, যেন ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কল’ পাহাড় থেকে নেমে এসে দেখলেন রাজা জর্জ-৩ এর প্রজা আর উনি নন — দেশ স্বাধীন হয়ে এখন জর্জ ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট। তারপরও, ওনাকে ধোপদুরস্ত দেখতে চাওয়া আমার কোনো বাসনা নয়। ওটা একটা মিথস্ক্রিয়া। স্বপ্ন যেভাবে তৈরি হয়। ওইরকম।
তবে ওনার একটা ছবি মনে দাগ কেটেছিল, রাইসুভাইয়ের শেয়ার করা সম্ভবত, খাটের উপর খালি গায়ে হারমোনিয়াম নিয়ে বসা; হৃষ্টপুষ্ট শরীর, বয়স একটু বেশির দিকে, অধিক মনোযোগী ও নিবিষ্ট নবিসুলভ একটা সুবাস আছে ওটাতে।
তো সব মিলিয়ে যা হয়, ওই এক শব্দ – মিথস্ক্রিয়া। মিথের গভীরতা থেকে উদ্ভুত ক্রিয়া। সিন্থেসিস। ইনপুটের সেই ফসল, যা বিয়ার ও ওয়াইনারির ফার্মেন্টেশনের সঙ্গে সমতুল্য, তাদের রং, গন্ধ ও ফেনার পরিষ্কার যেই অর্থ।
গভীর রাত বা শেষ রাতের স্বপ্ন এটা। সকালে অনেক দেরি করে উঠেছি। আমার স্বপ্নের মধ্যেই ভালো লাগছিল; উঠেও দেখি সেই ভালোই লাগছে।
আমি আজকে আবার হাতে নিলাম ‘পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’। ১৫ পৃষ্ঠার মতো পড়ে এই লেখাটা লিখতে বসেছি। ছফাভাইয়ের পালক ছেলে সুশীল, যে আবার খ্রিস্টান, সে ছফাভাইয়ের নতুন আসা চারতলার বাসার চিলেকোঠার ছাদে পাওয়া তুলসী গাছটা মাত্র তরতাজা করে তুলেছে, আর গাছের নিচে মাটির বাতিদানে মোমবাতি জ্বালানোর কৃষ্ণভক্তিজাগানিয়া বাতিদানটাই চুরি হয়ে গেছে। কারণ, ছফাভাইয়ের তরুণ হিন্দু বন্ধুদের কৃষ্ণে ভক্তি জন্মে যাবে ভয়ে ওরাই চুরিটা করে।
দীপ জ্বালানো বন্ধের এই অংশে ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কীর্তনের কথা আছে। তুলসী কৃষ-প্রেয়সী কৃষ্ণ ভক্তিপ্রদায়িনী।
আমি অনুভব করছি প্রাণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হওয়ার তাৎপর্য। জীবনে বহুবার, বহুবার; এ নতুন মহিমা।
—২৭/০১/২০২৩
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS