বুলবুলভাই
গল্পটা এমন যে আমি আর মেননভাই সেদিন মানে ২০১৯ সালের এক সন্ধ্যায় পুরি খাওয়ার জন্য ডালপট্টির মোড়ে বুদ্ধুর পুরির দোকানে যাচ্ছিলাম। তখন ভর সন্ধ্যা। যাওয়ার পথেই পরিপাটি বেশভুষায় লেখক বুলবুল চৌধুরীর সাথে দেখা। আমাদের দেখেই সোল্লাস চেঁচিয়ে ডাকলেন, ‘ওই মিয়ারা কই যাও?’
আমার হাতে সেদিন ক্যানন ১১০০ ছিল। বেয়াদবি নিবে ভেবেও ক্লিক করলাম। তারপর ঢুকলাম বুদ্ধুর দোকানে। দুধচা সহযোগে ডালপুরি খাচ্ছিলাম ৩ জন। বুলবুলভাই কারো ফোনের অপেক্ষা করছিল। বারবার তার বাটনসেটটা গুঁতাচ্ছিল। আমাদের কত কী বলছিল আজ আর মনে নাই। হঠাৎ কাঙ্ক্ষিত সেই ফোন আসলো আর বুলবুলভাই চলে গেল।
আজকে বুলবুলভাইকে মনে করার দিন না। আমার কেবল আফসোস থেকে গেল উনার একটা সবিস্তার ইন্টারভিউ কেন-যে করিনি! দেখা হলেই কত অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলত। নায়িকা ববিতার সাথে তার একটা লেখা নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা শুনে হেসে গড়িয়ে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি বিনোদনসাংবাদিক হিসেবেও লিখতেন।
যা-ই হোক, আজকে বুলবুলভাইকে মনে পড়ে গেল ছবিটা সামনে পড়তেই।
জামানভাই
শাহাদুজ্জামানভাইকে আমি জামানভাই বলে ডাকি। তার সাথে লম্বা জার্নি আমার। চারুকলায় পড়ার প্রথম দিকে (২০০০-২০০১) তার লেখার মাধ্যমেই তার সাথে পরিচয়। তারপর তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনা, তার ইন্টারভিউ করা, এবং তার সাথে প্রায় সকল সময়েই নানা সাহিত্যআলাপের সুবাদে তাকে আমি আমার আত্মীয় মনে করি।
তার কথা পরম্পরা বইটা পড়েছিলাম সবার প্রথম। এত সমৃদ্ধ সাক্ষাৎকারের বই সহজে চোখে পড়ে না। তার কারণ সকলে প্রশ্ন করতে জানে না। আজকাল অনেক সাক্ষাৎকারগ্রহিতাকে দেখি একটি চোঙা হাতে নিয়ে কী-একটা ডিএসএলআর নিয়ে এর ওর পেছনে ছুটছে। উদ্দেশ্য সাক্ষাৎকার নেয়া। অথচ তাদের প্রশ্নগুলো বেশিরভাগ সময় উত্তর হয়ে যায় নয়তো অপ্রাসঙ্গিক কিছু। ফলে এর উত্তর না-দিলেও চলে। এবং তাতে সমাজের তেমন ক্ষতি বৃদ্ধিও হয় না। এই জায়গায় জামানভাই অনন্য। তিনি স্থির অবিচল মানুষ। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস থেকে ব্রেশটগবেষক আলেক্সান্ডার স্টিলমার্কের সবিস্তার ইন্টারভিউ আছে এই বইতে। যেগুলোর কিছু সরাসরি গৃহীত আর কিছু অনূদিত। কত ভাবনার দরজা-যে খুলে যায় বইটি পড়লে!
সেই জামানভাইয়ের সাথে একটা কাজের সূত্রে পুরান ঢাকায় ঘুরছিলাম। তার কিছু জিজ্ঞাসার উত্তরও দিচ্ছিলাম, সেই ফাঁকে কাগজিটোলার একটা খোলা বারান্দায় তিনি বসে পড়লেন। আর তক্ষুনি এক বেলুনওয়ালা চলে এল আর আমি একটা ক্লিক করলাম।
জামানভাইয়ের মতো ফিটফাট মানুষকে এ-রকম পথেঘাটে এত ক্যাজুয়ালি এর আগে আমি বসে থাকতে দেখিনি। সেই দিক থেকে এর এক অন্য তাৎপর্য আছে। আজ এই ছবির সুবাদে জামানভাইকে এই অসময়ে শুভেচ্ছা জানানো গেল। সকলের মঙ্গল হোক।
আমাদের অন্তু
অন্তু আমাদের সময়ের অ্যাংরি বার্ড। একদম ভবের পাগল ছিল সে। কেউ যেন তাকে দমাতে পারবে না। দমাতে পারেনি কেউ। এই ছবিটা সজীবভাইয়ের বিয়েতে তুলেছিলাম। এই পাঞ্জাবি বা পোশাক ওর নিজেরই ডিজাইন করা। নিজেকে স্বতন্ত্র করে রাখার জন্য অনেকের চক্ষুশূল ছিল অন্তু। কিন্তু আজ আমাদের চোখে অন্তু এক দুখের অশ্রু। ওকে ভালোবাসা জানাই।
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS