আমি পল্লবী মিরপুরে থাকি। ঢাকার অন্যান্য এলাকা বা মহল্লার তুলনায় মিরপুরিয়ান বা পল্লবীয়ান বলতে বোঝায় — জাস্ট অ্যা লোয়ার অর মিডল ক্লাস বস্তিবাসী। বলতে কোনো লজ্জা নেই, এই পল্লবীতেই আমার জীবনের প্রায় ৪৮ বছর কেটে গেল। “মিরপুরে থাকি”, — এ-কথা অনেকে শুনলেই একটু অবাকই হয় বটে। একজন তো সেদিন বলেই বসলেন, “ম্যাক, আপনাকে দেখলে তো মনে হয় আপনি বনানী, বারিধারা, গুলশান, ডিওএইচএস — এসব অভিজাত এলাকায় থাকেন।” আমি বললাম, “রাইট। পল্লবী, মিরপুর — কেমন জানি আনস্মার্ট ও খ্যাত খ্যাত শোনায়, তাই না?”
আসলে মিরপুর এবং পল্লবীবাসীরা খুবই আনস্মার্ট, খুবই খ্যাত। ডিফারেন্সটা হচ্ছে, আমরা জানি আমরা আনস্মার্ট এবং খ্যাত; — তবে দেশের ম্যাঙ্গো পিপল বা আম জনতা, যারা এই তথাকথিত ‘অভিজাত’ শ্রেণির জীবনযাপনের ধারপাশেও নেই, বেসিক ‘অসাধারণের’ সাথে সাধারণের জীবন কম্প্যারিজনে মনে হয় আমরা খুব ভালোই আছি। আমরা উপরেও উঠতে পারি না কিন্তু নিচেও নামব না। মিডল ক্লাস তাই মরণ অব্দি তার ‘স্ট্যান্ডার্ড’ ধরে রাখবেই। কঙ্ক্রিটের বস্তিতে থাকলেও সে তার স্ট্যান্ডার্ড নামাবে না। এখানেই তার স্মার্টনেস। তার জেদ তার স্মার্টনেস; তার উঁচকপালপনা তার স্মার্টনেস। মধ্যবিত্ত রুল্স সো মিরপুরিয়ান্স রুল্স।
একদিক দিয়ে আমরা মিরপুরিয়ানরা ক্যুল্ অ্যান্ড সেক্সি না হতে পারি তবে আমাদের সিম্পল্ লিভিং ও হাই থিঙ্কিং স্মার্টনেসের দিক দিয়ে খুবই উন্নত — তাই মধ্যবিত্ত সবসময় দাপটেই চলে। অভিজাত শ্রেণির লোকজন সবসময় মিরপুরিয়ানদের কাছে ধরা খায়। ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা জানি কই?
মিরপুর এক আতঙ্কের নাম। আমাদের ৪টা আলাদা থানা আছে, কারণ মিরপুরের চেয়ে বেশি টাউটবাটপার, চোরছ্যাঁচড়, ডাকাত, খুনি, জঙ্গি ইত্যাদি বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। মিরপুর একটা ডেজিগ্নেইটেড ক্রাইম জোন্ এবং তা বহাল তবিয়তে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আছে।
অপরদিকে মিরপুর সুফিসাধক শাহ আলি বগদাদির পবিত্র ভূমি। এখানে মাজার শরিফ আছে, মসজিদ আছে, সনাতন মন্দির আছে, বৌদ্ধবিহার আছে, গির্জা আছে, মাদ্রাসা আছে, আশ্রম আছে, আখড়া আছে, হিজাব আছে, নিকাব আছে, দাড়ি আছে, টুপি আছে, গামছা আছে, পাগড়ি আছে। নাস্তিক আছে, আস্তিক আছে, হিজড়া আছে, সেক্সওয়ার্কার আছে, বিহারি আছে, বাঙালি তো আছেই, চাকমা আছে, মারমা আছে, আছে তিনটি অসমিয়া পরিবার; — এবং আছে বহু বিদেশি। কাবাবের দোকান আছে, কেএফসি আছে, বিগেস্ট ফার্নিচার মার্কেট আছে, বেনারসি পল্লি আছে, চিড়িয়াখানা আছে, বটানিক্যাল গার্ডেন আছে। বার্ বা মদের দোকান আমার জানামতে একটিও নেই।
নতুন ডিজিটাল লাইন সংযোজন ১২/১২; তবে মিরপুরে ফেইসবুকে বুক দাপড়িয়ে অনেকেই আছেন — ইচ্ছা আছে সবাইকে বিরক্তিকর ট্যাগাবো এই নিবন্ধটি। মিরপুরিয়ানরা প্রচারপাগল — আর আমি তার ব্যতিক্রম না।
সারারাত জারি গান, বাউল গানের যেমন আশর হয় — তেমনি রাতভর চলে কাঠমোল্লার ওয়াজ মহফিল, বা উর্দু ভাষার কাওয়ালি। মিরপুর ইজ্ সিম্পলি ফেসিনেটিং অ্যান্ড অ্যামেইজিং।
সেদিন এক অভিজাত এলাকার হোটেলে গিয়েছিলাম। সাথে ছিল প্রাউড মিরপুরিয়ান সুফি মাহফুজ। গেইটে চেকিঙের সময় সে নিরাপত্তাকর্মীকে বললো, “ঠিকমতো চেক করেন ভাই, — আমরা মিরপুরের মানুষ, জঙ্গিরাও আমাদের ভয় পায়।”
সো — এন্ড অফ দ্য স্টোরি — মিরপুরিয়ান্স আর স্মার্ট — ডোন্ট মেস্ উইথ দেম্, ওকে!
… …
- Are we ready for Khilafa E Bangal? || Mac Haque - September 5, 2024
- সিজনাল মায়াকান্না ও আমাদের প্রতিবাদের ফ্যাশনেবল কালচার || মাকসুদুল হক - October 22, 2021
- স্মর্তব্য ১৭৭১ || মাকসুদুল হক - October 20, 2021
COMMENTS