টিল্ডা টোল্ড (২)

টিল্ডা টোল্ড (২)

এলিভেটরে হামেশা আমায় ‘স্যার’ সম্বোধন শুনতে হয়। মানুষজন আমারে ‘স্যার’ ডাকে কেন, বলতে পারব না। ধারণা করি যে আমি দেখতে ঢ্যাঙা লম্বা আর আমি তো খুব বেশি লিপস্টিক লাগাই না। মানুষ মনে হয় এই লেবাসে এমন বেশভূষায় দেখে আমারে ঠিক নারী হিশেবে ভাবতে পারে না।

আমি থিয়েটার জিনিশটা হারাম পছন্দ করি না। আমি থিয়েটারফিয়েটারের কেউ না।

না, জনাব, আপনেরা আমারে কখনোই এমন কথা বলতে শুনবেন না যে একটা ম্যুভিনির্মাণ যে কত্ত অমানুষিক পরিশ্রমের রে ভাই! এই কিসিমের কথাবার্তা আমার মুখ দিয়া হারাম বাইরায় না। দ্যাখেন, ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ ম্যুভিটা যারা বানাইসে তারা বানাইতে চাইসে বইলা বানাইসে। কেননা তারা ম্যুভিটা ভালোবাসে। এবং ম্যুভিটা বানাইতে পারসে বইলা তাদের মতো সুখী আর-কেউ হইতে পারেই না।

আমি ছিলাম এক্কেরে পেশাদার জুয়াড়ি। লন্ডনে থাকার সময়টায় টানা প্রায় বছর-দুই গ্যাম্বলিং ছাড়া আমি দ্বিতীয় কোনো ওয়েতে আর্ন করেছি বলিয়া মনে পড়ে না। মানে, একেবারে যে অন্যকিছু করি নাই তা না, করেছি টুকটাক, ধরেন, ছুটাছাটা কাজকাম কিছু, ওই টাইমেই আমি ডেরেক জ্যার্ম্যানের লগে কাজ করতেসি, কিন্তু টাকা বানানো বলতে যা বোঝায় ওইটা আমি করেছি ওই সময়টায় ঘোড়দৌড়ের গ্যালারিতে ঘোড়ার উপ্রে বাজি ধরে।

বাচ্চারা আমার জীবনে এসেছে যখন, একটা জিনিশ আমি জিন্দেগিতে পয়লা আবিষ্কার করি যে, আমি আমার বাচ্চাদের অসম্ভব ভালোবাসি, খালি ভালোবাসি বললেই ঠিকঠাক বলা হয় না আসলে, আবিষ্কার করি যে আমিই তো ওদের ভিতরে রয়েছি, শ্বাস নিচ্ছি ওদেরই ভিতরে। একদম শুরুতেই আমি বুঝে ফেলসিলাম যে এদের ব্যাপারে আমার আগ্রহ কমবে না বরং বাড়বে দিনদিন, ওদের যে-কোনো অসুবিধায় আমিই বিপন্ন হব বুঝতে পারতেসিলাম। সন্তানবাৎসল্যের এই জিনিশটা আমার ভিতরে প্রেজেন্ট দেখতে পেয়ে আমি ভীষণ স্বস্তি পেয়েছিলাম, আমি হাঁপ ছেড়ে বেঁচে উঠেছিলাম।

আত্মপরিচয় নিয়া আমাদের সমাজে যে-একটা আচ্ছন্নতা, চারপাশের সবার যেই অবসেশন দেখতে পাই আইডেন্টিটি নিয়া, এই জিনিশটাই আমারে বোধহয় পার্ফোর্মার করে তুলেছে। কেননা, দ্যাখেন, আমি বিন্দুমাত্র নিশ্চিত হতে পারি না আমার ‘আমি’ নিয়া, আইডেন্টিটি জিনিশটা আদৌ এক্সিস্ট করে কি না আমার ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে।

চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ

… …

বিদিতা গোমেজ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you