আমার গ্রামিক মন আমার নাগরিক জীবন || কল্লোল তালুকদার

আমার গ্রামিক মন আমার নাগরিক জীবন || কল্লোল তালুকদার

শেয়ার করুন:

লক্ষ্যশূন্য লক্ষ বাসনা ছুটিছে গভীর আঁধারে
জানি না কখন ডুবে যাবে কোন অকূল গরল পাথারে…

আমার পৈতৃক বসতবাটী! ঋতুভেদে এখানে এখনও খেলা করে প্রকৃতির অপার রূপমাধুরী; রঙের বিস্ময়কর পালাবদল! যত দেখি তৃষ্ণা মেটে না! বিস্মিত মন গেয়ে ওঠে—মধুর, তোমার শেষ যে না পাই প্রহর হলো শেষ…

বাড়িতে এলে এখনও এক অদ্ভুত আবেশে ভরে ওঠে মন। মনে হয়—এই ঐন্দ্রজালিক নিসর্গে কোন সুদূর অতীতে থিতু হয়েছিল আমার কোনো এক পূর্বপুরুষ। এই ‘অনল অনিলে চির নভোনীলে ভূধর সলিলে গহনে’ কেমন ছিল তাদের কর্মমুখর যাপিত জীবন! তাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার উপাখ্যান যেন সঞ্চিত হয়ে আছে রূপশালী ধানে, সবুজ মাঠে, নীলজলে, জলাবনে…!

আনমনে বাড়ির মেঠোপথ ধরে হাঁটি আর ভাবি—তারাও তো এই পথে গেছে বারবার! জানি, তখন আর এখন—ফারাক বিস্তর। তবু সাধ হয়—যান্ত্রিকতার নাগপাশ ছিন্ন করে ফিরে পেতে সেই অকৃত্রিম অপরূপ নিসর্গকে; আমার পূর্বপুরুষদের জল-মাটির গন্ধমাখা সেই স্বচ্ছ আদিম জীবনকে।

কিন্তু আমি তো প্রকৃতপক্ষে এক ছিন্নমূল; মন গ্রামিক, জীবন নাগরিক—জটিল, মোহাচ্ছন্ন! জানি, শত চেষ্টা করলেও এ জীবনে শেকড়ে ফেরা আর হবে না। তবু মোহ কালিমা-লিপ্ত বিবাগী এই চাতক মন, কোনো গরল পাথারে একদিন ডুবে যাবে জেনেও, রহস্যময় এক গহন-দ্বারে এখনও কান পেতে রয়…


কল্লোল তালুকদার রচনারাশি

কল্লোল তালুকদার
শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you