গাভি ও তার বকনার জন্য উষ্ণ শুভেচ্ছা

গাভি ও তার বকনার জন্য উষ্ণ শুভেচ্ছা

গাভিটি, রিসেন্টলি, একটা বাচ্চা বিইয়েছে। মেয়েবাচ্চা, বকনা বাছুর। এর আগে এঁড়ে-বাছুর ছিল তার কেবল, ছেলেবাচ্চা শুধু, বকনা ছিল না একটাও। মধ্যিখানে একটা বাচ্চা অবশ্য জন্মের পরপর মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়, সেইসঙ্গে এইটাও জানা যায়, অকালপ্রয়াত ওই বাচ্চাটি মেয়েবাচ্চাই ছিল। প্রশ্নোত্তরে আরও প্রকাশ, গাভিপালন কোনোপ্রকার অর্থনৈতিক অভিপ্রায় থেকে নয়, কিংবা পারিবারিক প্রবৃদ্ধি তথা ফ্যামিলি জিডিপি বৃদ্ধির কোনো প্রোগ্রামও নয়, ইন-ফ্যাক্ট শখ থেকেই ব্যাপারটার স্টার্ট, হবি ছিল অ্যাট-ফার্স্ট, এখন অবশ্য অবলা ওই নিরীহকরুণ চাহনির প্রাণিগুলোর প্রতি এক অব্যক্ত মায়া ডালপালা ছেড়ে ছেয়ে ফেলেছে দিনযাপন। নয়তো শহরে, শহরতলিতে, গাভিপালন তো রাজার হাতিপালনের চেয়ে কম ঝক্কির কর্মসূচি নয়, এইটা অ্যাফোর্ড করাও মুশকিল, অল্প জমিতে ঘাসের দেখাসাক্ষাৎহীন স্যুয়ারেজ ক্যানেলের এই কান্ট্রিতে, এই দেশের দুঃস্বপ্নশহরে, হেন শখ মেটানো তো মহা এক্সপেন্সিভ ব্যাপার। তবু গেরস্থালির একটা আদিম বুনো টান রক্তে দুন্দুভি বাজাতে শুরু করে দিলে পেছন ফেরার কোনো উপায় নাই আর। মুরলী বীণা হাতে নেয়ার বয়স নাই অবশ্য, থাকলে নিতেন, ফোড়ন কাটার উত্তরে একটা চারমিনিটের হাসি দৃশ্যমান হয়। এইটা এমনও না, বলেন তিনি, যে দুগ্ধপানের সুন্নত আদায়ের জন্য গাভিপালন। ওই সুন্নতের জন্য বড়লোকদের বিচিত্র সব আউটলেট রয়েছে, সেখান থেকে রিটেইল প্রাইসে বেশ তো প্রত্যহ সুন্নত আদায় করা যাইত। দুধের জন্য শুরুতে একটা আগ্রহ ছিল নাতিপুতিদের মধ্যে, এখন ওরাও আর দুধে তেমন ফুর্তি খুঁজে পায় না, বাণিজ্যিক ফ্রুটফ্লেভার-দেয়া দুধ ওরা চকলেটের ন্যায় খায়, কিন্তু গরুর বাঁট হইতে বেরোনো দুগ্ধে নাতিপুতিদের রুচি নাই। কী জমানা আইল রে বাবা, আক্ষেপ করেন তিনি। এইসব দিক বিবেচনায়, জিগানো হয় তারে, গাভিপালন তো অতএব তার ক্ষেত্রে একটা ফালতু ও পণ্ডশ্রম বলিয়া সাব্যস্ত করা যাইতে পারে। না, তিনি তা মানতে নারাজ। প্রোফিট দিয়া দুনিয়া বিচার করা তো খুবই সীমাবদ্ধ ও সংকীর্ণ একটা ব্যাপার। দুই ধরনের লাভ তো সংসারে এখনো আলাদাভাবেই দেখা যায়, একটা আর্থিক লাভ, অন্যটা অনার্থিক। সংসারে একটা সময়ে এসে নিজের অস্তিত্বটা কার্যকর প্রমাণ করা, নিজের কাছে নিজের বেঁচে থাকার উপযোগ প্রতিষ্ঠা করা, ইত্যাদি দরকারেও তো পোষা পাখি কিংবা গাভি ইত্যাদির একটা মূল্যাঙ্কন হওয়া সম্ভব। পৃথিবী আমারে চায় না আর, একটা বয়সের পর বিশেষ করে, কিন্তু এই অবলা জীবগুলো তো আমি ছাড়া অচল। এইখানেই কিছু কথাবার্তা ভেবে দেখার আছে নিশ্চয়, এই পয়েন্ট ধরে। কিন্তু প্রতিবেদক কথা বাড়াইতে নারাজ বিধায় এখানেই আলাপ সাঙ্গ।
২.
গাভি আর বাছুরের জন্য এই শীতে, এই খর্জুর-রস-ক্ষরা মাঘমাসে, শুভকামনা। পৃথিবীর সমস্ত শিশুর জন্য শুভকামনা। সমস্ত বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার জন্য শুভকামনা। এই শীতে বৃদ্ধদের শরীরে যে-যন্ত্রণা, আর সেই যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা যাদের আজিও হয় নাই কিন্তু হবে অচির ভবিষ্যতে, বেঁচে গেলে পৃথিবীতে আরও বছর-বিশেক, আমাদেরও ওই অভিজ্ঞতা হবে, শীতকালীন বেদনার অভিজ্ঞতা এই ভবে। এর আগে ফেঁসে গেলে তো গেলামই, নিরভিজ্ঞ মরিয়া গেলাম। অবশ্য এখনও আমাদের অনেকের কাছেই শীত আনন্দের, গোল হয়ে ঘিরে বসে আগুন তাপাবার, সকালবেলাকার রোদ শরীরে পোহাবার, শীত যত তীব্র, আমাদের অনেকের কাছেই, আনন্দও তীব্র তত। অনেকের কাছেই শীতকাল প্রিয়, ছোটবোনের মতো প্রিয়, অথবা প্রিয় প্রেমিকার মতো। মৌসুমীর গানে একটা ভারি সুন্দর আবহ ফুটে আছে শীতকালের, ‘ছেলেবেলার পাহাড়’ শিরোনামের সেই গান সম্ভবত মৌসুমী ভৌমিকের পয়লা অ্যালবামটাতেই পাওয়া যায়, যেখানে শীতকালীন হাওয়ায় কমলালেবু ও মায়ের গন্ধ রয়েছে মেশামেশি — এই মর্মে একটা পঙক্তির আভাস স্পষ্ট হয়ে পশে কানে এসে, মরমে যেয়ে বেজে বেজে যায় বহুক্ষণ।

জাহেদ আহমদ ২০১৩ 

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you