উনারে কইলাম, তারে (শীতকাল) তো আসতেই হবে। আফটার অল শীতই তো আমাদের একমাত্র নাগরিক প্রেমিকা। এই কথার প্রতিউত্তরে তিনি ফাঁস করলেন আমগো ঢাকাই সিনেমার এক বড় গোমর। গত ৪৫ বছরে ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে বাংলাদেশের কোন প্রাকৃতিক রূপটা ফুইট্যা উঠছে তা তিনি ফাঁস কইর্যা দিলেন। জানাইলেন, শীতের মতো একটা ঋতুরে আমাগোর সিনেমায় আমরা কতটুকু দেখি। বরঞ্চ তার বিপরীতে দেখি কেবল বর্ষাবন্দনা আর বর্ষার কামাতুর লোলুপ নজরের রূপ হিসেবে সিনেমায় নায়িকাদের বৃষ্টিতে ভেজাভেজি। আর কত সই? হ্যাঁ, লগে তিনি এই কথাও কইলেন যে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’-য় তিনি শৈশবের ওজু করার দৃশ্য থেকে শুরু করার ভিজ্যুয়ালও পাইছেন। এর বাইরে আমাগো সিনেমায় শীতকাল নাই।
তো, এই যে আমগো জীবন, যদি তারে আধা নাগরিকও কই, তাতে নাগরিক প্রেমিকা শীত কই? তার তো কোনও প্রতিফলন দেখি না। এইবার আসি নাগরিক প্রেমিকার প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের নগর থিউরির লগে পাঠ্যবইয়ে যা-ই লেখা থাকুক চিটাগাং, খুলনা, রাজশাহী, সিলেটের মতো শহরে নগর শব্দটা ঠিক কতটা যায় এই প্রশ্ন থাকেই। তারপরও কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক জীবনযাপন যদি চিন্তা করি তাইলে দেখি, শীতকালের লগে ঢাকার একটা চৌস্ত সম্পর্ক আছে। শীতকাল আইলেই আমাদের ব্যস্ততা আমরা ঝাড়তে শুরু করি আর আমাদের সংস্কৃতিমনা খোলসটা আস্তে আস্তে বাইর হইতে থাকে। যেমন ধরেন শীতের ভোরে রমনা পার্ক যদি আপনে দেইখ্যা থাকেন তাইলে কইবেন এইটার কোমরে-কোমরে কামনা। যারে কিনা আপনার সারাদিনই পাইতে মন চাইবো। শীতের সন্ধ্যায় ঢাকার ছাদে ছাদে নেট দিয়া বাত্তি জ্বালাইয়া যে ব্যাডমিন্টন খেলা হয় এতে কিন্তু কেবল ব্যক্তিগত আর পারিবারিক মিলমিশের কাহিনি লেখা হয় না, সামাজিক গল্পও থাকে বহুত।
এইরকম সময়গুলোর মধ্য দিয়া নাগরিকরা মনের ও শরীরের ক্লান্তি ঝাইড়া দিয়া তৈরি হইতে থাকে লম্বা এক পার্বন ঋতুর জন্য। যার শুরু কিনা ডিসেম্বরের এক তারিখ থেইক্যা। যেইখানে নাগরিক ইন্টেলেকচুয়ালদের যাতায়াত নাই, সেইরকম এক উৎসব দিয়া ঢাকার উৎসব শুরু হয়। সেইটা যখন ডিসেম্বরের এক তারিখ, তখন থেকেই শুরু ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এরপর ডিসেম্বরে বিজয় উৎসব। ইদানীং অবশ্য সেই আমপাবলিকের উৎসবের আগে পুরাই উঁচু মাপের সংস্কৃতিমনাদের (কেউ কেউ আঁতেলদের উৎসবও কয়) উৎসব শুরু হয় আর্মি স্টেডিয়ামে। এক মাসের ব্যবধানে দুইটাও হয় এখন। ফলে নভেম্বরেই শুরু হয় কিন্তু। তারপর ডিসেম্বরে বিজয় উৎসব। কোনও কোনও বছর সরকারি একটা বইমেলাও হয়, জানুয়ারিটা যায় ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতির জন্য। ফেব্রুয়ারি মাসটাই উৎসবের। মার্চ থেকে একেবারে এপ্রিলের চৌদ্দ পর্যন্ত। এইসব তো নাগরিক প্রেমিকার রূপ ধারণ করেই।
কিন্তু প্রশ্নটা যখন সিনেমার তখন বুঝতে হবে সিনেমাটা আসলে কাদের হাতে। আর কাদের খাদ্য। এই একটা বিষয় থেকে উৎরানোর চেষ্টা চলতেছে। যেহেতু দুনিয়াটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র, এই যুদ্ধে জিততে না-পারলে সিনেমাটা বদলাবে না। যুদ্ধটা চলতেছে। দেখি না, আমাদের প্রেমিকা কি বাস্তব থেইক্যা রূপালি পর্দায় হাজির হইতে পারে কি না!
- সিনেমার চিরকুট ১০ - January 22, 2025
- শেষ হলো ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ - January 22, 2025
- সিনেমার চিরকুট ৯ - January 20, 2025
COMMENTS