মর্মশিক্ষা

মর্মশিক্ষা

 

মাথা থেকে তুমি বের হয়ে যাও পোকা
আজ আমাদের জাঁকজমকের রাত
শাদা পৃষ্ঠায় কালো অক্ষর টোকা
পোষাবে না আজি বিষাদের প্রণিপাত

প্রভাতে পশিবে পরানে রবির কর
পশিবে শ্রবণে প্রণয়পাখির গান
রচিব তখন বনমোরগের স্বর
দু-হাতে লভিব দুনিয়ার সম্মান

দিনে ও দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে
আমরা ডাকিব রমণীয় রজনিরে
উৎপীড়িতের সমর্থন ও শোকে
ভাসিব গবাদি-নিরীহ অশ্রুরুধিরে

এবং যখন আসিবে আমার পালা
গাহিতে ব্যাকুল রহিব প্রভুর স্তুতি
আমার আজান আমারই জিকিরমালা
শালা গরিবেরা খালি করে হুজ্জোতি

আমরা উঠিব শিখর ভেদিয়া উপরে
আমরা নাচিব নাটমণ্ডপে তা-তা-থৈ
হি হি দিব হানা ঊনমানুষের ঘরে
ধরা পড়িবার মতন বেভুদা আমি নই

আমি করি কাজ পোভার্টি নিরসনের
আমি লিখি যত গণমানুষের মুক্তি
আমি নির্বাহী সর্দার এক মহাডাকু সঙ্ঘের
আমি শিক্ষা আমি শান্তি বিচিহীন যত চুক্তি

এমওইউ আহা এমওইউ ওহো এমওইউ
মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডার্স্ট্যান্ডিং
অথবা বিডিং খাড়া-বড়ি-থোড় প্রোসেস্ নাথিং নিউ
দোঁহে মিলে যাই লুটিয়া ভাঁড়ার পিটিফ্যুলি ডিসগাস্টিং

আমায় দেখিয়া করিবে না যারা কুর্নিশ
সন্তর্পণে নিকেশ করিব তাদেরে
দেশ ভেসে যাক আমার মাথায় উষ্ণীষ
রহিবে এবং সংবর্ধনা আখেরে

হাসিল করিব মরা হাসানোর কলা
দেখাইব খেল একটি কুমিরছানা
কেমন প্রকারে শ্মশানে জাগায় দোলা
দ্বিজে-চণ্ডালে মিলে করে নানা বাহানা

সিভিল আমার আব্বা আমার আব্বা দিমোক্রাতিক
আব্বার কাছে আমার গপ্পো করতে যেও না তুমি
মরিবার তরে শূকরের পোঁদে যেমতি লোহার শিক
সেইরূপে ভালোবাসিয়া যাইব জননী জন্মভূমি

স্বর্গাদপি প্রিয় গরিয়সী বিদেশি পিতার হাতে
তুলিয়া দিয়াছি তাবৎ তোমার স্থাবর-অস্থাবর
ক্ষুদ্র করিয়া রাখিতেছি ঋণে মারিতেছি মাছে-ভাতে
গিটকিরি আর গিমিক মারছি আজন্মা বান্দর

মন্বন্তরে মরে না শালারা মরে না মারণবোমে
ধুঁকতে ধুঁকতে সেঞ্চুরি যায় সেঞ্চুরি ফিরে আসে
স্পার্টাকাসেরে পাঠায়া দিয়াছি নির্বিপ্লব ঘুমে
তবু হোগামারা ক্রীতদাসগুলা আসুরিক হাসি হাসে

অসুর জ্যান্ত রাখিয়া কেমনে বাজাব শ্যামের বাঁশি
কেমনে বজায় রাখিব গুহায় প্রভাতের সিরিনিটি
হাইড্রার মতো শতমুখো শুধু প্রসবিছে ঠাসাঠাসি
আমার আরামপ্রহরে উহারা জুড়ে বসে খিটিমিটি

ওদের চোখের ঘুমের বদলে আমার ঘুমটা খাসা
বুক ফেটে যাক তবুও ওদের বোল যেন নাহি ফোটে
আমার কথায় ওঠে আর বসে ভূখানাঙা যত চাষা
আমার তবিলে জমা হয় এসে ওদের যা-কিছু জোটে

যা-কিছু ওদের ছাগল মুর্গি গোরু আর ঢেউটিন
সবই তো আমার ভায়া হয়া যাবে আমার বাপের ভোগে
আমার হস্ত করে সমস্ত গরিবেরে ভিটাহীন
ওদের ত্রাণের ভাগ মেরে বলি উজাড় করেছে ঠগে

ওরা যদি আজ আস্থা হারায় আমার গপ্পোগুলে
হায় হায় এবে কী হবে উপায় সিংহের মুখে মিঁউ
পরামর্শক পিতা এসে বলে মাজনেরই দোষ দন্তশূলে
অতএব করো নবতর এক স্ট্র্যাটেজিক রিভিয়্যু

কোথায় কতটা নমনীয় হবে কাকে নেবে কাকে সড়কে বসাবে
ডেভেলপমেন্ট পার্টনার এসে বাৎলাবে সব ধমকিয়ে হেসে
তোমার পাজেরো ঠিক রেখে তুমি বাপেরে কতটা খাওয়াবে
মিষ্টি হুমকি সহকারে বাপ বলে যাবে ভালোবেসে

একশ বছরে এক-দেড়খানা কানসাট-ফুলবাড়ি
নাই নাই ভয় যতক্ষণ তুমি বাপকে রেখেছ খুশি
হেন বাঞ্চোৎ অথবা ইঁদুর তোমার মতন ধাড়ি
দুইটি কি আছে এ-জগতে যার মগজে কেবল ভূষি!

কে হে বাপু তুমি যাত্রাপালার বিবেক
আমারে এহেন করিতেছ গঞ্জনা
কিছুতেই কিছু যায় বা আসে না তিলেক
নড়েচড়ে বসি যবে কানে পশে উন্নয়নালোচনা

আমি তো অতীব নিবেদিতপ্রাণ নন্দ
গোপালের ন্যায় ঠাকুরঘরের চোর
হাঁউমাঁউখাঁউ গরিবের পাঁউ গন্ধ
উহাদের গোর খননেই রাত ভোর

দোর খুলে খোকা দুয়ারে দেখিবে প্রস্তুত
জুড়িগাড়ি আর বাপের থ্যাঁৎলা লাশ
জনসমুদ্রে জোয়ারদৃশ্য সুন্দর ও কিম্ভূত
পলায়নপথে কে বা কারা রাখে প্রবাদের ফাটা বাঁশ!
২০১৩

জাহেদ আহমদ

জাহেদ আহমদ
Latest posts by জাহেদ আহমদ (see all)

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you