লেখাগ্রস্ত || সত্যজিৎ সিংহ

লেখাগ্রস্ত || সত্যজিৎ সিংহ

ঠাকুরের একটা কথা আছে, “জালুয়ারা দেখবা যেদিন বাড়িতে থাকে সেদিন মাঠে ঘুরতেছে, হাটে চায়ের দোকানে বসতেছে, মাঠের কোণে বসে তাস পিটাইতেছে — কিন্তু মন তার পড়ে আছে সাগরে, জালে, নৌকায়”। কদিন ধরে মনে হইতেছে, আমিও সেইরূপ অকূল জার্নির ভিতর ঢুকে গেছি বা ঢুকতেছি।

কথাটা কী একটু বেশি মনে হইতেছে! যে-ভুবনে এসে বড় বড় মহাজনরা রাজ করেছেন, নামগুলো শুনলেও তো হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু করে দেয় রে ভাই! বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অমিয়ভূষণ মজুমদার, কমলকুমার মজুমদার, বিভূতিভূষণ, মাসরুর আরেফিন! সেই জগতের ভ্রম আমারে ডাকতিছে!!

তুমি ঠিক আছো তো ভাই! ঘুমটুম ঠিকঠাক হয়েছে! কিন্তু আমার কেন এমনটা হবে! কেন সারাটা দিন নিজের লেখা গল্পের ভিতর গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাইতেছি! কাপড় শুকানোর রশিটা মাটিতে পড়ে আছে, তুলতে ভুলে যাচ্ছি, বেড়া ভেঙে গরু ঢুকে গেছে, গরু কি কি ক্ষতি করেছে, ভুলে যাচ্ছি সেইগুলাও, মাথায় শ্যাম্পু দিয়ে পরে ধোবার কথা ভুলে যাচ্ছি, ফেসবুকে ঢুকছি কিন্তু মনে হইতেছে সে আমি না, অন্য কেউ আমার জায়গায় বসে হাবিজাবি দেখতেছে, মানুষের কমেন্টবক্সে যায়া ধুমধাম গালাগালি করতেছে, সে আসলে কে? আমি চিনি তাকে!

বাজার করতে ভুলে যাইতেছি, কড়াইতে পেঁয়াজ দিতে ভুলে যাইতেছি, চাবি লাগাতে ভুলে যাইতেছি, বাতি অফ করতে ভুলে যাইতেছি! বউ বলে, আমার পাগল হইতে দেরি নাই। কিন্তু আমি তো জানি, আমার মন কোথায় পড়ে আছে! যেন আরেক সংসার পেতে রেখেছি লেখার টেবিলে। সেখানে থম মেরে বুকে শ্বাস আটকে মরার মতো পড়ে আছে কয়েকজন, আমি গিয়ে টাইপরাইটারে খট করে আওয়াজ দিলেই অমনি তারা বেঁচে উঠবে।

রূপকথার পাথর-হয়ে-যাওয়া অভিশাপগ্রস্ত রাজকুমারদের কথা মনে আছে! রাজকুমারী মন্ত্রপড়া জল ছিটালেই পাথরগুলা মানুষজন্ম নিয়ে পুনরায় হাই-হ্যালো শুরু করে দিলো। “সাধন করলেই সাধক হওয়া যায় না রে পাগল!” — পুনরায় ঠাকুরের কথা আসতেছে। “ঠাকুর …ঠাকুর…” আমি জানি না এর শেষ কোথায়!

আমার তো এই ভ্রমের জগৎ খুব ভাল্লাগে ঠাকুর। নাইবা হলাম সাধক!! ভালো লাগে যে…

সত্যজিৎ সিংহ রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you