[ঠিকই দেখছেন, হ্যাঁ, জেমস্ নয়, জেনস। তবে জেমসের সঙ্গে জেনসের যুক্ততা ভালোভাবেই আছে। অ্যাট-লিস্ট ছিল সেই সময়টায়। গেল শতকের নব্বইয়ের মাঝভাগে জেমস যখন তুঙ্গে, জেনস ছাড়াও তখন অনেক সংগীতশিল্পীর আবির্ভাব ঘটেছিল যারা গায়নশৈলী এবং কণ্ঠস্বরে জেমসের অবিকল অনুসরণ করে অ্যালবামে-মঞ্চে গেয়ে শ্রোতাদৃতও হয়েছিলেন। এমন কয়েকজন জেমসভক্ত অনুসারীর মধ্যে পান্থ কানাই একজন, যিনি মিউজিকে এখনও সক্রিয়, পরে পান্থ কানাইয়ের খানিকটা স্বাতন্ত্র্যও চলে আসে রেন্ডিশনের দিক থেকে। এমন আরেকজন হলেন জেনস। ঘোষণা দিয়েই জেনস শুরু করেছিলেন জেমসভক্ত হিশেবে। অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছিল সম্ভবত গোটা-তিনেক, অভিষেক অ্যালবাম ‘আশীর্বাদ’ শুনে জেমসের নিয়মিত শ্রোতারাও অবাক হয়েছিলেন শিষ্যের অনুকরণকর্মে এমনটা পার্ফেকশন দেখে।
‘একটা চাদর হবে’ শীর্ষক গান গেয়ে জেনস জনপ্রিয় হয়েছিলেন এক-সময়। এছাড়াও জনপ্রিয় কয়েকটা গানের মধ্যে ‘চন্দ্রমন্ত্র’, ‘আকাশ কেঁদেছে’, ‘বাসি ফুল’ উল্লেখযোগ্য। ‘গডস্ কম্যান্ড’ নামে একটা ব্যান্ডেও ভোক্যাল ছিলেন জেনস, ব্যান্ডের নামকরণ প্রসঙ্গেও তখন পত্রিকান্তরে জানা গিয়েছিল গুরু জেমস কর্তৃক আদিষ্ট হয়েই ব্যান্ড ফর্ম করেছিলেন বলে এমন নাম। জেনস বাজাতে জানতেন গিটার এবং কিবোর্ড। বহুদিন কোনো সংকলনে কিংবা মঞ্চে জেনসের প্রেজেন্স লক্ষ করা যায় না আর। শুধু জেনস নয়, এমন অনেক শিল্পীই ছিলেন যারা স্থানীয় মঞ্চে জেমসের নাম্বারগুলো বছরভর গাইতেন একেবারে জেমসের কণ্ঠসদৃশ যাদের উপস্থিতি ক্রমে উধাও হয়ে গেল। কোথায় আছেন সেই শিল্পীরা, তারা গানবাজনা কি করেন এখনও, জানতে পারলে বেশ হতো।
পুরো নাম গালিব আহসান মেহেদী, ডাকনাম সুমন, কিন্তু পরিচিতি পেয়েছিলেন জেনস সুমন নামে। ‘জেনস’ অংশটুকু গুরুভক্তিবশত, কোথাও বলেছিলেন কথাগুলো জেনস নিজে। বেশকিছু মিক্সড অ্যালবামে জেনসের উপস্থিতি ছিল ১০/১২ বছর আগে পর্যন্ত। পয়লা অ্যালবাম ‘আশীর্বাদ’ প্রকাশের পরে বেরিয়েছিল আরও দুইটা অ্যালবাম, যথাক্রমে ‘আকাশ কেঁদেছে’ এবং ‘অতিথি’। রিসেন্টলি ইন্ডিয়ায় ফিল্মিগানে জেমসের ক্রেজ তৈরি হলে টেলিভিশনের রিয়্যালিটি-শোগুলোতে জেমসের গলা ভাঙাচুরা অনুকরণপূর্বক কয়েকজন যথেষ্ট পরিচিতও হয়ে ওঠেন টিভিদর্শকদের কাছে, এদেশে এবং ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ ও ন্যেইবারিং হিন্দিস্পিকিং প্রোভিন্সগুলোতে, সেইসময় জেনস এবং আরও কতিপয় শিল্পীর কথা আমাদের মনে পড়ছিল যারা আসলেই চমৎকার জেমসগায়কী নিতে পেরেছিলেন নিজেদের কণ্ঠে। এর মধ্য দিয়ে জেমসের গায়নধারা যেমন জয়যুক্ত হয় তেমনি বিভিন্ন কণ্ঠধৃত জেমসধারার গান শ্রবণের অভিজ্ঞতাও হয় আনন্দপ্রদ। সবকিছু মিলিয়ে জেনস সুমনের গানপ্রয়াস স্মর্তব্য হতে পারে নানাভাবে।
এই রিপোর্ট আমরা নিচ্ছি পাক্ষিক ‘আনন্দভুবন’ চতুর্থ বর্ষ পঞ্চম সংখ্যা থেকে। এইটা ছাপা হয়েছিল ১৬ জুলাই ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে। — গানপার]
“গান করব এ-উদ্দেশ্যে এ-পথে আসিনি। ছেলেবেলায় ছিলাম স্রেফ বাথরুমসিঙ্গার।” — জেনস-এর সহজ উক্তি। বাবা বাংলাবাজার পত্রিকার নিউজএডিটর ছিলেন। ‘ক্রীড়ালোক’ পত্রিকাতেও কাজ করেছেন অনেকদিন। গানের ব্যাপারে উৎসাহ ও প্রেরণা পেয়েছেন মামা আবেদিন কাশেমের কাছ থেকে। মামা ক্লাসিক্যাল গাইতেন। ক্লাসিক্যাল যেটুকু শিখেছেন তা-সব মামার কাছ থেকে।
এভাবে ঘুরতেফিরতে অনেক সময় কেটে গেল। ২৪ বছর বয়সে প্রথম অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন; ধানমণ্ডির ফেলিসিয়াথিয়ামে কিবোর্ডস্ শিখতেন। কিবোর্ডসের বেসিক ওখান থেকে শিখে ঘরে বসেই যন্ত্রটিকে রপ্ত করে ফেললেন। বন্ধুরা তখন ‘এনসিডি’ নামের ব্যান্ড খুলেছে। জেনসকে তারা অনেকবার সাধাসাধিও করেছেন যোগ দেবার জন্য। কিন্তু জেনসের চরম ব্যান্ডভীতি। তিনি মনে করেন ব্যান্ড মানেই দু’দিন পর ঝগড়া অতঃপর ভাঙন। তবুও অনেক সাধাসাধির পর ভোক্যাল হিসেবে যোগ দেন। পারফর্ম করেন বেশ-ক’টি কন্সার্টে।
১৯৯৩ সালে মাইলস ও এলআরবির সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিট্যুটে পারফর্ম করেন। এভাবে গান গাইতে গাইতে পরিচয় হলো [স্যংরাইটার] দেহলভীর সাথে। কলাবাগানে একসাথে অনেক বিকেল কাটিয়েছেন তারা। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হয়ে ওঠে। দেহলভী তখন নিয়মিত জেমসের গান লিখতেন। তিনিই জেনসকে পরামর্শ দেন অ্যালবাম বের করার। তবে ব্যান্ডের নয়, সোলো। ব্ব্যাস, কিছুদিনের মধ্যেই ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে সাউন্ডগার্ডেনে [রেকর্ডিং স্টুডিয়ো] ৪টি গানের ভোয়েস্ ও মিউজিকট্র্যাকের কাজ শেষ করেন।
অ্যালবাম বের করতে হলে তো কোনো প্রোডাকশন হাউসের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। যোগাযোগ করেন সারগাম-এর ম্যানেজার নূরুল ইসলামের সাথে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলো সারগাম। বের হলো প্রথম অ্যালবাম ‘আশীর্বাদ’। অ্যালবামটি বাজারে তেমন সাড়া পায়নি। তবুও ভেঙে পড়েননি জেনস। আবার কাজ শুরু হলো নতুন অ্যালবামের। এবারও রেকর্ডিং স্টুডিয়ো সাউন্ডগার্ডেন।
ইতোমধ্যে পরিচয় ঘটে ফিলিংস-এর আসাদ ও গিটারিস্ট রুবাইয়াতের সঙ্গে। বন্ধু দেহলভীকে সঙ্গে নিয়ে কাজে নেমে পড়েন নতুন অ্যালবামের। সাউন্ডগার্ডেনের ম্যানেজার পরিমল যোগাযোগ করিয়ে দেন এস্টন-এর ম্যানেজার বাবুর সঙ্গে। ‘এস্টন’ দায়িত্ব নেয় জেনসের নতুন অ্যালবাম ‘আকাশ কেঁদেছে’ প্রকাশের। জেনস বলেন, “আমি এজন্য পরিমলের কাছে চিরকৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ জেমসভাইয়ের কাছেও; তিনি আমার কাছে দেবতার মতো, তার পরামর্শ ও সহযোগিতা না পেলে আমি আজ এই জেনস নামে পরিচিত হতে পারতাম না।
জেনস-এর ‘আকাশ কেঁদেছে’ অ্যালবামের একটি মিউজিকভিডিয়ো তৈরি হয়েছে। এর পরিচালনায় ছিলেন স্টাইল গ্রেস-এর রাবেথ খান। জেনস তার নতুন অ্যালবামের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। আগস্ট মাসেই [১৯৯৯] অ্যালবামটি বাজারে আসছে। অ্যালবামের নাম ‘অতিথি’। বেরোবে সঙ্গীতার ব্যানারে। এতে দেহলভীর ১০টি ও রুদ্র পলাশের ১টি গান রয়েছে।
… …
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS